বিয়ের ৪০ দিনের মধ্যে বিধবা হন মুন্সীগঞ্জের কণিকা আক্তার। অকালে স্বামী হারানোয় প্রতিবেশীরা তার কপালে তিলক দেন অপয়ার। এ অবস্থায় বাপের বাড়িতে ফিরতে হয়। সব কিছু ভুলে নতুন করে ঘর সাজানোর স্বপ্ন দেখানো হয়। কিন্তু কদিন পর জানতে পারেন কণিকা গর্ভবতী। কোলজুড়ে আসে একটি কন্যাসন্তান। নিজের ভবিষ্যৎ জলাঞ্জলি দিয়ে কণিকা সন্তানের ভবিষ্যৎ বোনার স্বপ্ন বুনতে থাকেন। এভাবে কাটে ১০ বছর। মেয়ের বিয়ে আর সংসারে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন নিয়ে দালালের হাতে ২০ হাজার টাকা দিয়ে গত বছর নারীশ্রমিক হয়ে সৌদি আরব পাড়ি জমান মুন্সীগঞ্জ সদরের কণিকা। সৌদির নিয়োগকর্তারা তার বেতন পরিশোধ করেছেন মাত্র এক মাসের। বেতন চাইতে গেলে গৃহকর্ত্রীর হাতে মারধরের শিকার হয়ে জেদ্দার বাংলাদেশি দূতাবাসে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাধ্যমে মঙ্গলবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন তিনি। পরণে ছিল বাংলাদেশ দূতাবাসের সফর জেল নামে পরিচিত আশ্রয় কেন্দ্রের বিশেষ পোশাক। সৌদি আরব থেকে একই ফ্লাইটে এসেছেন কণিকার মতো ৬১ নারীশ্রমিক। দুই দেশের সরকারের চুক্তি অনুযায়ী যাদের বিনা খরচে গৃহকর্মী হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দালালের মাধ্যমে হতদরিদ্র প্রত্যেক নারীর কাছে ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করে। আবার প্রবাসে নির্যাতনের শিকার হয়ে ফোন দিলে উদ্ধারের নামে ফের টাকা চেয়ে হুমকি প্রদানের অভিযোগ রয়েছে দালালদের বিরুদ্ধে। কণিকা আক্তার আমাদের সময়কে বলেন, মুন্সীগঞ্জে একটি মাছ ধরার জালের কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করে মাসে ৬ হাজার টাকা আয় করতাম। কিন্তু মেয়েকে বিয়ে দিব এ ভাবনায় কিছু টাকা জমানোর স্বপ্নে আকাশ নামধারী এক দালালের প্রলোভনে পড়ে সৌদি যাই। কিন্তু সেখানে ঠিকমতো খাবার তো দেয় না উল্টো বেতন চাইলে মারধর করে। একটার পর একটা কাজ ধরিয়ে দেয়, উনিশ-বিশ হলে নির্যাতন। যে কারণে এক রকম পালিয়ে দূতাবাসে আশ্রয় নিই। বিমানবন্দরের অবতরণ টার্মিনাল-২ ক্যানোপিতে বাঁকা বাঁকা পা ফেলে হাঁটছিলেন নারায়ণগঞ্জের নূপুর বেগম। কারণ তার দুই পায়ের হাঁটুর ওপর পর্যন্ত কালো দাগের সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন স্থানে গর্ত। ক্রন্দনরত নূপুর বলেন, আমি যদি পালিয়ে চলে না আসতাম তা হলে হয়তো লাশটাও আসতো না। তিনি বলেন, সেই ভোর ৫টার দিকে গৃহকর্তা ও তার স্ত্রী ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়। আবার গভীর রাতে ঘুমানোর সুযোগ পাই। কিন্তু মাস শেষে বেতন চাইলে বিভিন্ন অজুহাত ও মারধর করে। সর্বশেষ গত কয়েকদিন আগে দুই পায়ে গৃহকর্ত্রী গরম পানি ঢেলে দেয়। তিনি বলেন, ফকিরাপুল আল মদিনা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম নামে একটি ট্রাভেল এজেন্সির দালাল হালিমের মাধ্যমে সৌদি যাই। দালাল হালিম নিজেও সৌদি থাকেন। যখন গৃহকর্ত্রী মারধর করেন তখন হালিমকে বিষয়টি জানাই। কিন্তু সে উল্টো ২ লাখ টাকার বিনিময়ে অন্য জায়গায় ভালো কাজ দেওয়ার কথা বলে। মাগুরা সদরের বাসিন্দা সালমা আক্তার বলেন, আমি কাতারে নারীশ্রমিক হিসেবে ৩০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করে আসছিলাম। কিন্তু কালীগঞ্জ উপজেলার দালাল জাহাঙ্গীর প্রলোভন দেখায় সৌদি গেলে ৭০ হাজার টাকা বেতন দেবে। ১৩ বছর আগে স্বামী মারা গেছে, ২ ছেলে-মেয়ের সংসার চালাতে আমিও রাজি হই। কিন্তু সৌদিতে টাকার বদলে শারীরিক নির্যাতনে মস্তিষ্কজনিত রক্তক্ষরণের পর দূতাবাসে যাই। দূতাবাসের কর্মকর্তারা ভালো আচরণ করলেও রোজিনা, মৌসুমী, অঞ্জনাসহ সেবাপ্রদানকারী চার নারীর হাতে ফের মারধরের শিকার হই। তারা মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। সৌদি ফেরত নারীদের ভাষ্য মতে, এ মুহূর্তে সৌদি দূতাবাসের সফর জেলে ৮০ জন নারীশ্রমিক রয়েছেন। আসার অপেক্ষায় রয়েছেন আরও দুইশ জনের মতো। তাদের মধ্যে অনেকেই গৃহকর্তার ধর্ষণের কারণে গর্ভবতী হয়ে পড়েছেন। জানতে চাইলে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন শাখার ম্যানেজার এবিএম ফরহাদ আল করিম আমাদের সময়কে বলেন, সৌদিতে পাঠানোর আগে নারীশ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, ভাষা শিক্ষাসহ নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তুতিটা জরুরি ছিল। কিন্তু তড়িঘড়ি করে নারীদের পাঠানোর কারণে ফিরে আসা প্রায় প্রত্যেকেই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যাদের অনেকেই দালালের হাতে টাকা দিয়ে ৩/৪ মাস বেতনই পায়নি। কেউ-কেউ এক মাসের মধ্যে ফিরে এসেছেন। আমরা এসব নারীর জরুরি খাদ্য, বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া ও আইনি সহায়তা দিচ্ছি।
সর্বশেষ
সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু
দর্পন টিভি - 0
সুনামগঞ্জের শাল্লায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকালে উপজেলার জনস্বাস্থ্যের নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদে...