খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে বিএনপি ব্যর্থ

‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে’ কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে গত এক বছরে ‘নির্যাতন উপেক্ষা’ করে রাজপথের আন্দোলন জোরদার করতে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির নেতারা। নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে এ অবস্থায় নেতারা বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব হবে না। রাজপথে আন্দোলন ছাড়া তার মুক্তিও সম্ভব নয়।নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির নেতাদের উচিত, দ্রুত সময়ে সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বৈঠক ডেকে কর্মসূচি নির্ধারণ করা। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে হরতালসহ রাজপথের শক্ত কর্মসূচি দিতে হবে। কারাবন্দি নেতা খালেদা জিয়ার বরাত দিয়ে অনেক নেতা বলে থাকেন, ম্যাডাম হরতাল-অবরোধ দিতে নিষেধ করেছেন, এ কথা মানা যাবে না।গতকাল শুক্রবার বিকালে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে নেতারা এ কথা বলেন। ‘গণতন্ত্রের মা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং দেশব্যাপী বিএনপির বন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে’ শিরোনামে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। একই দাবিতে আজ শনিবার রাজধানী ছাড়া সারাদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে জেলা বিএনপি।সমাবেশে বিএনপি নেতারা বলেন, খালেদা জিয়ার মতো দেশের জনপ্রিয় নেতাকে এক বছর ধরে কারাগারে থাকতে হবে, এটা আমরা চিন্তা করতে পারিনি। কেন আজ আমাদের এই ঘরের মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কর্মসূচি করতে হবে? খালেদা জিয়ার মুক্তিআন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে গেলাম; এখন সে আন্দোলন কোথায়? একটা কথা স্পষ্টÑ খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা না গেলে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবে না। তাই খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দলকে পুনর্গঠন ও নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করতে হবে। তা হলেই কেবল আন্দোলনের মাধ্যমে নেত্রীকে মুক্ত করে আনতে পারব।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘এক বছরে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারিনি। আমরা ব্যর্থ। নেত্রী আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। আসছে আন্দোলন সংগ্রামে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিতে হবে। নিজেরা বাঁচতে চাইলেও আন্দোলন করতে হবে।’পেশাজীবী নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক চক্রান্ত ও সরকারের ষড়যন্ত্রে খালেদা জিয়া এক বছর ধরে কারাগারে বন্দি। আজকে বিচার বিভাগ ও বিচারকের কাছে সুবিচার চাওয়া বাতুলতামাত্র। ফেব্রুয়ারি মাসের বাকি ১৮ দিনের মধ্যে প্রতিদিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করে আল্লাহর কাছে বলুন, এই জালেমের কাছ থেকে দেশকে রক্ষা করো, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করো। বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ও প্রার্থীদের নিয়ে প্রতিদিন অবস্থান কর্মসূচি করলে তাতে দেশবাসীর বিবেক জাগ্রত হবে। ঘরের ভেতরে হাতি-ঘোড়া মারলে হবে না, বিএনপিকে রাস্তায় নামতে হবে। এ ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। আপনারা এ অবস্থান কর্মসূচি করুন; আমিও আপনাদের কর্মসূচিতে থাকব।চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজপথে ঘুরে দাঁড়াতে দল পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন করার পক্ষে মতামত দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের যেসব অঙ্গসংগঠন-সহযোগী সংগঠনে যেসব দুর্বলতা আছে তা অতিদ্রুত সংশোধন করে সংগঠনকে শক্তিশালী করে কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। অতীতেও খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়েছি। আমরা অনেকের সঙ্গে একমতÑ শুধু দাবি চাওয়ার মাধ্যমে তাকে মুক্ত করা সম্ভব হবে না। আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে। খালেদা জিয়া হচ্ছেন ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’। এই গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হলে তার আগে তাকে মুক্ত করতে হবে। সেই মুক্তির জন্য সবাইকে ঐক্যভাবে, সুসংগঠিতভাবে সাহস নিয়ে ঘুরে দাঁড়াব, এই প্রত্যাশা আমরা আজকে করছি।খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গ টেনে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আজকে সরকারের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে, নিম্নতম আদালত তাদের সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে আমি মনে করি এবং অনেকে মনে করি, আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি অর্জন সম্ভবপর হবে না। আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। যদি আপনারা বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে চান, তা হলে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিন। এ ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।তিনি বলেন, এই যে আমার ভাইয়েরা এখানে আছেন, হাজার হাজার নেতাকর্মী আছেন, তারা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। আমরা যারা নেতৃত্বে আছি, আমরা সফল হইনি। সঠিকভাবে সেই আন্দোলনে আপনাদের যে শক্তি আছে, সেই শক্তিকে আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই মিলে যে দলকে আমরা ভালোবাসি, যে নেত্রীর জন্য আজকে সভা করছি, আমাদের পর্যায়ে মাথা হেঁট হয়ে যায়, এত বড় একটা আমাদের সংগঠন, এত বড় জনসমর্থন, সেই দলের নেত্রী তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, সেই দলের নেত্রী আজকে এক বছর জেলখানায় আছেন। এটা ভাবতেও চোখের পানি চলে আসে।সাবেক মন্ত্রী বলেন, এই সরকার বাংলাদেশকে বিরোধী দলবিহীন একটি দেশে পরিণত করেছে, এই রাষ্ট্র বেশিদিন টিকতে পারবে না। এ জন্য আমাদের অতিদ্রুত দলের এই পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের কর্মসূচি সফল করতে হবে, যেন খুব শিগগিরিই সময় আসবে আন্দোলন করে এই সরকারের পতন ঘটানোর।খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা দেশে দুইটি অস্বাভাবিক ঘটনা দেখলাম। একটা হচ্ছে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের কথা বলে ২৯ তারিখ রাতে ভোট ডাকাতি; আরেকটি হচ্ছে একটি মন্ত্রিসভা। সিনিয়র ৩৫ ব্যক্তি, যারা সাবেক মন্ত্রী তারা বাতিল। এটাও অস্বাভাবিক ঘটনা। পর পর দুইটি অস্বাভাবিক ঘটনা বেশিদিন টিকতে পারে না। অনেকে বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা হতাশ। তারা হতাশ নয়, মনঃক্ষুণ্ন, বিক্ষুব্ধ। শেখ হাসিনা এ দেশের জনগণের সরকার নয়। তাদের পক্ষে বেশি দিন আর এ দেশের মানুষকে প্রতারণা করে টিকে থাকা সম্ভবপর হবে না। আমার বিশ্বাস আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকেও আর বেশিদিন আটকে রাখা সম্ভব হবে না।স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, আসুন, শপথ গ্রহণ করিÑ আমরা রাজনৈতিকভাবে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনব।দলের প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী, সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীমের পরিচালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, আবদুস সালাম, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অঙ্গ সংগঠনের আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, হেলেন জেরিন খান, নুরুল ইসলাম নাসিম, আকরামুল হাসান।