দেশের যুবসমাজকে ধ্বংস করছে মরণনেশা ইয়াবা। আর এসব পাচারের প্রধান রুট টেকনাফ সীমান্ত। ফলে ইয়াব যেন এক রকম সামাজিক ব্যবসায় রূপান্তর হয়েছে ওই এলাকায়। কয়েক বছর ধরে এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে সরকার। মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পেরিয়ে যেন কোনো ইয়াবা বড়ির চালান দেশে ঢুকতে না পারে, সে জন্য নানা প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কথিত বন্দুকযুদ্ধেও প্রাণ যায় অনেক ইয়াবাকারবারির। কিন্তু এতকিছুর পরও থামানো যায়নি এই মরণনেশার কারবার। শেষ পর্যন্ত ইয়াবাকারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি তাদের আত্মসমর্পণ করিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। প্রথমবারের মতো আজ শনিবার সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিপির উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে টেকনাফের ১০২ ইয়াবাকারবারি আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে। তারা লক্ষাধিক ইয়াবা বড়ি ও বিপুলসংখ্যক অত্যাধুনিক অস্ত্র-গোলাবারুদ জমা দেবে পুলিশের কাছে। তাদের আলোর পথে ফেরাতে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে একটি আত্মসমর্পণ মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের সাবেক এমপি আবদুুর রহমান বদির ভাইসহ পরিবারের ১০ ইয়াবাকারবারি আত্মসমর্পণ মঞ্চে উঠছেন। সবার সঙ্গে তারাও আত্মসমর্পণ করবেন। তবে এ তালিকায় নেই আবদুর রহমান বদির নাম। তিনি নেপথ্যে থেকে এ প্রক্রিয়ায় সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। কক্সবাজারের ইয়াবাকারবারে যুক্ত যে ১ হাজার ১৫১ জনের নাম গোয়েন্দা তালিকায় রয়েছে, তার শীর্ষেই রয়েছে আবদুর রহমান বদির নাম। কয়েক বছর ধরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। বদি অবশ্য বলে আসছেন, তিনি ইয়াবাকারবারে যুক্ত নন। এটা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তাই বিতর্ক এড়াতে কৌশলগত কারণে সাবেক এ সাংসদকে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানায়নি পুলিশ। জানা গেছে, আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে গতকাল শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তার আগের দিন বৃহস্পতিবারই সেখানে পৌঁছান পুলিশ মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারীসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা। আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) করা একটি তালিকায় কক্সবাজারে ইয়াবাব্যবসায় যুক্ত ১ হাজার ১৫১ জনের নাম রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায়ও এসব নাম উঠে আসে। তাদের অন্তত ৩০ ইয়াবাব্যবসায়ী এবার আত্মসমর্পণ করছেন। তাদের আগেই জেলা পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার থেকে মুঠোফোনও সরিয়ে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আজ আত্মসমর্পণের দিনই তাদের নামে দুটি মামলার প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। একটি ইয়াবা মামলা, অন্যটি অস্ত্র আইনে। তবে দুটি মামলার ক্ষেত্রেই সরকারি আইনি সহায়তা পেতে যাচ্ছে ইয়াবাকারবারিরা। সূত্র জানায়, আত্মসমর্পণের অপেক্ষায় থাকা ইয়াবাকারবারিদের প্রায় সবার নামেই রয়েছে মাদক মামলা। এর মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন আবদুর রহমান বদির বড় ভাই শুক্কুর আলী। তার নামে ২০টি মাদক মামলা। টেকনাফের স্থানীয়রা জানান, এ শুক্কুর আলীর হাত ধরেই টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসার গোড়াপত্তন ঘটে। বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিক শীর্ষ এই ইয়াবা গডফাদার দীর্ঘদিন দুবাই ছিলেন। সরকারের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর আত্মসমর্পণ করতে সপ্তাহখানেক আগে দেশে ফেরেন। এ মুহূর্তে ইয়াবার প্রবেশদ্বারখ্যাত কক্সবাজারে ইয়াবাব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণের বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। পক্ষে-বিপক্ষে চলছে জোর আলোচনা। তবে স্থানীয়দের চাওয়া, শেষ পর্যন্ত ইয়াবাকারবারিদের নির্মূল করা হোক পর্যটন শহর কক্সবাজার থেকে। আলোচিত নাম সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি নিজেও আত্মসমর্পণ করবেন কিনা, এ নিয়েও রয়েছে আলোচনা। তবে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, বদি নিজে আত্মসমর্পণের জন্য সরকারের শীর্ষ মহলের সবুজ সংকেত চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটি না পাওয়ায় তিনি আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় থাকছেন না। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের এক প্রতিবেদকের মধ্যস্থতায় হতে যাচ্ছে এ আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া। এ তালিকায় থাকা ইয়াবাব্যবসায়ীরা হলেনÑ শরিফুল ইসলাম শফিক, আবদুুর রহমান, শফিউল্লাহ, মো. সালাম, হেলাল, মো. সেলিম, আবদুল হামিদ, মো. সিরাজ, শাহ আলম, জিয়াউর রহমান, নুরুল কবির, আলমগীর ফয়সাল, শাহ আলম, রেজাউল করিম মেম্বার, মো. আমিন, একরাম হোসেন, মোজাম্মেল হক, দিদার মিয়া, জামাল মেম্বার, জাহাঙ্গীর আলম, জুবায়ের হোসেন, নূর মোহাম্মদ, আমিনুর রহমান, কামরুল হাসান রাসেল, শাহেদ রহমান নিপু ও নজরুল ইসলাম। এদের মধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা গডফাদার রয়েছেন। এদিকে আত্মসমর্পণকারী আসামিদের জন্য কক্সবাজার জেলা কারাগারে প্রস্তুত করা হয়েছে একটি বিশেষ সেল।বিষয়টি দেখভাল করছেন জেলার কারা কর্মকর্তারা। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ‘সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়াও শুরু হবে।’ এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, আত্মসমর্পণ ইয়াবার নিয়ন্ত্রণে হয়তো একটিমাত্র উপায় হবে। কিন্তু এর ওপর ভর করে পুরোপুরি সাফল্য পাওয়া যাবে না। এর জন্য সরকারকে মাদকের গডফাদার নির্মূল এবং মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন আরও জোরদার করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিকটিমোলজিক অ্যান্ড রেস্টরেটিভ জাস্টিস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক আমাদের সময়কে বলেন, ‘আত্মসমর্পণকে প্রাথমিকভাবে সাধুবাদ জানাতে চাই। কারণ উদ্যোগটি যদি শেষ পর্যন্ত সঠিকভাবে এগোয়, তা হলে এর সুফল পাওয়া সম্ভব। একই সঙ্গে আমাদের মনে রাখতে হবে, মাদককে শুধু আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হিসেবে দেখলে হবে না। এ নিয়ে বহুমুখী কাজ করতে হবে এখনই।’
সর্বশেষ
সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু
দর্পন টিভি - 0
সুনামগঞ্জের শাল্লায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকালে উপজেলার জনস্বাস্থ্যের নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদে...