ভূমি মন্ত্রণালয়ের বরখাস্তকৃত ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মো. কুতুব উদ্দিন ওরফে ভূমি কুতুবের দুর্নীতি তদন্তে গঠিত বোর্ড দীর্ঘদিনেও প্রতিবেদন দিতে পারেনি। ‘রহস্যজনক’ কারণেই দায়িত্বপ্রাপ্তরা তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছেন না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। রাজধানীর গুলশানে ১০ কাঠা জমিসহ একটি বাড়ি অবৈধভাবে দখলের অভিযোগে গত বছরের ৮ এপ্রিল গ্রেপ্তারের পর ভূমি কুতুবকে ১২ এপ্রিল বরখাস্ত করা হয়। তার দুর্নীতি তদন্তে যুগ্ম সচিব মো. কামরুল হাসান খানকে প্রধান করে একটি বোর্ড গঠন করে ভূমি মন্ত্রণালয়। তদন্ত বোর্ডের অপর দুই সদস্য হলেনÑ উপসচিব মো. আবদুর রহমান ও সহকারী সচিব আফরোজা আক্তার। তবে ওই বোর্ড গঠনের পর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি (সিভিডিপি) প্রকল্পের পরিচালক হয়ে চলে যান কামরুল হাসান খান। ফলে আটকে যায় ভূমি কুতুবের দুর্নীতির তদন্ত। অবশ্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবদুর রহমানের দাবি, ‘সম্প্রতি কুতুব উদ্দিনের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ তদন্ত শুরু হয়েছে।’ কবে নাগাদ প্রতিবেদন দিতে পারবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেনÑ ‘সেটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। মূলত তদন্ত বোর্ডের প্রধান বদলি হয়ে যাওয়ায় তা বন্ধ ছিল। এখন আবার তদন্তকাজ শুরু হয়েছে।’ অপর সদস্য সহকারী সচিব আফরোজা আক্তার বলেন, ‘আমাকে বোর্ডের সদস্য করা হলেও আমি তদন্ত কাজে অংশ নেইনি। এ বিষয়ে আমাকে কোনো চিঠিও দেওয়া হয়নি।’ এদিকে মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, কুতুব উদ্দিন বর্তমানে অসুস্থ থাকায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে না সংশ্লিষ্ট বোর্ড। তদন্ত বোর্ডের প্রধান যুগ্ম সচিব কামরুল হাসান খানও দুই রকম বক্তব্য দিয়েছেন।গেল ৬ ফেব্রুয়ারি ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি বদলি হয়ে চলে এসেছি। এ কারণে তদন্ত হচ্ছে না।’ আর গত ২০ ফেব্রুয়ারি পুনরায় তাকে ফোন করা হলে বলেন, ‘তদন্ত চলছে।’ কতদিন ধরে তদন্ত চলছে, এমন প্রশ্নে কামরুল হাসান বলেনÑ ‘প্রায় এক মাস ধরে।’ অথচ ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারির ব্যবধান মাত্র ১৫ দিন! এ প্রসঙ্গে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী আমাদের সময়কে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবহিত নই। খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলব।’ ভূমি কুতুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ : মামলার এজাহারে বলা হয়, গুলশান-১ নম্বরের ১ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ি পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. কুতুব উদ্দিন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা ও অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে কৌশলে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে রাজউকের হুকুম দখল করা সম্পত্তি অবমুক্ত করা হয়। এর পর নাজমুল ইসলাম সাঈদ নামে একজনকে জমির ভুয়া আমমোক্তার বানিয়ে শ্বশুরসহ আরও দুজনকে ক্রেতা সাজিয়ে জমিটি আত্মসাৎ করেন কুতুব। এজাহারে আরও বলা হয়, ১০ কাঠার ওপর বাড়িটির দলিলে শ্বশুর আবদুল জলিল মৃধার নাম থাকলেও প্রকৃত মালিক তিনি নিজেই। এমনকি সপরিবারে তিনি সেখানে বসবাসও করছেন। এ জমির অপর ক্রেতা হিসেবে দেখানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ডা. একেএম আনোয়ার উল্লাহ ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামসুন্নাহারকে। মূলত কুতুব তাদের প্রভাবিত ও প্ররোচিত করে কম দামে গুলশানে জমি কিনে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা নেন। পরে তাদের নাম দলিলে ক্রেতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। অথচ তারা ওই জমি ভোগদখল করেননি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের সভায় এ দুর্নীতি মামলার চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভূমি কুতুবের বিরুদ্ধে অনেকগুলো দুর্নীতির অভিযোগ দুদকে অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে। এদিকে বরখাস্ত কর্মকর্তা কুতুবের বিরুদ্ধে তদন্ত থমকে থাকায় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দাবি, এ কর্মকর্তা দুর্নীতিতে এতই ডুবে ছিলেন যে, তার কারণে অন্যদেরও সুনাম নষ্ট হয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সুনাম রক্ষা করা হোক।
সর্বশেষ
সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু
দর্পন টিভি - 0
সুনামগঞ্জের শাল্লায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকালে উপজেলার জনস্বাস্থ্যের নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদে...