ফেনীর এসপি ও সোনাগাজীর ওসিসহ ৪০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও পুলিশের দায়িত্বহীনতার অভিযোগে ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার ও সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনসহ মোট ৪০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। নুসরাত হত্যার তদন্তে গঠিত পুলিশ সদর দপ্তরের উচ্চপর্যায়ের কমিটি সূত্রে আজ বুধবার এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।এর আগে নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও ধারণ এবং অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার মামলায় সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। জিজ্ঞাসাবাদে ওসি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে মামলার আলামত হিসেবে তার দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। ফোনগুলো পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে পিবিআই সূত্র। তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর ঢাকার উত্তরায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদর দপ্তরে রাখা হয়েছে। এদিকে ৪০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা সাপেক্ষে পুলিশ সদর দপ্তরের উচ্চপর্যায়ের কমিটি সূত্র আরও জানিয়েছে, নুসরাতকে যৌন হয়রানির পর তাকে আগুন দেওয়া এবং তার মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা যুক্ত ছিলেন তাদের জবানবন্দি নিয়েছে তদন্ত কমিটি। এ তালিকায় পুলিশ সুপার ও ওসিসহ মাদ্রাসা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ছিলেন। গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদ্রাসার  অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে। ওই ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। গত ৬ এপ্রিল সকালে রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান। সেখানে মাদ্রাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে-এমন সংবাদ দিলে রাফি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান। সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। নুসরাতের মৃত্যুর পর সোনাগাজী থানায় অভিযোগ নিয়ে যাওয়া নুসরাতের সঙ্গে ওসি মোয়াজ্জেমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। নুসরাতের মৃত্যুর পরদিন নুসরাতের পরিবারকে অসহযোগিতার অভিযোগে প্রত্যাহার করা হয় ওসিকে। আলোচিত এ মামলায় এজাহারভুক্ত আট আসামিসহ এখন পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও প্রধান তদন্ত সংস্থা পিবিআই। তাদের মধ্যে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী পাঁচজন শাহাদাত হোসেন শামীম, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহমেদ, উম্মে সুলতানা পপি ও কামরুন নাহার মনিসহ আটজন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার হয়েছেন হুকুমদাতা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা, আশ্রয়দাতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন, অর্থ জোগানদাতা পৌর কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম এবং মাদরাসার শিক্ষক আবছার উদ্দিন।