‘সব সময় আমাকে ঘরে তালা মেরে রাখতো’

গত দু’বছরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে বাংলাদেশি গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়েই চলেছে। গৃহকর্মী হিসেবে যারা সৌদি আরবে পাড়ি দিয়েছিলেন তাদের অনেকেই দেশটিতে এখন নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসছেন। একের পর এক শারিরীক নির্যাতন আর হয়রানির কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় এসব নারীদের অনেকেই কর্মস্থল থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই আবার দূতাবাসের সেফ হোমে আশ্রয় নিচ্ছেন। এ রকমই নির্যাতনের শিকার কুমিল্লা জেলার মনি বেগম (২৬)। সম্প্রতি সৌদির মক্কায় নির্যাতন সইতে না পেরে পালাতে গিয়ে বাড়ির তিনতলার ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। কুমিল্লা জেলার বখরাবাদের ওই নারী গৃহকর্মী বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আহত গৃহকর্মীর বরাত দিয়ে বাংলাদেশি নার্স তসলিমা খান জানান, ১০ দিন আগে এক বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীকে আহতাবস্থায় সৌদি পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। মনি বলেন, ‘নির্যাতন সইতে না পেরে তিনতলা বাসার টয়লেটের পাইপ বেয়ে পালানোর চেষ্টা করি। সেখান থেকে নিচে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সবসময় আমাকে ঘরে তালা মেরে রাখতো, যাতে পালিয়ে যেতে না পারি। আমাকে ঠিকমতো খাবারও দেওয়া হতো না।’ কাপড় আয়রন করতে না পারায় বাসার গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রী আমাকে আয়রন মেশিনের ছ্যাকা দিতেন বলে জানান মনি বেগম। ভাগ্য বদলের আশায় মাসখানেক আগে গৃহকর্মীর ভিসায় সৌদি আরব আসেন মনি বেগম। মক্কায় এক সৌদি নাগরিকের বাসায় কাজ করতেন তিনি। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য মতে, ১৯৭৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৮৬ হাজার ৩২৫ জন নারী কর্মী সৌদি আরবে গেছেন। তবে কত সংখ্যক ফিরে এসেছেন তার পরিসংখ্যান জানা না গেলেও বিগত কয়েক বছরে সৌদি সরকারের কঠোরতা আর গৃহকর্তার নির্যাতনে একের পর এসব নারী কর্মীরা দেশে ফিরে আসছেন।