রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর যে নিপীড়ন সংঘটিত হয়েছে তাতে নিরাপত্তা বাহিনীর একাংশ এই নিপীড়ন চালিয়ে থাকতে পারে বলে জাপানি সংবাদমাধ্যম ‘আশাহি শিমবুনকে’ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হলাইং। রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নে এই প্রথম কোনো সংবাদমাধ্যমকে এমন স্বীকারোক্তি দিলেন তিনি। তবে ওই নিপীড়নে সেনা-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অতীতের ধারাবাহিকতায় আবারও নাকচ করে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা নিপীড়নের ‘সুনির্দিষ্ট প্রমাণ’ নেই। গত শুক্রবার আশাহি শিমবুনে প্রকাশিত সেই সাক্ষাৎকারের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপি এসব তথ্য জানিয়েছে। আশাহি শিমবুনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মিন অং হলাইং বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনীই যে রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনায় জড়িত, সেরকম কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই’। তিনি আরও বলেন, ‘কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়া সমালোচনা করা হলে তা দেশের সম্মান ক্ষুন্ন করে।’ মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ধারাবাহিকভাবে রোহিঙ্গা হত্যা, ধর্ষণ ও অন্য নিপীড়নের ঘটনায় সেনা সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে আসলেও সেনাপ্রধান স্বীকার করেছেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর কিছুসংখ্যক সদস্যের এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে’। মিয়ানমার ছেড়ে পালানো রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মিন অং হলাইং। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আত্মীয়দের সঙ্গে থাকা কিংবা তৃতীয় কোনো দেশে পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্যে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, কারো শিখিয়ে দেওয়া কথাই তারা সবাই বলছে।’ মিয়ানমার সেনাপ্রধানের এসব দাবি জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের ভাষ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি মিন অং হলাইংয়ের ওই সাক্ষাৎকার দেখেননি। তবে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর জাতিসংঘের সঙ্গে মিয়ানমারের সমঝোতা চুক্তিতে দেশটি স্বীকার করেছে যে সহিংসতা হচ্ছে, মানুষ পালাচ্ছে এবং তাদের প্রত্যাবাসিত হওয়ার অধিকার আছে। গত বছরের আগস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতার কথা তুলে ধরেছিল জাতিসংঘ। প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনীর সঙ্গে বেসামরিক কর্তৃপক্ষও এই নিধনযজ্ঞে ইন্ধন জুগিয়েছে। রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চিও তার সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে এই সহিংসতা থামাতে ব্যর্থ হয়েছেন।জাতিসংঘ জানায়, রাখাইনে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ নিয়ে মিয়ানমার সরকারের প্রত্যাখ্যান ও অস্বীকারের মাত্রায় তারা অবাক হয়েছেন। এই ঘটনায় জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা উচিত বলে মন্তব্য করা হয় প্রতিবেদনটিতে। সেখানে ছয়জন সেনা কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়। যার মধ্যে ছিলেন সেনাপ্রধানও। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও সংবাদমাধ্যম রোহিঙ্গা নিপীড়নে সেনা সংশ্লিষ্টতার আলামত পেয়েছে।