গাজীপুরের শ্রীপুরের শালবন ঘেরা একটি গ্রাম জয়নাতলী। যে গ্রামের অধিকাংশ লোকই কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এই গ্রামেরই একটি হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠেছিল কিশোর শাহীন (১৩)। কিন্তু গত ২৫ জানুয়ারি বন্ধুদের সঙ্গে উচ্চ স্বরে গান বাজানোর জের ধরে প্রতিবেশীরা ওই কিশোরকে মারধর করেন বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। পরদিন ২৬ জানুয়ারি সকাল ৮টার দিকে স্থানীয় একটি বনের ভেতর থেকে শাহীনের লাশ উদ্ধার করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা জানিয়েছে, কিশোর শাহীন ইদুরের ওষুধ খেয়ে মারা গেছে। কিশোরের বাবা আবুল কালাম অভিযোগ করেন, শাহীন মারা যাওয়ার আগের রাতে বন্ধুদের সঙ্গে সাউন্ডবক্সে গান শুনছিলো। কিন্তু এটিকে কেন্দ্র করে একই গ্রামের প্রবাসী সাইবালীর ছেলে মোস্তফা ও হোসেন আলীর ছেলে আইবালী তার ছেলেকে মারধর করেন। এ ঘটনার পর তার ছেলে বাড়ি চলে আসে। পরে তাদের ভয়ে রাতে ছেলেকে প্রতিবেশীর বাড়িতে ঘুমানোর জন্য পাঠিয়ে দেন। কিন্তু রাত ১১টার দিকে তার ছেলেকে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে ঘুম থেকে উঠিয়ে স্থানীয় জয়নাতলী সূর্য তরুণ ক্লাব ঘরে নিয়ে যান অভিযুক্ত মোস্তফা ও হোসেন আলী। পরে সেখানেই তাকে মারধর করাসহ নানা ধরনের ভয়-ভীতি দেখানো হয়। একপর্যায়ে তার ছেলেকে পরদিন সালিসে মাথা ন্যাড়া করে কালি দিয়ে গ্রামে ঘোরানো হবে বলেও জানানো হয়। পরে তার মা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে তার ছেলেকে ছাড়িয়ে আনেন। কিন্তু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয় পরদিন ক্লাবে সালিস বৈঠকে তার ছেলেকে হাজির করতে হবে। আবুল কালাম আরও জানান, পরদিন ২৬ জানুয়ারি সকালে তার ছেলে ঘুম থেকে উঠে ক্লাবে সালিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় তিনি মাথার চুল কাটার জন্য ছেলেকে ১০০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে স্থানীয় ফুলবাড়িয়া বাজারে পাঠান। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই তার ছেলে মুঠোফোনে তাকে উদ্ধারের আকুতি জানান। পরে তিনি ও তার স্বজনরা স্থানীয় বনের ভেতর থেকে তার ছেলের দেহ উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ষোষণা করেন। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ছেলে নাকি ইদুরের ওষুধ খেয়ে মারা গেছে।তবে তার ছেলে সালিসের ভয়ে আত্মহত্যা করেছেন নাকি তাকে জোর করে বিষ খাওয়ানো হয়েছে-এ প্রশ্নের জবাব কোথাও পাচ্ছেন না বলেও জানান তিনি। তবে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আপোস করে দেবেন বলে কিশোরের বাবাকে জানিয়েছেন। কিন্তু প্রভাবশালী লোকজনদের ভয়ে থানায় যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না বলে জানান নিহত কিশোরের বাবা। নিহত কিশোরের মা জানান, তার আক্ষেপ ছেলে হত্যার বিচারের জন্য গত কয়েকদিন ধরেই এলাকার মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন কিন্তু কোনো বিচার পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য আতাউর রহমান জানান, এ ঘটনা সম্পর্কে তিনি জেনেছেন, তবে আপোসের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন। স্থানীয় জয়নাতলী সূর্য তরুণ যুব সংঘের সভাপতি শাহজামাল জানান, তিনি ঘটনার সময় ক্লাবে ছিলেন না। তবে স্থানীয়রা নাকি বিচারের জন্য ক্লাবে নিয়ে এসেছিল। তার ধারণা ছেলেটি হয়তো ভয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। তবে এ বিষয়টি স্থানীয়ভাবেই আপোস হয়ে যাবে বলে তিনি জানান। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদুল ইসলাম বলেন,‘যেহেতু এটি আত্মহত্যার বিষয়, সেহেতু থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। এ ছাড়াও কিশোরের লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে।’
সর্বশেষ
সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু
দর্পন টিভি - 0
সুনামগঞ্জের শাল্লায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকালে উপজেলার জনস্বাস্থ্যের নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদে...