বোরকা পরেই চার বছরের শিশুর সামনে মা জেরিন আক্তার মিলির (২৬) মুখ মশালের আগুনে ঝলসে দেন তার প্রেমিক দাবিদার নাঈম ইসলাম। গত ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটান তিনি। গতকাল শনিবার ভোর ৫টার দিকে ঢাকার ধামরাই উপজেলার বাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কর্মকর্তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ স্বীকারোক্তি দেন তিনি। পিবিআই প্রধান কার্যালয়ের সহায়তায় রাজশাহী পিবিআই সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার করেন। গতকাল রাজশাহী পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আযাদ এসব তথ্য জানান।নাঈমের বরাত দিয়ে আবুল কালাম আযাদ আরও জানান, মিলির স্বামী মিজানুর রহমান একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। পাঁচ বছর আগে তিনি ঢাকায় ছিলেন। তখন স্বামীর সঙ্গে থাকতেন মিলি এবং ইডেন কলেজে অনার্সে পড়তেন। এ সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ধামরাই কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র নাঈমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে কথাবার্তা চলতে থাকে। একপর্যায়ে প্রেম হয়ে যায়।স্বামীর অজান্তে নাঈমের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতেন মিলি। এরই মধ্যে এক সন্তানের জন্ম দেন তিনি। প্রায় তিন বছর আগে মিজানুর স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে পুঠিয়ার বানেশ্বরে চলে আসেন। এর পরও নাঈমের সঙ্গে মিলির যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। গেল বছরের নভেম্বরে নাঈম বানেশ্বর ঘুরে যান। এসবের কিছুই জানতেন না মিজানুর।নাঈম পিবিআইকে জানান, মিলি তার প্রথম প্রেমিকা। বয়সে বড় হলেও স্বামী-সন্তান রেখে পালিয়ে এসে তাকে বিয়ে করতে বলেছিলেন তিনি। কিন্তু মিলি রাজি না হয়ে ফেসবুকে ব্লক করে দেন। ফোনকল ধরাও বন্ধ করে দেন। খোঁজ নিয়ে নাঈম জানতে পারেন, আরও কয়েক ছেলের সঙ্গে মিলির সম্পর্ক রয়েছে। এই ক্ষোভ থেকে তিনি তার মুখ আগুনে ঝলসে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরই অংশ হিসেবে ২৮ জানুয়ারি ঢাকা থেকে বানেশ্বরে আসেন। এর পর বানেশ্বরের হোটেল রূপসার ২২ নম্বর কক্ষে ওঠেন। ওই দিন সন্ধ্যায় দুই বোতল অকটেন কেনেন। আর ঢাকার এক বান্ধবীর কাছ থেকে একটি বোরকা নিয়ে আসেন।সেটি পরে পর দিন ভোর থেকে মিলির বাড়ির সামনে ওঁৎ পেতে থাকেন। মিলি সে পথ দিয়েই ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলেন। এ সময় একটি মশালে অকটেন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে সেটি তার মুখে ছুড়ে দিয়ে পালিয়ে যান নাঈম। আগুনে সন্তানের সামনেই মিলির মুখ ঝলসে যায়। তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা গিয়ে মুখে পানি ঢেলে আগুন নেভান। পরে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। তার অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। পোড়া মুখ নিয়ে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে থানায় মামলা করেন তার ভাই জিসান হোসেন।ধামরাই উপজেলার আইনগঞ্জের বাসিন্দা নাঈম ইসলাম (২৩)। তিনি ধামরাই কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের (সম্মান) শেষবর্ষের ছাত্র। তার বাবার নাম হাসান আলী।এদিকে মিলি রাজশাহী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। স্বামী-সন্তানের সঙ্গে পুঠিয়ার বানেশ্বরে থাকেন তিনি।পিবিআই কর্মকর্তা আবুল কালাম আযাদ জানান, পিবিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ের বিশেষায়িত একটি দলের সহায়তায় নাঈমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলা তদন্ত করছেন পুঠিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক মহিনুল ইসলাম। পিবিআই মামলাটির ছায়া তদন্ত করছিল। তিনি আরও জানান, বোরকা পরে আক্রমণ করায় এ ঘটনার ক্লু পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নাঈমকে শনাক্ত করতে সক্ষম হন। তিনি ঘটনা স্বীকার করেছেন। তাকে পুঠিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।