মাঠ গরম রেখেছে ছাত্রলীগই

আর মাত্র পাঁচ দিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু নির্বাচন। ১১ মার্চ অনুষ্ঠেয় ৪৩ হাজার ভোটারের এ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলে প্রার্থী প্রায় ৮০০। ক্যাম্পাসে সক্রিয় সব সংগঠনই এবারের লড়াইয়ে শামিল হলেও নির্বাচনী মাঠ বিশেষভাবে গরম করে রেখেছে ছাত্রলীগ। বামপন্থি সংগঠনগুলো সে তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে, পিছিয়ে আছেন কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্যানেল থেকে ভোটযুদ্ধে নামা প্রার্থীরাও। আর ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিযোগী হিসেবে বিবেচিত ছাত্রদলের প্রচার মূলত মাঠে নয়, চলছে অনলাইনে। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সারাদেশে মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস থাকলেও অনেকটা নির্জীব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রায় আটশ প্রার্থীর জমজমাট প্রচার থাকলেও তাদের বিপরীতে প্রায় ৪৩ হাজার ভোটার যেন অনেকটা সিদ্ধান্তহীনতায়। বিভিন্ন প্যানেলের প্রচার থাকলেও ছাত্রদল অনেকটা নিয়ম রক্ষার প্রচার চালাচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী আর বামপন্থিরা কিছু প্রচার চালালেও নির্বাচনী মাঠকে গরম করে রেখেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই। বাকিরা অনলাইনে প্রচার চালালেও এ সংগঠনের কর্মীরা অনলাইন-অফলাইন দুই মাধ্যমেই সমান সক্রিয়। ২৮ বছর পর অনুষ্ঠেয় ডাকসু নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ছাড়াও জাসদ ছাত্রলীগ, জাতীয় ছাত্রসমাজ, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বামজোট, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, স্বতন্ত্র জোট, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ, ছাত্র আন্দোলন এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন বেশকিছু। দিনক্ষণের হিসেবে ভোটানুষ্ঠান পাঁচ দিন পর। প্রচারে সময় আছে আর তিন দিন। এ অবস্থায় লড়াইয়ের মাঠে যতটা উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ার কথা ছিল, ততটা অবশ্য ছড়ায়নি। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও নেই সেই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। গতকাল ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, কার্যত, ছাত্রলীগের পর মাঠের প্রচারে এগিয়ে রয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। প্রসঙ্গত দীর্ঘদিন ধরে ঢাবি ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের নেতারা। ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা সম্প্রতি ক্যাম্পাসে নিয়মিত আসা-যাওয়া করছেন। কেন্দ্রীয় সংসদে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিলেও হল সংসদগুলোয় তিন থেকে ছয়জন পর্যন্ত প্রার্থী দিয়েছে ছাত্রদল। আর পাঁচটি ছাত্রীহলের মধ্যে শুধু শামসুন্নাহার হলের ভিপি প্রার্থী রয়েছে সংগঠনটির। নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রচার অনেকটাই পিছিয়ে। সকাল সাড়ে দশটার দিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাবি নেতারা মধুর ক্যান্টিনে এসে বসেন। এর পর সময় গড়ালে তারা নেতাকর্মীসহ অবস্থান নেন হাকিম চত্বরে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ভোট প্রার্থনা করতে দেখা যায়নি তাদের। ক্যাম্পাসের কোথাও সংগঠনটির কোনো প্রচার কার্যক্রমও দেখা যায়নি; নেই ব্যানার ফেস্টুনও। এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা বলেন, ছাত্রদল মূলত নিয়মরক্ষার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশ দেওয়ার কারণে সবাই ক্যাম্পাসমুখী হয়েছেন; নির্বাচনে বিজয়ের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন না কেউই। তারা এও জানান, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা ও ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতিতে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে তাদের তেমন কোনো প্রত্যাশাও নেই। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান নির্বাচনী ফল নিয়ে প্রত্যাশার প্রশ্নে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ছাত্রদলের জয়লাভ সম্ভব।

প্রচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নেতাকর্মী ও প্রার্থীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে বিভিন্নভাবে ভোট চাইছেন। একই চিত্র বিভিন্ন বাম সংগঠনের ক্ষেত্রেও। বামজোটের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দীর কিছু ব্যানার শোভা পাচ্ছে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে। তবে শিক্ষার্থীদের কাছে ভোট চাইতে দেখা যায়নি এ জোটের নেতাকর্মীদের। এর বাইরে ছাত্রমৈত্রী, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র আন্দোলনসহ আরও বেশ কয়েকটি সংগঠন প্রার্থী দিলেও তারা গতকাল পর্যন্ত প্রচারে নামেনি। প্যানেলগুলোর কিছু প্রার্থী বিচ্ছিন্নভাবে ভোট চাইছেন। ঢাবি ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ভোট না চাইলেও অনলাইনে বেশ তৎপর স্বতন্ত্র জোট নামের একটি প্যানেল। এ জোট প্রায় প্রতিদিনই ফেসবুকে লাইভ ও বিভিন্নভাবে প্রচার চালাচ্ছে। প্রচারের ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের পরই সবচেয়ে এগিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্যানেল থেকে লড়াইয়ে নামা প্রার্থীরা। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন; অনলাইন প্রচারেও বেশ তৎপর রয়েছেন। যদিও এ প্যানেলের সক্রিয় কর্মীর সংখ্যা হাতেগোনা। এর বাইরে স্বতন্ত্র জিএস প্রার্থী এআরএম আসিফুর রহমান মাঠে ও অনলাইনে খুবই সক্রিয়। জানা যায়, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে স্বতন্ত্র জোটের প্রার্থীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারেন। জোটেরই এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভোটারদের কাছে আমাদের যেমন প্রত্যাশা ছিল, সে অনুযায়ী সাড়া পাচ্ছি না। তাই বিকল্প হিসেবে শেষ মুহূর্তে জনপ্রিয় কোনো প্যানেলকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন আমাদের নীতিনির্ধারকরা। এদিকে বামজোটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংগঠনটির প্যানেলে জিএস পদে মনোনয়ন পাওয়া উম্মে হাবিবা বেনজির ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তুলতে শুরু থেকেই তৎপর ছিলেন। প্রয়োজনে নিজে ছাড় দিয়ে হলেও এখনো নতুন ঐক্য গড়ার তৎপরতা চালাচ্ছেন তিনি। এ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইকালে কর্তৃপক্ষ বাতিল করে দিলেও পরবর্তী সময়ে তিনি আবেদন করে প্রার্থিতা ফিরে পান। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি বেশ পরিচিত। জানা যায়, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বেনজির বৃহত্তর ঐক্য গড়তে সচেষ্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই। তবে তার কোনো প্রচেষ্টাই শেষ পর্যন্ত অর্থবহ হয়নি। এত অল্প সময়ে ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর কাছে পরিচিত হওয়া এবং তাদের মন জয় করা অনেকটা অসম্ভবই মনে করছেন অনেকে। এমন অনেক প্রার্থী শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বেনজির অথবা এআরএম আসিফুর রহমানকে সমর্থন দিতে পারেন সরে যাওয়া প্রার্থীরা। ইতোমধ্যে স্বাধিকার স্বতন্ত্র জোট জিএস পদে আসিফুর রহমানকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছে। আর কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা প্রকাশ্যে ঘোষণা না দিলেও জিএস পদে তারা চূড়ান্ত মুহূর্তে আসিফুর অথবা বেনজিরকে সমর্থন দিতে পারে।