আগুন মোকাবিলায় অক্ষম ৯৮ ভাগ হাসপাতাল

রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি ৬১০ হাসপাতালসহ মোট হাসপাতাল-ক্লিনিক রয়েছে ৫ হাজার ২০৬টি। উদ্বেগজনক হলেও সত্যি, এগুলোর মধ্যে প্রায় ৯৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই অগ্নিকা- মোকাবিলায় অক্ষম। অবশিষ্ট কিছু হাসপাতালে আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকলেও তা প্রয়োগে নেই দক্ষ জনবল। এ তথ্য খোদ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের। সম্প্রতি রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তর সূত্র জানায়, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে দুর্ঘটনার আগে অন্তত চারবার দেশের সব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণব্যবস্থা বাস্তবায়নে তাগাদা দেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। ফলে ভূমিকম্প হলে কিংবা আগুন লাগলে হাসপাতালগুলোয় রোগীসহ ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভয়াবহ এ প্রাণহানি এড়াতে এখনই সর্তক না হলে পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে অভিমত নগর বিশ্লেষক ও অগ্নি বিশেষজ্ঞদের। দেশের সব হাসপাতাল মিলে মোট বেডের সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৬০। কিন্তু বেশিরভাগ সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে প্রতিদিন নির্ধারিত বেডের কয়েকগুণ বেশি রোগীর চিকিৎসা চলছে। এসব প্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ রোগী ছাড়াও রয়েছেন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারী এবং রোগীদের স্বজন। এত বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগম যেখানে, সেখানে নেই অগ্নিকাণ্ডের মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সক্ষমতা। অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণব্যবস্থা বাস্তবায়নে ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি, ২২ এপ্রিল ও ১৬ নভেম্বর এবং ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর মিলিয়ে চার দফায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নোটিশ করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তর। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। উপরন্তু দুই থেকে তিন দফায় সতর্ক নোটিশ করা হয়েছে আগুন ও ভূমিকম্প মোকাবিলায় অক্ষম রাজধানীর ৪৩২টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু দুএকটি ব্যতিক্রম ছাড়া সব হাসপাতালেই অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণব্যবস্থা বাস্তবায়ন হয়নি। দেশের সরকারি-বেসরকারি বেশিরভাগ হাসপাতালেরই অগ্নিকাণ্ডের মোকাবিলার সক্ষমতা নেই স্বীকার করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) অধ্যাপক ডা. মো. আলী খান আমাদের সময়কে বলেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। এখন থেকে কোনো হাসপাতাল অনুমোদন দেওয়ার আগে ফায়ার সিস্টেম ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। প্রতিটি হাসপাতালে অগ্নিনির্বাপণে পর্যাপ্ত সাজসরঞ্জাম ও প্রশিক্ষিত একাধিক কর্মকর্তা রাখা হবে এবং হাসপাতালে কর্মরতরা আগুন লেগে গেলে যেন ফায়ার সার্ভিস টিম আসার আগেই প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পুরনো যেসব হাসপাতালে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা দুর্বল, সেগুলোর ব্যবস্থা হালনাগাদ করে নতুন সরঞ্জাম স্থাপন করতে বাধ্য করা হবে। যেসব হাসপাতাল অগ্নিনির্বাপণে পূর্ণ ব্যবস্থা রাখবে না, সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এমনকি লাইসেন্সও বাতিল করা হবে বলে হুশিয়ারি দেন অধ্যাপক ডা. মো. আলী খান। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে বেশ কয়েকটি মার্কেটে অগ্নিকা-ে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির পর ঢাকাকে চারটি অঞ্চলে বিভক্ত করে সব ধরনের স্থাপনা পরিদর্শনে নামে ফায়ার সার্ভিস। শুরুতে ঢাকার ৪৩৩টি হাসপাতাল-ক্লিনিক এবং বছর শেষে ৪২৩টি হাসপাতাল-ক্লিনিক পরিদর্শন করা হয়। এর পর দেশের ৫ হাজার ২০৬টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের বেশিরভাগই পর্যায়ক্রমে পরিদর্শন করা হয়। প্রায় ছয় মাস আগে শেষ হওয়া পরিদর্শন কার্যক্রমে দেখা গেছে, দেশের ৯৮ শতাংশ হাসপাতাল অগ্নি-দুর্ঘটনা মোকাবিলায় সক্ষম নয়। রাজধানীসহ ঢাকার হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মধ্যে ঝুঁকিতে রয়েছে ৪৩২টি। এর মধ্যে ১৭২টি অতিঝুঁকিপূর্ণ, ২৪৯টি ঝুঁকিপূর্ণ। মাত্র ১১টি হাসপাতাল সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন অনুযায়ী, অগ্নিঝুঁকি এড়াতে মাটির নিচের জলাধারের ধারণক্ষমতা, ভবনের ধারণক্ষমতা, ভবনে অবস্থানকারীর সংখ্যা, প্রবেশদ্বারের প্রশস্ততা, স্মোক বা হিট ডিটেক্টর, মেঝের আয়তন, জরুরি নির্গমন সিঁড়ি, ফায়ার ফাইটিং পাম্প, জলযান, ফায়ার লিফট, ডিটেকশন সিস্টেম, অ্যালার্মিং সিস্টেম, ইমার্জেন্সি লাইট, এক্সিট সাইন, বিকল্প লিফট, ডাক্টস, ফায়ার কমান্ড স্টেশন, ট্রান্সফরমার কক্ষ, স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর কক্ষ, ফায়ার ফাইটিং পাম্প হাউস, রাইজার পয়েন্ট ও হোস কেবিনেট, ওয়াটার স্প্রে প্রজেকটর হেড, সেফটি লবি, ফায়ার রেটেড ডোর, ভেন্ট, অ্যাভিয়েশন লাইট এবং অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধার তৎপরতায় ব্যবহৃত যে ধরনের সাজসরঞ্জামাদি থাকা বাঞ্ছনীয়, তা অধিকাংশ হাসপাতাল বা ক্লিনিকেই নেই। শুধু সরকারি হাসপাতালই নয়, দেশের নামিদামি চার-পাঁচটি হাসপাতাল ছাড়া অন্য প্রাইভেট হাসপাতালেও নেই অগ্নিনির্বাপণে যথাযথ কোনো ইউনিট বা ব্যবস্থা। হাসপাতালগুলো মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে চিকিৎসাসেবা। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ আমাদের সময়কে বলেন, দেশের ৯৮ শতাংশ ক্লিনিক ও হাসপাতালই নেই অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণব্যবস্থা। আগুন লাগলে কীভাবে নির্বাপণ করবে; রোগী, নার্স ও চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় কী করতে হবে; কখন ফায়ার সার্ভিসকে সংবাদ দিতে হবে-এসব বিষয়ে তাদের অনেকেরই নেই পূর্বপরিকল্পনা। সেই সঙ্গে প্রশিক্ষিত জনবলেরও অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানে এ নিয়ে নিয়মিত মহড়ার আয়োজন করা হয় না। মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ আরও বলেন, ঢাকাসহ সারাদেশের হাসপাতাল-ক্লিনিক পরিদর্শন করে ঝুঁকি নিরূপণ করে ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হাসপাতালগুলোর একটি তালিকা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ঝুঁকিতে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিষয়টি জানিয়ে দুর্যোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। হাসপাতালগুলোকে সতর্ক করার জন্য মন্ত্রণালয়েও লিখিতভাবে কয়েক দফা সুপারিশ করা হয়। কিন্তু স্বতঃপ্রণোদিতভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানই তাদের হালনাগাদ তথ্য আমাদের জানায়নি; টনক নড়েনি অগ্নিঝুঁকিতে থাকা হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষের। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক বলেন, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পর এ নিয়ে অনেক কঠোর অবস্থান নিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোয় সার্ভে করতে টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিম দেখবে প্রতিষ্ঠানগুলোর ফায়ার প্রটেকশন ব্যবস্থা এবং অগ্নিকা- হলে ভবনের সামনে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছবে কিনা। যেসব ভবনে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, তাদের নোটিশ করা হবে। নিয়ম না মানলে প্রয়োজনে মামলা করা হবে। গত সোমবার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদর দপ্তরে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিটি ক্লিনিক ও হাসপাতালে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এবং উদ্ধার তৎপরতায় ব্যবহৃত সাজসরঞ্জামসহ পূর্ণ নিরাপত্তাব্যবস্থা অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা, তা মনিটরিং করা। প্রাথমিকভাবে অগ্নিকা- মোকাবিলায় সক্ষম বিবেচনায় প্রতিটি হাসপাতালের সামনে সাইনবোর্ডও লাগিয়ে দেওয়া হবে। অগ্নিনির্বাপণে সক্ষম হাসপাতালের সাইনবোর্ডে লেখা থাকবে-‘সন্তোষজনক’। যেসব হাসপাতালে পূর্ণ নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে না সেগুলোর সামনে লেখা থাকবে-‘ঝুঁকিপূর্ণ’ কিংবা ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’। সবাই সম্মিলিতভাবে সচেতন হলে অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা রোধ করা সম্ভব বলে জানান তিনি। দেশের সবচেয়ে বড় চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নতুন ভবনটি (হাসপাতাল-২) বাইরে থেকে দেখে বেশ টিপটপ মনে হয়; কিন্তু ভেতরে বিরাজ করছে চরম অগ্নিঝুঁকি। সরেজমিন ঘুরে এর প্রমাণ মিলল গতকাল। দুপুরে ভবনের মূল গেটে কর্মরত ছিলেন আনসার সদস্য বায়েজিদ। অগ্নিনির্বাপণের হোস পাইপ স্টেশনটি কোথায়-জানতে চাইলে তিনি যেন আকাশ থেকে পড়েন। যেন এমন শব্দ তিনি প্রথম শুনলেন! কিছুক্ষণ মাথা চুলকে তিনি ভবনের সুপারভাইজার মো. রমিজকে দেখিয়ে দেন। অগ্নিনির্বাপণে প্রস্তুতির বিষয়ে প্রশ্ন রাখা হলে রমিজ বলেন, ঢামেক হাসপাতালে আগুন লাগলে কোনো চিন্তা নেই। সব ধরনের সাজসরঞ্জাম রয়েছে। ঘুরে দেখলেই তা জানতে পারবেন। এর পর ভবনের নিচতলার হোস পাইপ (পানি ছিটানোর পাইপ) স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, শোকেসের ভেতর থেকে উধাও হোস পাইপ! তাতে মরিচা পড়ে যাচ্ছেতাই দশা। দোতলায় উঠে শোকেসে হোস পাইপ দেখা গেলেও পাশের যে ফায়ার এক্সিট ডোরটি রয়েছে সেটি দেখা যায় প্রয়োজনের সময় ব্যবহারের অযোগ্য, চেয়ার-টেবিলে ঠাসা। এর পর দশতলা ভবনটির প্রতিটি ফ্লোর ঘুরে বেশিরভাগ হোস পাইপ স্টেশনেই মেলেনি পানি ছিটানোর এ পাইপের দেখা। কম সংখ্যক অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র দেখা গেলেও অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত ফায়ার অ্যালার্ম বা হিট ডিটেক্টরসহ যে ধরনের জিনিসপত্র ও সাজসরঞ্জাম থাকার কথা, সেসবের কিছুই নজরে আসেনি। ততোধিক বাজে অবস্থা হাসপাতালটির বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট ও পুরাতন ভবনের। এদিন সকালে মাতুয়াইলে অবস্থিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সবচেয়ে বড় শিশু হাসপাতাল শিশু মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে দেখা গেছে উদ্বেগজনক চিত্র। এখানে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত যে ধরনের জিনিসপত্র ও সাজসরঞ্জাম থাকার কথা, তার কিছুই নজরে আসেনি। উপরন্তু দেয়ালে দেয়ালে ঝোলানো যে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র (ডিস্টিংগুইশার) দেখা গেছে, সেগুলোরও মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এক বছর আগে। সিলিন্ডারগুলো সর্বশেষ রিফিল করা হয়েছিল ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর। অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত যেসব সাজসরঞ্জাম থাকার কথা, শিশু মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে তা নেই স্বীকার করে হাসপাতালটির যুগ্ম পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. অরূপ কুমার শাহা আমাদের সময়কে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে অগ্নিকা- মোকাবিলায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়ায় অবস্থিত সেফএইড হাসপাতালে গিয়েও দেখা গেছে ভয়াবহ দশা। এখানে দেখা যায়নি অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে ব্যবহারের সাজসরঞ্জাম। আলাপকালে অভ্যর্থনাকেন্দ্রে কর্মরত রাহিমা বলেন, এই হাসপাতালই দেখলেন; পাশের দেশবাংলা হাসপাতালের অবস্থা যে আরও খারাপ, সেটা দেখলেন না? এর পর দনিয়ার নয়াপাড়ার দেশবাংলা হাসপাতালে গিয়ে রাহিমার কথারই সত্যতা পাওয়া যায়। হাসপাতালের ডক্টর ইনচার্জ ডা. সাইফুল ইসলাম সোহেল বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা অগ্নিনির্বাপণে যা যা দরকার সব স্থাপন করব। উল্লেখ্য, ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় এই তিনটি হাসপাতালই ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে চিহ্নিত হয়েছে। সিদ্ধেশ্বরীর সাততলা ভবনের মনোয়ারা হাসপাতালে সংখ্যায় কমসংখ্যক ডিস্টিংগুইশার দেখা গেলেও হাসপাতালটিতে হিট ডিটেক্টর বা ফায়ার অ্যালার্ম দেখা যায়নি। বিআরবি হাসপাতালের কোথাও হিট ডিটেক্টর বা ফায়ার অ্যালার্ম দেখা যায়নি। ধানম-ি আই হসপিটালের অবস্থাও একই রকম। হাসপাতালটিতে নামকাওয়াস্তে প্রতি তলায় একটি করে ডিস্টিংগুইশার থাকলেও ফায়ার অ্যালার্ম বা হিট ডিটেক্টর নজরে আসেনি। ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতাল শমরিতা হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার-২, ক্রিসেন্ট গ্যাস্ট্রোলিভার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল, ধানম-ি জেনারেল অ্যান্ড কিডনি হাসপাতাল, ধানমন্ডি কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বিএসওএইচ হাসপাতাল, প্যানোরমা হসপিটাল, ধানম-ি মেডি এইড জেনারেল হাসপাতাল, মেরিস্টোপ বাংলাদেশ অন্যতম। ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, স্কয়ার হসপিটাল, বিআরবি হাসপাতাল, জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হসপিটাল, ল্যাবএইড কার্ডিওলোজি হসপিটাল, ইবনে সিনা হাসপাতাল, পপুলার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, পপুলার ডয়াগনস্টিক সেন্টার, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, শেরেবাংলানগর ট্রমা সেন্টার অর্থোপেডিক হসপিটাল, ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, বারডেম হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, মানোয়ারা হাসপাতাল (প্রা.), আদ-দ্বীন হাসপাতাল, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, খিদমাহ হাসপাতাল, খিলগাঁও গ্রিন ভিউ ক্লিনিক, ধানম-ি জেডএইচ শিকদার মহিলা মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, হাজারীবাগ ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, লালবাগ সেন্ট্রাল হসপিটাল, গ্রিন লাইফ হসপিটাল, কমফোর্ট নার্সিং হোম, সিটি হসপিটাল, বাংলাদেশ আই হসপিটাল, বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল, আগারগাঁও জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসনকেন্দ্র, শেরেবাংলানগর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কেয়ার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ ট্রমা স্পেশালাইজড হাসপাতাল, আহছানিয়া মিশন ক্যানসার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল, আল-রাজি হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতাল, মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, পদ্মা জেনারেল হাসপাতাল, মাতুয়াইল মেডিকেয়ার জেনারেল হাসপাতাল, হিকমা স্পেশালাইজড চক্ষু হাসপাতাল, ধানম-ি হাসপাতাল (প্রা.), গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল, ধানম-ি ক্লিনিক (প্রা.), আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল অন্যতম। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনোটিতেই অগ্নিনির্বাপণে সিলিন্ডার ছাড়া কিছু নেই। এসব হাসপাতালের পুরনো বা মূল ভবনের সব কটিতেই রয়েছে অগ্নিকা-ের ঝুঁকি।