নতুন মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা করে সমস্যা সমাধানে সরকারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল বুধবার চতুর্থ দিনের মতো গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও রাজধানীর মিরপুরের কালশীতে অর্ধশতাধিক তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। গাজীপুর ও সাভারে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা হয়। এসময় শতাধিক কারখানায় ভাঙচুর চালান শ্রমিকরা। শুধু গাজীপুরেই ভাঙচুর করা হয় অর্ধশতাধিক কারখানায়। সংঘর্ষ চলাকালে ইটপাটকেলের আঘাত ও টিয়ার শেলে ৫০ জনেরও বেশি পুলিশ, শ্রমিক ও সাংবাদিক আহত হয়েছেন। শ্রমিক অসন্তোষ ঠেকাতে গাজীপুরের বিভিন্ন গার্মেন্টের সামনে পুলিশ ও চার প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানকার শতাধিক কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। পুলিশ ও শ্রমিকরা জানায়, গতকাল সকালে গাজীপুরের টঙ্গীর গাজীপুরা এলাকায় হপলোন অ্যাপারেলসের আশপাশের কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে। একই দাবিতে নাওজোড়ের দিগন্ত সোয়েটার কারখানাসহ বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে রাস্তায় নেমে আসে। এক পর্যায়ে তারা ওই মহাসড়কে বিভিন্ন পরিত্যক্ত বস্তু ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। ফলে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে ধাওয়া-পাল্টার ঘটনা ঘটে। এসময় অর্ধশতাধিক কারখানা ভাংচুর করা হয়। তবে পুলিশ ২৫টি কারখানায় ভাঙচুরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। শ্রমিকদের হামলায় নাওজোড় এলাকায় চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের গাজীপুর প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম আহত ও তার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। গাজীপুরায় পুলিশের লাঠিচার্জে ‘সময়’ টিভির প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম আহত হন। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জে অন্তত ২০ শ্রমিক আহত হন। পরে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করলে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় গাজীপুরের শতাধিক কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। মোতায়েন করা হয়েছে ৪ প্লাটুন বিজিবি।সাভারের গেন্ডা এলাকার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সকাল থেকে রাস্তায় আগুন জ¦ালিয়ে বিক্ষোভ করেন। বেলা ৩টার দিকে পুলিশ শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। সকালে সাভারের আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় টেক্সটাউন গার্মেন্টসসহ পাঁচটি কারখানার শ্রমিকরা বিশমাইল-জিরাবো সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে গেন্ডা ও হেমায়েতপুরের বাগবাড়ি এলাকায় স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের তিনটি ও আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকার মেট্রো নিটিং অ্যান্ড ডাইংয়ের কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে মূল ফটকে নোটিশ ঝুলিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। বিকাল ৪টার দিকেও আশুলিয়ার কিছু কিছু জায়গায় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা হয়। এতে অনেকে আহত হন। মঙ্গলবারের সংঘর্ষে গেন্ডার উলাইল এলাকার আনলিমা টেক্সটাইলের সুমন নামের এক শ্রমিক নিহত হওয়ার জের ধরে ওই পোশাক কারখানাটিও গতকাল একদিনের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। কারখানাগুলোর সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শিল্প পুলিশ-১ এর পরিচালক শানা শামীনুর রহমান বলেন, পোশাক কারখানাগুলোয় কাজের গতি ফিরিয়ে আনার জন্য পুলিশ মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছে। মিরপুর কালশীর ২২তলা গার্মেন্টসের সামনে রাস্তায় সকাল থেকে অবস্থান নিয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ও মালিকপক্ষ আলোচনায় বসে। দুপুরে পুলিশের আশ্বাসে শ্রমিকরা ঘরে যায়। পল্লবী থানার এসআই তমিকুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি শান্ত করতে আমরা উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। লিকপক্ষ দাবি পূরণে আশ্বস্ত করেছে। শ্রমিকরা আশ্বাস মেনে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ফিরে গেছে। এখানে কোন বিশৃঙ্খলা হয়নি।নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ওয়েস্ট নিট অ্যাপারেলস এবং পিএম গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরে শ্রমিকরা রাস্তা ছেড়ে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কারখানার ভেতরে অবস্থান নেন। শ্রমিকদের অভিযোগ, ভেতরে অবস্থানের সময় ওই গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এক শ্রমিকের গায়ে হাত তোলেন। এতে শ্রমিকরা আবারও রাস্তায় নেমে আসে। পরে শ্রমিকদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। এ ছাড়া, সিদ্ধিরগঞ্জের চৌধুরীবাড়ি এলাকায় পিএম গার্মেন্টের শ্রমিকরা দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কারখানার সামনের রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করলে মালিকপক্ষ তাদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।
সর্বশেষ
সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু
দর্পন টিভি - 0
সুনামগঞ্জের শাল্লায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকালে উপজেলার জনস্বাস্থ্যের নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদে...