সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর দায়িত্বে শাজাহান খান

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কমিটি করে এর প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানকে। তার সঙ্গে রয়েছেন তারই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী। আছেন পরিবহন নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাও। গতকাল রবিবার বনানীতে সড়ক ভবনে অনুষ্ঠিত সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ২৬তম সভায় এ কমিটি করা হয়। বৈঠকে তারাও উপস্থিত ছিলেন । এ ছাড়া দশম সংসদে পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের পথ খুঁজতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের নেতৃত্বে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। তিন সদস্যের এ কমিটিতে তার সঙ্গে রয়েছেন আইনমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রী। দুপুরে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কমিটি দুটি গঠনের ঘোষণা দেন। ২০১০ সালে শুরু হয় বিদ্যমান সড়ক আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া। কিন্তু পরিবহন নেতাদের চাপে তা দফায় দফায় কাটাছেঁড়া করা হয়। এরই মধ্যে গত বছর জুলাইয়ে রাজধানীতে দুই কলেজশিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হন। এর পর সারাদেশে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনে পরিবহন খাতের ভয়াবহ বিশৃঙ্খলার বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে আসে। ওই সময়ই শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলিয়ে রাখা সড়ক পরিবহন আইন সংসদে পাস হয়। কিন্তু ওই আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সেগুলো বাতিলের দাবি তোলেন পরিবহন শ্রমিকরা। দাবি বাস্তবায়নে তারা দেশজুড়ে পরিবহন ধর্মঘট ডাকলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় মানুষকে। শাজাহান খানসহ পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা সরকারে থাকায় নানা উদ্যোগের পরও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না বলে সে সময় অভিযোগ ওঠে। শাজাহান খানের ১৫ সদস্যের শৃঙ্খলা কমিটিতে আরও রয়েছেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। এ ছাড়া ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক ও শ্রমিক সমিতি থেকে দুজন এবং বিআরটিএ, ব্র্যাক, বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে একজন করে প্রতিনিধি এ কমিটিতে থাকবেন। হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি, ডিআইজি অপারেশনস এবং ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারও কমিটিতে রয়েছেন। গতকালের বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেন প্রমুখ। সড়ক দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, কমিটি দুটি আগামী ১৪ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে। পরিবহনে শৃঙ্খলায় আমরা অন্যদের থেকে পিছিয়ে থাকব এমন নয়, কিছুটা সমস্যা পরিবহনে আছে। আমার বিশ্বাস, সবার সহযোগিতায় আমরা পরিবহনের সংকট কাটিয়ে উঠব।মন্ত্রী বলেন, সড়ক-মহাসড়ক এবং পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ এবং তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আরও বলেন, সড়ক পরিবহন আইন সংসদে পাস হয়েছে এবং নির্বাচনে আগে অংশীদারদের পক্ষ থেকে কিছু বক্তব্য ছিল, সংশোধনের দাবি-দাওয়া ছিল। আইন প্রণয়নের পর আইনটা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় কোনো বিধিবিধান করে, বাস্তবতার সঙ্গে যতটা সঙ্গতি রাখা যায়, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট তিন মন্ত্রীকে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি। তারা আইনটা প্রয়োগ করতে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করবেন।