‘খেলনা চাই না। খাবার চাই না। বাবা শুধু তুমি সুস্থ হয়ে যাও। তুমি ভালো হয়ে বাসায় ফিরে আসো।’ কয়েক দিন আগে ১১ বছর বয়সী নাজির হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই আকুতি জানিয়েছিল বার্ন ইউনিটের লবিতে দাঁড়িয়ে। নাজিরের বিশ^াস ছিল, বাবা তার ডাক শুনবে। ফিরে আসবে। কোলে তুলে নেবে নাজির আর তার তিন বছর বয়সী ছোট বোন নূরজাহানকে। কিন্তু তার এ ডাকে আর সাড়া দিতে পারলেন না প্রিয় বাবা। দুই শিশুসন্তানকে ফেলে টানা ৯ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন দগ্ধ জাকির হোসেন (৪৫)। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ নিয়ে চকবাজারের চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭১ জনে। জাকির হোসেনের তিন কুলে কেউ নেই। মানুষ হয়েছেন অন্যের বাড়িতে। এক সময় আশ্রিত জাকিরেরও সংসার হয়। স্ত্রী আর দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে ছিল সুখের ঠিকানা। কিন্তু পরিবারটির সুখের ‘উৎস’ হারিয়ে গেল চিরতরে। এমন অবস্থায় দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে যেন অকূল পাথারে পড়লেন স্ত্রী খাদিজা বেগম। জাকিরের পরিচিত ভাই আবুল বাশার জানালেন, তিনি জাকিরের রক্তের কেউ নন। এমনকি তার রক্তের সম্পর্কের কোনো আত্মীয় আছে কিনা, সে সম্পর্কেও জানতেন না জাকির। মাত্র ১০ বছর বয়সে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। থিতু হন পুরান ঢাকায়, মৃত ফয়েজ উদ্দিনের কাছে ঠাঁই পান। তিনিই ছিলেন জাকিরের পালিত বাবা। কৈশোর-তারুণ্য কেটেছে সেখানেই। মানুষের সাহায্যে ধীরে ধীরে কাজ শিখে ফেলেন। ভালো আয়-রোজগারও হতে থাকে। এখানে এসেই পরিচয় হয় আবুল বাশারের সঙ্গে। সেই থেকে বাশারই জাকিরের ভাই। একপর্যায়ে আরমানিটোলার মেয়ে খাদিজাকে বিয়ে করেন। তাদের কোল আলো করে জন্ম নেয় নাজির আর নূরজাহান। আত্মীয়স্বজনের কোনো খোঁজ না জানলেও সুখের সংসার ছিল জাকিরের, কিন্তু চুড়িহাট্টার আগুন পরিবারটির সর্বস্ব কেড়ে নিল। গতকাল ঢামেক মর্গে জাকিরের লাশ নিতে আসেন আবুল বাশার। কিন্তু শোকে যেন কথাও বলতে পারছিলেন না। তার চাহনিই বলে দেয় শোকের তীব্রতা। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, ‘পরিবারে জাকির ছাড়া তো উপার্জন করার মতো কেউ নেই। পরিবারটি পথে বসে গেল।’ ঘটনার দিন ইসলামবাগের এক বাসা থেকে আরমানিটোলায় নিজের বাসায় ফিরছিলেন জাকির। পথে চুড়িহাট্টায় আগুনের কবলে পড়েন। পরিবারের একমাত্র উপার্জক্ষম ব্যক্তি প্রিয় স্বামীকে হারিয়ে খাদিজা বেগম শোকে যেন কাঁদতেও ভুলে গেছেন। খাদিজার বাবার বাড়ি কেরানীগঞ্জে, তাদেরও আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, জাকিরের শরীরের ৩৮ শতাংশ দগ্ধ ছিল। এ নিয়ে ঢামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন চারজন। সেলিম (৪৪) ও মাহমুদুল (৫২) নামে দুজন এখনো ঢামেক বার্ন ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে সেলিমের শরীরের ১৪ ও মাহমুদুলের ১৩ শতাংশ পুড়ে গেছে।
সর্বশেষ
সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু
দর্পন টিভি - 0
সুনামগঞ্জের শাল্লায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকালে উপজেলার জনস্বাস্থ্যের নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদে...