অমর একুশে গ্রন্থমেলা, ২০১৯-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শুক্রবার বিকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বাঙালির প্রাণের এই মেলা উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী একুশে বইমেলার প্রতি তার ব্যক্তিগত ভালোলাগা ও বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেন।বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগে যখন ক্ষমতায় ছিলাম না, তখন বইমেলায় এসে অনবরত ঘুরে বেড়াতাম। এখন বলতে গেলে এক ধরনের বন্দি জীবনযাপন করতে হয়। সেই আসার আর সুযোগ হয় না। আসতে গেলে অন্যের অসুবিধা হয়। নিরাপত্তার কারণে মানুষের যে অসুবিধাগুলো হবে, সেটা বিবেচনা করে আর আসার ইচ্ছাটাও হয় না। আমার জন্য অন্যরা কষ্ট পাবে। কিন্তু সবসময় সত্যি কথা বলতে কী, মনটা পড়ে থাকে এই বইমেলায়।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বইমেলা কেবল বই কেনাবেচার জন্য নয়, বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। যতই আমরা যান্ত্রিক হই না কেন, বইয়ের চাহিদা কখনো শেষ হবে না। সাহিত্যচর্চাই পারে যুবসমাজকে সঠিক পথে ধরে রাখতে। বই পারে আমাদের চিন্তাচেতনা বিকশিত করতে। আজ আমরা অসাম্প্রদায়িক জাতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছি। আর কখনো বাংলাদেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের কোনো স্থান হবে না।’শিক্ষাগ্রহণ করে একটি জাতি আরও উন্নত হতে পারে, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন বইয়ের মলাট, বই শেলফে সাজিয়ে রাখা, বইয়ের পাতা উল্টে পড়ার মধ্যে যে আনন্দ আছে, আমরা সব সময় তা পেতে চাই। দুই মলাটের ভেতরে কাগুজে বইয়ের প্রতি ভালোবাসার কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে এ বইকে ডিজিটাল দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিতে হবে। অনলাইনে বই থাকলে তা বিশ্বের সবার কাছে দ্রুত পৌঁছে যায়। ডিজিটাল লাইব্রেরি হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। দেশের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রভাষা আর ইতিহাস নিয়ে নতুন প্রজন্মকে জানাতে আরও বেশি বই প্রকাশ করতে হবে।’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাঙালির ইতিহাস হচ্ছে ত্যাগের ইতিহাস। আর সেই ত্যাগের মধ্য দিয়ে আমাদের অর্জন। এইটুকু বলতে চাই, একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যখন আওয়ামী লীগ সরকারে ছিল, তখন এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ইউনেস্কো ঘোষণা দেয় এবং এটা আমরা অর্জন করি।’একুশে গ্রন্থমেলার এবারের উদ্বোধনীতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, বাংলা ভাষার প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ, লেখক-সাংবাদিক ও গবেষক মোহসেন আল-আরিশি (মিসর)। বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী। এ ছাড়া প্রকাশক প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।অনুষ্ঠানের শুরুতে সুরের ধারার শিল্পীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। এর পর পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠের পর সুরের ধারায় শিল্পীরা সূচনা সংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ পরিবেশন করেন। এর পর ভাষাশহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ বছর বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাওয়া চারজনের হাতে সম্মাননা তুলে দেন। তারা হলেন কবিতায় কবি কাজী রোজী, কথাসাহিত্যে মনোরোগ চিকিৎসক মোহিত কামাল, প্রবন্ধ ও গবেষণায় বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যের জন্য গবেষক-কলামিস্ট আফসান চৌধুরী। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-ভলিউম-২, ১৯৫১-১৯৫২’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। এ ছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত মোহসেন আল-আরিশি রচিত বইয়ের অনুবাদ ‘শেখ হাসিনা : যে রূপকথা শুধু রূপকথা নয়’। সব শেষে প্রধানমন্ত্রী অমর একুশে গ্রন্থমেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
সর্বশেষ
সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু
দর্পন টিভি - 0
সুনামগঞ্জের শাল্লায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকালে উপজেলার জনস্বাস্থ্যের নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদে...