দেয়ালের জন্য জরুরি অবস্থা

মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে দরকারি বরাদ্দ সংগ্রহ করার উদ্দেশে যে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ১৬টি রাজ্য। কেন্দ্রীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে এসব রাজ্য প্রশাসন গতকাল মামলা ঠুকেছে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে ‘হঠকারী, অসাংবিধানিক ও জাতীয় বেইজ্জতি’ বলে অভিহিত করেছে বিরোধী শিবির। কিন্তু ট্রাম্পশিবির বলছে, এ মামলা-মকদ্দমা আসলে ডেমোক্র্যাটদের ‘ভোটের রাজনীতি’র একটা অংশ। অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে মেক্সিকো সীমান্তে ইস্পাতের দেয়াল তুলতে চান ট্রাম্প। কিন্তু ডেমোক্র্যাটদের বিরোধিতায় দেয়াল নির্মাণে মেলেনি বরাদ্দ। এ দেয়াল নির্মাণকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে মার্কিন সরকারে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি অচলাবস্থার ঘটনা ঘটেছে। সেই অচলাবস্থার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য শুক্রবার একটি বিলে সই করেন ট্রাম্প। কিন্তু সেই বিলেও তার কাক্সিক্ষত দেয়াল বরাদ্দ না থাকায় তিনি একই দিন পূর্বঘোষিত জরুরি অবস্থা জারি করেন। জরুরি অবস্থা জারির মানে, নানা খাত থেকে কোটি কোটি ডলার সংগ্রহ করতে পারবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যেসব রাজ্য মামলা ঠুকেছে ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গতকাল একযোগে মামলা হয়েছে। ১৬টি রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলরা এ লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। রাজ্যগুলো হলো : ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, কানেকটিকাট, ডেলাওয়ার, হাওয়াই, ইলিনয়, মেইনে, মেরিল্যান্ড, মিশিগান, মিনেসোটা, নেভাডা, নিউ জার্সি, নিউ মেক্সিকো, নিউইয়র্ক, ওরেগন এবং ভার্জিনিয়া। অসাংবিধানিক ও জাতীয় বেইজ্জতি ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল জেভিয়ার বেসেরা বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আইন-কানুনকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করছেন। তিনি ভালোই জানেন, সীমান্তে কোনো সংকট নেই। তিনি জানেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণার কোনো দরকারই ছিল না। এমনকি তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন, আদালতে এ মামলায় তিনি হেরেও যেতে পারেন।’ এদিকে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গেভিন নিউসম বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আসলে একটা সংকট উৎপাদন করছেন। এবং একটা বানোয়াট ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করছেন। উদ্দেশ্য হলো ক্ষমতা কুক্ষিগত করা এবং সংবিধানকে খর্ব করা।” এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “এই ‘জরুরি অবস্থা’ জাতীয় বেইজ্জতি।” এর আগে জরুরি অবস্থা জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ‘পাবলিক সিটিজেন’ নামের একটা জনপরামর্শক সংস্থা আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিল। তারা একটি প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা এবং টেক্সাসের তিন ভূমি মালিকের পক্ষে এ ব্যবস্থা নিয়েছে যাদের জমির ওপর দিয়ে ওই দেয়াল নির্মাণ করা হবে। ভোটের রাজনীতি? তবে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের পরামর্শ পরিষদের এক সদস্য বিরোধীদের এ আইনি লড়াইকে ‘সারশূন্য’ বলে মন্তব্য করেছেন। জন ফ্রেডরিক আলজাজিরাকে বলেছেন, ‘এটা আসলে অসার মামলা-মকদ্দমা। ১৬টি ডেমোক্র্যাটিক রাজ্য এ মামলা ঠুকেছে। তারা মূলত খোলা সীমান্ত চায় এই কারণে যেন, সীমানা টপকে বাড়তি লোক যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারে। এসব নথিভুক্তিহীন, অবৈধ লোক শেষে ডেমোক্র্যাট ভোটারে পরিণত হবে। ওরা এটাই চাচ্ছে। সবাই তো তা দেখতেই পাচ্ছে।’ ভয়ঙ্কর প্রেসিডেন্ট জরুরি অবস্থা জারি করলে যে তাকে আইনি বাধার মুখোমুখি হতে হবে, এ কথা ট্রাম্প জানতেন। কিন্তু তিনি বলেন, ‘মাদকের আগ্রাসন, দস্যুদের আক্রমণ, মানুষের স্রোত-এসব আর চলতে দেওয়া যায় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সবাই জানে, দেয়াল কাজ করে।’ ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত কংগ্রেসেও বাতিল হতে পারে যদি উভয় কক্ষেই বিরুদ্ধে ভোট পড়ে এবং ট্রাম্প নিজে ভেটো না দেন। নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রণ ডেমোক্র্যাটদের হাতে। উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে রিপাবলিকানরা, যাদের বেশ কয়েকজন সিনেটর ট্রাম্পের দেয়াল প্রকল্পের সঙ্গে একমত নন। মার্কিন সংবিধানে অর্থায়ন বিষয়টা কংগ্রেসের ক্ষমতায় থাকে। ফলে কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করায় ট্রাম্পকে ‘ভূমি অধিগ্রহণকারী’ ও ‘ভয়ঙ্কর প্রেসিডেন্ট’ বলে অভিহিত করেছেন বিবিসির উত্তর আমেরিকা সম্পাদক জন সোপেল।