ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের এমপি পদপ্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়সভায় তোপের মুখে পড়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। জাপার বনানী কার্যালয়ে গতকাল বুধবার সারাদেশ থেকে আগতদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। নির্বাচনের প্রায় দুই মাস পর এ সভা অনুষ্ঠিত হলো। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ১৭২ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৫৮ জন। সভা থেকে বের হয়ে উপস্থিত প্রার্থীরাও এ স্বল্পসংখ্যক উপস্থিতিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে সভা চললেও প্রার্থীদের জন্য কোনো খাবারের ব্যবস্থা না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন জেলা থেকে আগত বিভিন্ন প্রার্থী। এদিকে মতবিনিময়সভায় অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরাও জিএম কাদের ও মসিউর রহমান রাঙ্গার উদ্দেশে বিভিন্ন বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, বিগত নির্বাচনে কেন্দ্র থেকে কোনো ধরনের খোঁজখবর নেওয়া হয়নি। এমনকি দলটির শীর্ষ নেতারা পার্টির প্রার্থীদের ফোন ধরারও প্রয়োজন মনে করেননি। কিছু কিছু বক্তা মহাজোটে জাপার কম আসন পাওয়ার জন্য দলের মহাসচিবকে দায়ী করেন। পঞ্চগড়-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী আবু সালেহ তার বক্তব্যে বলেন, নির্বাচনে দলের শীর্ষনেতারা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের এ দায়িত্বহীনতায় আমি ব্যথিত হয়েছি। এমন অবস্থায় হয়তো আমি এ পার্টি আর করব না। তিনি জাপার বর্তমান নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে লাঙল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী জহিরুল আলম রুবেল বলেন, প্রতিটি নির্বাচনের সময়ই নেতৃত্ব নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়। স্বার্থান্বেষী মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এসব ষড়যন্ত্রের কারণেই তৃণমূল ধ্বংস হচ্ছে। এ অবস্থায় আগামীতে ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি করাও কঠিন হবে। হবিগঞ্জ জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক শংকর পাল পার্টির মহাসচিব রাঙ্গাকে উদ্দেশ করে বলেন, মহাজোট থেকে আমাদের ৪৫ আসন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আপনি মহাসচিব হওয়ার পর এ আসন ২৫টিতে নেমে এসেছে। এ সময় রাঙ্গা বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আমি মহাসচিব হওয়ার আগেই এটি ঠিক করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী জহিরুল ইসলাম জহির বলেন, মনোনয়ন ও পদবাণিজ্যে আমরা আজ দিশাহারা। সামাজিক মর্যাদা ও দলে কোনো অবদান না থাকলেও টাকার বিনিময়ে নমিনেশন ও বড় বড় পদ দেওয়া হয়। এ ধারা থেকে বের হওয়ার নিশ্চয়তা না পেলে আগামীতে রাজনীতি থেকে আমরা সরে দাঁড়াব। সাতক্ষীরা থেকে আসা আবু মতলুব লিয়ন উপস্থিত প্রার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা কোমর সোজা হয়ে দাঁড়ান। ভয় পেলে চলবে না। সব অনিয়মের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। তখন জিএম কাদের তাকে বলেন, তুমি তোমার কথা বলো। জবাবে লিয়ন বলেন, আমার কথা যদি পছন্দ না হয়, তা হলে বলেন পার্টি ছেড়ে চলে যাই।জাপার যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু বলেন, আমাদের নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে আবার প্রত্যাহার করানো হলো। নির্বাচনের ফরম বিক্রি ও পার্টির চাঁদা বাবদ সাত থেকে আট কোটি টাকা আয় হয়েছে। সেখান থেকেও আমরা যারা পার্টির ত্যাগী নেতা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি, তাদের কিছু কিছু করে দেওয়া যেত। তিনি আরও বলেন, যেখানে এরশাদ সাহেব অসুস্থ, সেখানে কোন প্রয়োজনে দলের মধ্যে বড় বড় প্রমোশন দেওয়া হচ্ছে। দলে কোনো শৃঙ্খলা না থাকার কারণেই এগুলো হচ্ছে বলে মনে করি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কাজী মামুন বলেন, এখন দলকে উজ্জীবিত করার প্রশ্নে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে গুরুত্বপূর্ণ পদসহ বিভিন্ন স্থানে পার্টির ত্যাগী নেতাদের কীভাবে মূল্যায়িত করা যায়, সে বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা নিতে হবে। সভার শেষপর্যায়ে পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, সবার মধ্যেই কিছু রাগ-ক্ষোভ থাকতেই পারে। আগামীতে সবাইকে নিয়ে দল গুছিয়ে পার্টিকে ক্ষমতায় নিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। সভায় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ আরও বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমান, খালেদ আখতার, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ।
সর্বশেষ
সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু
দর্পন টিভি - 0
সুনামগঞ্জের শাল্লায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকালে উপজেলার জনস্বাস্থ্যের নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদে...