অনলাইনে হয়রানির মাত্রা ও গভীরতা অত্যন্ত ব্যাপক। অনলাইনে যৌন হয়রানি বা শোষণ থেকে শিশুরাও বাদ পড়ছে না। অনেক শিশু আত্মহত্যা করেছে এবং অনেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বেঁচে গেছে-এমন সংবাদ আমরা মাঝেমধ্যে মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি। কিন্তু বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থার কারণে অনেক ঘটনা অপ্রকাশিতই থেকে যায়। হয়রানির শিকার শিশুটি জীবনভর দুর্বিষহ যন্ত্রণা বয়ে চলতে হয়। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য অনুসারে, প্রতি আধা সেকেন্ডে একজন শিশু প্রথমবারের মতো অনলাইন জগতে প্রবেশ করছে। বাংলাদেশেও প্রতিদিন শিশুরা ব্যাপকহারে অনলাইন জগতের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এ যুক্ত হওয়া শিশুদের জন্য বিশাল সুযোগ, এতে শিশুরা উপকৃত হচ্ছে তাতে সন্দেহ নেই। তবে একই সঙ্গে শিশুরা ঝুঁকি ও ক্ষতির মুখেও পড়ছে, যার মধ্যে রয়েছে ক্ষতিকর কনটেন্ট, যৌন হয়রানি ও শোষণ, সাইবার উৎপীড়ন ও তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার। শিশুরা সাধারণত ইন্টারনেট সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে, প্রশিক্ষিত না হয়েই যুক্ত হচ্ছে। অভিভাবকরও ইন্টারনেট সম্পর্কে ভালো জানেন কিংবা ইন্টারনেটের ঝুঁকি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, সন্তানের সুরক্ষার ব্যাপারে সচেতন-তেমনটি নয়। ‘বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ শিশু ১১ বছর বয়সের আগেই ডিজিটাল বিশ্বে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে অনলাইনে হয়রানি, সহিংসতা, ভয়ভীতি ও নিগ্রহের শিকার হয় ৩২ শতাংশ শিশু’ (সূত্র : শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে ইউনিসেফের জরিপ, প্রথম আলো, ০৬.০২.২০১৯)। ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করার বদলে আমরা কেবল আলোচনাই করে যাচ্ছি। তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। শিশুদের সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব সরকার, পরিবার, স্কুল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সবার। বাংলাদেশে সাধারণত ইন্টারনেটে নারী ও শিশুদের ব্যাপারে প্রতিশোধমূলক অশ্লীল বর্ণনা, শিশু সম্মাননা শোষণ বা ঘৃণাযুক্ত বর্ণনা প্রচার, ব্ল্যাক মেইল, নকল আইডির মাধ্যমে হয়রানি এবং নকল বিজ্ঞাপন বা নকল খবর প্রচার করে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি ও শোষণ করা হয়। শিশু যৌন হয়রানি অনলাইন যৌন নির্যাতনের একটি ফর্ম, যা ১৮ বছরের কম বয়সী তরুণদের জোর করে জড়িত করা হয়। প্রযুক্তি শিশুদের যৌণ শোষণ সহজতর করেছে, যেখানে আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও ইন্টারনেটের মাধ্যমে পোস্ট করা বা শেযার করা হয়েছে তাতে শিশুদের অ্যাক্সেস করার ক্ষেত্রে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অনলাইনে যৌন হয়রানি বা শোষণ প্রতিরোধ বা প্রতিকারের ক্ষেত্রে আমাদের বেশকিছু শক্ত সমস্য মোকাবিলা করতে হয়। যেমন, সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয় এবং আাইনগত বিভিন্ন ঝামেলা এড়ানোর জন্য মানুষ মামলা বা জিডি দাখিলের জন্য থানায় যায় না। আমাদের দেশে এখনো সাইবার তদন্ত ও সাইবার ফরেনসিক ইস্যুতে তদন্ত কর্মকর্তারা যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করেননি। ৯০ শতাংশ বা এরও বেশি শিকার মহিলা। তাই আমাদের তাদের সচেতন করা দরকার। সাইবার বিশ্বের নিরাপদ স্থান সম্পর্কে মানুষ সচেতন নয়। অন্যদিকে একমাত্র সাইবার ট্রাইবুনালটি ঢাকায় অবস্থিত এবং দক্ষ আইনবিদেরও অভাব রয়েছে। ইন্টারনেটের সঙ্গে বেশি যুক্ত থাকে শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা। অনলাইনে যৌন হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে প্রাথমিকভাবে উল্লেখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে অনুসরণ করা জরুরি। সামাজিক মিডিয়া অ্যাকাউন্টের জন্য আমাদের আলাদা ই-মেইল ঠিকানা ব্যবহার করা উচিত; অনলাইনে ব্যক্তিগত ঠিকানা বা কোনো বিবরণ পোস্ট করা উচিত নয়; কোনো সংবেদনশীল স্থানে বা সংবেদনশীল সময়ে আমাদের ফোন ব্যবহার করা উচিত নয়; সামাজিক মিডিয়া অ্যাকাউন্টে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত; কোনো বিএফ বা জিএফ বা স্বামী বা স্ত্রী কোন প্রেমমূলক ছবি বা ভিডিও হস্তান্তর করা উচিত নয়; ভার্চুয়াল বন্ধু তৈরি করার আগে আমাদের দুবার চিন্তা করা উচিত; অনলাইনে কোনো অজানা লিংকে ক্লিক করা উচিত নয়; নিজের পাসওয়ার্ড অন্য কাউকে না দেওয়া; নিরাপদ বা নিরাপত্তামূলক সফ্টওয়্যার ব্যবহার করা; যেসব গেমস ইন্টারনেট অপশন ছাড়াই খেলা যায়, সেগুলো খেলার সময় ইন্টরনেট সংযোগ বন্ধ করে রাখা; ব্রাউজারের কিছু অপশন প্রয়োজনে নিষ্ক্রিয় বা সক্রিয় করে রাখা: Popup Block, Site Block ইত্যাদি; অনলাইনে অপরিচিত কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা; অনলাইনে কেউ উত্ত্যক্ত করলে, সন্দেহজনক আচরণ করলে তা মা-বাবাকে বলা; কারও অনুরোধে ওয়েব ক্যামেরা বা মোবাইল ফোনের ক্যামেরার সামনে কোনো ধরনের শারীরিক অঙ্গ-ভঙ্গি কিংবা অঙ্গ প্রদর্শন না করা। আমাদের প্রিয় এবং আদরের শিশুদের ইন্টারনেটের অপব্যবহার থেকে সুরক্ষা দিতে প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা বা ব্যবস্থা। এ দায়িত্ব কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারকে পালন করতে হবে। সরকারকে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে। আইনকে যুগপোযোগী করতে হবে। সরকার পর্ণো-সাইটগুলি ব্লক করার ব্যবস্থা করতে পারে। শিশুদের সুরক্ষায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ইন্টারনেটের অপব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে পারে এবং এ যাবতীয় ঘটনা পরিবীক্ষণসহ ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পরিবারের। পিতামাতাকে অধিকতর দায়িত্বশীল হতে হবে। ইন্টারনেটের ঝুঁকি সম্পর্কে নিজেদের জানতে হবে এবং সন্তানদের সচেতন করতে হবে। শিশুর ইন্টারনেট ব্যবহার নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে, শিশুরা যাতে হয়রানির শিকারের সম্ভাবনা সৃষ্টি হলে কিংবা হয়রানির শিকার হলে পিতা-মাতার সঙ্গে শেয়ার করতে পারে। সংশ্লিষ্ট সকলকে মিলে শিশুর নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে।শিশু নিজে সচেতন হয়ে নিজের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখবে, সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজ এবং পরিবার যদি সমন্বিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে তবে শিশুদেরকে আমরা ইন্টারনেটের ভয়াল কালো থাবা থেকে রক্ষা করতে পারবো। আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টরনেট ব্যবস্থা গড়ে তোলা। আসুন শিশুদের কল্যাণে আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করি। শিশুকে সুরক্ষা দেই। আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করি।
সর্বশেষ
সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু
দর্পন টিভি - 0
সুনামগঞ্জের শাল্লায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকালে উপজেলার জনস্বাস্থ্যের নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদে...