প্রেমে প্রতারণার শিকার পুরুষদের চাইতে নারীরাই বেশি হন। পুলিশের রিপোর্টিং সেন্টার ‘অ্যাকশন ফ্রড’ এর তথ্যমতে, রোমান্স জালিয়াতির শিকার নারী পুরুষের গড় বয়স ৫০ বছর এবং এর শিকার ৬৩ শতাংশই নারী। তারা পুরুষদের তুলনায় গড়ে দুই গুণ বেশি অর্থ-সম্পদ হারায়। সম্প্রতি এমন তথ্যই দিয়েছে ব্রিটেনের নতুন এক গবেষণা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর প্রেমে প্রতারণার (রোমান্স স্ক্যাম) খপ্পরে পড়ে গড়ে প্রত্যেকে ১১ হাজার ১৩৫ পাউন্ড অর্থ হারিয়েছে। ‘অ্যাকশন ফ্রড’ এর তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালে এই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে প্রায় পাঁচ কোটি পাউন্ড লুট হয়ে গেছে। এখানে প্রতারকরা মূলত মিথ্যা প্রেমের জাল বিছিয়ে রোমান্সের ভান করে ভিক্টিমের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে থাকে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে প্রেমে প্রতারণার এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছে নতুন গবেষণা। সেখানে বলা হয়েছে, প্রতারকরা সাধারণত ‘ছলে-বলে-কৌশলে’ অর্থ পাঠাতে বাধ্য করে বা টাকা আদায়ের চেষ্টা করে। আবার অনেক সময় তারা অর্থ সম্পদ লুট করতে রোমান্সের নামে ব্যক্তিগত সব তথ্য হাতিয়ে নেয়। পুলিশ জানায়, বিভিন্ন অনলাইন ডেটিং ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তু ঠিক করে প্রতারকরা। এ সময় তারা ফেইক প্রোফাইল ব্যবহার ভিক্টিমদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করে। ২০১৮ সালে, অ্যাকশন ফ্রডে রোমান্স জালিয়াতির ৪ হাজার ৫৫৫টি অভিযোগ জমা পড়ে। এই রোমান্স স্ক্যাম থেকে সে বছর মোট যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটা বিগত বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেড়ে যায়। তবে এই প্রতারণার ঘটনার মূল সংখ্যা আরও বড় বলে জানিয়েছে পুলিশ। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই এই বিষয়গুলোকে সামনে না এনে নিভৃতেই এই কষ্ট ও ক্ষতির বোঝা বয়ে বেড়ান ভিক্টিমরা। সিটি অব লন্ডন পুলিশের অর্থনৈতিক অপরাধ বিভাগের কমান্ডার কারেন ব্যাকস্টার বলেন, ‘প্রতি বছর রোমান্স জালিয়াতির ঘটনা যেভাবে বাড়ছে, তাতে ক্ষতিগ্রস্তরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছেন তেমনি মানসিকভাবেও ভেঙ্গে পড়ছেন। রোমান্স জালিয়াতির শিকার হওয়া মানুষগুলোর যে মানসিক ক্ষতি হয় সেটা প্রায়শই কাটিয়ে ওঠা অনেক কঠিন হতে পারে।’ ডেটিং সাইট ব্যবহারকারীদের এ কারণে শুধু চেহারা বা লোক দেখানো বিষয়বস্তু দেখে মানুষকে মূল্যায়ন না করার আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা। এদিকে রোমান্স জালিয়াতির অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের বেশিরভাগই মূলত অনলাইনে অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি করেছিল। আর ভিক্টিমরাও তাদের বিচার করছিল বাহ্যিক বা ভার্চুয়াল চাকচিক্য দেখে। না হলে মুখের কথাতেই বিশ্বাস করে বসেছিল। আর সেজন্য তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের প্রোফাইল, কাজের স্থান, অথবা খুব আকর্ষণীয় তথ্য ও ছবিতে সাজিয়ে রাখতো। যেসব অপরাধীরা রোমান্স জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত তাদের প্রধান অস্ত্র হলো নিজেদের ঝকঝকে একটি প্রোফাইল, সেখানে তারা সম্পদ ও জীবনযাত্রা সংক্রান্ত আকর্ষণীয় কিছু তথ্য দিয়ে থাকে যেন সহজেই শিকারকে ফাঁদে ফেলতে পারে। রোমান্স স্ক্যামের শিকার হলে সেটা যদি তৎক্ষণাৎ পুলিশকে জানানো হয় তাহলে তারা তদন্তে সহায়তা করতে পারে, কিন্তু প্রায়শই তারা কোনো টাকা ফেরত আনতে পারে না। কারণ নিজেদের পরিচয় বা অবস্থান ধামাচাপা দিতে প্রতারণাকারীরা সাধারণত ভুয়া আইপি ঠিকানা বা অনিবন্ধিত মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে থাকে, যেন তাদের সম্পর্কে পরবর্তীতে কোনো তথ্য পাওয়া না যায়। যার সঙ্গে আপনি কখনো দেখা করেননি অথবা যার সম্পর্কে আপনি ভালোভাবে জানেন না তাকে কখনও অর্থ পাঠাতে যাবেন না। এ ছাড়া নিজের ব্যক্তিগত তথ্য সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করার আগে দুবার চিন্তা করুন। কেননা এসব কন্টেন্ট দিয়ে অনেকেই আপনাকে হুমকি, প্ররোচনা বা ঘুষ দেওয়ার জন্য চাপ দিতে পারে।