অর্থনৈতিক কূটনীতি জোরদারের চেষ্টা

টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর অর্থনৈতিক কূটনীতি বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে উন্নয়ন সহযোগী বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ করছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। একই সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কার্যক্রম শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে।উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে পুরনো সম্পর্ক ঝালাই ও বৈদেশিক অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) বৈঠক আয়োজনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। গত বছরের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় বিডিএফের বৈঠক হয়। সেখানে প্রায় ৩২টি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশ অংশ নেয়। আবার সে ধরনের বৈঠক আয়োজনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।ওই বৈঠকে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা), ইউএসএইড, ইউনিসেফ, ডিএফআইডি, আইডিবিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশের সঙ্গে আলোচনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। অর্থ বিভাগ ও ইআরডি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখন নেই। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক বিরাজ করছে। চলতি বছর রেকর্ড পরিমাণ ঋণ ও সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক বলে তিনি মনে করেন। এ ছাড়া এডিবি, আইএফসি, ডিএফআইডি, জাইকা ও আইএমএফের কাছ থেকেও রেকর্ড পরিমাণ ঋণ সহায়তা পাওয়ার আশা করছে সরকার। ইতোমধ্যে সরকারের নেওয়া মেগা প্রকল্পের অর্থায়নে এগিয়ে এসেছে উন্নয়ন সহযোগীরা। এর বাইরে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল লাইন-১, ২, ৩, ৪ ও ৫ নির্মাণসহ অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে এসব সংস্থা এগিয়ে আসছে। একই সরকারের ধারাবাহিকতায় সামনের দিনগুলোয় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত থাকবে বলে আশা করছে উন্নয়ন সহযোগীরা।
চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ২৮৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড় করেছে উন্নয়ন সহযোগীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, ডিসেম্বর পর্যন্ত উন্নয়ন সহযোগীরা ঋণ হিসেবে ছাড় করেছে ২৭৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আর অনুদান হিসেবে ছাড় হয়েছে ১৫ কোটি ডলার।গত অর্থবছরে ৬শ কোটি ডলারের বেশি ছাড় করে উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থাগুলো। চলতি অর্থবছর মেট্রোরেল, পদ্মা রেল সংযোগ, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলমান। তাই এবার গত বছরের চেয়ে বেশি বৈদেশিক অর্থ ছাড়ের আশা করছেন ইআরডির কর্মকর্তারা। এসব বিবেচনায় চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার ৭শ কোটি ডলারের বেশি বিদেশি সহায়তা ছাড়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ইআরডির হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে সরকার উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থাগুলোর ঋণের সুদ-আসল বাবদ ৭৪ কোটি ৭৬ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে। এর মধ্যে আসল হিসেবে পরিশোধ করা হয় ৫৬ কোটি ৯৬ লাখ ডলার, আর সুদ পরিশোধ করা হয়েছে ১৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার।তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বৈদেশিক সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকা অত্যন্ত জরুরি। বৈদেশিক সহায়তা ঋণের অর্থছাড়ের পরিমাণ বাড়ছে এটা বেশ ইতিবাচক। তবে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সুশাসনের দিকটা খেয়াল রাখাও জরুরি।