পুরান ঢাকাকে ঝুঁকিমুক্ত করতে সেখান থেকে সব ধরনের রাসায়নিকের কারখানা অন্যত্র স্থানান্তরে সরকার পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরান ঢাকার রাস্তাগুলো প্রশস্ত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশও দেন তিনি। গতকাল শনিবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। সরকারের উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও মালিকদের আপত্তির কারণে রাসায়নিকের কারখানা ও গুদাম সরিয়ে নেওয়া যায়নি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চকবাজার ট্র্যাজেডি পুরান ঢাকার রাসায়নিকের গুদাম মালিকদের জন্য একটি শিক্ষণীয় ঘটনা। আশা করি, এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদামগুলো সরিয়ে নেওয়ার যে দাবি উঠেছে, তাতে আর কেউ আপত্তি করবেন না। তিনি জানান, তার সরকার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে রাসায়নিকের গুদাম পুরান ঢাকা থেকে স্থানান্তরে উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসেনি। চকবাজার বা নিমতলীর মতো ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের যেন পুনরাবৃত্তি ঘটতে না পারে, সে জন্য সচেতন থাকতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। এ ধরনের ঘটনায় উৎসুক জনতার ভিড় এবং টিভি চ্যানেলে লাইভ প্রচার করতে গিয়ে সাংবাদিকদের নানা ধরনের প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৬৭ জনের প্রাণহানির ঘটনায় সরকারিভাবে শোক পালন করা হবে বলেও জানান তিনি। দমকল কর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী ও চিকিৎসকদের রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের পাশাপাশি তিনি নিজেও নির্ঘুম থেকে সেদিন সারারাত আগুন নেভানোর কাজটি তদারকি করেছেন। পুরান ঢাকায় রাসায়নিকের গুদাম রেখে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিমতলীতে যখন আগুন লাগল সে সময় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এখান থেকে যত কেমিক্যালজাতীয় পদার্থ রয়েছে, সব সরানো হবে। সে জন্য কেরানীগঞ্জে জায়গাও ঠিক করলাম। সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও করা হলো, এখানকার কেমিক্যালের যত গুদাম আছে (বৈধ বা অবৈধ) সেগুলো কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করা হবে। যাতে এখানে আর এ ধরনের ঘটনা ঘটতে না পারে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, তাদের অনেকেই (মালিকপক্ষ) এতে রাজি হননি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেরানীগঞ্জে সরকার বহুতল ভবন করে আধুনিক গোডাউন তৈরি করে দিতে চাচ্ছিল। যাতে এগুলো সুরক্ষিত থাকে এবং কোনোরকম দুর্ঘটনা ঘটতে না পারে বা ঘটলেও যেন ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু মালিকরা রাজি হননি, তাই এটি কার্যকর করা যায়নি। দুর্ঘটনা থেকে পুরান ঢাকাকে রক্ষার জন্য রাসায়নিকের গুদামগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে বহুতল গোডাউন গড়ার পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এই অলি-গলি রাস্তাগুলোকে আমাদের নতুনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারে। তিনি এ সময় ধোলাইখাল, শান্তিনগর খাল, সেগুনবাগিচা খাল থেকে শুরু করে ঢাকার অনেক খাল ও জলাধার ভরাট হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, পুকুর-খাল এগুলো যেন আর বন্ধ করা না হয়। এগুলো যেন রক্ষা পায়। এ ধরনের আগুন লাগলে পানির অভাবটা যেন আর না থাকে। সাংবাদিকদের নানা ধরনের প্রশ্নে উদ্ধারকাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ঔৎসুক্যের কারণে যারা আগুন নেভানোর কাজে সম্পৃক্ত থাকেন, তাদের কাজটি বাধাগ্রস্ত হয়। এ সময়টা কোনো প্রশ্ন করার সময় কিনা বা সেখান থেকে একটা উত্তর কীভাবে আশা করা যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভদ্রলোক (দমকল কর্মী) কাজে যাবেন, তাকে ধরে রেখে একের পর এক প্রশ্ন, কোনো কোনো চ্যানেল এ কাজটি করেছে। ভবিষ্যতে দয়া করে সেটা না করে সুস্থভাবে তারা যেন তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে, সেই ব্যবস্থা সবাই নেবেন। চিকিৎসাধীন রোগীর কাছে সাংবাদিকদের ভিড় করার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এসব রোগীর ক্ষেত্রে ৪৮ বা ৭২ ঘণ্টা পার না হলে ইনফেকশনের কারণে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হয়ে যেতে পারে বা রোগীরা ইমোশনাল হয়ে গেলে সেটাও তাদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। সেসব রোগীর কাছে ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া, তাদের দেখানো বা তাদের ছবি তোলা,এসব বন্ধ করতে হবে।
সর্বশেষ
সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু
দর্পন টিভি - 0
সুনামগঞ্জের শাল্লায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকালে উপজেলার জনস্বাস্থ্যের নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদে...