সিলেটের গোয়াইনঘাটে প্রতিবেশী প্রভাবশালীদের দেওয়া পাকা দেয়ালে অবরুদ্ধ হয়ে ‘বন্দি জীবনযাপন’ করছে দশটি পরিবার। স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন ও গ্রাম আদালতের শরণাপন্ন হলেও কিছুতেই দুর্ভোগ কাটছে না। উপায়ান্তর না দেখে অবশেষে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য আবুল কালাম বাদী হয়ে সিলেটের প্রথম নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের জাতু গ্রামের আবুল কালাম, হোসন আহমদ, সুলেমান, বশির উদ্দিন, কালাম, আতাউর রহমান, নিজাম উদ্দিনসহ ১০টি পরিবারের সদস্যদের যাতায়াতের পথটি বন্ধ করে দেন প্রতিবেশী গ্রামের ছওয়াব আলী, মখলিছুর রহমান, মনজুর আহমেদ ও ফয়ছল। বাড়িতে যাওয়া-আসার একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ করে সেখানে ইটের পাকা দেয়াল তৈরি করেছে। মামলার বাদী আবুল কালাম বলেন, রাস্তাটি আমাদের যৌথ এজমালি সম্পত্তি। কিন্তু কোনো রকম পূর্ব অবহিত করা ছাড়াই পেশিশক্তি আর টাকার জোরে আমাদের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটি গত ১৯ মার্চ বন্ধ করে দেয়। অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান বলেন, বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে উভয় পক্ষকে থানায় ডাকা হয়েছিল। ভুক্তভোগীরা এলেও অপর পক্ষ আসেনি। এ ঘটনায় জড়িতদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিশ^জিত কুমার পাল জানান, বাড়িওয়ালা তার সীমানা প্রাচীর নির্ধারণ করে পাকা দেয়াল নির্মাণ করেছেন। এতে কয়েকটি পরিবার যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিষয়টি আমরা অবগত রয়েছি। আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাড়িগুলোর দুদিকে পাকা দেয়াল নির্মাণ ও একদিকে নালা থাকায় বাইরেও বের হতে পারছেন না ওই ১০ পরিবারের শতাধিক সদস্য। বিকল্প পথ হিসেবে তারা কিছুদিন পাকা দেয়ালের নিচ দিয়ে একটি ‘সুড়ঙ্গ’ ব্যবহার করেছিলেন। পরে সেখানেও কাঁটা ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। এ কারণে ভোক্তভোগী ১০ পরিবারের মানুষ ঠিকমতো মসজিদ, মাদ্রাসা ও হাটবাজারে যেতে পারছেন না। স্কুল-কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। তাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বই হাতে দেয়াল টপকাতে গিয়ে প্রায়ই পড়ে গিয়ে আহত হয়। এ ছাড়া দেয়াল টপকে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার অভিযোগ রয়েছে। ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিষয়টি অবহিত করেও কোনো সুরাহা মেলেনি। অবশেষে তারা ইউপি চেয়ারম্যানের পরামর্শে আইনি প্রতিকারের উদ্যোগ চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) স্মরণাপন্ন হন।গত ১১ এপ্রিল এ অভিযোগ দেয়া হলে বিষয়টি দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে আইনি উদ্যোগ নেওয়ার জন্য গোয়াইনঘাট থানার ওসি বরাবরে পাঠান ওসি। কিন্তু বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে উভয় পক্ষকে থানায় ডাকা হলে ভোক্তভোগীরা এলেও অপর পক্ষ হাজির হয়নি। উপায়ান্তর না দেখে অবশেষে আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়।শ