কারামুক্ত হয়ে যা বললেন জাহালম

গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে রোববার দিবাগত রাত ১টার দিকে মুক্তি পেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার আসামি জাহালম। মুক্তির পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘কোন অপরাধ না করেও দুদক আমাকে মিথ্যা মামলায় তিন বছর কারাগারে আটকে রেখেছে। আমি দুদকের কঠিন বিচার চাই।’ দুদকের উদ্দেশে জাহালম বলেন, ‘তাদের কারণে আমি জেলখানায় অনেক কষ্টে দিন কাটিয়েছি। কারাগারের ওয়ার্ডে সেবকের কাজ-কর্ম করেছি। এর আগে আমি দুদককে বলেছিলাম, আমি সালেক নই, আমি জাহালম। কিন্তু তারা তা বিশ্বাস করেনি। এতে আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। আমি এর ক্ষতিপূরণ চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাকরি চাই। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের বিচার চাই। দুদক এভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানি করছে। ’ দুদক সুষ্ঠু তদন্ত না করে যাতে এভাবে আর কোনো মানুষকে হয়রানি না করেন তার অনুরোধ জানান জাহালম। তিনি বলেন, ‘আমাকে মুক্তি দেওয়ায় আদালতকে ধন্যবাদ জানাই। আমি ভাবতে পারিনি জীবনে কারামুক্ত হতে পারব কি-না। আজ মুক্তি পেয়ে আমার খুব ভালো লাগছে। ’ আজ সোমবার রাতের প্রথম প্রহরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে মুক্তির পর কারাফটকে সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে এসব কথা বলেন জাহালম।কাশিপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর সুপার সুব্রত কুমার বালা জানান, রোববার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে জাহালমের মুক্তির কাগজপত্র কারগারে আসে এবং রাত ১২টা ৫৭ মিনিটে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।  এর আগে ২০১৬ সালের ১৭ মে জাহালম এ কারাগারে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন। রাতে কাশিমপুর কারাফটকে অপেক্ষারত জাহালমের ভাই সাহানুর মিয়া দীর্ঘদিন পর কারামুক্তির পর ভাই জাহালমকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরেন এবং কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সাহানুর বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় ভুল আসামি জাহালমকে সব অভিযোগ থেকে অব্যহতি দেয় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। আমি আদালতকে ধন্যবাদ জানাই এবং যাদের ভুলের কারণে তার ভাই জেল খেটেছে তাদের উপযুক্ত বিচার এবং ক্ষতিপূরণ চাই।’ গত ২৮ জানুয়ারি দেশের শীর্ষ স্থানীয় একটি দৈনিকে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলায় নিরপরাধ জাহালমের জেলখাটা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আবু সালেকের (মূল অপরাধী) বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছিলেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে যাচ্ছিলেন জাহালম। তিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক। এর আগে জাহালমকে গত ২০১৬ সালের ৬ জুন নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ওই বছরের ২৭ মে তাকে কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ জাহালমকে ওই মামলায় সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন। নিরীহ শ্রমিক জাহালমকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে রাখার ঘটনায় দুদকের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেন আদালত।