জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই বিএনপি এতে অংশ নিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যদিও বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল, কিন্তু তারা জানত তাদের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে, নির্বাচনে জয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই; তাই তারা সব সময় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে জার্মানির মিউনিখে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। নির্বাচনে বিএনপির পরাজয়ের কারণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ২০০৮ সালের নির্বাচনে ২৮ আসনে জিতেছে। সেই নির্বাচনের স্বীকৃতি সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। এবার ২০০৮ সালের চেয়েও ভালো ফল তারা আশা করে কীভাবে? ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি আন্দোলনের নামে সারাদেশে যে সন্ত্রাসী তা-ব চালিয়েছিল, জনগণ তা ভুলে যায়নি। তিনি আরও বলেন, বিএনপি পরাজয়ের বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছিল, তারা নির্বাচনে জয়লাভের জন্য আন্তরিক ছিল না। তাই হেরেছে, এটিই বাস্তবতা। জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদের সঞ্চালনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে জার্মানির মিউনিখে পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল শুক্রবার নিরাপত্তা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ওপর আলোচনায় অংশ নেন তিনি। ভোটের আগে সংলাপে অংশ নেওয়া সব রাজনৈতিক দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, এবারের নির্বাচনে প্রতিটা দলেরই অংশগ্রহণ রয়েছে।এত বিশাল আকারে অংশগ্রহণ অতীতে দেখা যায়নি। ৮০ শতাংশ ভোট পড়ার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, এই নির্বাচনে একেবারে গ্রাম থেকে শুরু করে শহরে, সব শ্রেণিপেশার মানুষ ভোট দিয়েছে। এমনকি ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেটা অতীতে কখনো হয়নি। কেন তারা ভোট আওয়ামী লীগে দিল? একটিই কারণ, তারা অতীতেও আওয়ামী লীগকে দেখেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের দুর্নীতিতে দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং বিএনপি শাসনামলে দেশের দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের বিস্তারের কথাও শেখ হাসিনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মানুষ কেন তাদের ভোট দেবে, সেটিই প্রশ্ন। জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া, ভোটে জিতলে প্রধানমন্ত্রী কে হবে তা নির্ধারণ না করা এবং মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণেও জনগণ বিএনপিকে ভোট দেয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি। স্বাধীনতা সংগ্রামের মতো ভাষা আন্দোলনেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে ইতিহাস থেকে সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান যেমন খুব চালাকির সঙ্গে মুছে ফেলা হয়েছিল। একইভাবে স্বাধীনতা অর্জনে তার যে অবদান সেটিও একসময় মুছে ফেলা হয়েছিল। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সাল থেকেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র। ভাষা আন্দোলনে, রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা অর্জনের ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর যে অবদান রয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তখনকার পাকিস্তানি গোয়েন্দা নথিতেও এসব তথ্য রয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বন্দি অবস্থাতেই তিনি যখন আদালতে বা হাসপাতালে আসতেন, তখনই নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং নির্দেশনা দিতেন। বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। প্রবাসীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজকের যতটুকু অর্জন তার পেছনে প্রবাসীদের বিরাট অবদান রয়েছে। এ অবদান শুধু রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেই নয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও। হোটেল শেরাটনে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে মিউনিখে জড়ো হন প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। শেখ হাসিনা বলেন, যেসব জায়গায় বাঙালি আছে, কিন্তু সংগঠন নেই, সেসব জায়গায়ও সংগঠন করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ডব্লিউএইচওর আরও বেশি সম্পৃক্ততার তাগিদ প্রধানমন্ত্রী গতকাল মিউনিখে নিরাপত্তা সম্মেলনের ৫৫তম সংস্করণে ‘হেলথ ইন ক্রাইসিস-ডব্লিউএইচও কেয়ার্স’বিষয়ক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন। তিনি বিশ্বের সব নাগরিকের সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডব্লিউএইচও) আরও বেশি সম্পৃক্ত হওয়ার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিষয়ক এসডিজি অর্জনে বিশ্বের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ডব্লিউএইচওকে আরও সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমাদের সরকার সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম সম্প্রসারণে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং এক বছরের কম বয়সী শিশু ও ৬৫ বছরের অধিক বয়সের লোকদের জন্য বিনাখরচে স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করেছে। শেখ হাসিনা উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর স্বাস্থ্য নিরাপত্তা কার্যক্রমে ভবিষ্যৎ ও জরুরি অর্থায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ডব্লিউএইচও সংকটের বিশালতা, পুঁজি সংকট ও সক্ষমতার অভাবের কারণে প্রায়ই ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রধান মানবিক সংস্থা হিসেবে ডব্লিউএইচও সঠিকভাবেই সবার স্বাস্থ্য ও সুখের নিশ্চয়তার জন্য সরকারগুলোর কাছ থেকে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সহযোগিতা পাওয়ার যোগ্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসেবা খাতে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির ব্যবহার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেয়েছে। গত তিন দশক ধরে বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় জনস্বাস্থ্যসেবাকে সব নাগরিকের কাছে সহজলভ্য ও প্রবেশগম্য করে গড়ে তোলার বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ
সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু
দর্পন টিভি - 0
সুনামগঞ্জের শাল্লায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকালে উপজেলার জনস্বাস্থ্যের নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদে...