আইএসে যোগ দেওয়ার কারণ জানালেন বাংলাদেশের শামীমা

মাত্র ১৫ বছর বয়সে ব্রিটিশ বাংলাদেশী শামীমা বেগম ব্রিটেন থেকে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন ইসলামিক স্টেটে (আইএসে) যোগ দিতে। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শামীমা এবং তার স্বামী জানিয়েছেন বিয়ে করে সুন্দর পারিবারিক জীবন পেতেই নাকি আইএসে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। শামীমা বেগম তার স্বামী ডাচ নাগরিক ইয়াগো রিয়েডিককে বলেছিলেন, ‘যুক্তরাজ্যে বিয়ের ব্যাপারে আমার পরিবার আমাকে সাহায্য করতো না। কিন্তু তারা আমাকে দেখিয়েছিল ইসলামিক স্টেটে সংসার জীবন কতো সুন্দর হতে পারে।’ শামীমা জানিয়েছিলেন, নিখুঁত একটি পারিবারিক জীবনের খোঁজে তিনি ব্রিটেন থেকে সিরিয়াতে গেছেন।

যেভাবে বিয়ে হয়

মাত্র ১৫ বছর বয়সে আইএসের স্বঘোষিত রাজধানী রাকায় আসেন শামীমা বেগম। রাক্কায় পৌঁছে তিনি একজন জিহাদিকে বিয়ের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন জঙ্গি গ্রুপটি ডাচ নাগরিক রিয়োডিকের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক করে। নতুন ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী রিয়োডিকের বয়স তখন ২৩ বছর ছিল।

দুজনের দাম্পত্য জীবন যেমন ছিল

রিয়েডিকের বয়স এখন ২৭ বছর। বিবিসির সাংবাদিক যখন সাক্ষাৎকার নেন তখন রিয়োডিক কুর্দিদের একটি শিবিরে বন্দী ছিলেন। সাক্ষাৎকার শুরু করার আগে কারারক্ষী তার হাতকড়া খুলে দিয়েছিল। রিয়েডিক তখন বিবিসির সাংবাদিককে বলেন, ‘আপনার যদি শামীমার সাথে দেখা হয় তাহলে তাকে বলবেন আমি তাকে ভালোবাসি। তাকে ধৈর্য ধরতে বলবেন।’ রাক্কায় পারিবারিক জীবন সম্পর্কে বর্ণানা দেন রিয়েডিক। তিনি বলেন, বাইরের জীবন থেকে আলাদা রেখেছিলেন শামীমাকে। রিয়েডিক জানান, ‘এই দুটো জীবনকে তিনি আলাদা করে ফেলেছিলেন। বাইরে কী হচ্ছে এবং আইএসের অপরাধী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তার স্ত্রী শামীমা কিছুই জানতেন না।’ শামীমা বেগমের স্বামী রিয়েডিক বলেন, ‘আমি তাকে সুরক্ষিত একটি আবরণের ভেতরে রেখেছিলাম। বাইরে কী হচ্ছে সে বিষয়ে আমি তাকে কোনো তথ্যই দিতাম না। সমস্যা বা বিপদ যা কিছু আসতো সেগুলো আমিই সামাল দিয়েছি।’ সে (শামীমা) ঘরেই থাকতো এবং আমি যখন বাইরে থাকতাম সে ঘর সংসার সামলাতো জানিয়ে রিয়েডিক আরও বলেন, ‘আমার কাজ ছিল তাকে খাওয়ানো, নিজের খাবার জোগাড় করা, সিদ্ধান্ত নেওয়া, সমস্যা থেকে দূরে থাকা এবং গোয়েন্দা বাহিনীগুলোর হাত থেকে নিজেদের জীবন রক্ষা করে নিরাপদে থাকা।’  

বিয়ে করতেই দেশ ছেড়েছিলেন

শামীমা বেগম তাকে বলেছিলেন, ‘যুক্তরাজ্যে বিয়ের ব্যাপারে আমার পরিবার আমাকে সাহায্য করতো না। কিন্তু তারা আমাকে দেখিয়েছিল ইসলামিক স্টেটে সংসার জীবন কতো সুন্দর হতে পারে।’

যেভাবে বদলে যায় জীবন

রিয়েডিক জানান, শুরুতে তারা আমার ও আমার পরিবারের যত্ন নিয়েছিল। কিন্তু তারপরে সবকিছু বদলে যেতে শুরু করে। তারা যাদেরকে হত্যা করেছিল তাদেরকে আমি দেখেছি। কিন্তু কীভাবে হত্যা করা হয়েছে সেটা আমি দেখিনি। শামীমা বেগমও বলেছেন যে তিনি একটি ডাস্টবিনে মানুষের কাটা মাথা পড়ে থাকতে দেখেছিলেন। তার স্বামী ইয়াগো রিয়েডিক বলেছেন, ওই মাথাটা ছিল একটা ব্যাগের ভেতরে। আর ওই ব্যাগটা রাখা ছিল একগাদা নিহত বন্দীর লাশের উপরে। তাদের পরনে ছিল সামরিক পোশাক।

রিয়েডিকের অনুশোচনা

রিয়েডিক এখন বলছেন, ‘আমি খুব বড় একটা ভুল করেছি। আমার জীবন থেকে কয়েক বছর নষ্ট হয়ে গেছে। এটা ঠিক আমার জীবন ছিল না।’ ‘সৌভাগ্যবশত আমি সরাসরি কারো ক্ষতি করিনি। তবে আমি যে গ্রুপটিকে সমর্থন করে তাতে যোগদান করেছি সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। এখন তিনি চান তার স্ত্রী শামীমা ও নবজাতক পুত্রকে নিয়ে নেদারল্যান্ডসে ফিরে যেতে। রিয়েডিক বলেন, ‘আমি বুঝতে পারি, আমি যেটা করেছি সেটা নিয়ে অনেকেরই আপত্তি আছে। আমি যা করেছি সেটার দায়িত্ব আমাকে নিতে হবে। আমি আমার সাজা খাটবো। কিন্তু আমি আশা করছি যে একটি সংসার করার জন্যে আমি আমার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবো।’ শামীমা বেগম নারীদের যে ক্যাম্পে আছেন তার স্বামীর জেলখানা থেকে সেটা খুব একটা দূরে নয়। তবে তাদের একসাথে হওয়ার সম্ভাবনাও এই মুহূর্তে চোখে পড়ছে না।