ছোট ঘটনায় নজর নেই চট্টগ্রাম পুলিশের

চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময় সংঘটিত বড় ও আলোচিত অপরাধের ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারে সফলতা দেখিয়েছে পুলিশ। তবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপরাধ, এমনকি খুন-খারাবির তদন্তেও পুলিশের অগ্রগতি চোখে পড়ছে না। বরং এসব ক্ষেত্রে পুলিশের একটি গা-ছাড়া ভাব দেখা যায়। নিম্নবিত্ত পরিবারের মহিলা ও শিশুরা মূলত এই অবহেলার শিকার হচ্ছে।এ ধরনের নিম্নবিত্ত পরিবারের মহিলা ও শিশুদের ধর্ষণ থেকে শুরু করে হত্যার অনেকগুলো ঘটনার রহস্য পুলিশ উদ্ঘাটন করতে পারেনি। গ্রেপ্তার হয়নি একজন লোকও।চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম অবশ্য পুলিশের পক্ষ থেকে অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, পুলিশ সংঘটিত প্রতিটি অপরাধই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে অনুসন্ধান চালায়। কোনোটির তদন্তে তাড়াতাড়ি সাফল্য আসে, কোনোটিতে হয়তো একটু দেরি হয়। এ ক্ষেত্রে সবার উচিত ধৈর্য ধরে পুলিশকে সহযোগিতা করা।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এক বছরেরও কম সময়ে অন্তত ছয়টি ঘটনার কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। গত ২১ জানুয়ারি পাহাড়তলী সরাইপাড়া কনকা সিএনজি স্টেশনের কাছে ২৪ বছরের এক তরুণীকে ধর্ষণ করে চার যুবক। পরে পুলিশ ওই তরুণীকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করায়। তিনি এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশ ওই তরুণীর চিকিৎসা ব্যয় বহন করছেন। কথা বলে জানা গেছে, স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে বাসা থেকে বের হয়ে ওইদিন ফুটপাতে ঘুমান তিনি। আর রাতে চার যুবক তাকে ফুটপাত থেকে তুলে কনকা সিএনজি স্টেশনের কাছে নিয়ে ধর্ষণ করে।পুলিশ এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এমনকি ঘটনায় জড়িতদেরও শনাক্ত করতে পারেনি। পাহাড়তলী থানার ওসি সদীপ কুমার দাশ বলেন, আমরা নানাভাবে চেষ্টা করছি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে। দেখা যাক।গত ২৩ জানুয়ারি নগরীর কাট্টলী বেড়িবাঁধ এলাকায় ১২ বছরের এক মেয়েশিশুকে গুরুতর আহত ও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, মেয়েটিকে একটি কারের বনেট থেকে বের করে ফেলে দেওয়া হয়। এর পর কারটি দ্রুত ওই এলাকা ত্যাগ করে। খবর পেয়ে তাকেও পুলিশ উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসে। ২৯ জানুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়। মেয়েশিশুটির শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন ছিল। আর মলদ্বার ছিল রক্তাক্ত। পুলিশের ধারণা, সে কারও বাসায় কাজের মেয়ে হিসেবে কাজ করত। শরীরে আঘাত করার পাশাপাশি মৃত্যুর আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। মেয়েটি ছয় দিন বাঁচলেও এসব বিষয়ে কিছু বলতে পারেনি। এ ঘটনায়ও কোনো গ্রেপ্তার নেই।এর আগে নগরীর পাহাড়তলী মোল্লা পাড়ায় এক অজ্ঞাত মহিলার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায়ও কোনো গ্রেপ্তার নেই। এ ছাড়া গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি বাকলিয়া ইছাকের পুল থেকে অপহৃত শিশু নুদরাত (৮) হত্যার ঘটনায়ও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। ওইদিন বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় স্থানীয় একটি মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণির ছাত্রী শিশু নুদরাত। ৮ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হওয়ার স্থান থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে চকবাজার থানার সার্সন রোডের একটি জঙ্গলে তার লাশ পাওয়া যায়। শিশুটির গলায় জুতার ফিতা প্যাঁচানো ছিল। আর যৌনাঙ্গ থেঁতলানো ছিল বলে পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়।