সংসদের চেয়েও দেড়শ কোটি বেশি ব্যয় উপজেলা নির্বাচনে

আসন্ন পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য ৯১০ কোটি টাকার বাজেট চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পাঁচ বছর আগের উপজেলা নির্বাচনের ব্যয়ের চেয়ে এটি দ্বিগুণেরও বেশি। আর গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে তা দেড়শ কোটি টাকা বেশি। সংসদ নির্বাচনে ব্যয় হয় ৭৬৪ কোটি টাকা। ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে সব মিলিয়ে ব্যয় হয়েছিল ৪০০ কোটি টাকার মতো। ইসি সচিবালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।জানা গেছে, এবারের উপজেলা নির্বাচনের বাজেটে নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৭৪০ কোটি টাকা। এর অর্ধেকেরও বেশি ব্যয় হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেছনে। আর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পরিচালনা ও এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১৭০ কোটি টাকা। যদিও প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ইভিএম ব্যবহার হবে না।পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে আগামী ১০ মার্চ ৬৯টি উপজেলায় এবং দ্বিতীয় ধাপে ১৮ মার্চ ১২৯টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে।ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের পারিশ্রমিক হিসেবে যথাক্রমে ৩ হাজার, ২ হাজার ও ১ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। এবার দেওয়া হচ্ছে যথাক্রমে ৪ হাজার, ৩ হাজার ও ২ হাজার টাকা করে। এ ছাড়া নির্বাচনী মালামালের দাম বেড়ে গেছে। এ কারণে নির্বাচনী ব্যয় বেড়েছে।সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যয় হিসেবে এ পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়েছে ৭৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেছনে ৪২৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।ইসি সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ দ্বিতীয় ধাপের তফসিল ঘোষণার সময় বলেছেন, যথাযথ প্রস্তুতি না থাকায় প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। এ অবস্থায় ইভিএমের জন্য ১৭০ কোটি বরাদ্দ করার বিষয়টি নিয়ে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে।প্রশিক্ষণ ব্যয় নিয়ে ইসিতে ক্ষোভএকাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রশিক্ষণ খরচের প্রায় দ্বিগুণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্যয় করবে ইসি। এ খরচের বিভিন্ন দিক নিয়ে ইসি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ পর্যন্ত সারাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচন এবং সংসদ উপনির্বাচনে প্রশিক্ষণ বাবাদ ইসির ব্যয় হয়েছে ৬৪ কোটি ১৫ লাখ ১১ হাজার ৮৩১ টাকা। অথচ শুধু আসন্ন পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রশিক্ষণে খরচ হবে ৮৮ কোটি ৫৭ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা।উপজেলা পরিষদের প্রশিক্ষণ ব্যয়ের তালিকা থেকে জানা যায়, উপজেলা পরিষদে ইভিএমে ভোট নেওয়ার জন্য ৬৫০ জনের দুদিনের ট্রেনিংয়ের জন্য খরচ ৬৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ৬৫০ জনের প্রশিক্ষণ খরচ ৬০ লাখ ৮৪ হাজার। রিটার্নিং অফিসারের ৬৪ জনের খরচ ৯ লাখ ৩২ হাজার ৭০০ টাকা। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ৪৯১ জনের খরচ ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। ইএমএস ও সিআইএমএস ট্রেনিংয়ে ১২০৬ জনের জন্য খরচ ৫৭ লাখ ৯১ হাজার ৮০০ টাকা। এ ছাড়া, প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৬ জনের অর্ধ দিনের জন্য খরচ ৪৬ কোটি ৫৯ লাখ ৮৪ হাজার ১০০ টাকা। মাঠ পর্যায়ের পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ ২২ হাজার ১৮০ জনের একদিনের খরচ ২ কোটি ৬৮ লাখ ৫৭ হাজার। ইভিএমে ভোটগ্রহণের জন্য ৬০টি নির্বাচনী এলাকার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ১৫ হাজার ৫১৯ জনের জন্য খরচ ২৬ কোটি ৩৯ লাখ ৬১ হাজার ৯০০ টাকা। ইভিএমে অনুশীলনমূলক ভোটিংয়ের জন্য ৬ হাজার ৫৯২ কেন্দ্রের একদিনের ট্রেনিং খরচ ১০ কোটি ৩৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা ধরা হয়েছে।ইসির অনেক কর্মকর্তার অভিযোগ- অনেকে ট্রেনিংয়ে উপস্থিত না থাকলেও তাদের নামে বিল হচ্ছে। আবার অনেক সময় একই ট্রেইনার একাধিক ট্রেনিং নিচ্ছেন।