কাঁদছে নাটেশ্বর

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার নাটেশ্বর ইউনিয়নের ঘোষকামতা গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে মাহাবুবুর রহমান রাজু (২৮)। মাত্র কদিন আগে পাশের গ্রামের মাহফুজা বেগম স্মৃতির সঙ্গে শুভ পরিণয়ে জড়ান তিনি। তবে কনের পরিবারও থাকেন ঢাকায়। কয়েক দিনের মধ্যেই নববধূকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি আসার কথা ছিল রাজুর। কথা রেখেছেন, তবে এসেছে তার নিথর দেহ। আর হাতের মেহেদির রঙ শুকাতে না শুকাতেই স্বামীহারা হলেন স্মৃতি। চকবাজারের অগ্নিকা-ে রাজুর ‘শেষ যাত্রায়’ সঙ্গী হয়েছেন তার বড় ভাই মো. মাসুদ রানাও (৩৬)। চার বছর বয়সী এক সন্তানের জনক রানা। তার স্ত্রী বর্তমানে গর্ভবতী। দ্বিতীয় সন্তানের মুখ দেখা হলো না তার। রানা ও রাজু একসঙ্গে চকবাজারে মোবাইল-ফ্যাক্সের দোকান করতেন। তার বাবা সাহেব আলী প্রায় ৪৫ বছর আগে ঢাকায় পাড়ি জমান। বাবার সঙ্গে ঢাকায় ভাড়া বাসায় থেকে বড় হন তারা। কয়েক বছর আগে বাবার বার্ধক্যের কারণে ব্যবসার হাল ধরেন দুভাই। রানা-রাজুর স্বজনরা জানান, গ্রামের বাড়িতে বছরে দু-একবার আসতেন পরিবারের সদস্যরা। কিছুদিন আগে গ্রামে পুরাতন বাড়ির পাশের একটি জমিতে ভিটি নির্মাণ করেছেন তারা। চলতি বছর সে ভিটিতে বাড়ি করারও কথা ছিল। কিন্তু আজ সবই শেষ হয়ে গেল পরিবারটির। নতুন বাড়ির স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। গতকাল ভোরে নিহত দুই সহোদরের গ্রামের বাড়িতে মরদেহ আসার সঙ্গে সঙ্গে কান্নার রোল পড়ে। দুই ছেলেকে হারানো বাবার বিলাপ যেন থামছেই না। ফুফু, চাচা-চাচিদের কান্নায় পুরো বাড়ির বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। সকালে রানা-রাজুর জানাজায় অংশ নেয় আশপাশের শত শত মানুষ। এ জন্য পারিবারিক কবরস্থানও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানেই তাদের দাফন করা হয়। শুধু রানা ও রাজু নয়, অগ্নিকা-ে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি, কোম্পানীগঞ্জ ও বেগমগঞ্জ উপজেলার অনেকে প্রাণ হারিয়েছে। নিহতদের প্রায় সবাই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। এ পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে ১৩ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে সোনাইমুড়ির নাটেশ্বর ইউনিয়নের ঘোষকামতা গ্রামের খাসের বাড়ির সাহেব আলীর দুই ছেলে মাসুদ রানা ও মাহাবুবুর রহমান রাজু, পশ্চিম নাটেশ্বর গ্রামের মিনহাজী বাড়ির মৃত ভুলু মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলী হোসেন (৬৫), সৈয়দ আহমদের ছেলে হেলাল উদ্দিন, মির্জানগর গ্রামের আবদুর রহিম বিএসসির ছেলে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (৩৮), মমিন উল্যার ছেলে সাহাদাত হোসেন হিরা (৩২), মৃত গাউছ আলমের ছেলে নাছির উদ্দিন (৩২), মধ্যম নাটেরশ্বর গ্রামের ছিদ্দিক উল্যাহ্ ও পার্শ্ববর্তী বারোগা ইউনিয়নের দৈলতপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে আনোয়ার, কৃষ্ণনপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের স্ত্রী আয়শা খাতুন নয়ন, অম্বনগর ইউনিয়নের উত্তর ওয়াছেকপুর গ্রামের নুরু মিঞার ছেলে আব্দুর রহিম (দুলাল)। বেগমগঞ্জ উপজেলার মুজাহিদপুর গ্রামের কামাল হোসেন ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহী গ্রামের জসিম উদ্দিন। তাদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ছাড়া বাকি ১২ জনেরই ইতোমধ্যে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। নিহত ওষুধ ব্যবসায়ী ও মির্জানগর গ্রামের আবদুর রহিম বিএসসির ছেলে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর (৩৮) লাশ এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এদিকে নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আবু ইউছুফের নেতৃত্বে জেলা ও সোনাইমুড়ী উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সোনাইমুড়ী উপজেলার নিহত প্রায় সবার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পরিবার ও স্বজনদের সান্ত¦না দেন।