প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সৌদি আরবে কারফিউ (সান্ধ্য আইন) ঘোষণা করা হয়েছে। আজ সোমবার সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী ২১ দিনের জন্য এ কারফিউ জারি থাকবে।গতকাল রোববার দেশটির বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ এই কারফিউ জারির আদেশ দেন। সৌদি প্রেস এজেন্সির বরাত দিয়ে আরব নিউজে বলা হয়েছে, প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে কারফিউ শুরু হয়ে চলবে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত। সৌদি গেজেটের খবরে বলা হয়েছে, গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১১ জন। এর মধ্যে রোববারই ১১৯ জন আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয় বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মো. আল আবদেল আলী জানান, আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। কমিউনিটি যোগাযোগের মাধ্যমে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন উল্লেখ করে মো. আল আবদেল জনগণকে ঘরে থাকার ও অন্যদের সঙ্গে না মেশার আহ্বান জানান।
সৌদি আরবে কারফিউ জারি
মিরপুরে মৃত রোগীর চিকিৎসা দেওয়া ডাক্তারও করোনায় আক্রান্ত!
মিরপুরের টোলারবাগে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীর চিকিৎসা দেওয়া ডাক্তারও এবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ডা. পলাশ নামের ওই চিকিৎসক রাজধানীর ডেল্টা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক। জানা গেছে, গতকাল রোববার শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এই চিকিৎসকের। শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করলে তার নমুনা সংগ্রহ করে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। পরে সেই পরীক্ষায় ডা. পলাশের শরীরে কোভিড-১৯ এর উপস্থিতি পাওয়া যায়। আজ সোমবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহকারী সার্জন প্রেমাংশু বিশ্বাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘ডা. পলাশ
ই এম ও, ডেল্টা হাসপাতাল
টোলারবাগের মারা যাওয়া প্রথম কোভিড পেশেন্টকে তিনিই রিসিভ করেছিলেন সেদিন ডেল্টা হাসপাতালে। তার ছিল না কোনো প্রোটেকশন, যেভাবে আমরা এখনো রোগী দেখছি। তখনো সেই মুমূর্ষু ব্যক্তির কোভিড শনাক্ত হয়নি। ভর্তি করার পর, তিনি কোভিড শনাক্ত হন এবং আইসিইউতে মারা যান।
ডা. পলাশেরও আজ কোভিড পজিটিভ এসেছে। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় এখন ডা. পলাশও আইসিইউতে। রোগী দেখার জন্য একটা পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট তাকে দিতে পারেনি এই রাষ্ট্র!
ধিক্কার…..’

ডা. পলাশ টোলারবাগের যে রোগীর চিকিৎসা করেছিলেন তিনি গত শনিবার মারা যান। হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করছেন ৩০ বছর বয়সী এই চিকিৎসক। এদিকে, ডেল্টা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চারজন চিকিৎসক, ১২ জন নার্স এবং তিনজন স্টাফকে করোনা আক্রান্তের শঙ্কায় হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। তারা গত ২০ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন।
বিদেশফেরতদের নিয়ে গলদঘর্ম প্রশাসন
করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত সরকারি হিসেবে দেশে ২৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ২ জন। মারা যাওয়া দুজনই বিদেশ ফেরতদের সংস্পর্শে এসে করোনা আক্রান্ত হন। আক্রান্ত অপর ২৫ জনের কেউ আক্রান্ত দেশ থেকে এসেছেন, কেউবা তাদের সংস্পর্শে ছিলেন। এ অবস্থায় বিদেশ ফেরতদের প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের কোয়ানেন্টিনে রাখতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার এখন গলদঘর্ম দশা হয়েছে। জরিমানা করেও তা করা যাচ্ছে না। যে কারণে মাঠে নামানো হয়েছে পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ, গোয়েন্দাসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে। ইমিগ্রেশন পুলিশের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ১ মার্চ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে আকাশপথে প্রায় ৩ লাখ প্রবাসী (২ লাখ ৯৮ হাজার ৩৩৩ জন) দেশে এসেছেন। তাদের একটি বড় অংশই করোনা আক্রান্ত দেশে ছিলেন। আগতদের মধ্যে রাজধানীতে রয়েছেন সর্বাধিক ৩৩ হাজার ২০ জন। এর পরই আছে চট্টগ্রাম জেলা। এ জেলায় ২০ হাজার ১৮৪ জন প্রবাসী গত ২১ দিনে ঢুকেছেন। স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত আইজি মীর শহীদুল ইসলাম গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, দেশে ফেরা প্রবাসী বাংলাদেশিরা পাসপোর্ট করার সময় যে ঠিকানা ব্যবহার করেন, সেই ঠিকানা অনুযায়ী তাদের তালিকা সংশ্লিষ্ট জেলা বা মহানগরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। জেলা পুলিশ দিয়ে খোঁজ নিয়ে তাদের কাউকে কাউকে প্রদত্ত ঠিকানায় পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় অবস্থান করছেন, পুলিশ দিয়ে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাদের পাওয়া যাচ্ছে তাদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গত ১৩ মার্চ থেকে এসবির পক্ষ থেকে বিদেশ ফেরতদের তালিকা স্বাস্থ্য বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে দেওয়া হচ্ছে। কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার কাজে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা করতে এ পদক্ষেপ। বিদেশ ফেরতদের ওপর নজরদারি বাড়াতে স্পেশাল ব্রাঞ্চে বিশেষ সেল খোলা হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই অতিরিক্ত আইজিপি। ইমিগ্রেশন পুলিশের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ১ মার্চ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত যে ৩ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশে এসেছেন; তাদের মধ্যে ঢাকা মহানগরসহ অন্তত ১১ জেলায় সবচেয়ে বেশি ঢুকেছেন। যে কারণে ওই এলাকাগুলোর ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। ইমিগ্রেশন পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, ১ মার্চ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা মহানগরে ৩৩ হাজার ২০, চট্টগ্রাম মহানগরে
৪ হাজার ৫৬৯, রাজশাহী মহানগরে ৯৪৯, খুলনা মহানগরে ২ হাজার ৪১৩, বরিশাল মহানগরে ১৩৩, সিলেট মহানগরে ৮৭০, ঢাকা জেলায় ১৪ হাজার ৩৮৯, চট্টগ্রাম জেলায় ২০ হাজার ১৮৪, রাজশাহী জেলায় ২ হাজার ৭৭৭, খুলনায় ৭ হাজার ৩২৬, নারায়ণগঞ্জে ৫ হাজার ৯৬০, কক্সবাজারে ২ হাজার ৫৬৩, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২ হাজার ২৭৬, বাগেরহাটে ৩ হাজার ৭৮৬, মুন্সীগঞ্জে ৬ হাজার ৫৭৭, বান্দরবানে ২১৯, নওগাঁয় ২ হাজার ২০৪, সাতক্ষীরায় ১০ হাজার ২৬০, মানিকগঞ্জে ২ হাজার ৭১৯, রাঙামাটিতে ৩০০, নাটোরে ১ হাজার ৫০৭, যশোরে ১৬ হাজার ৪৫০, গাজীপুরে ৪ হাজার ৯৪১, খাগড়াছড়িতে ৩১৮, পাবনায় ৩ হাজার ৩৪৭, মাগুরায় ২ হাজার ৫২৫, নরসিংদীতে ৪ হাজার ৬১৯, নোয়াখালীতে ৬ হাজার ৯৪৪, সিরাজগঞ্জে ১ হাজার ৯৪৪, নড়াইলে ২ হাজার ৬০৫, ফরিদপুরে ৪ হাজার ৭৪১, ফেনীতে ৪ হাজার ৮৯৫, বগুড়ায় ৩ হাজার ১২৯, ঝিনাইদহে ৪ হাজার ২১, রাজবাড়ীতে ১ হাজার ৯৬৮, লক্ষ্মীপুরে ৩ হাজার ৫৫৯, জয়পুরহাটে ৮৯১, কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার ১০৯, কুমিল্লায় ১৬ হাজার ৪০৭, শরীয়তপুরে ৩ হাজার ২১৯, রংপুরে ১ হাজার ৫৭৩, চুয়াডাঙ্গায় ২ হাজার ৯৯, মাদারীপুরে ৩ হাজার ৫৯৯, চাঁদপুরে ৫ হাজার ৯২০, গাইবান্ধায় ১ হাজার ২৬, মেহেরপুরে ১ হাজার ৩২৫, গোপালগঞ্জে ৪ হাজার ৩৩৯, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১২ হাজার ৮৫, কুড়িগ্রামে ৬২১, কিশোরগঞ্জে ৩ হাজার ৪০, লালমনিরহাটে ৭৬৪, বরিশালে ৪ হাজার ২৬৬, টাঙ্গাইলে ৫ হাজার ৭৮৫, সিলেটে ৭ হাজার ৩৪৯, নীলফামারীতে ১ হাজার ২৫৯, পিরোজপুরে ২ হাজার ৩৩, ময়মনসিংহে ৩ হাজার ৬২৭, মৌলভীবাজারে ৪ হাজার ১৮, দিনাজপুরে ৩ হাজার ৮৮, ঝালকাঠিতে ১ হাজার ১১৯, হবিগঞ্জে ২ হাজার ৮৬২, ঠাকুরগাঁওয়ে ১ হাজার ৩৮৬, নেত্রকোনায় ১ হাজার ২৪, বরগুনায় ৯৩৭, শেরপুরে ৫৪০, সুনামগঞ্জে ২ হাজার ৪৮০, পঞ্চগড়ে ১ হাজার ৮৫, পটুয়াখালীতে ১ হাজার ৩৩৪, ভোলায় ১ হাজার ৫৮৭ এবং জামালপুরে ১ হাজার ৩৩৮ জন প্রবাসী ঢুকেছেন। ইমিগ্রেশন পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অনেকেই পাসপোর্ট নেওয়ার সময় গ্রামের বাড়ির স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। সঙ্গে অস্থায়ী ঠিকানাও দিয়েছেন। কিন্তু তাদের একটি বড় অংশ পাসপোর্টে প্রদত্ত স্থায়ী ঠিকানায় বছরের পর বছর ধরে থাকেই না। ফলে তাদের স্থায়ী ঠিকানায় গিয়ে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের খুঁজে বের করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
থানায় গিয়ে বাদীই হলেন আসামি!
থানায় ডেকে নিয়ে সাজানো মামলায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার এক বাদীকেই আসামি বানানোর অভিযোগ উঠেছে পল্লবী থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। গতকাল রবিবার ভোর ৪টার দিকে পরিস্থান পরিবহনের চেয়ারম্যান শেখ শিরিন শান্তির বিরুদ্ধে এ মামলা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন তার স্বামী ওয়াজউদ্দিন। শিরিন শান্তি ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা আওয়ামী লীগেরও সদস্য। গতকাল তাকে আদালতে তোলা হলে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। ওয়াজউদ্দিন জানান, একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছে স্থানীয়রা। তারা চুরি, ছিনতাইসহ এহেন কর্মকাণ্ড নেই যা করে না। শিরিন শান্তি এসবের প্রতিবাদ করলে তাকে নানা ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল সন্ত্রাসীরা। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শান্তির কর্মচারী শামীম বাসায় আসার সময় তুচ্ছ ঘটনায় গালমন্দ করে স্থানীয় সন্ত্রাসী শফি। বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে সবুজ নামে আরেক সন্ত্রাসী এসে শামীমকে মারধর করে। প্রাণ বাঁচাতে তিনি দৌড়ে শান্তির বাসায় আশ্রয় নেন। এ সময় ওই দুজন ছাড়াও আসামি ফয়সাল সোহেলসহ অচেনা আরও তিন থেকে চারজন বাসার ভেতরে ঢুকে শামীমকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এতে ওয়াজউদ্দিন এবং তার ছেলে সৈকত ও মেয়ে মুক্তা বাধা দিলে তাদেরও মারধর করে সন্ত্রাসীরা। বাসার ভেতর আসবাবপত্র ভাঙচুর ছাড়াও লুটপাটও চালায় তারা। আহতদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে শিরিন শান্তি বাসায় এসে ছেলে সৈকতকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যান। এ ঘটনায় গত শুক্রবার চারজনকে আসামি করে পল্লবী থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন শান্তি। এর পর থেকে মামলা তুলে নিতে বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল আসামিরা। কিন্তু গত শনিবার পর্যন্ত হামলায় জড়িত কাউকে পুলিশ আটক না করে উল্টো সমঝোতার কথা বলে থানায় ডেকে নিয়ে বাদীকেই নানা হয়রানি করা হয়। ওয়াজউদ্দিন বলেন, ‘শনিবার দুপুরে শিরিন শান্তির মোবাইল ফোনে কল দিয়ে মামলা তুলে নিয়ে আসামিদের সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাব দেয় এবং থানায় ডেকে পাঠায় পল্লবী থানার পুলিশ। এটির কল রেকর্ড আমাদের কাছে রয়েছে। থানায় গিয়ে আমার স্ত্রী পুলিশের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় উল্টো তাকেই মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসিয়ে রাখা হয়। দেনদরবারের পর গভীর রাতে শিরিন শান্তিকে প্রধান আসামি করা ছাড়াও আহতদেরই হত্যাচেষ্টার মামলায় জড়ায় পুলিশ।’ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন ওয়াজউদ্দিন। দুটি মামলারই তদন্তকারী কর্মকর্তা পল্লবী থানার এসআই মো. আবদুুর রহিম। ওয়াজউদ্দিনের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে তিনি জানান, ‘শিরিন শান্তি যে মামলা করেছেন সেটির আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে সেটিতেই তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তদন্তের পর ঘটনার বিস্তারিত জানা যাবে।’
ইতালিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়ালো
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপে সবচেয়ে বিপর্যস্ত ইউরোপের দেশ ইতালি। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা।গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৬৫১ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে ইতালিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৭৬ জন। এ ছাড়া গতকাল রোববার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৫৬০ জন। এর ফলে দেশটিতে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ১৩৮ জন।দেশটির নাগরিক সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ এই তথ্য জানিয়েছে। এর আগের দিন, গত শনিবার দেশটিতে ৭৯৩ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। যেটা এখন পর্যন্ত যেকোনো দেশের জন্য একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এমনকি মৃত্যুর সংখ্যায় ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে দেশটি। এদিকে, গত দুদিনে ইতালিতে দুই প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাতে ইতালির ত্রিয়েস্তা হাসপাতালে ফরিদ খান (৬০) নামে একজন ও গত শুক্রবার রাতে ইতালির মিলান শহরে গোলাম মাওলা (৫৫) নামে ওই দুই প্রবাসীর মৃত্যু হয়। ফরিদ প্রায় এক সপ্তাহ আগে জ্বর,কাশি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি ইতালির মোনফালকোনা শহরে বসবাস করতেন। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী। আর গোলাম মাওলা সর্দি কাশি, ঠান্ডাজনিত সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছিলেন।
করোনা রোগী রাখার চুক্তির খবরে উত্তরায় হাসপাতাল ঘেরাও
করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার খবরে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত রিজেন্ট নামের একটি বেসরকারি হাসপাতাল ঘেরাও করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় হাসপাতালটির আশেপাশের মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে রাস্তার দুপাশে ব্যারিকেড দিয়ে হাসপাতালটি ঘেরাও করে। এ সময় তারা করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এই ঘটনায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকাবাসীর দাবি, আবাসিক এলাকায় গড়ে তোলা এ হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের তারা চিকিৎসা দিতে দেবেন না। তাদের অভিযোগ হাসপাতালটিতে গ্রাম থেকে রোগী এনে চিকিৎসার নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়। এ ছাড়া সামান্য হাত ভাঙার কারণে হাসপাতালটিতে গেলেও আইসিইউতে ঢুকিয়ে মোটা অঙ্কের বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। উত্তরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তপন চন্দ্র সাহা বলেন, ‘করোনা রোগী এই ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হবে এমন গুজবে এলাকার লোকজন জড়ো হয়েছিল। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিষয়টি অবহিত করা হবে। আমরা কল্যাণ সমিতির নেতাদের বলেছি- সবাইকে শান্ত থাকতে। ’ পুলিশের আশ্বাসে এলাকাবাসী শান্ত হন। তারা ঘেরাও কর্মসূচি আপাতত প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুনরায় রোগী রাখার চেষ্টা করলে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান এলাকাবাসী। উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডে অবস্থিত রিজেন্ট হাসপাতাল। গত শনিবার রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কক্ষে রিজেন্ট হাসপাতালের পক্ষে এই সমঝোতা চুক্তিতে সাক্ষর করেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মোহাম্মদ শাহেদ।
দেশেও কি শুরু হয়ে গেল করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন?
বৈশ্বিক মহামারির দাপট কিছুতেই কমছে না। বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগ কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। জনমিতিবিদ রবার্ট টমাস ম্যালথাসের সূত্র ধরে বাংলাদেশেও সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৭। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়ে গেল কি না তা যাচাই করে দেখছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। মিরপুরের টোলারবাগে যে রোগী করোনা আক্রান্ত জানানোর পর মারা গেলেন তিনি কোনো প্রবাসী বা বিদেশির সংস্পর্শে আসেননি। তা হলে তার ক্ষেত্রে সোর্স অব ইনফেকশন কী? সেক্ষেত্রে কি বলা যাবে দেশে করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তরে আইইডিসিআর পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, ‘আমরা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলার জন্য আরেকটু সময় নিচ্ছি। আমরা বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছি। যেমন- যে রোগীর কথা বলছেন (টোলারবাগে মৃত রোগী) তার ক্ষেত্রে আমরা তাদের পাশে বিদেশ থেকে এসেছেন এমন দুই ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছি। আমরা তাদের নমুনা সংগ্রহ করেছি। আমরা দেখতে চাই তাদের সংক্রমণ ছিল কিনা, ওই ব্যক্তির করোনা সংক্রমণ এদের কাছ থেকে এসেছে কিনা। তাদের একজনের ক্ষেত্রে আমরা সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করছি। আমরা এক্সটেনসিভভাবে তাদের তথ্য সংগ্রহ করছি। অন্যজনেরও করছি।’ ‘প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই আমরা চাই যে সোর্স অব ইনফেকশন কন্টাক্ট আইডেন্টিফাই করতে। কারণ, কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের বিষয়টা হচ্ছে যখন সোর্স অব ইনফেকশন আইডেন্টিফাই করতে পারছি না। সোর্স অব ইনফেকশনটা আইডেন্টিফাই করতে পারলে পরবর্তী সংক্রমণটা প্রতিরোধ করা যাবে। সেজন্য আমরা ১৪ দিন পেছনে গিয়ে তাদের সমস্ত তথ্য নিচ্ছি। এখনো আমাদের সব তথ্য সংগ্রহ শেষ হয়নি। আমরা তথ্য যখন পেয়ে যাবো তখন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে কি-না জানা যাবে।’ কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের বিষয়টা অস্বীকার করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন আমাদের জন্য একটা পরবর্তী লেভেল, যতক্ষণ না আমরা নিশ্চিত না হবো ততক্ষণ আমরা এটা বলবো না। কারণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে আমাদের রিপোর্টটা দিতে হবে। তথ্য প্রমাণ ছাড়া তাদের রিপোর্ট দিতে পারবো না।’ মিরপুরে মারা যাওয়া ব্যক্তির ছেলে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে দাবি করেন, তার বাবা বিদেশ ফেরত কারও সংস্পর্শে যাননি। তবে তিনি মসজিদে নামাজ পড়তে যেতেন। তিনি আরও লিখেন, ‘বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে যে আমার ভগ্নিপতি বিদেশ থেকে আমাদের বাসায় এসেছে, যেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমার দুই ভগ্নিপতি, বড় বোন এবং তার স্বামী চিটাগংয়ের দুটি সরকারি কলেজের অধ্যাপক। অন্য ভগ্নিপতি জাপানে থাকে। সে গত এক বছরের মধ্যে আসেনি।’

এর পরই খবর পাওয়া যায় টোলারবাগের আরেক বাসিন্দা রোববার সন্ধ্যায় মারা গেছেন। সকালে আইইডিসিআর তার নমুনা সংগ্রহ করে। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে জানানো হয় তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। জানা গেছে, টোলারবাগের যে ব্যক্তি শনিবার রাতে মারা গেছেন, তার সঙ্গে রোববার মারা যাওয়া ব্যক্তির ঘনিষ্ঠতা ছিল। তারা পাশাপাশি ভবনে থাকতেন এবং একই মসজিদে নামাজ পড়তেন।টোলারবাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া প্রথম ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেওয়া মিরপুরের ডেল্টা হাসপাতালের চিকিৎসক রোববার রাতে মারাত্মক শ্বাসকষ্ট নিয়ে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাকে কুয়েত মৈত্রীর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডেল্টা হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, টোলারবাগ থেকে আসা রোগীকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দিয়েছিলেন ওই চিকিৎসক। শনিবার প্রথম তিনি শ্বাসকষ্টের কথা জানান। আইইডিসিআর তার নমুনা সংগ্রহ করেছে। রোববার বিকেল থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করলে তাকে কুয়েত মৈত্রীর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের এক আশ্চর্য তথ্য বের হয়ে আসে চীনা সরকারের একটি গোপন নথিতেও। ওই নথি উদ্ধৃত করে হংকংয়ের সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট বলছে, চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের বড় অংশই ছিল নীরব বাহক। তাদের শরীরে করোনায় আক্রান্তের লক্ষণ ছিল না কিংবা অনেক দেরিতে প্রকাশ পেয়েছিল। নীরব বাহকদের সংখ্যা প্রতি তিনজনে একজন হতে পারে। এই খবর প্রকাশের পর ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে যে দেশগুলো বিভিন্ন কৌশল নিয়ে কাজ করছে, তারা আরও কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে গেল। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬৩৮ জন মানুষ এবং ১৪ হাজার ৬১১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানাচ্ছে পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘ওয়ার্ল্ডোমিটার’।সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চীনে গত ফেব্রুয়ারিতে ৪৩ হাজার জনের মধ্যে কতজন নীরব বাহক ছিলেন এবং তাদের কতজনের মধ্যে পরে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়, তা এখনো পরিষ্কার নয়। ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু যাদের শরীরে কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছে, তাদের পরীক্ষা করেছে। এই দেশগুলোতে করোনার সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক প্রতিবেদন বলছে, ইতালিতে লক্ষণ প্রকাশ পায়নি, এমন রোগীর সংখ্যা মোট আক্রান্তের ৪৪ শতাংশ। চীনা বিশেষজ্ঞদের এক যৌথ গবেষণা বলছে- চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও হংকংয়ে নিউমোনিয়ার যে কেসগুলো এসেছিল ২৩ জানুয়ারি উহান লকডাউন হওয়ার আগে, এই কেসগুলোই ছিল সংক্রমণের উৎস। এর হার ছিল ৭৯ শতাংশ। এই রোগীদের লক্ষণ খুব মৃদু ছিল কিংবা কারও কারও কোনো লক্ষণই ছিল না। এদিকে, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকায় বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘরের বাইরে বের হলে সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। সাধারণ মানুষকে চলাচল সীমিত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আগে বলতাম, সবার মাস্ক পরার দরকার নেই। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিতে বাইরে গেলে সবার অবশ্যই মাস্ক পরা প্রয়োজন।’ খুব জরুরি না হলে ঘরের বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজন নেই জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, একান্ত যেতেই হলে চলাফেরায় যেন ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা হয়।
পোশাক কারখানা নিয়ে সবাই তাকিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দিকে
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে দেশের পোশাক কারখানা সাময়িক বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গতকাল রবিবার শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে শ্রম মন্ত্রণালয়। পরিস্থিতি বিচেনায় শ্রমিকদের একটি পক্ষ এখনই পোশাক কারখানা বন্ধের পক্ষে মত দেন। অন্যটি পক্ষ খোলা রেখে সেখানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সব ধরনের সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলেন। এ অবস্থায় কোনো সিদ্ধান্তে নিতে পারেনি শ্রম মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শ্রমিক নেতাদের বলা হয়েছে কাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠক থেকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। উপস্থিত ছিলেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব কেএম আলী আজম। এ ছাড়াও পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। শ্রমিক নেতাদের দুপক্ষই গতকাল বৈঠকে পোশাক শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ অন্য সুযোগ সুবিধা অব্যাহত রাখার দাবি করেন। তারা বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো পোশাক কারখানা মালিক বা সরকারের পক্ষ থেকে সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলে শ্রমিকদের কী কী সুবিধা দিতে হবে সে ব্যাপারে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ছোট-মাঝারি অনেক কারখানায় এখনো শ্রমিকদের হাত ধোয়ার সাবান পর্যন্ত দিচ্ছে না। মালিকরা শ্রমিকদের বাসা থেকে হাত-পা ধুয়ে আসতে বলছে। শ্রমিকরা ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। এ অবস্থায় কারখানা চালু থাকলে যদি কোনো শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়, তার দায় কে নিবে? একজন আক্রান্ত হলে পুরো কারখানায় ছড়িয়ে পড়বে। শ্রমিকরা গা ঘেষাঘেষি করে কাজ করে। এ বিবেচনায় কিছুদিনের জন্য হলে লকডাউন করা যায় কিনা ভেবে দেখতে হবে। তবে যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক না কেন ভেবেচিন্তা নিতে হবে। শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তসলিমা আখতার লিমা বলেন, যেখানে সরকার সব ধরনের লোকসমাগম হয় এমন কার্যক্রম বন্ধ করেছে। স্কুল, কলেজ, সভাসমাবেশ বন্ধ করেছে। সেখানে শ্রমঘন পোশাক কারখানা কেন বন্ধ হবে না? কারখানায় শ্রমিকরা গাঘেঁষে বসে। একজন আরেকজনকে ঠেলে উঠতে হয়। একজন আরেক জনের গায়ে হাত দেয়। শুধু কারখানায় না, গণপরিবহন ছাড়াও কারখানা ছুটির সময় একজন আরেকজনের গাঘেঁষে প্রবেশ করে এবং বের হয়। এ অবস্থায় যদি কোনো শ্রমিক আক্রান্ত হয় এর দায় কি মালিকরা নিবেন? মালিকরা যদি সঠিক ব্যবস্থা নেয় তাহলে কথা নেই। কিন্তু তারা এটা নিশ্চিত করতে পারবে না। তাহলে শ্রমিকদের স্ববেতনে ছুটি দিতে হবে। কারখানা চালুর পর তাকে স্বপদে বহাল রাখতে হবে। শ্রমিকদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত হবে না। শ্রমিক নেতা লাভলী ইয়াসমিন বলেন, করোনা মোকাবিলা করার জন্য পুরো পৃথিবী প্রতিমুহূর্তে গবেষণা করছে। যেহেতু ১৪ দিন পর আলমত ধরা পড়ে, এর আগে তার আশপাশের সব মানুষকে আক্রান্ত করবে। একজন শ্রমিক আক্রান্ত হলে ওই কারখানাসহ আশপাশের সব কারখানা লকডাউন করতে হবে। কেন আমরা এ পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এর আগেই বন্ধ করা উচিত। যাদের জন্য কারখানা চালু থাকবে সেই ক্রেতারাই সবকিছু বন্ধ রেখেছে। অর্ডার বাতিল করছে। এদিকে কারখানা চালু রাখার পক্ষে মত দিতে গিয়ে শ্রমিক নেতা রহুল আমি বলেন, দেশে এখন মার্কেট বন্ধ হয়নি। পরিবহন বন্ধ হয়নি। তাই মনে করি লক ডাউন করার প্রয়োজন এখনো হয়নি। কারখানায় শ্রমিকরা যতক্ষণ থাকবে সে ততক্ষণ নিরাপদে থাকবে। এখন লকডাউন হলে মালিকরা বলবে শিপমেন্ট হয়নি, তাই বেতন-বোনাস দিতে পারবোনা। সামনে দুইটি ঈদ রয়েছে, মালিকরা এই সুযোগ কাজে লাগাবে। এ কারণেই বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। জাতীয় শ্রমিক লীগ সভাপতি ফজলুল হক মন্টু বলেন, পোশাক শিল্পে ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করে। কিন্তু অন্যান্য খাত মিলে প্রায় ১ কোটি শ্রমিক কাজ করে। পোশাক কারখানা বন্ধ করা হলে অন্য শ্রমিকরাও বন্ধের দাবিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। এটা মাথায় নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সচেতন হতে বলেছেন। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমরা শুধু মালিকদের চাপ দেই। কিন্তু যারা বছরের পর বছর আমাদের দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে সেই বায়ারদের কিছু বলি না। এই বিপদের সময় তাদেরও আমাদের পাশে চাই। তাদেরও চাপ দিতে হবে। এখন অনেক বায়ার ঢাকায় অবস্থান করছে কিন্তু তদাদের হারিকের দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ তাদের কারণে শত শতকোটি টাকা নষ্ট হয়েছে। সব পক্ষের মতামত শুনে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, আমি পক্ষে বিপক্ষে মত দিব না। সিদ্ধান্ত দিবেন প্রধানমন্ত্রী। আমি কেবল দুই পক্ষের যুকিগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরব। তিনি বলেন, আজকের দিনেও এত মানুষ নিয়ে মিটিং করা নৈতিক ছিল না। তারপরেও শিল্প বাঁচাতে এই ঝুঁকি নিয়েছি। কারণ যাকে ভালোবাসি তাকে রক্ষা করতে হবে।
এক লাফে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ
দেশব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়েছে করোনা ভাইরাস। ‘লকডাউন’ হওয়ার আতঙ্কে বাড়িতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ করছেন অনেকেই। এতে বাজারে বেড়েছে ক্রেতার চাপ। এ সুযোগে পণ্যের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়ার এ প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পেঁয়াজ। একদিনের ব্যবধানে মসলাজাতীয় এ পণ্যটির দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। গতকাল শুক্রবার কারওয়ানবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগরসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এদিন খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। একদিন আগেও ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। দুদিন আগে এ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। কারওয়ানবাজারের পেঁয়াজের ব্যবসায়ী জুয়েল মিয়া জানান, করোনা ভাইরাস আতঙ্কে গত বুধবার থেকেই পেঁয়াজ, রসুন, আদার চাহিদা বেড়ে যায়। রান্নায় পেঁয়াজ অতিপ্রয়োজনীয় মসলা হওয়ায় পণ্যটি বেশি করে কিনছেন ক্রেতারা। বেশির ভাগ ক্রেতাই ২-৩ কেজির জায়গায় পাল্লা (৫ কেজি) হিসেবে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বিগত কয়েক দিনে পেঁয়াজের চাহিদা অনেক হারে বেড়েছে। বিক্রিও বেড়েছে কয়েকগুণ। চাহিদা বাড়লেও একদিনের ব্যবধানে দাম প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি খুচরা ব্যবসায়ীরা। তবে অনেকেই জানান, খুচরা বিক্রেতাদের হাতে দাম থাকে না। পাইকারিতে গত বৃহস্পতিবার দাম বেড়েছে। তার প্রভাব খুচরা বাজারে পড়েছে। মালিবাগ বাজারের পাইকারি প্রতিষ্ঠান খোরশেদ বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহবুদ্দিন বলেন, হঠাৎ সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মোকাম থেকেই দাম বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার থেকে দুই দফায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ওইদিন বিকালে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৬২ টাকায়। আগের দিন যা ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। এর পর শুক্রবার সকাল থেকে আরেক দফা ১০ টাকা বেড়ে যায়। এদিন পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজি দরে। শ্যামবাজারের পাইকারি প্রতিষ্ঠান মিতালী বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী কানাই সাহা বলেন, এখন পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। সেই হিসাবে দাম কমার কথা। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। করোনার আতঙ্কে মানুষ হঠাৎ বেশি করে পেঁয়াজ কিনতে শুরু করায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। হঠাৎ দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারাও। তাদের দাবি, করোনার আতঙ্ককে পুঁজি করে পেঁয়াজ নিয়ে নতুন করে কারসাজি শুরু করেছে। কারওয়ানবাজারে পেঁয়াজ-রসুন কিনতে আসা আনোয়ার হোসেন নামক এক ক্রেতা বলেন, দেশটা যেন মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে। সুযোগ পেলেই যে যেমন পারছে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কেউ যেন দেখার নেই। ম্যাজিস্ট্রেট একদিকে অভিযান চালাচ্ছে, ব্যবসায়ীরা অন্যদিকে ঠিকই বেশি দাম রাখছে। পেঁয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রসুন ও আদারও। গতকাল খুচরা বাজারে চায়না রসুন বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি দরে। দুদিন আগেও যা ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, বুধবার যা ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এ ছাড়া ১০০-১২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আদার দাম বেড়ে হয়েছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। এদিকে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রির দায়ে গতকাল কারওয়ানবাজারের বেশ কয়েকটি পাইকারি ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ বিষয়ে অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে মানুষ বেশি কেনাকাটা করায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগে পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। অতিরিক্ত দাম রাখা ও পণ্যের মূল্যতালিকা না থাকায় আজ (শুক্রবার) কারওয়ানবাজারের কয়েক ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছি। একই সঙ্গে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। এর পর একই অপরাধ করলে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেওয়া হবে।
হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতে হাতে বিশেষ সিল
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের মধ্যেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে চার হাজার বিদেশি যাত্রী দেশে ঢুকছে। একই চিত্র ছিল গতকাল শুক্রবারও। এদের মধ্যে তিন যাত্রীর শরীরে মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রা পাওয়ায় তাদের কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিকালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসা এক প্রবাসীকে করা হয়েছে পুশব্যাক। আক্রান্ত দেশ থেকে যাত্রী আনার বিষয়ে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা অমান্য করায় ওই প্রবাসীকে কাতার এয়ারওয়েজের সেই বিমানে করেই পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এদিকে দেশে কোভিড-১৯ বিস্তার ঠেকাতে হোম কোয়ারেন্টিনের বিষয়ে কঠোর হয়েছে সরকার। তাই বিদেশ ফেরতদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে বিমানবন্দরেই তাদের বাঁ হাতে বিশেষ ‘সিল’ মেরে দেওয়া হচ্ছে অমোচনীয় কালি দিয়ে। গতকাল থেকেই এটি কার্যকর করেছে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন, বিদেশ থেকে যারা দেশে ফিরবেন, বিমানবন্দরে তাদের প্রত্যেকের হাতে সিল মেরে দেওয়া হবে। এর পর ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে না থেকে বাইরে ঘোরাফেরা করলে তাদের শাস্তির আওতায়ও আনা হবে। হাইকোর্ট থেকেও নির্দেশ রয়েছে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে রাখার। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বিদেশ ফেরতদের তার নিজের বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হলেও তারা সেটি অমান্য করছেন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে অন্য মানুষজনের সঙ্গে মিশছেন। এর ফলেই বেশি করে করোনা সংক্রমিত হচ্ছে। এ জন্য বিদেশ ফেরতদের সিল মেরে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, ‘শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসা সব যাত্রীকেই মনিটর করা হচ্ছে। শুক্রবার বিদেশ ফেরতদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করে রাখতে তাদের বাঁ হাতে একটি বিশেষ সিল মেরে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। ভোট দেওয়ার পর ভোটারদের হাতে যে অমোচনীয় কালি লাগানো হয়, সেটি দিয়েই সিলটি মারা হয়। এ ছাড়া বিদেশ ফেরত তিন যাত্রীর শরীরে মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রা পাওয়ায় তাদের কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ-উল-আহসান আমাদের সময়কে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শুক্রবার বিকালে কাতার এয়ারওয়েজে করে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এক প্রবাসী দেশে আসায় তাকে বিমানবন্দর থেকেই পুশব্যাক করা হয়েছে। কাতার এয়ারওয়েজের যে বিমান তাকে বাংলাদেশে এনেছে সে বিমানই ফেরত নিয়েছে।’
করোনামুক্ত থাকতে করণীয়
নিয়মিত জীবাণুনাশক, সাবান বা হ্যান্ডওয়াস দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। হাত না ধুয়ে চোখ-নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সুগন্ধি সাবানের চেয়ে কাপড় কাচার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া বেশি কার্যকর। কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়েও হাত ধোয়া যেতে পারে। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখতে হবে।
হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহার শেষে তা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ঠান্ডা বা ফ্লু আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থেকে সতর্ক থাকতে হবে। মাংস, ডিম খুব ভালোভাবে সিদ্ধ করে নিতে হবে। বন্যপ্রাণী বা গৃহপালিত পশু খালি হাতে স্পর্শ করা যাবে না। মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। কাঁচা খেজুরের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। স্টেশন কম্পাউন্ড, টয়লেট বাথরুম, ড্রেন ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া যে কোনো ধরনের জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। অত্যাবশ্যকীয় ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
প্রবাসী আত্মীয়স্বজনকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাংলাদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে। অসুস্থ হলে ঘরে থাকতে হবে, বাইরে যাওয়া অত্যাবশ্যক হলে নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
তথ্যসূত্র : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআর
লেখক : হোমিও চিকিৎসক
চেম্বার : এইচ-২৩ আমতলী, মহাখালী ঢাকা। ০১৯৭০৫৫৫৯১৯
সৌদি আরবে অভ্যন্তরীণ সব ফ্লাইট বাতিল
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে অভ্যন্তরীণ সব ফ্লাইট বাতিল করেছে সৌদি আরব। একই সঙ্গে দুই সপ্তাহের জন্য বাতিল করা হয়েছে বাস, ট্যাক্সি এবং ট্রেন সেবা। আজ শনিবার সকাল থেকে এই নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে বলে নিশ্চিত করেছে সৌদি প্রেস এজেন্সি। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরুরি মানবিক সহায়তা ও ওষুধ সরবরাহের কাজে নিয়োজিত বিমানের ফ্লাইট এবং অসুস্থ্য রোগীদের বহনকারী বাস বা অন্যান্য যানবাহন এই আওতার বাইরে থাকবে। এদিকে, গতকাল শুক্রবার থেকে সৌদির দুই প্রধান মসজিদে জুমার নামাজ বাতিল করা হয়েছে। এর আগে এই দুই মসজিদ বাদে দেশটির সব মসজিদে নামাজ আদায় সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছিল সৌদি সরকার। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের কারণে মহামারি পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। ফলে করোনার বিস্তার যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সৌদি আরব। স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার জন্য এ বিষয়ে সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সৌদি আরবে এখন পর্যন্ত ৩৪৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও সেখানে এখনো কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
করোনা চিকিৎসায় ওষুধের নাম জানালেন ট্রাম্প
করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় সম্ভাব্য দুটি ওষুধের নাম উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প ক্লোরোকুইন ও রিমাদেসিভির নামে দুটি ওষুধের কথা জানান। তবে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ সংস্থা (এফডিএ) বলছে, বড় ধরনের পরীক্ষার আগে এ নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১৯ হাজর ৬৫০ জন আর মৃত্যু হয়েছে ২৬৩ জনের। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত পুরোনো একটি ওষুধ ক্লোরোকুইন-এর নাম উল্লেখ করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন,‘এটি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রাথমিক পর্যায়ে ভালো ফলাফল দিয়েছে। আমরা প্রেসক্রিপশন দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ওষুধটি সরবরাহ করতে পারবো।’ ইবোলা ও মারবার্গ ভাইরাস সংক্রমণের জন্য চিকিৎসায় ব্যবহৃত রিমাদেসিভিরও করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানান ট্রাম্প। তবে এ বিষয়ে এখনই কোনো উপসংহার টানতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ সংস্থা (এফডিএ)। এফডিএ কমিশনার ডা. স্টিফেন হ্যান বলেন,‘এ দুটি ওষুধকে করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য অনুমোদন দেওয়ার আগে বড় ধরনের পরীক্ষা করে দেখতে হবে।’ তিনি আরও বলেন,‘কেউ যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংস্পর্শে এসে থাকেন কিন্তু এরপরও সুস্থ আছেন, তাহলে বুঝতে হবে তার রক্তে ভাইরাস নেই। সম্ভাব্য চিকিৎসার জন্য আমরা ওই সুস্থ ব্যক্তির রক্ত সংগ্রহ করতে পারবো।’
ঢাকা-১০ আসনে ভোট দিলেন প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোট দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শনিবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটের দিকে রাজধানীর সিটি কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন প্রধানমন্ত্রী। ঢাকা-১০ আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে এই ভোটগ্রহণ কার্যক্রম। এদিকে, একই দিনে গাইবান্ধা-৩ আসন ও বাগেরহাট-৪ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে এ দুই আসনে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা-১০ আসন, ২৭ ডিসেম্বর গাইবান্ধা-৩ আসন ও ১০ জানুয়ারি বাগেরহাট-৪ আসন শূন্য হয়। ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয়জন প্রার্থী। আসনটিতে উপনির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শফিউল ইসলাম ‘নৌকা’, বিএনপি প্রার্থী শেখ রবিউল আলম ‘ধানের শীর্ষ’, জাতীয় পার্টির (জাপা) মো. শাহজাহান ‘লাঙল’, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মিজানুর রহমান চৌধুরী ‘ডাব’, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের নবাব খাজা আলী হাসান আসকারী ‘হারিকেন’ ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) আব্দুর রহীম ‘বাঘ’ প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে প্রচার চালিয়েছেন। আসনটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ১২ হাজার ২৮১ জন। নির্বাচনে ১১৭টি ভোটকেন্দ্রের ৭৭৬টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। ঢাকা-১০ আসনটি ধানমন্ডি ও হাজারীবাগ থানা এলাকা নিয়ে গঠিত। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৪-১৮ নম্বর ওয়ার্ড ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড এ আসনের অন্তর্ভুক্ত।
মহাবিপদ ভারতের সামনে
চীন ছাড়িয়ে ১৮৪টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস এখন ত্রাস ছড়াচ্ছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে। ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই লাখ ও মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয়ও প্রতিদিন বাড়ছে সংক্রমণের সংখ্যা। ইতোমধ্যে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত এ ভাইরাসে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় ৮৮২ জন আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে, মারা গেছে মোট ৯ ব্যক্তি। এই মহামারী পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্বের অন্যান্য অংশের মতো এই অঞ্চলের দেশগুলোও নানা রকম পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু সেগুলো কতটুকু কাজে লাগছে তা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো করোনা সংক্রমণের প্রবল ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে ভারত হয়ে উঠতে পারে করোনা ভাইরাসের পরবর্তী হটস্পট। তাই দেশটিকে অতি জরুরি ভিত্তিতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সুনামির জন্য প্রস্তুত হতে সতর্ক করেছে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক শীর্ষ একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ওয়াশিংটন এবং দিল্লিভিত্তিক সেন্টার ফর ডিজিজ, ডিনামিক্স, ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিসির পরিচালক ড. রামানান লক্ষ্মীনারায়ণ বিবিসিকে বলেছেন, ‘ভারত হবে করোনা ভাইরাস মহামারীর পরবর্তী হটস্পট। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা অনুমান করতে যে গাণিতিক সূত্র অনুসরণ করা হয়েছে, তা ভারতের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হলে দেশটিতে কমপক্ষে ৩০ কোটি মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদের মধ্যে ৪০ থেকে ৮০ লাখ মানুষের শারীরিক অবস্থা জটিল আকার ধারণ করতে পারে, যাদের হাসপাতালে নিতে হবে।’ ড. লক্ষ্মীনারায়ণ ভয়াবহ এ চিত্র এমন সময় ঘোষণা করলেন যখন ভারতে গতকাল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ২২৩-এ দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৯ জন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। মোট প্রাণ গেছে ৫ জনের। যদিও ড. লক্ষ্মীনারায়ণ মনে করেন, ‘পরীক্ষা কম হচ্ছে বলেই ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা এত কম। এখন যেসব দেশে মহামারী চলছে, সেসব দেশের পরিস্থিতি থেকে ভারত সম্ভবত দুই সপ্তাহ পেছনে রয়েছে। ইতালি বা স্পেনে এখন আমরা যেটা দেখছি বা চীনে যেমন দেখেছি, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভারতকেও তেমন সুনামির মতো রোগীর স্রোতের মুখোমুখি হতে হবে।’
এ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে ভারত বিশেষ হুমকির মুখোমুখি। ইউরোপের আক্রান্ত দেশগুলোর তুলনায় ভারতের চিকিৎসা অবকাঠামো অনেক দুর্বল। দেশটিতে বর্তমানে ৭০ হাজার থেকে এক লাখের মতো আইসিইউ বেড রয়েছে। যেটা ৪০ থেকে ৮০ লাখ রোগী সামলানোর জন্য নিতান্তই অপ্রতুল।’ এই যখন ভারতের পরিস্থিতি তখন প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশেও যে এর প্রভাব পড়তে বাধ্য, তা আর না বললেও চলে। ইতোমধ্যেই ২০ জন আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে, এর মধ্যে মারা গেছেন একজন। ভারতের মতো বাংলাদেশও জনবহুল হওয়ায় পরিস্থিতির অবনতি হলে বিদ্যমান চিকিৎসা পরিকাঠামো দিয়ে কতটুকু তার মোকাবিলা করা যাবে, তা নিয়ে আতঙ্কিত ও উৎকণ্ঠিত সবাই। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পাকিস্তানে। সেখানে গতকালও নতুন ৪৬ জনসহ কোভিড-১৯ আক্রান্ত মোট ৫০০ রোগীর সন্ধান মিলেছে। দ্য ডনের তথ্যানুযায়ী, গতকাল একজনসহ মোট প্রাণ গেছে তিনজনের। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশটির সিন্ধু প্রদেশ তিন দিনের জন্য লকডাউন করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলি শাহ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় গণমাধ্যমসহ সবার সাহায্য কামনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। শ্রীলংকায় গত তিন দিনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৭৩ হয়েছে, যদিও কোনো প্রাণহানি হয়নি। বিবিসি জানিয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে গতকাল ভোর ৬টা থেকে আগামী সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোটা দেশে কারফিউ জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকশে। স্থগিত করা হয়েছে দেশটির পার্লামেন্টে নির্বাচনও। এদিকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ এশিয়ায় অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে ভুটান। কুয়েনসেলের তথ্যানুযায়ী, গত বুধবার দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডেকান ওয়াংমো জানিয়েছেন, তার দেশ এখনো ৯৯ শতাংশ করোনামুক্ত। যে এক শতাংশ সম্ভাব্য রোগী রয়েছে, তাদের জন্য নেওয়া হয়েছে সতর্কতা। নেপালে এখন পর্যন্ত একজন রোগী পাওয়া গেলেও সতর্ক রয়েছে দেশটির সরকার। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আদালত, জনসমাবেশ, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। মালদ্বীপে ১৩ জন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়ায় চলছে বিশেষ সতর্কাবস্থা। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব পর্যটনকেন্দ্র, ক্যাফে, রেস্তোরাঁ। আফগানিস্তানে খোঁজ মিলেছে মোট ২৪ আক্রান্তের। আতঙ্কে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
করোনাভাইরাস : ইতালিতে একদিনেই প্রাণ গেল রেকর্ড ৬২৭ জনের
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে ইতালিতে একদিনে এ যাবৎকালের রেকর্ড ৬২৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাড়াল ৪ হাজার ৩২ জন। ওয়ার্ল্ডওমিটার’র দেওয়া তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইউরোপের দেশ ইতালিতে নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৯৮৬ জন। এ নিয়ে সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ২১ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন প্রায় ৫ হাজার ১২৯ জন।করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতালির হাসপাতালে এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩৭ হাজার ৮৬০ জন। তাদের মধ্যে অন্তত ২ হাজার ৬৫৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এর আগে গত বৃহস্পতিবার করোনায় মৃত্যুর সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে যায় ইতালি। সেদিন দেশটিতে মৃত্যু হয়েছিল ৪২৭ জনের। আর গত বুধবার প্রাণ হারিয়েছিলেন ৪৭৫ জন কোভিড-১৯ রোগী। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেটাই ছিল যেকোনো দেশের জন্য একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। আজ শুক্রবার নিজেদের সেই রেকর্ডকেও ছাড়িয়েছে গেল তারা। গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয় নভেল করোনাভাইরাস। এ পর্যন্ত সেখানে মারা গেছেন ৩ হাজার ২৪৮ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ হাজার ৯৬৭ জন। সংক্রমণ শুরুর পায় দুই মাস পর গত ২১ ফেব্রুয়ারি ইতালিতে প্রবেশ করে প্রাণঘাতী করোনা। এরপর মাত্র একমাসের মধ্যেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে দেশটি। করোনা মহামারি দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় অবরুদ্ধের সময়সীমা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়িয়েছে ইতালি।
ভাবনায় পোশাকশিল্প
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত গোটা বিশ্ব। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে এটি। বিপর্যস্ত ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো। আর এসব দেশেই সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক। করোনার কারণে ইতোমধ্যে ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতারা বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের অর্ডার বাতিল করেছে। একদিকে বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার বাতিল, অন্যদিকে বাংলাদেশেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে শ্রমঘন পোশাক কারখানাগুলো এখনো চালু রয়েছে। যেখানে প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। কারখানাগুলোয় সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও শ্রমিকদের কেউ যদি সংক্রমিত হন তা হলে করোনা ভাইরাস ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ অবস্থায় গার্মেন্টস চালু থাকবে না বন্ধ করে দেওয়া হবে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসছে সরকার। তৈরি পোশাক শ্রমিকরাও আতঙ্কের মধ্যে আছেন। একদিকে সংক্রমণের ভয়, অন্যদিকে কাজ না থাকলে বেতন জুটবে কিনা সে উদ্বেগ তাদের কাবু করে ফেলেছে।জানা গেছে, ইউরোপের ক্রেতারা বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ কারখানায় অর্ডার বাতিল করেছে। আগামী সোমবার আমেরিকার ক্রেতারাও অর্ডার বাতিল করবে বলে জানিয়েছে। ফলে যে যতটুকু কাজ করেছে ওই অবস্থায় পড়ে আছে। এ পরিস্থিতিতে পোশাক খাতের করণীয় বিষয়ে আজ শনিবার শ্রম মন্ত্রণালয়ে এ খাতের ব্যবসায়ীরা জরুরি বৈঠকে বসবেন। ওই বৈঠকে কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া আগামী মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, শ্রম প্রতিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক আমাদের সময়কে বলেন, ইচ্ছা করলেই আমরা কারখানা বন্ধ করতে পারি না। তবে সরকার সিদ্ধান্ত নিলে আমরা প্রস্তুত আছি। তিনি বলেন, ক্রেতারা অর্ডার বাতিল করছে। কারখানাগুলোয় কাঁচামাল ফুরিয়ে আসছে। রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। জীবন বাঁচানোই দায়, পোশাক কিনবে কখন। বিজিএমইএর সহসভাপতি এমএ রহিম বলেন, প্রায় ৯৯ শতাংশ কারখানায় অর্ডার বাতিল করেছে ক্রেতারা। নতুন করে কোনো কাজ হচ্ছে না। পুরনো কাজগুলো যে যতটুকু করেছে সে অবস্থায়ই পড়ে আছে। যার কাপড় কাটা হয়েছে তাকে সেলাই করতে নিষেধ করা হয়েছে, আর যার সেলাই হয়েছে তাকে বাড়তি আর কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ অবস্থায় এমনিতেই কারখানাগুলো ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে। কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ নিয়েও চিন্তিত পোশাক ব্যবসায়ীরা। রপ্তানিকারক শিল্পমালিকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, পোশাক কারখানায় কাজ নেই। অর্ডার বাতিল হচ্ছে। রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করার মতো অবস্থায় কেউ নেই। আমরা যাতে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে পারি সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আপৎকালীন সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ করব। তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশই আপৎকালীন সহায়তার ব্যবস্থা করেছে। বেঁচে থাকলে ব্যবসা করা যাবে। ব্যাংকগুলোকে সুদ ছাড়া ঋণের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরুতেই শ্রমিকদের সুরক্ষা ও সচেতনতায় বিজিএমইএ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়। গার্মেন্টগুলোয় সরকারি নির্দেশিকা প্রদর্শনের পাশাপাশি বিজিএমইএও বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়। বিজিএমইএর কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়। চালু করা হয় হটলাইন। গার্মেন্টসশিল্প অধ্যুষিত এলাকায় বিজিএমইএর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৪টি এলাকাভিত্তিক কমিটি করা হয়েছে। এলাকাগুলো হলোÑ আশুলিয়া, সাভার ও নবীনগর; গাজীপুর, শ্রীপুর ও মাওনা; ডিএমপি এলাকা এবং নারায়ণগঞ্জ।
কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে : জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন
করোনায় আক্রান্ত কোনো শ্রমিক চিহ্নিত হলে তাকে সবেতন চিকিৎসা প্রদান ও বিশ্রামে পাঠানোর দাবি জানিয়েছে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামরুল আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আমিরুল হক আমিন বলেছেন, ‘ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনে কারখানা বন্ধ রাখতে হলে শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে।’ বিবৃতিতে তারা বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের ঝুঁকির বাইরে নয় শ্রমিকরা। কিন্তু জনগণের জীবনের প্রয়োজনে শ্রমিকরা খাদ্য, ওষুধ, পরিসেবা, পরিবহন যোগাযোগ, তৈরি পোশাকসহ সব প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনে যুক্ত, এ জন্য তাদের অভিনন্দন জানাই। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য রক্ষায় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের রয়েছে ব্যাপক শ্রমঘন শিল্প। তা করোনামুক্ত রাখতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশিত জীবাণু ও ভাইরাসমুক্ত রাখার সব সরঞ্জাম শ্রমিকদের জন্য বিনামূল্য সরবরাহ করা এবং শ্রমিকদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকদের কাজ ও মজুরির অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে সামাজিক সুরক্ষার তাৎক্ষণিক উদ্যোগ গ্রহণেরও দাবি জানাচ্ছি। আক্রান্ত বিশেষ অঞ্চল বা এলাকায় শ্রমজীবী মানুষের সুরক্ষায় তাদের যাতে হাট-বাজারে যেতে না হয় তার জন্য বিনামূল্যে এক মাসের চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও জীবাণু নাশকারীসামগ্রী সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।
করোনায় ইতালিতে প্রথম বাংলাদেশির মৃত্যু
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতালিতে এক প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ৮টায় মিলানের নিগোয়ারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। প্রবাসী ওই বাংলাদেশির নাম গোলাম মাওলা (৫৫)। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। ইতালির বাণিজ্যিক শহর মিলানের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসকষ্টসহ নানা শারীরিক অসুস্থ্যতায় ভুগছিলেন ওই ব্যক্তি। জানা গেছে, ১৫ দিন আগে অসুস্থ হয়ে ইতালির মিলান শহরের নিগোয়ারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সেখানে তার শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। হাসপাতালে এ ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার পর সেখানেই মৃতুবরণ করেন তিনি। তার স্ত্রীও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়েসহ পুরো পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। ওই বাংলাদেশির মরদেহ মিলানের নিগোয়ারা হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
করোনা আতঙ্কের মধ্যেই ৩ আসনে ভোটগ্রহণ চলছে
করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা-১০, বাগেরহাট-৪ ও গাইবান্ধা-৩ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ভোট চলছে। আজ শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। বাগেরহাট-৪ আসন ছাড়া বাকি দুটিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী রয়েছে। বাগেরহাট-৪ আসনে বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি এ তিনটি আসনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। উপরির্বাচনে ঢাকা-১০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ও বাকি দুটি আসনে ব্যালট পেপারে ভোট নেওয়া হচ্ছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোটগ্রহণ করা হলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘ইভিএম মেশিনে ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে একই মেশিনে অসংখ্য মানুষের আঙুলের চাপ পড়ে। এ কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি ইভিএম মেশিনে ভোট দেন তাহলে তার মাধ্যমে এটি অনেকের মাঝে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।’ এদিকে, নির্বাচনকালীন ভোটারদের করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগে এবং ভোট দেওয়ার পর হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর। এ ছাড়া ভোটারদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং সচেতনতামূলক ব্যানার টানানো রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা-১০
সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস পদত্যাগ করায় ঢাকা-১০ আসনটি গত ২৯ ডিসেম্বর শূন্য ঘোষণা করা হয়। রাজধানীর ধানমণ্ডি, নিউমার্কেট, কলাবাগান, শেরেবাংলা ও লালবাগ থানা এলাকা নিয়ে গঠিত এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয়জন।
তারা হলেন- আওয়ামী লীগের শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিএনপির শেখ রবিউল আলম, জাতীয় পার্টির হাজী মো. শাহজাহান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের কাজী মুহাম্মদ আবদুর রহিম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের নবাব খাজা আলী হাসান আসকারী ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মিজানুর রহমান।
এ আসনে ভোটার ৩ লাখ ২১ হাজার ২৭৫ জন, ভোটকেন্দ্র ১১৭টি ও ভোটকক্ষ ৭৭৬টি। এ আসনটিতে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে। ভোটকেন্দ্রের ঝুঁকি বিবেচনায় পুলিশ ও আনসারের ১৪-১৬ জন সদস্য মোতায়েন করা হবে। নির্বাচনী এলাকায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। থাকবে র্যাবের টিমও।
বাগেরহাট-৪
সংসদ সদস্য মোজাম্মেল হোসেনের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া বাগেরহাট-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের আমিরুল ইসলাম মিলন ও জাতীয় পার্টির সাজন কুমার মিস্ত্রি। বিএনপির প্রার্থীর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বাতিল হয়। ফলে দুই প্রার্থীর মধ্যেই হবে লড়াই। এ আসনে ভোটার ৩ লাখ ১৬ হাজার ৫১০ জন, ভোটকেন্দ্র ১৪৩টি ও ভোটকক্ষ ৬২৯টি।
আচরণবিধি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখভালে ২ জন জুডিশিয়াল ও ২৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নেমেছেন। এ আসনের ১৪৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩৩টিই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় ৭০৫ জন পুলিশ ও ১ হাজার ৭১৬ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব মোতায়েন করা হয়েছে। কেন্দ্রের বাইরে পুলিশ, এপিবিএন ও আনসারের ২১টি মোবাইল ও ১০টি স্ট্রাইকিং টিম, ১০ প্লাটুন বিজিবি ও র্যাবের ১০টি টিম রয়েছে।
গাইবান্ধা-৩
এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ মোট চারটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন-আওয়ামী লীগের উম্মে কুলসুম স্মৃতি, বিএনপির অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মাইনুল হাসান সাদিক, জাতীয় পার্টির মাইনুর রাব্বী চৌধুরী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের এসএম খাদেমুল ইসলাম খুদি।
সংসদ সদস্য ইউনুস আলী সরকারের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া আসনটিতে ভোটার ৪ লাখ ৩৫ হাজার ২১১ জন, ভোটকেন্দ্র ১৩২টি ও ভোটকক্ষ ৭৮৬টি।
সাদুল্যাপুর ও পলাশবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১০ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ১৪টি টিম ও পুলিশের ৪০টি টিম টহলে রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছে। আচরণবিধি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখভালে ২ জন জুডিশিয়াল ও ২০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নেমেছেন।
করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে, রিপোর্ট আসার আগেই যুবকের আত্মহত্যা
করোনাভাইরাসের পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগেই দিল্লিতে চিকিৎসাধীন এক যুবকের আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর সফদরজং হাসপাতালের ৮তলা ভবন থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। ইন্ডিয়া টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বুধবার রাতেই অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে দেশে ফিরেছিলেন তনভীর সিং নামে ৩৫ বছর বয়সী ওই যুবক। নিয়ম অনুসারে, দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় মাথা ব্যথার সমস্যার কথা জানান তিনি। এর পরই রাত ৯টার দিকে ওই যুবককে সফদরজং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। রাখা হয়েছিল আইসোলেশন ওয়ার্ডে। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা, নিশ্চিত হতে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছিল রক্তের নমুনা। কয়েকদিন পরে রিপোর্ট আসার কথা ছিল। তার আগেই হাসপাতালের ৮তলা থেকে ঝাঁপ দেন তনভীর। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। দিল্লির ডেপুটি-পুলিশ কমিশনার দেবেন্দর আর্য সংবাদমাধ্যমকে একথা নিশ্চিত করেছেন। প্রসঙ্গত, ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। দেশটিতে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে মারা গেছে তিনজন। আর এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৯ জনে।
দিনে রাস্তা ফাঁকা, রাতের লন্ডন ভয়ঙ্কর
গত ১৫ বছরের লন্ডন আর গত কয়েক সপ্তাহে শহরটির অবস্থা আকাশ পাতাল তফাৎ। চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসকে প্রথমে গুরুত্ব না দেওয়া লন্ডনবাসীরা এখন নিজেদের সুরক্ষার চেষ্টায় আছেন। বৃটেনে এবং ইউরোপে বড় বড় সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু এত আতঙ্কিত, ভীত-স্বতন্ত্র হয়নি কেউ। গত ১৫ বছরের চিত্র পাল্টে দিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। ইংল্যান্ডের সভ্য জাতি নিজেদের আড়াল করে রাখছেন। কেউ স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে আছেন, কেউবা আইসোলেশনে। যারা লন্ডন বেড়াতে গেছেন, আন্তর্জালে শহররটিকে দেখলে থমকে যাবেন। শুধু লন্ডন কেন, ইংল্যান্ডের বিভিন্ন শহরের অবস্থা এখন যেমন, শিউরে উঠতেও পারেন যে কেউ। রাতের লন্ডন যেখানে জমকালো আলোকছটায় প্রজ্জ্বলিত থাকতো, সেখানে এখন ভয়ঙ্কর ভুতুড়ে পরিবেশ। আর দিনের বেলা যেন কারফিউ লেগেছে।যারা থাকেন দেশটিতে তাদের অবস্থা শোচনীয়।
.jpg)
পুরো অচেনা এক নগরীর রূপ নিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত লন্ডন নগরী। চারদিকে খা খা! রাজপথ, হোটেল, রেঁস্তোরা, পাব সব শূন্য। মনে হতে পারে উনিশ শতকে ফিরেছে ইউরোপের দেশটি। প্রায় নিস্তব্ধ চারদিক। হ্ঠাৎ চোখে পড়ে কোনো মানুষের। গাড়ি-ঘোড়া চলছে দু-একটা। রাতের লন্ডন আপনাকে শিউরে দেবে। যে শহরে রাত আসতো ভোরে, সেখানে নেই কোনো উৎসব, নেই পার্টি, বাদ্য- রাতভর উদ্দাম পরিবেশ। থিয়েটার জনশূন্য, পাবগুলো খালি। কোনো রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেও মেরুদণ্ড বয়ে নেমে আসবে শীতল পরশ। ভয়ঙ্কর এ পরিবেশের পেছনে একটি মাত্র কারণ- করোনাভাইরাস।
.jpg)
করোনাভাইরাস মহামারী ঘোষণা হওয়ার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন তার দেশের জনসাধারণকে ঘরের ভেতর অবস্থান করার আহ্বান জানিয়েছেন। আগামী ১২ সপ্তাহ সামাজিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দিয়েছেন। পেশাজীবীদের বলেছেন ঘরে বসে কাজ করতে। ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে বলেছেন অত্যাবশ্যকীয় না হলে। লন্ডনজুড়ে এমন পরিস্থিতিকে ‘ড্রাকোনিয়ান’ বা কঠোর বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। আরও বলেছেন, ‘জীবন রক্ষার জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’ মানুষে মানুষে উপচে পড়া ইংল্যাণ্ডের রাজপথ জনশূন্য। রাতে লন্ডনের চায়না টাউনের রাস্তা দেখে গা শিউরে ওঠে। এখানেই অল্প কদিন আগে মানুষের গায়ে গায়ে ধাক্কা লাগতো। এখন সেখানে বড়জোর দু-একজনের দেখা মেলে। ওয়েস্ট এন্ডের পাব, শহরের ট্রেন স্টেশন, রাস্তায় বাস স্টেশনগুলো একেবারে ফাঁকা।
.jpg)
সারা পৃথিবী থেকে গিয়ে বিমানগুলো জটলা পাঁকাতো যে হিথ্রো বিমানবন্দরে, যেখানে প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে একটি বিমান ওঠানামা করে, সেটিও নিস্তব্ধ। লন্ডন শহরের ২৭০টি পাতাল ট্রেনে স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন ৫ মিলিয়ন যাত্রী, অথচ এখন সেগুলোতে দিনের বেলাই ভুতুড়ে পরিবেশ। করোনাভাইরাস ঠেকাতে হিমশিম খাওয়া বরিস সরকার তার দেশে আগামী ৫ সপ্তাহের জন্য সব ধরনের আয়োজন খারিজ করে দিয়েছে। বাদ পড়েছে গ্রান্ড ন্যাশনাল ও প্রিমিয়ারশিপ রাগবি। তবে দেশটির গণমাধ্যম প্রথম থেকেই সচেতনতার সঙ্গে কাজ করছে।
.jpg)
সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ইউকেতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৯০০ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৭১জন। এ পর্যন্ত তিনজন বৃটিশ বাংলাদেশি মারা গেছেন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। মৃত-আক্রান্ত সকলের পরিবারের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেছেন বরিস জনসন। বলেছেন, ‘সবাইকে সর্তক থাকবে, হয়তোবা আমরা আমাদের অনেক স্বজনকে হারাতে পারি।’ টাওয়ার হ্যামলেটসের সর্বাধিক বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা হলো হোয়াইটচ্যাপেল। এখানে আছে দুটি আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন। বিস্তৃত কাঁচাবাজার, ৫টি হাইস্ট্রিট ব্যাংক, নানা ধরনের বাংলাদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ইস্ট লন্ডন মসজিদ অ্যান্ড লন্ডন মুসলিম সেন্টার, আলতাব আলী পার্ক, শহীদ মিনার। যেখানে সারাদিন বাংলাদেশিদের আনাগোনা লেগেই থাকতো, সেখানেও সুনশান নীরবতা। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হচ্ছেন না কেউ।
.jpg)
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রাণচঞ্চল মানুষগুলোর হাসি আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। সকলের মধ্যে চাপা আতঙ্ক। একজন আরেকজনের সঙ্গে দেখা হলে এখন আর আগের মতো জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গণ করছেন না। কনুইর সঙ্গে কনুই মিলিয়ে হ্যান্ডশেক থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছেন। স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতার পাশাপাশি এই ভয়াবহ বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে সবাই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছেন। ভবিষ্যত খাবার সঙ্কট মোকাবিলায় নিজেদের খাবার মজুদ করতে অনেকেই ভীড় জমাচ্ছেন মার্কেটে। সারা ব্রিটেনের সুপার স্টোরগুলোতেও ইতোমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে পণ্য সংকট।
ঘরে বসে করোনা পরীক্ষার যে পদ্ধতি জানালেন দেবি শেঠী
করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে ভারতের বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. দেবী শেঠি এক অডিও বার্তায় কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন। তার অডিও ক্লিপ ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। দেবি শেঠী জানিয়েছেন, যদি কারো ফ্লু বা সর্দি থাকে, প্রথমে নিজেকে আইসোলেট করে লক্ষণ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। প্রথম দিন শুধু ক্লান্তি আসবে। তৃতীয় দিন হালকা জ্বর অনুভব হবে। সঙ্গে কাশি ও গলায় সমস্যা হবে। পঞ্চম দিন পর্যন্ত মাথা যন্ত্রণা। পেটের সমস্যাও হতে পারে। ষষ্ঠ বা সপ্তম দিনে শরীরে ব্যথা বাড়বে এবং মাথা যন্ত্রণা কমতে থাকবে। তবে ডায়েরিয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। পেটের সমস্যা থেকে যাবে। এবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অষ্টম ও নবম দিনে সব লক্ষণই চলে যাবে। তবে সর্দির প্রভাব বাড়তে থাকে। এর অর্থ আপনার প্রতিরোধক্ষমতা বেড়েছে এবং আপনার করোনার আশঙ্কা নেই। তিনি বলেন, ‘এমন সময়ে আপনার করোনাভাইরাসের পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। কারণ আপনার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে। যদি অষ্টম বা নবম দিনে আপনার শরীর আরও খারাপ হয়, করোনা হেল্পলাইনে ফোন করে অবশ্যই পরীক্ষা করে নিন।’ দেবি শেঠী স্মরণ করিয়ে দেন, ‘ভারতের কাছে এ মুহূর্তে দেড় লাখ পরীক্ষার কিট রয়েছে এবং সর্বোচ্চ দেড় কোটির পরীক্ষা সম্ভব। তাই জ্বর হওয়ার দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনেই প্রত্যেকেরই করোনা পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। এতে আরও বড় সমস্যা হবে।’‘আমার পরামর্শ হলো, জ্বর হলেই করোনার পরীক্ষা নয়। আগে অপেক্ষা করে উপসর্গ পর্যবেক্ষণ করুন। খারাপ হলে নিজেকে পরীক্ষা করিয়ে নিন’, বলেন তিনি। অত্যাধিক মাস্ক বিক্রির জেরে তার হাসপাতালেও ‘N95’ মাস্কের অভাব জানিয়ে চিকিৎসক বলেন, ‘আপনি ভয় পেয়েছেন বলে পরীক্ষা করা উচিত নয়।’
‘আইবুপ্রোফেন’ শ্রেণির ওষুধ সেবন করবেন না
যাদের মধ্যে নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগের উপসর্গ রয়েছে, তাদের জন্য ‘আইবুপ্রোফেন’ শ্রেণির ওষুধ সেবন বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এ জন্য সন্দেহভাজন আক্রান্তদের এই শ্রেণির কোনো ওষুধ সেবন না করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। এই শ্রেণির ওষুধ সেবন নিয়ে সম্প্রতি ফরাসি চিকিৎসকরা সতর্ক করার পর গত মঙ্গলবার ‘আইবুপ্রোফেন’ নিয়ে এই সতর্কতা দেয় ডব্লিউএইচও। ওষুধবার্তার তথ্য অনুযায়ী, ‘আইবুপ্রোফেন’ উচ্চমাত্রার প্রদাহবিরোধী, জ্বরনিবারক ও বেদনানাশক। এ ছাড়া আইবুপ্রোফেন ‘সাইক্লো অক্সিজিনেজ এনজাইমের’ একটি শক্তিশালী প্রতিবন্ধক। এটি শরীরে প্রোস্টাগ্লান্ডিনের সংশ্লেষণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে দেয়। এই শ্রেণির ওষুধ চিকিৎসকরা সাধারণত রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস, গাউটি আথ্রাইটিস, জুভেনাইল পলিআথ্রাইটিস, এনকাইলজিং স্পন্ডিলাইটিস, সাইনোভাইটিস, কোমর ব্যথা, ডিসমেনোরিয়া, জ্বর, মাইগ্রেন, নরম কোষকলার আঘাত, দাঁত ও পেশির প্রদাহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সেবন করতে নির্দেশ করেন। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি কোম্পানি ভিন্ন ভিন্ন নামে ‘আইবুপ্রোফেন’ শ্রেণির ওষুধ তৈরি করে থাকে। সম্প্রতি চিকিৎসাবিষয়ক জার্নাল ল্যানসেটে এ বিষয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অলিভার ভিরান ‘আইবুপ্রোফেন’ শ্রেণির ওষুধ নিয়ে সবাইকে সতর্ক করেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘আইবুপ্রোফেনের’ মতো প্রদাহবিরোধী ওষুধ দ্বারা উৎসাহিত একটি এনজাইম কোভিড-১৯ সংক্রমণকে সহজতর ও খারাপ করতে পারে। এ বিষয়ে ডব্লিউএইচও মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমেয়ার বলেন, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা আইবুপ্রোফেন বিষয়ে পরবর্তী দিকনির্দেশনা দেবেন। তবে আমরা কোভিড ১৯-এর উপসর্গ থাকা রোগীদের সাধারণ প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিচ্ছি। তবে প্যারাসিটামল সেবনেও চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন। তারা বলছেন, জ্বরের ক্ষেত্রে সঠিক মাত্রায় প্যারাসিটামল সেবন করতে হবে। অতিরিক্ত মাত্রায় এটি সেবনে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এদিকে দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় জাপান পুরোপুরি কার্যকর একটি ওষুধ তৈরি করেছে বলে দাবি করেছে চীন। দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ঝ্যাং শিনমিন দাবি করেছেন, জাপানের ফুজিফিল্ম হোল্ডিংস করপোরেশনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান টয়ামা কেমিক্যালের তৈরি ‘ভধারঢ়রৎধারৎ’ নামের ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে কার্যকর ফল এসেছে। সম্প্রতি ওষুধটি উহান ও শেনঝেন অঞ্চলের অন্তত ৩৪০ করোনা আক্রান্ত রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হয়। সেখানে ওষুধটি খুবই নিরাপদ ও পুরোপুরি কার্যকর হয়েছে। যদিও ওষুধটি নিয়ে চীনের এই দাবির আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি টয়ামা কেমিক্যাল।
নিরাপত্তা চেয়ে কর্মবিরতিতে রামেক’র ইন্টার্ন চিকিৎসকরা
করোনাভাইরাসের কারণে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কর্মবিরতিতে গেছেন। আজ বৃহস্পতিবার ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের ডাকে সকাল ৮টা থেকে তারা কর্মবিরতিতে যান। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অভিযোগ, চিকিৎসকদের জন্য ন্যূনতম নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তারা কর্মবিরতি পালন করছেন। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হাসান বলেন, হাসপাতালে ২০০ ইন্টার্ন চিকিৎসক আছেন। তাদের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা করেনি। হাঁচি-কাশিসহ সব ধরনের সংক্রমণ নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে আসছেন। কিন্তু তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গতকাল তারা হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের দাবি-দাওয়া শুনে পরিচালক বলেছেন, তিনি মন্ত্রণালয়ে কথা বলবেন। কিন্তু চিকিৎসাসেবা চালিয়ে নিতে হলে এই সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য কোনো ধরনের ব্যবস্থা না থাকায় সকাল থেকেই অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে গেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক সাইফুল ফেরদৌস বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। একটু খোঁজ নিয়ে পরে জানাবেন।
পিতা ঘুমাও শান্তিতে, আমরা জেগে রইব
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন করতে পারাকে জীবনের বড় একটি পাওয়া বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তুমি ঘুমাও পিতা শান্তিতে। তোমার বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমরা জেগে রইব তোমার আদর্শ বুকে নিয়ে।’ গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী- মুজিববর্ষ উদযাপনের বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী দেশের নাগরিক, প্রবাসী ও বিশ্ববাসীকে মুজিববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রী ও তার ছোট বোন শেখ রেহানার পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতাও জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ ১৭ই মার্চ। ১৯২০ সালের আজকের দিনে এই বাংলায় জন্ম নিয়েছিলেন এক মহাপুরুষ। তিনি আমার পিতা, শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ নামের এ দেশটি তিনি উপহার দিয়েছেন। দিয়েছেন বাঙালিকে একটি জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়ের মর্যাদা। তাই তো তিনি আমাদের জাতির পিতা।’ তিনি আরও বলেন, দুঃখী মানুষকে ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনের সব সুখ-আরাম বিসর্জন দিয়ে আজীবন সংগ্রাম করেছেন। বঙ্গবন্ধু বারবার কারারুদ্ধ হয়েছেন। অধিকারহারা দুঃখী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে তিনি দ্বিধা করেননি। এই বঙ্গভূমির বঙ্গ-সন্তানদের একান্ত আপনজন হয়ে উঠেছিলেন। তাই তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ ১৭ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ উদ্?যাপন করা হবে। ২০২১ সালে উদ্?যাপিত হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। তিনি জানান, বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন বন্ধুপ্রতিম দেশ, ইউনেস্কো, ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা মুজিববর্ষ উদযাপনে অংশীদার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মুজিববর্ষ পালনের সুযোগ পেয়েছি। এ যে আমাদের জীবনে কত বড় পাওয়া, তা ভাষায় বোঝাতে পারব না। আমি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই দেশবাসীর প্রতি, যারা আমার দল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে পরপর তিনবার সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে মুজিববর্ষ উদযাপনের সুযোগ করে দিয়েছেন।’ বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বছরব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মুজিববর্ষ উদযাপন করা হবে। করোনা ভাইরাসের কারণে বিদেশি অতিথিদের সফর স্থগিত করা হয়েছে। তবে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নমগেয়েল ওয়াংচুক, নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভালারি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং ওআইসির মহাসচিব ইউসুফ আল ওথাইমিনসহ বেশ কয়েকজন বিদেশি শুভাকাক্সক্ষী ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। জাতির পিতার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু অকাতরে বিলিয়ে দিতেন তার জামাকাপড়, বই, ছাতা এবং যার যখন যা প্রয়োজন মনে করতেন, তাকে নিজের জিনিস দিয়ে দিতেন। নিজের খাবারও তিনি ভাগ করে খেতেন। মানুষের জন্য কিছু করতে পারার মধ্যেই তিনি আনন্দ পেতেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজের জীবনের কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না বঙ্গবন্ধুর। বাংলাদেশের মানুষকে উন্নত, সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন তিনি। তাঁর সে ত্যাগ বৃথা যায়নি। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সারাবিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন। নিজেদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। গড়তে হবে জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। শিশু-কিশোর, তরুণ সমাজের কাছে দেশকে এবং দেশের মানুষকে ভালোবাসার আবেদন জানিয়ে বলেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের এই স্বাধীনতা। স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলার উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। ঠিক যেভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মানুষকে ভালোবেসেছেন, সেভাবেই ভালোবাসতে হবে। তাঁর আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।জাতির পিতার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পিতা, ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিয়েছে তোমাকে। তোমার দেহ রক্তাক্ত করেছে। তোমার নাম বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওরা পারেনি। ঘাতকেরা বুঝতে পারেনি তোমার রক্ত ৩২ নম্বর বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে ছড়িয়ে গেছে সারা বাংলাদেশে। জন্ম দিয়েছে কোটি কোটি মুজিবের। তাই আজ জেগে উঠেছে বাংলাদেশের মানুষ সত্যের অন্বেষণে। ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না। আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, তোমার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশকে বিশ্ব চিনে নিয়েছে তোমার ত্যাগের মহিমায়। পিতা, তোমার কাছে আমাদের অঙ্গীকার, তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়বই। আর সেদিন বেশি দূরে নয়।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তুমি ঘুমিয়ে আছ টুঙ্গিপাড়ার সবুজ ছায়াঘেরা মাটিতে পিতা-মাতার কোলের কাছে। তুমি ঘুমাও পিতা শান্তিতে। তোমার বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমরা জেগে রইব তোমার আদর্শ বুকে নিয়ে। জেগে থাকবে এ দেশের মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে। তোমার দেওয়া পতাকা সমুন্নত থাকবে চিরদিন। কবিগুরুর ভাষায় তাই বলতে চাই
‘তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শক্তি।
তোমার সেবার মহৎ প্রয়াস সহিবারে দাও ভক্তি।’
ঘরবন্দি তারকারা যা বললেন…
গত ১৬ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় ফিরে হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন অভিনেত্রী-নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন। এ বিষয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বেশ আগে প্রতিশ্রুতি দেওয়া একটি বইমেলায় অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলাম। পরম করুণাময়ের অশেষ কৃপায় দেশে ফিরেছি। গতকাল (১৬ মার্চ) থেকে আমি ধানমন্ডির বাসায় সবার থেকে আলাদা আছি। মায়ের বাড়িতে থাকা পুত্রদের সঙ্গে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ভিডিও কলে কথা হচ্ছে। দখিণ হাওয়ায় আমার বাসার দরজা প্রথমবারের জন্য তালাবন্ধ রাখা হয়েছে! আমি ভালো আছি। জ্বর, কাশি, গা ব্যথা কিছুই নেই।’
আইসোলেশনে দিলীপ কুমার
করোনা থেকে বাঁচতে আইসোলেশনে আছেন বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমার। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। শারীরিকভাবেও অত্যন্ত দুর্বল। আর এ ধরনের রোগীর সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই করোনার হাত থেকে রক্ষা করতে দিলীপ কুমারকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এ কথা অভিনেতার টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে জানানো হয়েছে। টুইটে বলে হয়েছে, ‘করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে আমি পুরোপুরি আইসোলেশনে ও কোয়ারেন্টিনে আছি। সায়রা (স্ত্রী) এ ব্যাপারে পুরোপুরি খেয়াল রাখছে, যাতে আমি সংক্রমিত না হই।’
করমর্দন করছেন না তাহসান
আজ থেকে টানা চার দিন দুটি নাটকের শুটিংয়ে অংশ নেওয়ার কথা ছিল সংগীতশিল্পী-অভিনেতা তাহসানের। কিন্তু করোনা ভাইরাস নিয়ে সতর্কতার কারণে শুটিং বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। এমনকি কারও সঙ্গে করমর্দনও করছেন না। এ প্রসঙ্গে তাহসান বলেন, ‘সারা পৃথিবীতেই বুদ্ধিমান মানুষ বলছে, এ ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে আইসোলেশন জরুরি। শুধু শিশুরা যদি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়, তা হলেই হবে না। সবাইকে যার যার জায়গা থেকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে কিছু দিন ঘরে থাকতে হবে। আপাতত আগামী ২-৩ সপ্তাহ কোনো কাজ করছি না। উন্নত দেশগুলো ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের ছোট দেশ, জনসংখ্যা ঘনত্ব খুবই বেশি। আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে এই ভাইরাস ছড়াতে বেশি সময় লাগবে না। সামনে হয়তো কোনো দুর্যোগ আসতে পারে, সে জন্য আগে থেকে সতর্ক ভালো।’
এবার কলকাতায় করোনার থাবা
প্রথমবারের মতো ভারতের কলকাতায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। লন্ডন থেকে মুম্বাই হয়ে কলকাতায় আসা ১৮ বছরের এক তরুণের দেহে গতকাল মঙ্গলবার ‘কোভিড-১৯’-এর সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা’র খবরে বলা হয়েছে, সংক্রমিত তরুণকে কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে এবং তার বাবা-মা ও গাড়ির চালককে রাজারহাটে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। হাসপাতালটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘ওই তরুণের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ হয়েছে। তার সংস্পর্শে আসা দ্বিতীয় কেউ যাতে আক্রান্ত না-হন, সেই চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’ গত রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এই তরুণ। সপ্তাহখানেক আগে লন্ডনে একটি পার্টিতে গিয়েছিলেন তিনি। পার্টিতে উপস্থিত তার এক বান্ধবীর কোভিড-১৯ ধরা পড়েছিল। সেদিন তার সঙ্গে নেচেছিলেন ওই তরুণ। পরে অক্সফোর্ড থেকে ওই তরুণের পরিবারকে জানানো হয়, পার্টিতে থাকা একজনের দেহে করোনাভাইরাসের প্রমাণ মিলেছে। সেই জন্য ওই তরুণকে তার নমুনা পরীক্ষা করতে বলা হয়। এরপর সোমবার দুপুরে এম আর বাঙুর হাসপাতালে যান ওই তরুণ। স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে কথা বলে তৎক্ষণাৎ তাকে আইডি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। সে অনুয়ায়ী আইডি-তে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা হাজির হন। তবে মুম্বাই বা কলকাতা বিমানবন্দরের স্ক্রিনিংয়ে তরুণের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ল না কেন-প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। এদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে ভারতের মহারাষ্ট্রে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো তিনজনে। এ ছাড়া দেশটিতে বর্তমানে করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৭ জনে।
বন্ধ হচ্ছে ইইউ সীমান্ত
মরণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে বহিরাগত ভ্রমণকারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। আগামী ৩০ দিনের জন্য এই নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইইউ’র নেতারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ইইউ’র ২৬টি সদস্য রাষ্ট্রের পাশাপাশি আইসল্যান্ড, লিচেনস্টাইন, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডও এই সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে না। করোনাভাইরাস সংক্রমণে ইইউভুক্ত ইতালি ও স্পেনে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইইউ দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত নয় এমন সব দেশের নাগরিকরা আগামী ৩০ দিন ইইউ ব্লকের দেশগুলোতে প্রবেশ করতে পারবেন না। তবে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে বাস করা লোকজন, ইইউয়ের নাগরিকদের পরিবারের সদস্য ও কূটনীতিকরা, সীমান্ত ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত লোকজন এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে। সফটওয়্যার সল্যুশন কোম্পানি ‘ডারাক্স’ এর পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘ওয়ার্ল্ডোমিটার’ এ প্রকাশিত তথ্য মতে, আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত বিশ্বের ১৬৬টি দেশ ও অঞ্চলে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। তুরস্কে এখন পর্যন্ত ৪৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ৭ হাজার ৯৮৮ জন যার অধিকাংশই চীনের নাগরিক। এই ভাইরাসে মোট আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬১২ জন।
যে গ্রুপের রক্তবাহীর করোনা আক্রান্তের সম্ভাবনা সবচেয়ে কম
যাদের রক্তের গ্রুপ ‘ও’, তাদের প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে কম। সম্প্রতি চীনের গবেষকদের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চীনের গবেষকরা উহান ও শেনজেনের ভাইরাস আক্রান্ত ২ হাজারের বেশি মানুষের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে এই গবেষণা করেছেন। গত ১১ মার্চ ওই গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ‘এ’ গ্রুপের মানুষের আক্রান্তের হার বেশি এবং তাদের অবস্থাও অন্যদের তুলনায় গুরুতর ছিল। এটাকে প্রাথমিক গবেষণা হিসেবে উল্লেখ করে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় রক্তের গ্রুপ বিবেচনা করতে সরকার ও চিকিৎসকদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন গবেষকরা। গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াং জিংহুয়ান। তিনি বলেছেন, ‘যাদের রক্তের গ্রুপ ‘‘এ’’ তাদের ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি। তাই তাদের প্রতি বাড়তি সতর্কতা ও নজরদারি বাড়াতে হবে। এ ছাড়া তাদের চিকিৎসায় অধিকতর যত্নের প্রয়োজন হতে পারে।’ গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘যাদের রক্তের “ও” তাদের সংক্রমণের সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল।’ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে উহানে মারা যাওয়া ২০৬ জনের ৮৫ জনের রক্তের গ্রুপ ‘এ’ এবং ৫২ জনের রক্তের গ্রুপ ‘ও’। ‘এ’ গ্রুপের রোগীদের মৃতের হার ‘ও’ গ্রুপের রোগীদের চেয়ে ৬৩ শতাংশ বেশি। তবে কী কারণে বিভিন্ন গ্রুপের রক্তের করোনার প্রভাব ভিন্ন তা জানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে ২২ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে ২২ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে বলে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। একই গবেষণায় বলা হয়েছে, এই ভাইরাসটির কারণে মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে যুক্তরাজ্যের ৫ লাখ মানুষ। লন্ডনের ইমপিরিয়াল কলেজের গাণিতিক জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক নিল ফার্গুসন ও তার দল সম্প্রতি এই গবেষণা করেন। গবেষণা তৈরিতে ইতালি থেকে সংগৃহীত নতুন তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। ১৯১৮ সালের এক ফ্লুর সঙ্গে এই পরিস্থিতির তুলনা করে ফার্গুসনের গবেষকেরা বলছেন, কোনো নিবারণ পদ্ধতি এখনো পাওয়া যায়নি। এই মহামারিতে যুক্তরাজ্যে ৫ লাখের বেশি মানুষ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ২২ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় প্রথম করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় এখন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যেই ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। প্রথম কোভিড-১৯ রোগীর বিষয়ে ঘোষণা দেওয়ার সময় পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গভর্নর টিম জাস্টিস বলেন, ‘আমরা এই পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করছিলাম।’ বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্যান ফ্রান্সিসকোর উপকূল অঞ্চলের মতো নিজেদের অবরুদ্ধ করে রাখা বা লকডাউনের চিন্তা করছে নিউ ইয়র্ক শহর। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৬ হাজার মানুষ করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন। আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৫। এদিকে মঙ্গলবার আরও ১১টি রাজ্যের মত পানশালা ও রেস্টুরেন্ট বন্ধ করার ঘোষণা দেয় ফ্লোরিডা। আমেরিকার দীর্ঘতম সময় ধরে চলা স্পোর্টস ইভেন্ট ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা কেন্টাকি ডার্বি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। এর আগেই বাতিল করা হয় মাস্টার্স গলফ টুর্নামেন্ট, মার্চ ম্যাডনেস বাস্কেটবল এবং বেসবলের মৌসুম। যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ইনডোর শপিং সেন্টার মিনেসোটার মল অব আমেরিকা জানিয়েছে তাদের সুবিধা মার্চ মাস পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। জেলখানায় একসাথে বেশি মানুষ যেন না রাখতে হয়-তা নিশ্চিত করতে লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির শেরিফ গ্রেপ্তারের পরিমাণ কমাতে নির্দেশ দিয়েছেন।
আবরার হত্যার বিচার কার্যক্রম হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বী (২২) হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম আগামী ৬ এপ্রিল থেকে ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে শুরু হবে। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মামলাটি আজ বুধবার ওই ট্রাইব্যুনালে বদলির আদেশ দিয়ে বিচারের এ তারিখ ধার্য করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ। এ সম্পর্কে ওই আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল জানান, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সরকারি প্রজ্ঞাপন তারা পেয়েছেন। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মামলা বদলি হয়েছে। ৬ এপ্রিল থেকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচার অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নিহত আবরারের বাবা মো. বরকত উল্লাহ ছেলে হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্য আবেদন করেন। সে অনুযায়ী সম্প্রতি সরকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দেয়। বুধবার শুনানিকালে কারাগারে থাকা আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। এ মামলায় গত বছর ১৩ নভেম্বর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান আদালতে দাখিল করেন। মামলায় কারাগারে থাকা আসামিরা হলেন- বুয়েট ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. অনিক সরকার, উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ইফতি মোশাররেফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, মো. মনিরুজ্জামান মনির, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, শিক্ষার্থী মো. মুজাহিদুর রহমান ও এএসএম নাজমুস সাদাত, বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, কর্মী মুনতাসির আল জেমি, গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ইসাতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, শিক্ষার্থী আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শিক্ষার্থী শাসছুল আরেফিন রাফাত, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের তৃতীয় বর্ষে ছাত্র আকাশ হোসেন, শিক্ষার্থী মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, হোসেন মোহাম্মাদ তোহা, মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা, বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র মোর্শেদ অমত্য ইসলাম ও এস এম মাহমুদ সেতু। যাদের মধ্যে প্রথম আটজন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। অপর তিন আসামি- বুয়েটের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র মুহাম্মাদ মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল ওরফে জিসান (২২), সিভিল ইঞ্জিনিয়ারং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম (২০) ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের ছাত্র মুজতবা রাফিদ (২১) পলাতক রয়েছেন। উল্লেখ্য, আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) ছাত্র ছিলেন। তিনি থাকতেন বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলার ১০১১ নম্বর কক্ষে। গত ৬ অক্টোবর একই হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে তাকে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়। রাত ৩টার দিকে হল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের পর তার বাবা বরকত উল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে গত ৭ অক্টোবর সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
করোনা নিয়ে ফেসবুকে গুজব, র্যাবের হাতে আটক ১
করোনাভাইরাস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অপরাধে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে র্যাব-৭। আটককৃতের নাম কামরুল হাসান রুমি (৩৯)। র্যাব-৭ এর অপারেশন অফিসার পুলিশ সুপার (এসপি) মাসরুকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানোর অপরাধে চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালি থেকে কামরুল হাসান রুমি নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি চট্টগ্রামের হালি শহরের একটি স্কুলের চারজন শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্তান্ত বলে ফেসবুকে প্রচার করছিলেন। র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, নিজের ফেসবুকে এমন পোস্ট দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্নজনকে মেসেঞ্জারে তিনি এই তথ্য পাঠিয়েছেন। কিন্তু ওই স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমন কোন ঘটনাই ঘটেনি। সেই স্কুলের কোনো শিক্ষার্থীই করোনাভাইরাসে আক্তান্ত নয়। ফেসবুকে এমন একটা মিথ্যা গুজব ছড়ানোর অপরাধেই কামরুল হাসান রুমিকে আটক করা হয়েছে বলে জানান মাসরুকুর রহমান।
আগামী ১৪ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ
আগামী ১৪ দিন সতর্কতার সঙ্গে স্রেফ দুটি শর্ত পালন করলে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পারে বাংলাদেশ। শর্ত দুটি হচ্ছে- এক. বিদেশ থেকে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না ও দুই. ইতোমধ্যে বিদেশ ফেরতদের এবং তাদের সংস্পর্শে আসা লোকজনের যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে আগামী ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক অথবা হোম কোয়ারেনটিন নিশ্চিত করতে হবে। এর অন্যথা হলে এ দেশে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে ভয়াবহ এক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশ। দেশে গতকাল মঙ্গলবার আরও দুজন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ জনে। এ ১০ জনের কেউ বিদেশ ফেরত, কেউবা তার পরিবারের সদস্য যিনি সংক্রমিত হয়েছেন বিদেশ ফেরত লোকটির মাধ্যমে। এর বাইরে এখনো পর্যন্ত দেশে আক্রান্ত হননি কেউ। এ কারণেই দ্বিতীয় শর্তটি পালন করা অত্যাবশ্যক। জানা গেছে, শুধু যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের সব দেশ ও আমেরিকার সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে বাংলাদেশের। তবে এখনো থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে আকাশ যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। এসব দেশ থেকে যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশি বাংলাদেশে প্রবেশ করবেন, তারা করোনা ভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে ঝুঁকির কারণ হতে পারেন। গত আট দিনে লক্ষাধিক বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। তাদের যথাযথ পদ্ধতিতে হাসপাতালে বা বাসায় কোয়ারেনটিনে রাখা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় এটিই এখন বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সারা দেশে এখন যারা হোম কোয়ারেনটিনে আছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই যথাযথভাবে কোয়ারেনটিনে থাকছেন না বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে। কেউ কেউ কোয়ারেনটিনে থাকাবস্থায় বাজার-সদাই করছেন; বিয়েবাড়ির ভিড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে জেল-জরিমানাও করা হয়েছে। আইইডিসিআরের পরিচালক গতকাল প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, বাংলাদেশে আরও যে দুজনের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে; তাদের একজন ইতালি ফেরত, অন্যজন এক মার্কিন-প্রবাসীর সংস্পর্শে আসা বাংলাদেশি নাগরিক। আক্রান্ত দুজনকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আইইডিসিআরে গত ২৪ ঘণ্টায় কল করেছেন ৪২০৫ জন। এসব কলের মধ্যে করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত কলের সংখ্যা ৪১৬৪টি। আইইডিসিআরে সরাসরি এসেছেন ২০ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৬ জন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনটিনে আছেন ৪৩ জন। তিনি বলেন, ইউরোপসহ করোনা আক্রান্ত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে আসায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। গত সোমবার কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটের পর আর কেউ বাংলাদেশে আসেননি। যারা এসেছেন, তাদের মধ্যে কারও করোনা সংক্রমণ হয়ে থাকলে ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা পাবে। এই সময়ের মধ্যে করোনার লক্ষণ প্রকাশ না পেলে পরে আর ভাইরাসটি ছড়ানোর ঝুঁকি থাকবে না। কারণ এখন বিদেশ থেকে আসা বন্ধ রেখেছে সরকার, নতুন করে কেউ আসার কথা না। আইইডিসিআরের এই পরিচালক আরও বলেন, ভাইরাসটি কমিউনিটি পর্যায়ে ছড়িয়েছে কিনা, তা শনাক্তকরণে আমরা পরীক্ষা করেছি। এ পর্যন্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। আমরা আমাদের পরীক্ষা অব্যাহত রাখব। ডা. ফ্লোরা যোগ করেন, ১৪ দিনের মধ্যে যারা এসেছেন, তাদের ক্ষেত্রে হোম কোয়ারেনটিন প্রযোজ্য। সিভিল সার্জনদের দপ্তর থেকে পাঠানো তথ্যাদির ভিত্তিতে দেশে যারা হোম কোয়ারেনটিনে আছেন, তাদের সংখ্যা আমরা জানিয়েছিলাম। এর বাইরে কিছু জায়গা আছে, হোম কোয়ারেনটিন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তাই আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়েছি। যারা হোম কোয়ারেনটিনে থাকছেন না, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন যে কোনো ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। হোম কোয়ারেনটিনই আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। তাই আমরা এ ব্যবস্থা নিয়েছি। স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল টিম বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরামর্শ অনুযায়ী হোম কোয়ারেনটিনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যারা বিদেশ থেকে এসেছেন, তাদের হোম কোয়ারেনটিনের বিষয়টি যেন নিশ্চিত করা যায়, আমাদের সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। যাদের বাড়িতে কোয়ারেনটিন করা সম্ভব নয়, আমরা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনটিনে রাখার ব্যবস্থা করছি।
গণমাধ্যমকর্মীদের সতর্ক থাকা দরকার
গণমাধ্যমকর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমরা দেখছি অনেক সংবাদকর্মী বিদেশ থেকে আসা লোকজনের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় তাদের খুবই কাছাকাছি অবস্থান করেন। কিন্তু তাদের উচিত অন্তত এক মিটার দূর থেকে কথা বলা। যেসব জায়গায় (হাসপাতাল ও কোয়ারেনটিনস্থল) সংক্রমণ হতে পারে, আপনারা সেখানে যাবেন না। এর পরও যদি যেতে হয়, মাস্ক পরে যাবেন। গণজমায়েত ও জনসমাবেশের সংবাদ সংগ্রহের সময়ও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। যাদের এখন জ্বর, সর্দি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট রয়েছে তারা গণপরিবহন ব্যবহার করবেন না।
অফিসকর্মীদের প্রতি পরামর্শ
অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, গার্মেন্টস মালিকরা আমাদের কাছে পরামর্শ চেয়েছেন তারা কী করবেন। আমরা বলছি- শুধু গার্মেন্টস নয়, যেসব অফিসে একসঙ্গে অনেক মানুষ কাজ করেন, কাছাকাছি বসেন, তাদের প্রতি পরামর্শ হচ্ছে- কর্মস্থলে প্রবেশের সময় করোনা ভাইরাসের লক্ষণ-উপসর্গগুলো (জ্বর, কাশি, হাঁচি ও শ্বাসকষ্ট) পরীক্ষা করে প্রবেশের সুযোগ দিন। যাদের মধ্যে লক্ষণ বা উপসর্গ পাওয়া যাবে তারা বাড়িতে থাকবেন। মালিকপক্ষ তাদের স্ব-বেতনে ১৪ দিন বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করবেন। যদি তাদের বেতন দেওয়া না হয়, তা হলে তারা তথ্য গোপন করতে পারেন। এতে সেখানে করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি থাকবে। এ ছাড়া আমাদের অনেক প্রতিষ্ঠানে বিদেশি বায়ার আসেন। আপাতত তারা যেন না আসেন। তারা যদি দাপ্তরিক কাজে এসেও থাকেন, তা হলে তারা যেন আমাদের যেখানে বেশি মানুষ কাজ করেন সেখানে না যান।
কোয়ারেনটিনে না থাকলে জেল-জরিমানা
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বিদেশ ফেরত সবাইকে হোম কোয়ারেনটিনে থাকতে হবে। কোয়ারেনটিনে থাকা অবস্থায় যদি কারও করোনার লক্ষণ দেখা দেয়, তা হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগ করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটালে সংক্রমণ ব্যাধির আইন অনুযায়ী জেল-জরিমানা করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন ভবনে সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের ১৭০টি দেশ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। এসব দেশ থেকে আসা অনেকেই বিমানবন্দরে প্রাথমিক চিকিৎসা না নিয়ে পালিয়ে গেছেন। তাদের চিহ্নিত করতে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জন্য স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, এখন যদি কোনো শিক্ষার্থী বাইরে ঘোরাফেরা করে, তা হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গতকাল আমাদের প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদকদের পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সাতক্ষীরায় বিদেশ ফেরত ১৩ জনকে হোম কোয়ারেনটিনে নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ১৭৪ প্রবাসী হোম কোয়ারেনটিনে আছেন। নওগাঁয় ৮৮ প্রবাসীকে নিজ নিজ বাড়িতে বাধ্যতামূলক কোয়ারেনটিনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া জামালপুরের বকশীগঞ্জে ৭ জন, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ৩ জন এবং রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ১১৫ জন হোম কোয়ারেনটিনে আছেন। বগুড়ায় করোনা ভাইরাস সন্দেহে ইতালিফেরত এক যুবক ও তার পরিবারের সদস্যদের জোর করেই হোম কোয়ারেনটিনে রেখেছে এলাকাবাসী। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সামির হোসেন মিশু জানিয়েছেন, ওই যুবক পুরোপরি সুস্থ আছেন। স্বাস্থ্যকর্মীরা ওই যুবক এবং তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। যেহেতু বিদেশ থেকে ফেরার ১৪ দিন অতিক্রান্ত হয়নি সে জন্য তাদের হোম কোয়ারেনটিনে থাকার পদ্ধতিগুলো শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। মানিকগঞ্জের ঘিওরে নিজ বাড়িতে কোয়ারেনটিনে না থাকায় অস্ট্রেলিয়া ও ইরাক প্রবাসী দুজনকে গতকাল জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীকে ১৫ এবং ইরাক প্রবাসী যুবককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর আগে গত রবিবার সন্ধ্যায় একই উপজেলার সৌদি প্রবাসী এক যুবককে একই কারণে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। শিবচরে আইসোলেশনে থাকা ইতালি প্রবাসীর সন্তানের সঙ্গে লেখাপড়া করায় ১৯ শিক্ষার্থীকে মাদারীপুরের শিবচরে হোম কোয়ারেনটিনে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ওই প্রবাসীকে তার স্ত্রী-সন্তানসহ ঢাকায় আইসোলেশনে পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে তার শাশুড়িকেও আইসোলেশনে পাঠানো হয়। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার দুবাইফেরত এক নারীকে (৩৫) জোরপূর্বক হাসপাতালে পাঠিয়েছেন এলাকাবাসী। পরবর্তী সময় তাকে হোম কোয়ারেনটিনে পাঠানো হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ওই নারী শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এ খবর পেয়ে সোমবার মধ্যরাতে এলাকাবাসী তাকে জোর করেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হতে বাধ্য করে। পরে তাকে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
যেই গ্রুপের রক্তধারীরা করোনায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন ‘এ’ গ্রুপের রক্ত বহনকারীরা (পজেটিভ এবং নেগেটিভ) । অন্যদিকে ‘ও’ গ্রুপের রক্ত বহনকারীরা এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কম শঙ্কায় রয়েছেন। চীনের গবেষকদের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট। ওই গবেষকরা উহান ও শেনজেন হাসপাতালের দুই হাজার রোগীর তথ্য নিয়ে এই গবেষণা করেন। কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ২০৬ জনের বিভিন্ন বয়সের মানুষের রক্তের গ্রুপ বিবেচনায় নিয়ে তারা দেখেছেন এদের মধ্যে ৮৫ জন ‘এ’ গ্রুপের রক্তধারী আর ৫২ জন ‘ও’ গ্রুপের। এ গ্রুপের রোগীদের মৃতের হার ‘ও’ গ্রুপের রোগীদের চেয়ে ৬৩ শতাংশ বেশি। কী কারণে বিভিন্ন গ্রুপের রক্তের করোনার প্রভাব ভিন্ন তা জানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। আর করোনা আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে গবেষণা করে তারা দেখতে পান উহানে করোনা আক্রান্ত রোগীর ৩৮ শতাংশই এ গ্রুপের রক্ত বহন করছেন। আর অন্যদিকে, ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ রোগী বি গ্রুপের এবং ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ রোগী ও গ্রুপের রক্ত বহন করছেন। সবচেয়ে কম রোগী (১০ শতাংশ) এবি গ্রুপের রক্ত বহন করছেন।
করোনাভাইরাসে সংক্রমণের ঝুঁকি কাদের বেশি?
মহামারিতে পরিণত হওয়া করোনাভাইরাস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৮ হাজার মানুষের। পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘ওয়ার্ল্ডোমিটার’ এ প্রকাশিত তথ্য মতে,এ পর্যন্ত ১৫৯টি দেশের ১ লাখ ৯৮ হাজার ৪২৬ জন এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। করোনাভাইরাস আসলে কী, আক্রান্ত হওয়ার পর লক্ষণগুলো কীভাবে প্রকাশ পায়, কীভাবে ছড়ায় এবং কারা সংক্রমিত হয়- এ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ইউজিসি অধ্যাপক, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ।
করোনাভাইরাস কী?
করোনাভাইরাস আসলে একটি ভাইরাসের গোত্র বা পরিবারের নাম। এই পরিবারের মধ্যে ছয়টি ভাইরাস আগে থেকেই রয়েছে এবং নতুন করোনাভাইরাস অর্থাৎ কোভিড-১৯ সহ করোনাভাইরাস পরিবারে এখন সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাতে। করোনাভাইরাস পরিবারের চারটি ভাইরাসের লক্ষণ সাধারণ সর্দি কাশির মতোই। তবে মার্স এবং সার্চ সবচেয়ে প্রাণঘাতী ছিল।
কোভিড-১৯ কী?
নতুন করোনাভাইরাস দিয়ে সৃষ্ট রোগের নামকরণ করা হয়েছে কোভিড-১৯। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশে এটি প্রথম ধরা পড়ে। এখন পর্যন্ত এটি মার্স এবং সার্চের মতো প্রাণঘাতী নয়।
আক্রান্ত রোগীর লক্ষণ কী?
কোভিড-১৯ এর লক্ষণ অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের মতোই। এর প্রাথমিক লক্ষণ হলো জ্বর, ক্লান্তি ভাব, শুষ্ক কাশি। এছাড়া শরীর ব্যথা, নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা-ব্যথা, পাতলা পায়খানাও থাকতে পারে। সময়ের সঙ্গে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে তীব্রতা বাড়ে এবং মৃদু থেকে তীব্র শ্বাস কষ্ট দেখা যায়। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরও কোনো রকম লক্ষণ প্রকাশ পায় না বা দুই একটি লক্ষণ থাকতে পারে।
করোনাভাইরাসের সঙ্গে ফ্লু বা সাধারণ সর্দি-কাশির তফাৎ কী?
করোনাভাইরাসের সঙ্গে ফ্লু বা সাধারণ সর্দি-কাশির উপসর্গে বেশ মিল রয়েছে। কোভিড-১৯ এর প্রধান উপসর্গ জ্বর, কাশি। তবে ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে এসবের পাশাপাশি গলা ব্যথার মতো উপসর্গও থাকে। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে অনেকের আবার শ্বাসকষ্ট থাকতে পারে, যা ফ্লুতে দেখা যায় না। সাধারণ সর্দি-কাশির সঙ্গে কোভিড-১৯ এর এত মিল থাকায় পরীক্ষা না করে বোঝা মুশকিল।
করোনাভাইরাস কীভাবে ছড়ায়?
কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত কণার মধ্যে এই ভাইরাসটি থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি-কাশি দিলে তার তিন ফুটের মধ্যে কেউ থাকলে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। এটি বাতাসে ছড়ায় না। শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত কণা ভারি হওয়ায় এটি বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে না। তাই এটি মাটি, মেঝে বা অন্য কোনো বস্তুর ওপর যখন পড়ে তা দীর্ঘ সময় জীবিত থাকতে পারে। সেখান থেকে স্পর্শের মাধ্যমে অন্য কারোর করোনা সংক্রমণ হতে পারে।
সংক্রমণের ঝুঁকি কাদের বেশি?
যে কারোরই করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম যেমন ডায়াবেটিস, কিডনি বিকল, হৃদরোগী, অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টজনিত রোগে যারা ভুগছেন, বিশেষ করে বৃদ্ধরা, তারা সাধারণত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকেন। ধূমপায়ী পুরুষদের মধ্যে এই ভাইরাসের মারাত্মক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। ধূমপানের ফলে শ্বাসনালী ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কিছুটা কম থাকে বিধায় এরা শ্বাসনালী ও ফুসফুসকে আক্রমণ করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা দানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি।
শিশুরা কতটা ঝুঁকিতে?
করোনাভাইরাসে যেকোনো বয়সীরাই আক্রান্ত হতে পারে। শিশুরা এ ভাইরাস থেকে কিছুটা হলেও নিরাপদ রয়েছে। বাবা-মা বা পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে এবং বারবার তাদের সংস্পর্শে এলে শিশুদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তবে শিশুদের মধ্যে যাদের অ্যাজমা রয়েছে বা অন্য কোনো জন্মগত বা দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে, তাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কোয়ারেন্টিনে
এবার হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি মুরালিধরন। আজ বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা জানান তিনি। ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টুইটারে তিনি লিখেছেন, আমি একটি ইনস্টিটিউট পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। সেখানকার হাসপাতালে পরবর্তী সময়ে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। যে কারণে আমি স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে চলে গেছি। কিন্তু আমার শরীরে করোনাভাইরাস নেগেটিভ ধরা পড়েছে।গেল ১৪ মার্চ শ্রী চিত্রা ট্রাইব্যুনাল ইনস্টিটিউট ফর মেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজিতে একটি কর্মসূচিতে অংশ নেন মুরালিধরন। সেখানকার এক চিকিৎসক স্পেন থেকে ফিরে আসেন, যেটা গোপন রাখা হয়েছিল। একদিন পর তার শরীরে করোনাভাইরাস পজিটিভ ধরা পড়ে। ওই চিকিৎসকের সংস্পর্শে আসা প্রতিষ্ঠানটির ২৫ চিকিৎসকসহ ৭৬ কর্মকর্তা স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে গেছেন। এদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে ভারতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া দেশটিতে বর্তমানে করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৭ জনে।
দেশের সব আদালতে অবকাশকালীন বেঞ্চ চালুর নির্দেশনা চেয়ে রিট
উচ্চ আদালতের পাশাপাশি দেশের সব নিম্ন আদালতেও অবকাশকালীন বেঞ্চ চালু রাখার নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে আজ বুধবার ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে ব্যারিস্টার হুমায়ূন কবির পল্লব বাদী হয়ে এ রিট দায়ের করেন। রিটে আবেদনটি বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও মো. বিচারপতি সর্দার রাশেদ জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে। আইনজীবী পল্লব জানিয়েছেন, রিট আবেদনে হাইকোর্টে যে ভ্যাকেশন রয়েছে, তা ২৮ মার্চ পর্যন্ত চলবে। এটা সাময়িকভাবে বৃদ্ধি করার জন্য নিম্ন আদালতে অবকাশকালীন বেঞ্চ চালু করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। যাতে করে লোক সমাগম কম হয় এবং করোনার ঝুঁকি এড়ানো যায়। তিনি আরও বলেন, রিট আবেদনে বিদেশ ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টিনে না রেখে সরকারি কোয়ারেন্টিনে রাখার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। কারণ, বিদেশ ফেরতদের মাধ্যমে এই করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে এ বিষয়ে মনিটরিং-এর জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠনের নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে বলে জানান এই আইনজীবী। রিটে আবদনে স্বাস্থ্য সচিব, আইন সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেল এবং আইইডিসিআরের পরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।
ইতালিতে একদিনে ৩৬৮ জনের মৃত্যু
প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে প্রাণহানি অব্যাহত আছে। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রবিবার বিকাল পর্যন্ত বিশ্বে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৬৩ হাজার ৩৩২ এবং মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮৬ জনে। আইসিইউতে আছে ৫ হাজার ৬৫৫ জন। এর মধ্যে গতকাল ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ২৬৩ জন। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে ইউরোপের দেশগুলো। এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ইউরোপকে বর্তমানে করোনা ভাইরাস মহামারীর কেন্দ্রস্থল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আলজাজিরার তথ্য অনুযায়ী করোনার কারণে ইউরোপের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুই দেশ ইতালি ও স্পেন। ইতালির সিভিল প্রটেকশন অথরিটি জানিয়েছে, সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ২০ শতাংশ বেড়েছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মারা গেছেন ৩৬৮ জন। এ নিয়ে করোনার সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগে দেশটিতে মোট ২৪ হাজার ৭৪৭ জন আক্রান্ত ও ১ হাজার ৮০৯ জন প্রাণ হারালেন। গতকাল এ রোগে ইতালিতে মারা যান দেশটির বেরগামো প্রদেশের সিনি শহরের মেয়র জর্জিও ভালোতি। ইতালির পরই ইউরোপে সঙ্গিন অবস্থা পার্শ্ববর্তী দেশ স্পেনের। গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭৫৩ জনে, আর মারা গেছেন ২৯১ জন। এর মধ্যে গতকাল ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন ৯৫ জন। পরিস্থিতি বিবেচনায় গোটা স্পেনে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা জারি করেছে সরকার। এ ক’দিন দেশটির ৪ কোটি ৭০ লাখ মানুষকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেনটাইনে থাকতে হবে। খাবার, ওষুধ ও জরুরি জিনিসপত্র কেনা ছাড়া কোনো কারণে বাইরে যাওয়া যাবে না। খাদ্য ও ওষুধ ছাড়া অন্য কোনো দোকানও খোলা রাখা নিষেধ। এর আগে করোনা পরিস্থিতির কারণে গোটা ইতালিকে অবরুদ্ধ অঞ্চল ঘোষণা করে দেশটির সরকার। ফলে দেশটির ২০ রাজ্যের সব মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেনটাইনে থাকতে হচ্ছে। গত শনিবার এক টেলিভিশন ভাষণে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেন, ‘আমরা অচিরেই কাজকর্মে ফিরে যাব এবং বন্ধু ও প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা করব। তবে সে সময় আসার আগ পর্যন্ত আমাদের অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে।’ সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, শনিবার থেকেই দেশটির সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জাদুঘর, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, স্টেডিয়াম, সিনেমা হল, পানশালাগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে রেস্তোরাঁগুলো শুধু কাস্টমারদের পার্সেল খাবার সরবরাহ করতে পারবে। তবে ব্যাংক ও পেট্রল স্টেশনের মতো জরুরি সেবা সংস্থা খোলা থাকবে। এর আগে গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী সানচেজের স্ত্রী বেগোনা গোমেজ কোভিড-১৯ আক্রান্ত বলে খবর পাওয়া যায়। করোনার কারণে ইউরোপের আরেক দেশ ফ্রান্সেও জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। ৬ কোটি ৩৫ লাখ মানুষের দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৪৯৯ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছেন ৯১ জন। শনিবার গ্রিনিচ মান সময় রাত ১১টায় শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, সিনেমা হল, নাইট ক্লাব এবং কম জরুরি সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে খাবার ও জরুরি ওষুধের দোকান ও পেট্রল স্টেশন থাকবে নিষেধাজ্ঞার বাইরে। বাতিল করা হয়েছে দেশটির স্থানীয় সরকার নির্বাচনও। শনিবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড ফিলিপ এ ঘোষণা দেন। ব্রিটেনেও গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। সেখানে মোট আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৩৭২ জন, মারা গেছেন ৩৫ জন। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় সেখানে প্রাণ গেছে ১৪ জনের। এ ছাড়া গতকাল পর্যন্ত ইউরোপে নেদারল্যান্ডসে ৮, জার্মানিতে ২, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক, সুইডেন, হাঙ্গেরিতে একজন করে মারা গেছেন। ইউরোপের বাইরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেখানে গতকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১১৩ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্ত ১৩ হাজার ৯৩৮ জন ও মারা গেছেন ৭২৪ জন। ক্রমেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় করোনা মোকাবিলায় বিশ্ববাসীর সহায়তা চেয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। এক খোলা চিঠিতে রুহানি বলেন, ‘এ রোগ মোকাবিলার কাজ নির্বিঘ্ন করতে ইরানসহ বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যবিষয়ক যৌথ প্রটোকল স্বাক্ষর করতে হবে।’ এদিকে করোনা পরিস্থিতির কারণে এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও চলছে আতঙ্ক। কাজাখস্তানে গতকাল জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে দেশটির প্রেসিডেন্ট কাসয়াম-জোমার্ত তোকায়েভ। ভারতেও গত ২৪ ঘণ্টায় একলাফে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০৭ জনে দাঁড়িয়েছে। কোভিড-১৯ রোগে এখন পর্যন্ত দেশটিতে মারা গেছে ২ জন। আক্রান্তের সংখ্যায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম রাজ্য মহারাষ্ট্র। সেখানে ৩১ জন আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। এর পরই ২২ জন আক্রান্ত রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায়। পরিস্থিতির কারণে এরই মধ্যে রাজধানী দিল্লিসহ একাধিক শহরে জারি রয়েছে জরুরি সতর্কতা। বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল-কলেজ, মার্কেট ও সিনেমা হল। এ ছাড়া গতকাল পর্যন্ত করোনার উৎসস্থল চীনে ১০, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩, ফিলিপাইনে ৩, যুক্তরাষ্ট্রে ৫, অস্ট্রেলিয়ায় ২, জাপানে ২ ও আলজেরিয়ায় একজন প্রাণ হারিয়েছেন। ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জারি করা হয়েছে রাত্রিকালীন কারফিউ।
ইতালি ফেরত শতাধিক যাত্রীকে নেওয়া হয়েছে হজ ক্যাম্পে
ইতালিতে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সেখান থেকে দেশে ফেরা শতাধিক যাত্রীকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আজ শনিবার সকালে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অবতরণ করেন তারা। সকাল ৮টায় এই যাত্রীরা রোম থেকে দুবাই হয়ে ঢাকায় আসেন বলে জানিয়েছেন শাহজালাল বিমানবন্দর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ডা. শাহারিয়ার সাজ্জাদ। তিনি বলেন, ‘ইতালি ফেরতদের আশকোনা হজক্যাম্পে রাখার প্রস্তুতি চলছে।’ বিমানবন্দরে নামার পর পুলিশ পাহারায় বিআরটিসির কয়েকটি বাসে এই যাত্রীদের আশকোনা হজ ক্যাম্পে নেওয়া হয়। সম্ভাব্য ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে তাদের সেখানে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তবে বিমানটিতে কতজন এসেছেন- জানতে চাইলে সংখ্যাটি নিশ্চিত করে বরতে পারেননি ডা. শাহরিয়ার। তিনি বলেন, ‘অ্যাডজেক্ট ফিগারটা এখনো বলতে পারছি না। সাড়ে ৫টায় দুবাই থেকে যখন ফ্লাইট ডিপার্চার করে, তখন আমাদের জানানো হয়েছিল ১২৫ জন পূর্ণ বয়স্ক এবং দেড় বছরের একটি শিশু। পরে আমরা হিসাব মেলাতে গিয়ে দেখি মেলে না। সংখ্যাটি বেশি হতে পারে। এখন আমরা নিয়ে এসেছি, দেখতে হবে কত এসেছেন।’
এর আগে চীনের উহান থেকে আসা বাংলাদেশিদের হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল। কারও মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ না পেয়ে ১৪ দিন পর তাদের বাড়িতে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়।
আড়াই মাস আগে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরেই প্রথম নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছিল। চীনে তিন হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটানোর পর এখন ইউরোপের দেশ ইতালিতে এই ভাইরাস সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
বাংলাদেশে যে তিনজনের দেহে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তাদের দুজনই এসেছেন ইতালি থেকে। ইতালি থেকে আসা আরও অনেককে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রাখার মধ্যে একসঙ্গে শতাধিক ব্যক্তিকে নিয়ে শনিবার এলো এমিরেটসের ফ্লাইটটি।
যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি অবস্থা জারি
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি প্রাণঘাতী এ ভাইরাস মোকাবিলায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল অঙ্কের অর্থ বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। গতকাল শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন,‘এই বড় অঙ্কের অর্থ দেশের মানুষ ও প্রদেশের জন্য ব্যয় করা হবে। আমরা সবাই মিলে এ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করবো।’ এ সময় একদিন এই মহামারির শেষ হবে বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়,যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া দেশটিতে ১ হাজার ৭০১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে।
ভারতের সঙ্গে এবার রেল যোগাযোগও বন্ধ
সড়ক ও আকাশপথের পর এবার বন্ধ হয়ে গেল ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ। করোনাভাইরাস ঠেকাতে সতর্কতার অংশ হিসেবে এক মাস বন্ধ থাকবে ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা। আজ শনিবার সকালে কলকাতার উদ্দেশে ছেড়ে যায় মৈত্রী এক্সপ্রেসের শেষ ট্রেনটি। তবে এই ট্রেনে সাধারণ বাংলাদেশি যাত্রীদের কেউ যেতে পারেননি। জানা গেছে, ট্রেনে বাছাই করে কেবল বিশেষ ভিসাধারীদের উঠতে দেন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা। যাত্রীদের বেশির ভাগই ছিলেন ভারতীয় নাগরিক, দেশে ফিরছেন তারা। এতে বিপাকে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। এর আগে শুক্রবার ভারতের সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় বিমান ও বাস চলাচল। এখন পর্যন্ত যা সিদ্ধান্ত, তাতে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে দুই দেশের যোগাযোগ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে শুক্রবার এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এদিকে, শুক্রবার সকালেই অল্পসংখ্যক যাত্রী নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে ছেড়ে যায় মৈত্রী একপ্রেস। যদিও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে ভারত সরকার এদিন সন্ধ্যা থেকে তাদের দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। গতকাল থেকে ঢাকা-কলকাতা রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক রুটে বাস পরিচালনা করা পরিবহন মালিকরা।উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের সব দেশের নাগরিকদের ভিসা স্থগিত করেছে ভারত সরকার। ১৩ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত এ স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। ফলে কোনো বাংলাদেশি এই সময়ে আর ভারত যেতে পারবেন না। তবে বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিকগণ স্বদেশে ফিরতে পারবেন।
করোনার সঙ্গে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু
এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাধারণত ডেঙ্গুর মৌসুম। তবে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে এখনই ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ২৬০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে তথ্য পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ অবস্থায় বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়েছে। দেশেও তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। একই সঙ্গে সন্দেহভাজন হিসেবে দেশে কয়েকশ মানুষকে কোয়ারেনটাইনে রাখা হয়েছে।
ডেঙ্গু আর করোনার প্রাদুর্ভাব একসাথে চললে পরিস্থিতি হবে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ কম হতে পারে। তবে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলে গত বছরের চেয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে। অবশ্য ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডেঙ্গু ছড়ানোর বাহক এডিস মশার আবাসস্থল চিহ্নিত করে ধ্বংসকরণ, চিকিৎসাসংক্রান্ত গাইডলাইন প্রণয়ন, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ ও ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট মজুদসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হেিত নিয়েছে সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক এক রোগতত্ত্ববিদ বলেছেন, গেল বছর ব্যাপক হারে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ায় মোকাবিলার ক্ষেত্রে বেশকিছু দুর্বলতা ছিল। যেমনÑ আগে থেকে মশার আবাসস্থল চিহ্নিত করে মশা নিধন না করা, ডেঙ্গু পরীক্ষার পর্যাপ্ত পরিমাণ কিট মজুদ না থাকা, আক্রান্তদের দেরিতে চিকিৎসাকেন্দ্রে যাওয়া এবং চিকিৎসাসেবা প্রদানে অপ্রতুলতা। এ বছর অবশ্য আরেকটা বিপদ আছে। যদি করোনার প্রাদুর্ভাব ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে তা হলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ।
জানা গেছে, বাংলাদেশে ডেঙ্গু দেখা দেয় ২০০০ সালে। সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয় ২০১৯ সালে। বিগত বছরগুলোয় ডেঙ্গুর প্রকোপ রাজধানীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও গেল বছর দেশের ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসকরা বলেছেন, ২০১৯ সালে ডেঙ্গু ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ায় সামান্য জ্বর হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য ছুটে যেতেন হাসপাতালে। হঠাৎ ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাজারে কিটের প্রচ- সংকট দেখা দেয়। সংকটের কারণে ১২০-১৫০ টাকার কিট বিক্রি হয়েছে ৫০০-৬০০ টাকায়। সুযোগ বুঝে হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা ১৫০ টাকা মূল্যের একটি কিটের ব্যবহার করে ডেঙ্গু পরীক্ষা ফি নিতে থাকেন ১০০০ থেকে ১৭০০ টাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, চলতি বছরও ডেঙ্গু ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে ডেঙ্গু টেস্টের মূল্য আগে থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া দরকার। কিন্তু তা করার উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া হাসপাতাল থেকে যেন ডেঙ্গু ছড়াতে না পারে সে জন্য মশারি সরবরাহসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
জানা গেছে, গত বছর প্রায় পৌনে ২ কোটি কিট আমদানির অনাপত্তিপত্র দিয়েছিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ওই পরিমাণ কিট আমদানি করেনি। ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট, রিএজেন্ট এবং প্লাটিলেট ও প্লাজমার পরীক্ষার কিট ইউরোপ, কোরিয়া ও চীন থেকে আমদানি করা হয়। ইউরোপ ও কোরিয়া থেকে আনা কিটের মূল্য ৩২০-৩৫০ টাকা আর চীনা কিটের মূল্য ১৫০ টাকা। এ কারণে বেশিরভাগ কিট আমদানি হয় চীন থেকে। চলতি বছর করোনার কারণে চীন থেকে কিট আমদানির সম্ভাবনা ক্ষীণ। ফলে বাজারের ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিটের মূল্য বাড়তে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইউরোপ, কোরিয়া ও চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট আমদানি করা হয়ে থাকে। এটি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মাধ্যমে করা হয়। আমাদের কয়েক লাখ কিট মজুদ আছে। চীন থেকে কিট আমদানি করা না হলেও কিটের কোনো সংকট হবে না। গত বছর আমদানি করা বিপুলসংখ্যক কিট রয়েছে গেছে। ডেঙ্গু টেস্টের যে মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া আছে, সেটি এখনো বিদ্যমান। কোনো কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার মূল্য প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করেছে। আমরা বাতিল করিনি। ডেঙ্গু টেস্টের মূল্য কেউ বেশি নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, গেল বছর ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের সময় হাসপাতাল চিকিৎসাধীন রোগী থেকে যেন অন্যজনের দেহে ডেঙ্গু ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য মশারি দেওয়া হয়েছিল। আবার অনেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে মশারি কিনে দিয়েছিল। চলতি বছরও প্রয়োজন হলে হাসপাতালগুলোয় মশারি সরবরাহ করা হবে। গত বছর মশারির কোনো সংকট দেখা যায়নি। এবারও সংকট হওয়ার কথা নয়।
ডেঙ্গু ইউনিট গঠন প্রসঙ্গে সব হাসপাতালে ডেঙ্গু ইউনিট করা বাস্তবসম্মত নয়। তবে যদি ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হয়, রোগীর সংখ্যা বেশি হয় তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলতে পারি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার স্বার্থে আলাদা ইউনিট গঠনের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশে ২০১৯ সালে অনেক মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যাপক না-ও হতে পারে। তবে চলতি বছর রোগীর সংখ্যা বেশি হলে মৃত্যুর হার বাড়তে পারে। কারণ প্রথমবারের তুলনায় দ্বিতীয়বার আক্রান্তদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট, ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট, চিকিৎসক-নার্সদের প্রশিক্ষণ, মশার আবাসস্থল চিহ্নিত করে মশক নিধন এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, এডিস মশা ডেঙ্গুজ্বর ছড়ানোর জন্য দায়ী। এপ্রিল থেকে অক্টোবর এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। কিন্তু গেল বছর জানুয়ারি থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়। ১ জানুয়ারি থেকে ২৬০ জন মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গেছেন। এর মধ্যে রাজধানীর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫০ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ২২, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৪, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১২, বিএসএমএমইউ ও পুলিশ হাসপাতালে ২ জন করে, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪, বিজিবি হাসপাতালে ৩, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১১ এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১২ জন রয়েছেন ও বেসরকারি হাসপাতালে ৫৬ জনসহ রাজধানীর ১৯৮ জন রয়েছেন। রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগে ৩০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০, খুলনা বিভাগে ৮, বরিশাল বিভাগে ৩ ও রাজশাহী বিভাগের ১ জন রোগী রয়েছেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৯ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ২৭৬ জনের মৃত্যুর তথ্য সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) জমা পড়ে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, গেল বছর যখন ডেঙ্গু বাড়তে শুরু করে তখন সরকারি ব্যবস্থাপনায় সব হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নার চালু করা হয়। একইসঙ্গে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ডেঙ্গুর কিট ফ্রি সরবরাহ করা হয়। গেল বছর দেশের সবখানেই ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট মজুদ ছিল। এবারও আমাদের ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট সংকট হবে না।
ডা. আয়শা আক্তার বলেন, গত বছরের বিষয়টি মাথায় রেখে এ বছর যে ডেঙ্গু ব্যাপক আকারে না ছড়াতে পারে সে জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত করতে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে জরিপ চালানো হয়েছে। তার প্রতিবেদন আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি। প্রতিবেদন অনুযায়ী সিটি করপোরেশন ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, গেল বছর মশার বংশ বৃদ্ধি হওয়ায় এবং ওষুধ ছিটানোর পর আশানুরূপ মশা নিধন না হওয়ায় এডিস মশার বংশবৃদ্ধি ঠেকাতে সরকার ওলবাকিয়া মশা আমদানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এডিস ভাইরাস ছড়ানোর বাহক ইজিপ্টি মশার দেহে ওলবাকিয়া ব্যাক্টেরিয়া প্রবেশ করিয়ে ডেঙ্গু সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব। এই বিষয়টি নিয়ে আণবিক শক্তি কমিশন কাজ করছে। এটি গবেষণাবিষয়ক কার্যক্রম, তাই এটি বাস্তবায়ন হতে কয়েক বছর লাগতে পারে।
অন্যদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১০ শতাংশ এলাকা ডেঙ্গু ছড়ানোর জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব এলাকায় অতিরিক্ত মাত্রায় ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত ১৮ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডের এক হাজার বাড়িতে জরিপ চালানো হয়। জরিপের এই তথ্যই বলছে, চলতি বছরও ডেঙ্গু ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা আছে।
করোনা যুদ্ধের শেষ কোথায়
করোনা ভাইরাস যাত্রা শুরু করেছিল চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে। দুই মাসের মাথায় গতকাল পর্যন্ত ভাইরাসটি ১৩৫টি দেশ ও অঞ্চলে থাবা বসিয়েছে। নিহতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজার ২১৪। আর দেশে দেশে কত শত মানুষ কোয়ারেনটাইনে রয়েছেন তার হিসাব নেই। এ তো গেল শুধু জনস্বাস্থ্যের ক্ষয়ক্ষতির দিক। আক্রান্ত দেশগুলোসহ বিশ্বের শেয়ারবাজারে অস্বাভাবিক ধস নেমেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল। গতকাল সংবাদমাধ্যম বিবিসি যে তথ্য দিয়েছে তার সারমর্ম করলে দাঁড়ায়, ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের দেশগুলোতে স্কুল বন্ধ, খেলা বন্ধ, সাংস্কৃতিক কর্মকা- বন্ধ। বলা ভালো, বিশ্ব থমকে রয়েছে-আক্রান্ত রাষ্ট্রগুলো সর্বোচ্চ সামর্থ্য নিয়ে ভাইরাসকে মোকাবিলার চেষ্টা করছে, কিন্তু করোনার গতি কি রোধ করা যাচ্ছে? বিশ্বজুড়ে করোনার তাণ্ডব জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি সবচেয়ে যে দিকটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা হলো অর্থনীতি। অর্থনীতির যে মূল চালিকাশক্তি যোগাযোগব্যবস্থা- করোনার কারণে সেটিই আজ বিপর্যস্ত। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে শুধু চীনেই আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ২ কোটি মার্কিন ডলার। এর পর এ অঙ্ক নিশ্চয়ই আরও বেড়েছে। ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে শুধু আপৎকালীন মন্দা কাটিয়ে উঠতে। ইউরোপের শেয়ারবাজার অস্বাভাবিক মন্দাভাবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গতকাল বিবিসি জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসা চাঙ্গা করতে ‘আন লিমিটেড’ ঋণের প্রস্তাব দিয়েছে জার্মান সরকার। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক টানাপড়েনে ধুঁকছে। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে-করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তারা কর্মী ছাঁটাই করবে। তবে বিশ্বব্যাপী করোনায় যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার প্রকৃত হিসাব অনুমানের চেয়েও বেশি। করোনার বিরুদ্ধে নানাভাবে লড়ছে বিশ্ব। একে তো জীবাণুর অপ্রতিরোধ্য বিস্তার, অন্যদিকে রয়েছে ‘গুজব’। সঠিক তথ্য যত দ্রুত ছড়ায়, গুজব যেন তার কয়েকশ গুণ বেশি বেগে ছড়াতে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কিছুদিন আগে এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, প্রতিটি মহামারীর সময় তথ্যের মহামারীও দেখা দেয়। করোনার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। চীনের এক দোকান থেকে টিস্যু পেপার ডাকাতি হয়েছে! আর অস্ট্রেলিয়ার এক ভিডিওতে দেখা যায়, একদল লোক হুড়মুড় করে ঢুকে যে যেমন পারছে টিস্যু পেপার লুফে নিচ্ছে। এই করোনার-দিনে এমন চিত্র বেশকিছু দেখা গেছে। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইম নামে এক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, চলতি বছর সাধারণ জ্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২০ হাজার লোক মারা গেছেন। কিন্তু এ নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু করোনা নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। গোটা ইউরোপের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী ইউরোপের ২৬টি দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তার এই সিদ্ধান্তের নেতিবাচক সমালোচনা করছে ইউরোপ। কিন্তু তাতে নিজের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটেননি ট্রাম্প। স্পেন গতকাল মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যাওয়ায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। এদিকে বিশেষজ্ঞরা কিছুটা হলেও আশার কথা শুনিয়েছেন। বলছেন, ভাইরাসটি কিছুদিনের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। কেননা এর উৎসস্থল উহানে ইতোমধ্যে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। খোদ চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং উহান সফর করে এ কথা বলেছেন। উহানের অস্থায়ী হাসপাতালগুলোও গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে। হয়তো এটিই ঠিক যে, কিছুদিনের মধ্যে করোনা প্রতিরোধের সঠিক ব্যবস্থা আবিষ্কার হবে। কিন্তু এতেই কি শেষ? অতীত অভিজ্ঞতা বলছে- না। এর আগেও ভাইরাসের প্রকোপের মুখে পড়েছে মানবজাতি। তাতে শুধু সুনির্দিষ্ট ভাইরাস প্রতিরোধ করা গেছে, কিন্তু নতুন ভাইরাসের বিস্তার রোধ করা সম্ভব হয়নি। আর সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় হলো, নতুন ভাইরাসগুলো পূর্বের চেয়ে প্রাণঘাতী শক্তি নিয়ে উদ্ভব হয়। নিকটঅতীতে তো কম ভাইরাসের সঙ্গে আমাদের দেখা হলো না- সার্স, মার্স, জিকা, ইবোলা- আরও কত কি! সবগুলোই শুরুতে প্রাণঘাতী ছিল। পরে টিকা আবিষ্কার হয়েছে। আর করোনা ভাইরাস কী থেকে কিভাবে উদ্ভব হলো- সে তথ্যই এখনো অজানা। খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে- ‘আমরা অন্ধকারে হাতড়াচ্ছি’। কাজেই ধারণা করা হচ্ছে, করোনা না হোক- মানবজাতিকে আগামী দিনেও এই অতিশয় ক্ষুদ্র অণুজীবের বিরুদ্ধে লড়াই করেই টিকে থাকতে হবে।
রূপনগরের ৮ বস্তি ‘টাকার খনি’
রাজধানীর রূপনগরের চলন্তিকা ঝিলপাড় বস্তিটি তিন দশক ধরে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কিছু নেতাকর্মীর কাছে ছিল ‘টাকার খনি’। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অধিগ্রহণ করা ঝিলের ২০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা এ বস্তির প্রায় ১৫ হাজার ঘরের ভাড়া, চোরাই বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির লাইন সংযোগের মাধ্যমে প্রতি মাসেই তারা হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। গত ১৬ আগস্ট ভয়াবহ এক অগ্নিকা-ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় বস্তিটি। এখানকার বাসিন্দা দন্ত চিকিৎসক ফরিদ সরদারের ঘরের সুইচবোর্ডে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে লাগা এ আগুন চোখের সামনে ভস্ম করে দেয় ঝিলপাড় বস্তির হাজার ঘর। ওই ঘটনায় গঠিত ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে আসেÑ বস্তিজুড়ে অবৈধভাবে টানা বিদ্যুৎ-গ্যাসের প্লাস্টিক লাইনের কারণে দ্রুত ছড়িয়েছে আগুন। ঢাকা-১৬ আসনের সাংসদ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা তখন আমাদের সময়কে বলেছিলেন, বস্তিতে গ্যাস-বিদ্যুৎ নিয়ে এত বাণিজ্য হয় তা আমার জানা ছিল না। আপনারা তথ্য দেন, অন্য যে কটি বস্তি রয়েছে, সেগুলোয় অবৈধ কোনো সংযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে গ্যাস-বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের নিয়ে আমি নিজেই অভিযানে যাব। এখন থেকে কেউ আর অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করতে পারবে না। আমার নাম ভাঙিয়ে যদি কেউ এ অপকর্মে যুক্ত হয়, তাদের আমি নিজেই আইনের কাছে সোপর্দ করব। কিন্তু গত বুধবার রূপনগরের ‘ট‘ ব্লক বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের পর সরেজমিনে ঝিলপাড় বস্তি ঘুরে জানা গেল, সাংসদ ইলিয়াস মোল্লার সেই আশ্বাস ছিল শুধু কথার কথা। কারণÑ গত ৭ মাসেও বস্তির এ অবৈধ আয়ের সঙ্গে জড়িত কেউই তো গ্রেপ্তার হয়ইনি; উল্টো সেই বস্তিতে নতুন করে ঘর তুলে ফের চোরাই বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির লাইন সংযোগের জমজমাট বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। সম্প্রতি পুড়ে যাওয়া ‘ট’ ব্লক বস্তিতেও ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কিছু নেতাকর্মী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন সরবরাহ করে ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ভাড়া ও বিল বাবদ কোটি টাকারও বেশি আদায় করত বলে জানা গেছে। শুধু পুড়ে যাওয়া এ দুই বস্তিই নয়Ñ রূপনগর থানা এলাকায়ই রয়েছে আরও ৬টি বস্তি। ঢাকা উত্তরের ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড ঘিরে গড়ে ওঠা অন্য বস্তিগুলো হলো কমিশনারের বস্তি, দুয়ারিপাড়া তালতলা বস্তি, শিয়ালবাড়ি বস্তি, লেকপাড় বস্তি, বেগুন টিলা ও ইস্টার্ন হাউজিংয়ের বালু মাঠ বস্তি। এসব বস্তির প্রায় ৫০ হাজার ঘরে চোরাই বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির লাইন সরবরাহের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী প্রতি মাসে লুটে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ২০০ থেকে ৫০০ ঘরের দায়িত্ব দেওয়া হয় একেক জনকে। পাঁচ-ছয় হাতের প্রতিটি ঘর থেকে গড়ে আড়াই হাজার টাকা মাসোহারা তোলা হয়। ঘরভাড়া এবং বিভিন্ন সেবার লাইন থেকে প্রতি মাসের সুনির্দিষ্ট আয় বলা না গেলেও স্থানীয় সূত্র ও বস্তির দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছ থেকে জানা গেছেÑ এর পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি টাকা। এসব বস্তির টাকায় অনেকেই হয়েছেন অট্টালিকার মালিক। বস্তির নিয়ন্ত্রকরা এতটাই ভয়ঙ্কর যে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (ওডসকো) ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের চোরাই সংযোগ দিচ্ছে নিজেরাই। বছরের পর বছর সবকিছুই ঘটছে চোখের সামনে। কিন্তু নীরব ভূমিকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কালে-ভদ্রে লোক দেখানো কিছু অভিযান চালানো হলেও আদতে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নেরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যাদের দায়িত্ব এ অনিয়ম রুখে দেওয়া- স্থানীয় সেই সাংসদ ও কাউন্সিলর থেকে শুরু করে ওয়াসা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ সংযোগের বিষয়ে তারা অবগত নন। চাঁদাবাজির বিষয়টিও তাদের নজরে আসেনি। বস্তিতে অবৈধ সংযোগ প্রদানকারীদের তথ্য খতিয়ে দেখা ছাড়াও অবৈধ সংযোগের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানান তারা। নির্ভরযোগ্য সূত্র ও বস্তিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লুটেরা এ বিশাল চক্রের সিন্ডিকেটে জড়িত রয়েছে রূপনগর থানাপুলিশ, ওয়াসা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ বিভাগের দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তা। অবৈধ গ্যাস সংযোগ থেকে আদায় করা অর্থের ২৫ ভাগ প্রতি মাসে পান তিতাস গ্যাস কোম্পানির ওই অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিদ্যুৎ সংযোগের ২০ ভাগ অর্থ পৌঁছে দেওয়া হয় রূপনগর থানা ও ডেসকোর লোকজনের হাতে। ওয়াসার অসাধু কর্মকর্তারাও মাসের ৫ তারিখের মধ্যেই পেয়ে যান ১০ ভাগ টাকা। স্থানীয় মাস্তান-সন্ত্রাসী, ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নামেও বরাদ্দ রয়েছে। সবার যোগসাজশে গড়া শক্ত সিন্ডিকেটের কারণে তিনটি সেবা খাতের মধ্যে গ্যাস থেকে এক কানাকড়িও যায় না সরকারের ঘরে। তবে বিদ্যুৎ ও পানি থেকে যৎসামান্য অর্থ জমা হয় সরকারি কোষাগারে। জানা গেছে, ট-ব্লক বস্তির প্রায় ৫ হাজার ঘর থেকে ভিটি ভাড়া এবং অবৈধ বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহের মাধ্যমে প্রতি মাসে তোলা হতো এক কোটিরও বেশি টাকা। চোরাই সংযোগের মাধ্যমে দুই ঘরপ্রতি বরাদ্দ ছিল একটি ডাবল গ্যাসের চুলা। যাদের ভাড়া ৩ হাজার টাকা, তাদের জন্য বরাদ্দ ছিল একটি চুলা। প্রতি ডাবল চুলা থেকে মাসিক ভাড়ার সঙ্গে অতিরিক্ত নেওয়া হতো ১২০০ টাকা এবং সিঙ্গেল চুলায় আদায় করা হতো ১ হাজার টাকা। একটি লাইট-ফ্যান-টিভির জন্য ঘরপ্রতি গুনতে হতো ৩০০ টাকা। ফ্রিজ চালালে আলাদা দিতে হতো ২০০ টাকা। রাস্তার পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকানিকে প্রতি বৈদ্যুতিক লাইটের জন্য দৈনিক দেওয়া লাগত ১০০ টাকা। পানির সংযোগ থেকে উঠানো হতো প্রায় ৩ লাখ টাকা। বস্তিবাসী ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীর ভাষ্যÑ এসব বস্তির নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে অন্যতম হলেনÑ হাজী রজ্জব হোসেন, নূর আলম খোকন, দুলাল হোসেন ওরফে কারেন্ট দুলাল, সোহেল রানা, রাসেল, রনি, ডিশবাবু, কবির আহমেদ, খোকন, জাহাঙ্গীর হোসেন, নুরুল ইসলাম, আনসার মিয়া, মোহাম্মদ দিলু, মোহাম্মদ হানিফ, তুষার, মিঠু, হেলাল উদ্দিন, জামালউদ্দিন, মতিউর রহমান ওরফে খোকন, আক্তার হোসেন, খলিলুর রহমান ও তৈয়ব আলী, ফকির কবির, জামাল, ডিশ রকি চৌধুরী, মিজান, বাইট্টা খলিল, ভিডিও বাবু, মনির মোল্লা, ফারুক হারুন, মিল্ক ভিটা সোহেল, নূরে আলম খোকন, শেখ মো. নাছির, জহুর মাতবর, এনালান খান, সাত্তার মাতবর, হারুন, শরীফ মাতবর, মজিবুর রহমান ওরফে ভাঙারি মুজিবর, মারুফ মাতবর, ওমর আলী মাতবর ও আনিস ‘আর্মি’, এসএ খোকন, আবদুুর রহিম সর্দার, রাসেল মোড়ল, এনামুল ওরফে মামা ভাগনে দোলন শুভ, ছাত্রলীগ কর্মী আলীম ও ইব্রাহিমসহ অর্ধশত ব্যক্তি।
লন্ডনে করোনায় আরও এক বাংলাদেশির মৃত্যু
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাজ্যে আরও এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোরে রয়েল লন্ডন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৬৬ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি। জানা যায়, আট দিন আগে অসুস্থ হয়ে রয়েল লন্ডন হাসপাতালে ভর্তি হন আফরোজ মিয়া নামে ওই ব্যক্তি। সেখানে তার শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। হাসপাতালে এ ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার পর সেখানেই মৃতুবরণ করেন তিনি। ওই বাংলাদেশির মরদেহ রয়েল লন্ডন হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। মরদেহ স্বজনদের কাছে কীভাবে, কখন হস্তান্তর করা হবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ছয় মাস আগে বাংলাদেশ সফর করে যান ওই ব্যক্তি। তার গ্রামের বাড়ি সিলেটে। যুক্তরাজ্যের বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই ডায়বেটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থ্যতায় ভুগছিলেন ওই ব্যক্তি। উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ব্রিটেনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ১২ জন। এর মধ্যে দুজন বাংলাদেশি। এর আগে গত রোববার ব্রিটেনে যে তৃতীয় ব্যক্তি করোনাভাইরাসে মারা গেছেন,তিনি একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত। সংক্রমণ ধরা পড়ার মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় ম্যানচেস্টারের এক হাসপাতালে ৬০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি মারা যান। তিনি কয়েক বছর আগে ইতালি থেকে ব্রিটেনে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন।
আজ চালু হচ্ছে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে
পদ্মা সেতুতে ইতোমধ্যে বসেছে ২৬তম স্প্যান। আগামী বছরই চালু হবে স্বপ্নের এ সেতু। তার আগে আজ বৃহস্পতিবার চালু হচ্ছে এ সেতুকে সংযোগকারী ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। দুই পাশে সার্ভিস লেনসহ মোট ছয় লেনের দেশের প্রথম এ এক্সপ্রেসওয়েটি আজ খুলে দেওয়া দেওয়া হচ্ছে। এ মহাসড়ক চালুর মাধ্যমে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে। যানজটে নাকাল সড়কব্যবস্থার বিপরীত চিত্র দেখবে দেশের মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নবনির্মিত এই এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করবেন। এর মধ্য দিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়কটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম অংশ ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার, আর পদ্মা সেতুর ওই পার থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর ফলে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা, খুলনা বিভাগের ১০ জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ছয় জেলা মিলিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২ জেলার মানুষ সরাসরি এই এক্সপ্রেসওয়েতে উপকৃত হবেন বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, প্রকল্পটি ২০ জুন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তিন মাস আগেই তা শেষ হয়েছে। মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ে করিডরের অন্তর্ভুক্ত। মন্ত্রী আরও জানান, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতু হলে এর সর্বোচ্চ সুবিধা যাতে দেশের মানুষ পান, সেজন্য আধুনিক মহাসড়কের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রেখে তৈরি করা হয়েছে এই এক্সপ্রেসওয়ে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনীর ২৪ কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে। পদ্মা সেতু হয়ে গেলে ভাঙ্গা থেকে ঢাকা আসা-যাওয়ায় এক ঘণ্টাও লাগবে না বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই মহাসড়কে ৪৪টি কালভার্ট, ১৯টি আন্ডারপাস, চারটি বড় সেতু, ২৫টি ছোট সেতু, পাঁচটি ফ্লাইওভার ও চারটি রেলওয়ে ওভারপাস রয়েছে। পাঁচটি ফ্লাইওভারের একটি হচ্ছে দুই দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কদমতলী-বাবুবাজার লিংক রোড ফ্লাইওভার। অন্য চারটি করা হয়েছে আবদুল্লাহপুর, শ্রীনগর, পুলিয়াবাজার ও মালিগ্রামে। জুরাইন, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগর ও আতাদিতে চারটি রেলওয়ে ওভারব্রিজ এবং চারটি বড় সেতু রয়েছে। ২০১৬ সালের মে মাসে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। তবে নির্ধারিত ব্যয়ে প্রকল্পটির কাজের বড় অংশই অসমাপ্ত থেকে যায়। পরে বাকি কাজ শেষ করতে আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হয়। যদিও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতু (পোস্তগোলা সেতু) সম্প্রসারণ। সেতুটি অপ্রশস্ত হওয়ায় তা মহাসড়কের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে মহাসড়কটিতে যান চলাচল বাড়লে রাজধানীর প্রবেশমুখে জটিলতা তৈরি হবে। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ছয় হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পরে তা দুই দফা বেড়ে হয় ছয় হাজার ৮৯২ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। এর পরও প্রকল্পের অনেক কাজ বাকি থেকে যায়। এতে ২০১৮ সালে নেওয়া হয় ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্প। সেটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে চার হাজার ১১১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ফলে দুই প্রকল্প মিলিয়ে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার তিন কোটি ৯১ লাখ টাকা।
সব দেশের ভিসা স্থগিত করল ভারত
নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে কয়েকটি বিশেষ ক্যাটাগরির বাইরে বিশ্বের সব দেশের নাগরিকদের ভিসা স্থগিত করেছে ভারত সরকার। গতকাল বুধবার ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৩ মার্চ রাত ১২টা থেকে শুরু হয়ে এই স্থগিতাদেশ থাকবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। তবে কূটনৈতিক, অফিসিয়াল, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, চাকরি ও প্রকল্প ভিসা এই আদেশের বাইরে থাকবে বলে জানিয়েছে দেশটি। একই সময়ের জন্য ওভারসিজ সিটিজেন অব ইন্ডিয়া (ওসিআই) কার্ডধারীদের ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধাও স্থগিত করেছে দেশটির সরকার। ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এক কোটি ৩৭ লাখ ৩০ হাজার ২৮২ বিদেশি ভারত ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে প্রথম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশির সংখ্যা ছিল ২৮ লাখ ৭৬ হাজার। কেবল ২০১৯ সালে বাংলাদেশিদের জন্য ১৫ লাখ ভিসা দিয়েছিল প্রতিবেশী দেশটি। এই সময়ে যদি কোনো বিদেশি নাগরিককে ‘বাধ্যতামূলকভাবে’ ভারতে যেতে হয়, তাহলে তাকে নিকটস্থ ভারতীয় মিশনে যোগাযোগ করতে বলেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ঢাকায় ইন্ডিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের ওয়েবসাইটে বলা হয়, বিজনেস, কনফারেন্স, কূটনৈতিক, চাকরি, জরুরি, এন্ট্রি, সাংবাদিক, মেডিকেল, মিশনারি, দুই মাসের মধ্যে পুনঃপ্রবেশ, গবেষণা, শিক্ষার্থী, পর্যটক ও ট্রানজিট ভিসা দিয়ে থাকে ভারত।
স্বেচ্ছায় করোনাভাইরাস শরীরে নিলেই মিলবে প্রায় ৪ লাখ টাকা
করোনাভাইরাসে বিপর্স্ত পুরো বিশ্ব। সবাই যখন মরণঘাতী এ ভাইরাসটি থেকে রক্ষা পেতে চাইছেন সেখানে স্বেচ্ছায় করোনাভাইরাস জীবাণু শরীরে ঢুকালে প্রায় ৪ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের খবরে বলা হয়, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য গবেষণা করছেন যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক। এ জন্য তারা স্বেচ্ছাসেবী খুঁজছেন। এ স্বেচ্ছাসেবীদের শরীরে পরীক্ষামূলকভাবে করোনাভাইরাসের জীবাণু ঢুকিয়ে গবেষণা করবেন তারা। দ্য কুইন ম্যারি বায়ো এন্টারপ্রাইজ নামের ওই গবেষণাগার ২৪ জন স্বেচ্ছাসেবীকে খুঁজছেন। প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবীকে তারা সাড়ে তিন হাজার পাউন্ড দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকারও বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাব অনুযায়ী, সারা বিশ্বে ৪ হাজার ২০০’রও বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বিশ্বব্যাপী এ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ রাখ ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মতে করোনাভাইরাস থেকে ৬৬ হাজারেরও বেশি মানুষ ভাইরাসটি মুক্ত হতে পেরেছেন।
করোনাভাইনাসকে মহামারি ঘোষণা করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসকে মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘোষণা দেয় সংস্থাটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ডা. টেড্রস অ্যাধানম ঘেব্রাইয়িসাস বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা উৎপত্তিস্থল চীনের বাইরে ১৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।’এ ভাইরাসের আশঙ্কাজনক মাত্রায় বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি ‘গভীরভাবে শঙ্কিত’। তিনি বিভিন্ন দেশের সরকারকে ‘জরুরি ও আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ’ গ্রহণের মাধ্যমে এই প্রাদুর্ভাব থেকে উত্তেরণের আহ্বান জানিয়েছেন। যখন কোনো রোগ উৎপত্তিস্থলের বাইরে একাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়ে তখন তাকে মহামারি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১৯ হাজার ২১৭ জন প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ৪ হাজার ২৯৯ জন। অপরদিকে করোনায় আক্রান্ত ৬৬ হাজার ৫৬৩ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। বিশ্বের ১১৯টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়েছে। শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখণ্ডেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৭৭৮ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ১৫৪ জনের। চীনের পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ইতালিতে। দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৬৩১ জনের।
ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ ৩০ দিনের জন্য স্থগিত
ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ আগামী ৩০ দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার এই ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নতুন নিয়মটি আগামীকাল শুক্রবার মধ্যরাত থেকে কার্যকর হবে। টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের উপকূলে করোনাভাইরাস যেন নতুন করে আর বিস্তার না ঘটায়, এ জন্য পরবর্তী এক মাসের জন্য ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের ভ্রমণ স্থগিত করা হলো।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘কঠোর কিন্তু প্রয়োজনীয়’ এই বিধিনিষেধ যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না, যেখানে কেবল ৪৬০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্তের খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গত দুই সপ্তাহে চীনের বাইরে ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে বুধবার করোনাভাইরাসকে বিশ্বব্যাপী মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এই ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ১৩৫ জন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে, এর মধ্যে মারা গেছে ৩৮ জন। ট্রাম্প বলেন, ‘নতুন করে আর কেউ যাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হয় সে জন্য আমাদের উপকূলে প্রবেশ করতে না দেওয়ার জন্য ইউরোপ থেকে সমস্ত ভ্রমণ স্থগিত করতে যাচ্ছি।’ এ সময় মার্কিন অর্থনীতির ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব ঠেকাতে ছোট ছোট ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলোর জন্য শত শত কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ ছাড়া কর অব্যাহতি দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানান ট্রাম্প।মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউরোপ থেকে ভ্রমণ বাতিল করলেও দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত দেশের সাধারণ মানুষ সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে এই মাসে বেশ কয়েকজন নতুন করে শনাক্ত হওয়ার পর পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ইতোমধ্যে নিউইয়র্কের উত্তরাঞ্চল নিউ রচেল্লেতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ওই এলাকায় আলাদা থাকতে বলা বেশ কিছু মানুষকে খাদ্য সরবরাহ করছে ন্যাশনাল গার্ড। এ ছাড়া ওয়াশিংটন রাজ্যের গভর্নর বেশ কয়েকটি এলাকায় বড় ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করেছেন বলেও জানান ওই কর্মকর্তারা।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৩ জনের ২ জনই নারায়ণগঞ্জের
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজনের জনের মধ্যে দুইজনই নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। তারা নারায়ণগঞ্জ শহরের আল জয়নাল প্লাজার বসবাসকারী। এদের একজন পুরুষ ও একজন মহিলা। তারা উভয়ে স্বামী স্ত্রী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ। গতকাল রোববার জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, বাংলাদেশে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। কোভিড-১৯ আক্রান্ত এই তিন ব্যক্তির মধ্যে দুইজন ইতালি থেকে দেশে ফিরেছেন। এদের মধ্যে দুজন পুরুষ, অপরজন নারী। আইইডিসিআর-এর নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এমন তথ্য জানানোর পরপরই শোনা যায় আক্রান্ত তিনজন নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। তবে নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানিয়েছেন, আক্রান্ত দুইজন নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। তাদের একজন পুরুষ এবং তার স্ত্রী। ডা. ইমতিয়াজ বলেন, ‘বাংলাদেশে যে তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে দুইজন নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। তারা ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।’ নারায়ণগঞ্জের লোকজনদের আতঙ্কিত না হবার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সরকারিভাবে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেসব নির্দেশনা মেনে চলারও কথা বলেন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, আক্রান্ত দম্পতি নারায়ণগঞ্জ শহরের থানা পুকুরপাড় এলাকায় আল জয়নাল প্লাজায় থাকেন। এদিকে আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের এক বাসিন্দা ইতালি থেকে করোনা (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন। বাসায় ফেরার পর তার সংস্পর্শে তার স্ত্রীও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের বয়স ২০ থেকে ৩৫-এর মধ্যে বলে জানা গেছে। আইইডিসিআরে পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা করোনাভাইরাস নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জানান, জ্বর ও কাশি নিয়ে এই তিন ব্যক্তি (নারায়ণগঞ্জের দুজনসহ) গতকাল আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগ করেন। এরপর গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় তারা পজিটিভ প্রমাণিত হন। তবে তিনজনই ভালো আছেন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনজনেরই বিশেষ কোনও চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। করোনার চিকিৎসা হচ্ছে সিম্পটোমেটিক অর্থাৎ লক্ষণ উপসর্গভিত্তিক। তারা সেই চিকিৎসাই পাচ্ছেন, তাদের অন্য কোনও সাপোর্টিভ চিকিৎসার প্রয়োজন হয়নি। তবে তারা আইসোলেশনেই থাকবেন। যতদিন পর্যন্ত পরপর দুটো নমুনাতে তারা নেগেটিভ প্রমাণ না হচ্ছেন ততদিন পর্যন্ত তারা আইসোলেশনেই থাকবেন। এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জে শহরের পুরান কোর্ট এলাকায় নির্মিত আদালত ভবনে করোনা ভাইরাসের জন্য ৩০ শয্যা বিশিষ্ট কোয়ারেন্টাইন খোলা হয়েছে। সরকারিভাবে এটি গত শনিবার স্থাপন করা হয়।
দ.কোরিয়ায় নতুন ৬৯ রোগী শনাক্ত, আক্রান্ত ৭ হাজার ছাড়িয়েছে
দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করে ৬৯ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্তের খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে আজ সোমবার পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে মোট ৭ হাজার ৩৮২ জন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের বরাত দিয়ে দ্যা স্টার অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র জানায়, গত ১০ দিনের মধ্যে রোববার আক্রান্তের সংখ্যা সর্বনিম্ন থাকায় এ ভাইরাসের সংক্রমণের শিথিলতা আশা করেছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। কিন্ত তার পরের দিনই আবার নতুন করে সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ বাড়ল। এদিকে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণে একদিনে ইতালিতে ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৩৭৫ জনে। করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা চীনের পরই এখন ইতালির অবস্থান। চীনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৮ জনে। চীন ও ইতালির পর সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ইরানে ১৯৪ জন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে মৃতের সংখ্যা একদিনে বেড়েছে ৪৯ জন। এ ছাড়া ফ্রান্সে ১৯ জন, স্পেনে ১৭ জন ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮০২ জনে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৬৯৬। এর মধ্যে প্রায় ৬১ হাজার জন সেরেও উঠেছেন। এদিকে,রোববার প্রথমবারের মতো বাংলাদেশেও তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।কোভিড-১৯ আক্রান্ত এই তিন ব্যক্তির মধ্যে দুজন ইতালি থেকে দেশে ফিরেছেন বলে জানা গেছে।
এখন কী হবে ট্রাম্পের
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত, এমন একজন ব্যক্তি যে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সেখানে যোগ দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ওই আক্রান্তের ব্যাপারে তিনি মোটেও জানতেন না। দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, মেরিল্যান্ডের ওই সম্মেলেনে ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও। এখন কি হবে ট্রাম্প আর পেন্সের? হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন (সিপিএ) সম্মেলনে ওই আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন বলে মনে হয় না। এখন পর্যন্ত তেমন কোনো প্রমাণ মেলেনি। ২৯ ফেব্রুয়ারি অক্সন হিলে হওয়া ওই সম্মেলনে আক্রান্ত ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন বলে শনিবার জানায় আমেরিকান কনজারভেটিভ ইউনিয়ন (এসিইউ)। যুক্তরাষ্ট্রে নভেল করোনা কোভিড ১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছে। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৯ জন। নিউইয়র্কে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। কিন্তু যখন প্রশ্ন করা হয়, করোনা কি যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাব বিস্তার করছে? ট্রাম্প উত্তরে বলেন, ‘আমি এটি নিয়ে সেভাবে মাথা ঘামাইনি।’ সিপিএ সম্মেলনে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি থাকার ঘটনার পর হাজার হাজার সমর্থক নিয়ে এ ধরনের আর কোনো প্রচার মিছিল কি সামনে দেখা যাবে? ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা দারুণ দারুণ সমাবেশ করব।’ উত্তর ক্যারোলাইনার শার্লটে সোমবার সর্বশেষ সমাবেশ করেছেন ট্রাম্প। সিপিএ সম্মেলনে অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যোগ দিয়েছিলেন। ছিলেন হাজারো মাঠকর্মী। এবং এদের সঙ্গে ছিলেন তাদের পরিবারের সদস্যরাও, যাদের মধ্যে শিশুও ছিল। এসিইউ টুইটারে জানায়, নিউজার্সির একটি হাসপাতালে ওই আক্রান্তের শরীরে করোনা ধরা পড়ে। তাকে অন্তরীণে রাখা হয়েছে। এসিইউ আরও জানায়, ওই আক্রান্ত ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট কিংবা ভাইস প্রেসিডেন্টের সংস্পর্শে যেতে পারেননি। এমনকি তিনি সম্মেলনের মূল হলেই প্রবেশ করেননি।
অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন নববধূ পূর্ণিমা
রাজশাহীর পদ্মা নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ নববধূ সুইটি খাতুন পূর্ণিমার (১৬) লাশের খোঁজ অবশেষে মিলেছে। এই নিয়ে নিখোঁজ হওয়া ৯ জনের লাশের সন্ধান মিলল। আজ সোমবার সকাল ৬টার দিকে রাজশাহী নগরীর শ্যামপুর এলাকায় পদ্মা নদী থেকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ভাসমান অবস্থায় পূর্ণিমার লাশ উদ্ধার করে। নববধূর লাশ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে নৌকাডুবির ঘটনায় যে উদ্ধার কার্যক্রম চলছিল তার অবসান হলো। বিষয়টি নিশ্চিত করে নৌ-পুলিশের রাজশাহী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, ‘দুর্ঘটনাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে কাটাখালির শ্যামপুর এলাকার পদ্মা নদীতে নিখোঁজ নববধূর পূর্ণিমার লাশ ভেসে উঠে। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সেখানে গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে।’ নববধূর লাশ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে উদ্ধার কার্যক্রমের ইতি টানা হয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। এর আগে গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় দুর্ঘটনাস্থল থেকে নিহত নববধূর খালা আখি খাতুনের (২৫) লাশ উদ্ধার করে ডুবুরি দল। ওইদিন দুপুরে প্রায় একই স্থান থেকে গৃহবধূর ফুফাতো বোন কিশোরী রুবাইয়া খাতুন স্বর্ণার উদ্ধার করা হয়। এদিকে, নৌকাডুবির ঘটনায় এর আগে উদ্ধারকৃতরা হলেন- নিহত নববধূর দুলাভাই রতন আলী (৩২), চাচাতো বোন মরিয়ম (৮), চাচা শামীম (৩১), স্ত্রী মনি খাতুন (৪২), তাদের মেয়ে রোশনি (৭) ও কনের খালাতো ভাই এখলাস হোসেন (২২)।হতাহতদের পরিবার সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার পদ্মার ওপারে পবা উপজেলার চরখিদিরপুর গ্রামের আসাদুজ্জামান রুমনের (২৫) সঙ্গে এপারের ডাঙেরহাট গ্রামের সুইটি খাতুন পূর্ণিমার (১৬) বিয়ে হয়। বিয়ের পর সুইটি শ্বশুর বাড়িতে ছিলেন। শুক্রবার (৬ মার্চ) কনেপক্ষ বরের বাড়ি থেকে নবদম্পতিকে আনতে যায়। সন্ধ্যার কিছু সময় আগে তারা বরের বাড়ি থেকে বের হয়ে দুটি নৌকায় করে কনের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। পথিমধ্যে নগরীর শ্রীরামপুরের বিপরীতে নদীর মাঝামাঝি স্থানে প্রায় ৩৬ জন বরযাত্রীসহ নৌকা দুটি ডুবে যায়। দুর্ঘটনা কবলিত নৌকা দুটি উদ্ধার হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় কনেসহ ৯ জন ব্যতীত বাকি সবাইকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) হামিদুল হক জানান, নিখোঁজ গৃহবধূর লাশের সন্ধান মিলেছে। তাই এর মধ্য দিয়ে উদ্ধার কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়েছে। নিখোঁজ হওয়া ৯টি লাশেরই সন্ধান মিলেছে। তিনি আরও বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার করে টাকা প্রদান করা হয়েছে। যারা আহত হয়েছিল তাদের চিকিৎসা ভারও প্রশাসন বহন করছে। ঘটনা তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত প্রতিবেদনও প্রস্তুত করা হয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণেই এই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।’
জি কে শামীমের জামিন
ক্যাসিনোকাণ্ড ও টেন্ডারবাজির ঘটনায় গ্রেপ্তার আলোচিত ঠিকাদার জি কে শামীমকে দুই মামলায় ছয় মাসের জন্য জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। তার জামিনের লিখিত আদেশ প্রকাশিত হয় গত ১২ ফেব্রুয়ারি। জি কে শামীমের জামিনের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনলাম। এ ব্যাপারে নথিপত্র দেখে আগামীকাল (রোববার) পদক্ষেপ নেব।’ জানা গেছে, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি এস এম মুজিবুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে জামিন নেন জি কে শামীম। গত ৬ ফেব্রুয়ারি জামিনের আদেশ হয়। আর ১২ ফেব্রুয়ারি আদেশের কপি বের হয়। ওই আদালতে নিযুক্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এফ আর খান জানান, জি কে শামীমের জামিনের বিষয় সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর দুই দিন পর ঠিকাদার জি কে শামীমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গত ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতনে তার নিজ কার্যালয় থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক ও অর্থ উদ্ধার করা হয়। যুবলীগ থেকে বহিস্কৃত জি কে শামীমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগেও মামলা রয়েছে। গত বছরের ২১ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
খিলগাঁওয়ে ২ শিশুকে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যার চেষ্টা
রাজধানীর খিলগাঁও থানা এলাকায় দুই শিশুকে গলা কেটে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন তাদের মা। নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্নহত্যার চেষ্টা করলে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ শনিবার সকালে খিলগাঁও থানা এলাকার একটি বাসা থেকে ওই দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। আর দগ্ধ মাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত শিশুরা হলো- আলভি (১০) ও জান্নাত (১২)। তারা ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের ৪র্থ ও ১ম শ্রেণির ছাত্রী। আর মায়ের নাম আক্তারোন্নেছা পপি (৩৫)। তিনি গৃহিনী। তার স্বামী মোজাম্মেল হকের একটি ইলেকট্রনিক্সের দোকান আছে। তাদের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে।

খিলগাঁও থানার ডিউটি অফিসার এসআই মো. নেসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।তিনি জানান, শনিবার সকালে দক্ষিণ গোড়ানের একটি বাসার চারতলা থেকে দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রয়েছেন। মা শিশু দুটিকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে ছুরি ও বটি উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত খিলগাঁও থানার এসআই মো. হাবিব রহমান বলেন, ‘ওই মা নিজেই দুই সন্তানকে গলা কেটে ও আগুনে পুড়ে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে।’
খেপেছেন শাবনূর
বনিবনা না হওয়ার কারণ দেখিয়ে প্রায় ৭ বছরের সংসার জীবনের ইতি টানছেন ঢাকাই জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূর। গত ২৬ জানুয়ারি তিনি স্বামী অনিককে তালাক দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই সেই তালাকের খবর ও উকিল নোটিশ দেশীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে খবরের শিরোনাম হয়েছে। আর এ নিয়ে চটেছেন জনপ্রিয় এই চিত্রনায়িকা। অস্ট্রেলিয়া থেকে শাবনূর বলেন, ‘বিষয়গুলো ব্যক্তিগত। এটি প্রকাশ্যে এলো কীভাবে? আমি তালাকের যে নোটিশটি ইস্যু করেছি, অনুমতি ছাড়া কেউই তা প্রকাশ্যে আনতে পারে না। আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি, এটা কীভাবে প্রকাশ হলো? জানতে চেয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমিও তো একজন মানুষ, আমারও পরিবার আছে। সমাজ নিয়েই আমাদের চলতে হয়। তালাকের খবরটি প্রকাশ্যে আসার পর মিডিয়ার ও পরিচিতজনরা ফোনের পর ফোন করে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে এসব নিয়ে কথা বলা বিব্রতকর।’ বিচ্ছেদ পরবর্তী পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে শাবনূর বলেন, ‘মানুষের ভাগ্য সব সময় এক রকম হয় না। সংসার হয়নি, হয়তো এটা আমার ভাগ্যে ছিল না। আমি এখন সন্তান (আইজান নিহান) নিয়ে ভাবছি। ওর ওপর এসবের কোনো প্রভাব পড়ুক তা আমি চাই না। ওকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই হবে এখন আমার মূল কাজ। এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চাই।’ এদিকে, শাবনূরের আইনজীবী কাওসার আহমেদ ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন, তার মাধ্যমে তালাকের নোটিশ প্রকাশ্যে আসেনি। তিনি কাউকে শাবনূরের তালাকের বিষয়ে কোনো তথ্যও দেননি। বিয়ের পর থেকে স্বামী অনিকের সঙ্গে তার ‘বনিবনা হয় না’। তাই গত ২৬ জানুয়ারি তিনি স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে ও সুস্থ মস্তিস্কে স্বামী অনিক মাহমুদ হৃদয়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করছেন। আর ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন-এর ৭ (১) ধারামতে শাবনূর তালাক চেয়েছেন। নোটিশের অনুলিপি অনিকের এলাকার আইন ও সালিস কেন্দ্রের চেয়ারম্যান এবং কাজী অফিস বরাবরও পাঠানো হয়েছে। নোটিশে সাক্ষী রয়েছেন মো. নুরুল ইসলাম ও শামীম আহম্মদ নামে দুজন। উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন শাবনূর। স্বামী যশোরের ছেলে অনিক মাহমুদ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং পেশায় ব্যবসায়ী। বিয়ের পরের বছরই এ দম্পতির ঘর আলোকিত করে আসে এক পুত্রসন্তান। ছেলে আইজান নিহানকে নিয়েই শাবনূর এখন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন।
বাংলাদেশসহ ৭ দেশের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ কুয়েতের
বাংলাদেশসহ সাত দেশের সঙ্গে সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে কুয়েত সরকার। আজ শনিবার এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলে খবর প্রকাশ করে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো হলো ভারত, শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া, লেবানন, ফিলিপাইন, সিরিয়া ও মিসর। কুয়েতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব দেশের যেসব নাগরিক ওই সাতটি দেশে সর্বশেষ দুই সপ্তাহ অবস্থান করেছেন তাদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে। আর কুয়েতের যেসব নাগরিক উল্লিখিত দেশ ভ্রমণ করেছেন তাদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বর মাসে চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৯০টির বেশি দেশে এক লাখেরও বেশি মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বেশ কয়েকটি দেশের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এই ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের সঙ্গে বেশিরভাগ দেশের যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ রয়েছে।
একদিনে নিভে গেল ২৭ প্রাণ
ছেলে ইমনের জন্য পাত্রী দেখতে যাবেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে নিয়ে বেশ সাড়ম্বরে যাত্রা শুরু করলেন বৃদ্ধ আব্বাসউদ্দিন। মাইক্রোবাসে চেপে যথাসময়ে যাত্রাও শুরু করলেন। কিন্তু তাদের সে আনন্দযাত্রা শেষ পর্যন্ত পরিণত হয় লাশের মিছিলে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জ উপজেলার কান্দিগাঁওয়ে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে আব্বাসউদ্দিন ও তার ছেলে ইমনসহ ১০ জন নিহত হন। আরও তিন আরোহীও গুরুতর আহত হয়েছেন। হৃদয়বিদারক এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সকাল সাড়ে সাতটার দিকে। নারায়ণগঞ্জের পাগলা থেকে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল গ্রামের উদ্দেশে যাচ্ছিল পুরো পরিবারটি। শুধু এটিই নয়, গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনেও দেশের বিভিন্ন সড়কে দুর্ঘটনায় নারী-শিশুসহ ২৭ জন নিহত হয়েছেন। হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ ৯টি জেলায় এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেই গতকাল আব্বাসউদ্দিনদের বহনকারী মাইক্রোবাস ছাড়াও পৃথক আরেকটি দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত হয়েছেন। ভোর সাড়ে তিনটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ৪ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা কেউই আশঙ্কামুক্ত নন। হতাহতরা সবাই নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার চৌপাড়ার দেউলি গ্রামের বাসিন্দা। তারা মাইক্রোবাসে চেপে সিলেটে যাচ্ছিলেন মাজার জিয়ারতের উদ্দেশে। এ ছাড়া ময়মনসিংহের ভালুকা, সাভার ও ফেনীর সোনাগাজীতে সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন করে মোট ছয়জন, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে, চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে ও কুমিল্লার দাউদকান্দি ও বান্দরবানে একজন করে নিহত হয়েছেন। হবিগঞ্জ : ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জ উপজেলার কান্দিগাঁও নামক স্থানে প্রাইভেট মাইক্রোবাসটি সড়কের পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ৮ জন নিহত হন। পরে হাসপাতালে আরও ২ জন মারা যান। দুর্ঘটনার পর পরই আশপাশের শত শত লোক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে গোপলার বাজার তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ, শেরপুর হাইওয়ে থানার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশগুলো উদ্ধার করে। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে ছুটে যান হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান ও নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ^জিৎ কুমার পাল। পরে নিহতদের লাশ শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকালে আত্মীয়স্বজনরা থানায় উপস্থিত হয়ে লাশ শনাক্ত করেন। বর ইমনের মামাতো ভাই আব্দুল আহাদ বলেন, নিহতরা একটি বিয়ের পাত্রী দেখার জন্য সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনাস্থলে নিহতরা হলেনÑ বর ইমন খান (২৬), তার বাবা আব্বাসউদ্দিন খান (৫০), ভাই রাব্বি খান (২৩), মামাতো ভাই রাজিব আহমেদ (২৭), খালাতো ভাইয়ের বউ আসমা বেগম (২৮), গিয়াসউদ্দিন (৫১), বন্ধু মহসিন আহমেদ (২৫) ও ইমরান মিয়া (২৪)। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর ইমনের মামি সুমনা বেগম (২৮) এবং নিহত সুমনা বেগমের শিশুসন্তান খাদিজা আক্তারের (৪) মৃত্যু হয়। গুরুতর আহতরা হলেন- রফিকুল ইসলাম (৫৫), আবুল হোসেন (৫০) ও গাড়িচালক নাদিম মাহমুদ (৩৬)। তারা সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। কান্দিগাঁও জামে মসজিদের মুয়াজ্জিম আমির আলী জানান, তিনি নামাজ পড়ে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখেন একটি মাইক্রোবাস গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। কয়েকটি লাশ মাটিতে পড়ে আছে। ভিতরেও কয়েকজন লোক ছটফট করছিল। এ সময় তিনি চিৎকার শুরু করেন। সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনায় কয়েকজনের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিচ্ছিন্নœ হয়ে যায়। শেরপুর হাইওয়ে থানার ওসি এরশাদুল হক ভূইয়া জানান, কান্দিগাঁও গ্রামে দুর্ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে হতাহতদের উদ্ধার করে। পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। একই কথা বলেন হবিগঞ্জ ফায়ার স্টেশনের ডিউটি অফিসার আইয়ুব। ব্রাহ্মণবাড়িয়া : বিশ^রোডের খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাইনুল ইসলাম জানান, রাত সাড়ে তিনটায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিজয়নগর উপজেলার রামপুরার ভাটি কালিসীমা এলাকায় নারায়ণগঞ্জ থেকে সিলেটগামী মাইক্রোবাস ও সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী লিমন পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটিতে আগুন ধরে গেলে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। মাইক্রোবাসের ১০ যাত্রীর মধ্যে ৬ জন নিহত হন। তারা হলেন মাইক্রোবাসের চালক সোহান (২০), যাত্রী হারুন মিয়া (৪০), শাকিল মিয়া (২৫), সাগর (২২), রিফাত (১৬) ও ইমন মিয়া (১৯)। গুরুতর আহত ৪ যাত্রীকে দ্রুত উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তারা হলেন শাহিন (৩০), বিজয় (২২), আবির (৩৫) ও জিসান (২৫)। পরে তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাইওয়ে পুলিশের এসআই প্রেমধন জানান, বাস-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষের পর মাইক্রোবাসটিতে আগুন ধরে যায়। এতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন মারা যান। হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরেকজন মারা যান। তবে বাসটি খাদে পড়ে গেলেও কোনো যাত্রী তেমন আহত হননি। এ দুর্ঘটনার পর মহাসড়কে প্রায় ৬ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। সকাল ৮টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নিলে ফের যান চলাচল শুরু হয়। সাভার : ঢাকার সাভারে বাস ও ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হন। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা-আরিচা ও আবদুল্লাপুর-বাইপাইল সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন রাজধানীর শেওড়াপাড়ার কাজী নাজমুল হক ও নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশের কনস্টেবল আকাশ আহমেদ। নাজমুল গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর থেকে মোটরসাইকেলে ঢাকার বাসায় যাচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের জামগড়া এলাকায় রিকশার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বাসের নিচে চলে যান তিনি। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। একই রাত ১টার দিকে আশুলিয়ার শ্রীপুরের বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে নারায়ণগঞ্জে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন আকাশ। সাভারের উলাইল এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে একটি ট্রাক মোটরসাইকেলসহ তাকে চাপা দিলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। মিরসরাই : কয়েকটি মোটরসাইকেলে করে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঘুরতে বের হন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ৬ তরুণ। তাদের মধ্যে ৪ জন জীবিত বাড়ি ফিরলেও দুজনকে ফিরতে হয়েছে লাশ হয়ে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সোনাগাজী সড়কের মতিগঞ্জ বাজার এলাকার সাতবাড়িয়া ব্র্যাক অফিসের পাশে নির্মাণাধীন একটি সেতুর নিচে মোটরসাইকেলসহ পড়ে তারা নিহত হন। তারা হলেন মো. আজিজুল হক সাহেদ ও জিয়াউদ্দিন বাবলু। সাহেদ মিরসরাই উপজেলার ধুম ইউনিয়নের নাহেরপুর গ্রামের তাজুল ইসলামের পুত্র। বাবলু একই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ইমামপুর গ্রামের মৃত বশির আহম্মদের পুত্র। বাবলু মিরসরাই মাদ্রাসা থেকে কামিল পরীক্ষা দিচ্ছিল। কুমিল্লা : দাউদকান্দি উপজেলার জিংলাতলী স্থানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঢাকাগামী একটি বাসচাপায় মোটরসাইকেলের আরোহী এক ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। গতকাল সকাল ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সরাইল : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মালীহাতা নামক স্থানে ট্রাকচাপায় মাসুম ব্যাপারী নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মোটরসাইকেলযোগে সিলেট অভিমুখে যাওয়ার সময় মালীহাতা এলাকায় পেছন থেেক একটি ট্রাক তাকে ধাক্কা দেয়। মাসুম ব্যাপারী আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রে চাকরি করেন। তিনি মানিকগঞ্জ জেলার আব্দুর রউফ ব্যাপারীর ছেলে। থাকতেন আশুগঞ্জ ওয়াপদা কলোনিতে। পটুয়াখালী : মির্জাগঞ্জে ট্রাকচাপায় মো. চুন্নু মোল্লা নাম একজন নিহত এবং সোহেল ও সুরা মনি জান্নাতি (৬) নামে দুজন গুরুতর আহত হন। শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে বাকেরগঞ্জ-চান্দুখালী মহাসড়কের মির্জাগঞ্জের সুবিদখালী রাড়ী বাড়ির বটতলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত চুন্নু মোল্লা বরগুনার বেতাগী উপজেলার সড়িসামুড়ি গ্রামের রহমান মোল্লার ছেলে। লালমোহন (ভোলা) : লালমোহনে যাত্রীবাহী মোটিফাই টেম্পো উল্টে পুকুরে পড়ে মো. মানিক নামের এক চালক নিহত হন। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার মঙ্গল সিকদার সড়কের চরকালাচাদ নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মানিক পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জাহাঙ্গীরের ছেলে। চাঁদপুর : শাহরাস্তি উপজেলায় রাস্তা পার হতে গিয়ে ট্রাকচাপায় হাবিবউল্লাহ নামে বৃদ্ধ নিহত হন। গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের মজুমদার বাড়িসংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। হাবিবুল্লাহ পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মজুমদারবাড়ির বাসিন্দা। রাজবাড়ী : সদর উপজেলার চরখানখানাপুরের এবিকের ইটভাটাসংলগ্ন ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে কাভার্ডভ্যান ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুটি গাড়ির চালক গুরুতর আহত হন। তারা হলেন কাভার্ডভ্যানের চালক শিবু কু-ু ও ট্রাকচালক মো. মান্নান মন্ডল। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ময়মনসিংহ : ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা উপজেলায় বড় পিকআপের ধাক্কায় ছোট পিকআপের চালকসহ ২ জন নিহত ও ২ জন আহত হন। গতকাল ভোরে মেহরাবাড়ী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেনÑ নেত্রকোনার ঠাকুরাকোনা গ্রামের পিকআপভ্যানের চালক রাজন রবিদাস ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার তালাশ কোর্ট এলাকার আবদুস সালামের ছেলে মো. আজিম (২৩)। বান্দরবান : শহরের ক্যাংয়ের মোড় এলাকায় গতকাল দুপুরে একটি মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে সাইকেলের আরোহী মো. জাহেদ মারা যান; আরেক আরোহী গুরুতর আহত হন। জাহিদ শহরের বনরূপা পাড়ার বাসিন্দা বজলুর রহমানের ছেলে। Ñপ্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক দীপক চৌধুরী বাপ্পী, সাভার থেকে নিজস্ব প্রতিনিধি মো. জাহিদুর রহমান, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি রুহুল হাসান শরীফ, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি আবু সাউদ মাসুদ, বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি জাকির হোসেন, নবীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি সলিল বরন দাশ, শাহরাস্তি উপজেলা প্রতিনিধি মো. জামাল হোসেন, লালমোহন প্রতিনিধি এনামুল হক রিংকু, মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি মো. ফারুক খান, সরাইল প্রতিনিধি মো. আলমগীর মিয়া এবং দাউদকান্দি প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলী শাহীন।
‘দর্শকের ভালোবাসাই সবচেয়ে বড় সফলতা’
টিভি নাটকের আলোচিত অভিনেত্রী তানজিন তিশা। কাজ করেছেন বিজ্ঞাপন, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও মিউজিক ভিডিওতে। বর্তমান ব্যস্ততা ও অন্য অনেক প্রসঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- জাহিদ ভূঁইয়া
গত কয়েক বছরে অভিনয় নিয়ে তানজিন তিশার ভাবনায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। বিষয়টা মানেন?
কেন মানব না? শুরুর দিকে আমি অভিনয় নিয়ে খুব বেশি সিরিয়াস ছিলাম না। কিন্তু যখন থেকে মনেপ্রাণে অভিনয়ের চেষ্টা শুরু করেছি, তখন থেকেই নিজের কাজগুলোর জন্য ভালো সাড়া পেতে শুরু করি।
অসংখ্য নাটকে অভিনয় করছেন। নিজের কাজগুলো নিয়ে আপনি কতটা সন্তুষ্ট?
একজন শিল্পী কখনই তার কাজ নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেন না, সব সময় চান অতীতের চেয়ে ভালো কাজ করতে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। সব সময় নিজের সর্বোচ্চ মেধাটুকু দিতে চাই। এটা সত্যি যে, টিভি পর্দায় নিয়মিত কাজ করেছি। যতটা সম্ভব ভালো গল্পের নাটকে কাজের চেষ্টা করেছি, এখনো করছি। কারণ আমাদের দেশে গল্পনির্ভর নাটকের দর্শক বেশি। বিষয়টা বুঝেছি ইউটিউবে নাটকগুলোর ভিউয়ের পাশাপাশি দর্শকের মতামত থেকে। একজন অভিনয়শিল্পীর কাছে দর্শকের ভালোবাসাই সবচেয়ে বড় সফলতা।
পর্দায় অপূর্ব ও আফরান নিশোর সঙ্গে আপনাকে বেশি দেখা যায়। আপনিও কি তাদের সঙ্গে পর্দা ভাগাভাগি করতে পছন্দ করেন?
দর্শকের পছন্দের কথা মাথায় রেখেই হয়তো নির্মাতারা আমার বিপরীতে তাদের (অপূর্ব ও নিশো) নির্বাচন করেন। তবে আমি যে কোনো অভিনেতার বিপরীতেই কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। নিজস্ব কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে, অমুক অভিনেতার সঙ্গেই অভিনয় করতে হবে। আমি শুধু অভিনয়ের আগে গল্প আর নিজের চরিত্রটিই দেখি। চরিত্র পছন্দ হলেই আমি অভিনয়ে রাজি হই, এ ছাড়া নয়।
গত কয়েক বছরে বিশেষ দিবসে টিভি চ্যানেল খুললেই তানজিন তিশাকে দেখা যায়। এতে অনেকে বিরক্তি প্রকাশ করেন, ঘুরেফিরে ছোটপর্দায় একই মুখ। বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
হতে পারে অনেকে বিরক্ত হন। কিন্তু এত কাজ আমি কেন করছি? সেটা আমার ইচ্ছেতে? দর্শকের চাহিদা, চ্যানেলের চাহিদা। এখন অ্যাপের যুগ চলছে। অ্যাপে যারা কনটেন্ট বানাচ্ছেন, তারা এই চেনা মুখগুলো চাইছেন। আসলে কাজ করা হয় দর্শকের চাহিদাতেই।
ধারাবাহিকে নিয়মিত দেখা যায় না। এর কারণ কী?
আমার ক্যারিয়ার গ্রাফটা দেখলেই এর কারণ বুঝতে পারবেন। শুরু থেকেই আমি ধারাবাহিকে অভিনয় এড়িয়ে চলেছি। তার পরও বেশ কয়েকটি কাজ করেছি। সেগুলো করতে গিয়ে বুঝেছি, ধারাবাহিকে ‘ধারাবাহিকতা’ ধরে রাখাটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। আর এখন এক ঘণ্টার নাটকের জন্য বেশি ব্যস্ত হওয়ায় ধারাবাহিকের জন্য যে সময়টা দেওয়া প্রয়োজন, তা দিতে পারব না বলেই ঢালাওভাবে অভিনয় করছি না।
এর আগে বেশ কয়েকবার চলচ্চিত্রে অভিনয় করবেন বলে জানিয়েছিলেন। এ বছর কী বড়পর্দায় দেখা যাবে?
প্রতিটি শিল্পীরই স্বপ্ন থাকে চলচ্চিত্রে অভিনয় করার। আমারও আছে। তবে হুট করেই নয়। কোনো একটা গল্প পড়ে মনে হতে হবেÑ ‘দিস ইজ মাইলস্টোন, আই ক্যান ডু দিস প্রজেক্ট।’ সবকিছু মিলিয়ে যদি মনে হয় যে ভালো প্রডাকশন, যেটার যোগ্য আমি বা যে কাজটা আমার জন্য সেটা অবশ্যই করব। সেটা এ বছরই হবে কিনা; এখনই বলতে পারছি না।
আগামী ১৭ মার্চ গাজীপুরের রাজবাড়ি মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করবেন। এ নিয়ে কিছু বলুন…
ছোটবেলায় নাচ আমি শিখেছি। তাই নাচের প্রতি অন্যরকম ভালোলাগা রয়েছে। নাচ আমার ভালোবাসার, পছন্দের। সত্যি বলতে কীÑ এখন অভিনয়ে এত বেশি সময় দিতে হয় যে, কোনো অনুষ্ঠানে নাচ করার সুযোগই হয়ে ওঠে না। কিন্তু যেহেতু ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, তাই সময় বের করে এই অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করব। ইভান শাহরিয়ার সোহাগের নির্দেশনায় এতে আমি, সাফা কবির ও ৫০ জন নৃত্যশিল্পী অংশগ্রহণ করব।
পরের বিশ্বকাপে দল ভালো খেলবে : মাশরাফি
অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি অধ্যায়ের শেষ হয়েছে শুক্রবার। ৩-০ তে সিরিজ জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি কথা বলেছেন। তিনি চলে গেলেন। তবে স্বপ্ন বাস্তবায়নের মত দলের আর সবার কাছে দিয়ে গেলেন। ২০২৩ বিশ্বকাপ ভারতের মাটিতে। মাশরাফি বলেছেন, ‘আমি আশা করি পরের বিশ্বকাপ ভালো করবে। আশা করি এই দলটি সেমিফাইনালে খেলবে।’ অধিনায়কের অনেক কাজ মনে করেন মাশরাফি। এছাড়া খেলোয়াড়দেরও অনেক কাজ রয়েছে। মাশরাফি মনে করেন অধিনায়ককে খালি মাঠের ভেতরে খেলোয়াড়দের দেখলেই হবে না। মাঠের বাইরে খেলোয়াড়দের মানসিক সাপোর্ট দিতে হবে। বাংলাদেশে খেলোয়াড়রা অনেক ডিস্টার্ব হন বলেও মনে করেন মাশরাফি। অধিনায়ক বলেন, ‘খেলোয়াড়রা নানা কারণে সমস্যায় পড়ে। কেউ পারিবারিক, বা ব্যক্তিগত কারণে সমস্যায় থাকে। এছাড়া ফিটনেসে সমস্যা হতে পারে। আর ক্যাপ্টেন্সি চাওয়ার কিছু নেই। অবশ্যই লিডার হওয়া জরুরি। অধিনায়কের অফ দ্য ফিল্ড অনেক কাজ করতে হবে। মাঠের ভেতরে খেলোয়াড়রা প্রবেশ করলে আর কিছু করার থাকে না।’ কোন কোচের অধীনে মাশরাফির ভাল গেছে? এই প্রশ্নের উত্তরে মাশরাফি বলেছেন,‘ অবশ্যই হাথুরুসিংহেকে এগিয়ে রাখব। আর জেমি সিডন্স মুশফিক, সাকিব ও তামিমদের তৈরি করেছে।’ অধিনায়ক হিসেবে অর্জনের প্রশ্নে বলেছেন,‘আমি ৫০টি জয় পেয়েছি। এজন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই।’ তার কোনো আক্ষেপ নেই। বলেন, ‘জীবনে কি পেলাম কি পেলাম না ভাবি না। যা পেয়েছি এটায় আমি সন্তুষ্ট।’ অধিনায়ক হিসেবে শেষ সংবাদ সম্মেলনে লিটনের প্রসংশা করেন মাশরাফি। বলেন, ‘আমি দুজনের ব্যাটিং উপভোগ করি। এর মধ্যে বিরাট কোহলি একজন আর আরেকজন লিটন।’ আগামীর অধিনায়কের অনেক কাজ আছে বলেছেন মাশরাফি। বলেন, ‘আমার জায়গা এখন যে বসবে তাকে অনেক চিন্তা ভাবনা করতে হবে। আরও দায়িত্ব বেড়েছে। জিতলে অনেক সহজ। হারলে অনেক কিছু সামলাতে হয়। এই চাপ জয় করতে জানতে হবে।’
কার কাঁধে উঠছে মাশরাফির দায়িত্ব?
জাতীয় ক্রিকেট দলে মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা অধ্যায়ের সমাপ্তি হচ্ছে সিলেটে। অবিশ্বাস্য ক্যারিয়ার বর্ণাঢ্যভাবেই শেষ করেছেন ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাসটিক। অধিনায়ক মাশরাফির বিদায় হয়েছে। তবে খেলোয়াড় মাশরাফি হয়তো ফিরবেন। কোটি টাকার প্রশ্ন হলো- এবার বাংলাদেশের অধিনায়ক হচ্ছেন কে? কার কাঁধে উঠছে মাশরাফির দায়িত্ব? আসছে এপ্রিলে পাকিস্তানের একমাত্র ওয়ানডে রয়েছে। মুশফিকুর রহিম যাবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। আজ শুক্রবার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে ছিলেন না এই টাইগার উইকেটরক্ষক ও ব্যাটসম্যান। তাহলে পাকিস্তান সফরে অধিনায়ক কে হতে পারেন?ধারণা করা হচ্ছে- তামিম ইকবাল নয়তো মাহমুদউল্লাহ হতে পারেন বাংলাদেশের নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক। গত বৃহস্পতিবার সিলেটের সংবাদ সম্মেলনে কক্ষে ওয়ানডে অধিনায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেন মাশরাফি। এরপর থেকেই বাংলাদেশের নতুন অধিনায়ক নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। মাহমুদউল্লাহ ও তামিমের কথাই উঠে আসে বারবার। মাশরাফি অবশ্য তামিম, মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক; তিনজনকেই নেতৃত্বের জন্য যোগ্যতা সম্পন্ন বলে আখ্যা দিয়েছেন। পাকিস্তানের ওই ওয়ানডে দলটি কেমন হবে সেটার জন্য জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে নতুন দুজন আফিফ ও নাইমকে পরখ করে দেখা। তবে এরপর দীর্ঘদিন ওয়ানডে ম্যাচ থাকবে না। আবার মাশরাফি অধিনায়কত্ব ছাড়ার দিন বলেছেন, ‘ ২০২৩ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বাংলাদেশ এখন থেকেই প্রস্তুতি নেবে।’ ফলে বাংলাদেশ এখন থেকেই যে ভাবছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। মাশরাফিকে ছাড়া সঠিক কম্বিনেশন তৈরি করতে কাজ করবে বাংলাদেশ। তরুণদের নিয়ে ও অভিজ্ঞদের যথাযোগ্য সম্মান দিয়েই দল গড়া হবে। অনেকে মেহেদী হাসান মিরাজের কথাও বলছে অবশ্য। তবে পাকিস্তান সফরে অধিনায়ক কে হবেন, সেটার ঘোষণা আসবে ৮ মার্চে বিসিবি বোর্ড মিটিংয়ে। সে পর্যন্ত বাংলাদেশের নতুন অধিনায়ক নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শেষ হবে না।
বসন্ত উৎসব নিয়ে বিতর্ক, রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্যের পদত্যাগ
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বসন্ত উৎসবে রবীন্দ্রনাথের গানের লাইন বিকৃত করে পিঠে লেখার ঘটনায় পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যাল্যয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী। গতকাল শুক্রবার ঘটনার নৈতিক দায় নিজের কাঁধে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার বসন্ত উৎসব আয়োজিত হয় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মরকতকুঞ্জ প্রাঙ্গণে। সেই অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বহু বহিরাগত অংশ নেন। এ সময় কয়েকজন তরুণ-তরুণীকে পিঠে এবং বুকে রং দিয়ে অশ্লীল শব্দ এবং বিকৃত রবীন্দ্রসঙ্গীত লিখতে দেখা যায়। পরে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়লে তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। বিস্ময় প্রকাশ করতে শুরু করেন শিক্ষাবিদ থেকে সাহিত্যিক, রবীন্দ্রভারতীর অধ্যাপক থেকে অন্যান্য কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী বৃহস্পতিবারই স্বীকার করে নিয়েছিলেন, এই ঘটনা তার ক্যাম্পাসেই ঘটেছে। তবে এ বিষয়ে আর কিছু জানাননি তিনি।পরদিন শুক্রবার উপাচার্যের দিকেও আঙুল তোলা শুরু হয়। বসন্ত উৎসবের নিয়ন্ত্রণ শিক্ষিক-শিক্ষিকাদের হাত থেকে নিয়ে উপাচার্য যখন থেকে ছাত্র সংসদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন, তখন থেকেই বসন্ত উৎসবকে ঘিরে প্রতি বছর কোনো না কোনো বিতর্ক তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করে। দিনভর আলোচনা-সমালোচনার পর গতকাল সন্ধ্যায় জানা গেল, পদত্যাগ করেছেন উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন সব্যসাচী। পদত্যাগপত্রের প্রতিলিপি পাঠিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও। বসন্ত উৎসবে যা ঘটেছে, তার দায় স্বীকার করেই তিনি ইস্তফা দিয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে। যদিও এ ঘটনায় নিজেদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন পাঁচ শিক্ষার্থী। এরা সবাই বহিরাগত এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাদের কোনো যোগ নেই বলে জানা গেছে।
ইয়াবাকারবারি বাঁচাতে দুই কর্তার ‘লড়াই’
স্থানীয় ইয়াবাকারবারিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ দুই পুলিশ কর্মকর্তার। নিয়মিত মাসোহারাও নেন। এমনকি পুলিশের একটি মোটরসাইকেল থাকত ইয়াবাকারবারিদের কাছে। ওই বাইক ইয়াবা কারবারে ব্যবহার হতো। সম্প্রতি এক পুলিশ কর্মকর্তা অন্য কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ ইয়াবাকারবারিকে থানায় এনে ৯০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেন।প্রতিশোধ নিতে এ কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ আরেক ইয়াবা কারবারিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেন অন্য পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের কাছে পাওয়া ৫০০ পিস ইয়াবার মধ্যে মাত্র ২০টি উদ্ধার তালিকায় দেখানো হয়। ওই দুই ইয়াবাকারবারির কাছে মেলে থানার এক কনস্টেবলের মোটরসাইকেল। তবে তাকে বাঁচাতে মোটরসাইকেলটি জব্দ তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে।এ একবারই নয়, এ ঘটনার এক সপ্তাহ আগেও ঘনিষ্ঠ মাদককারবারিদের গ্রেপ্তার করা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ান ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। আমাদের সময়ের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর থানার এ চাঞ্চল্যকর তথ্য। আমাদের সময়ের হাতে আসা ঘটনার সময়কার পুলিশ কর্মকর্তাদের ভিডিও ক্লিপ, অডিও রেকর্ড ও অন্যান্য নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি রায়পুর থানার এএসআই সুমন চৌধুরী ফোর্স নিয়ে রফিকুল ইসলাম নামে স্থানীয় একজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসেন। রফিক একই থানার অন্য এএসআই সবুজ মিয়ার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তিনি তাকে (রফিক) গ্রেপ্তার না দেখাতে অনুরোধ করেন। কিন্তু অনুরোধ না রাখায় এর এক ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা অভিযানে নামেন এএসআই সবুজ। ৫৫ পিস ইয়াবাসহ ওয়াহাব নামে এক কারবারিকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসেন। এ নিয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে শুরু হয় বাগবিত-া। পরে ওসি তোতা মিয়ার মধ্যস্থতায় বিষয়টির সুরাহা হয়। তখন ওসির মীমাংসার শর্ত অনুযায়ী দুই মাদক কারবারিকেই সন্দেহভাজন হিসেবে সাধারণ মামলায় চালান দেওয়া হয়। পরে তারা জামিনে মুক্ত হন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এএসআই সুমন রায়পুর পৌর এলাকার চিহ্নিত মাদককারবারি সজীবকে ধরে থানায় নিয়ে আসেন। পরে এএসআই সবুজের আরেক ঘনিষ্ঠজন চিহ্নিত মাদককারবারি মাইকেলকে ধরিয়ে দিতে সজীবকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখান এএসআই সুমন। তবে মাইকেলের বাড়িতে অভিযান চালিয়েও তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। কারণ মাইকেলকে বিষয়টি ফোনে জানিয়ে দেন এএসআই সবুজ। পরে ৯০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে ওইদিন রাত ২টার দিকে সজীবকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। ইয়াবাকারবারি সজীবের পরিবারের এক সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, থানায় গিয়ে ৯০ হাজার টাকা দিয়ে আমরা সজীবকে ছাড়িয়ে আনি। এদিকে মাইকেলকে গ্রেপ্তার তৎপরতায় ক্ষুব্ধ হন এএসআই সবুজ। পরদিন ২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ইয়াবাকারবারি সজীব ও কিরণকে ৫০০ পিস ইয়াবা এবং মোটরসাইকেলসহ গ্রেপ্তার করেন তিনি। গ্রেপ্তারের পর জানা যায়, উদ্ধার মোটরসাইকেলটি রায়পুর থানার কনস্টেবল এমরানের। এ ছাড়া, গ্রেপ্তার দুই মাদক কারবারির একজন কিরণ আবার এএসআই সুমনের ঘনিষ্ঠজন। এ নিয়ে এএসআই সুমন ও এএসআই সবুজের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। এএসআই সুমন কিরণকে ছেড়ে দিতে চাপ দেন। কিন্তু তাতে রাজি হচ্ছিলেন না এএসআই সবুজ। এবারও ওসি তোতা মিয়ার হস্তক্ষেপে সমাধান হয়। তিনি কনস্টেবল ইমরানের মোটরসাইকেল বাদ দিয়ে মামলার জব্দ তালিকা করার নির্দেশ দেন। প্রথমে এসআই কুদ্দুসকে মামলার বাদী হতে বলা হলেও ঝামেলার কারণে তিনি এড়িয়ে যান। পরে এসআই মানিক ৫০০ পিস ইয়াবার মধ্যে থেকে সজীবকে মাত্র ১১ পিস ও কিরণকে ৯ পিস ইয়াবা দিয়ে মামলা দায়ের করেন। থানার একাধিক পুলিশ সদস্য এই প্রতিবেদককে জানান, বিষয়টি নিয়ে দু’পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। সব জেনেও তাদের বিরুদ্ধে আইনি কোনো ব্যবস্থা নেননি ওসি। অভিযোগের বিষয়ে এএসআই সুমন চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, টাকা নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। ফোন না করে আপনি আমার সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে পারতেন। তবে অনেক চেষ্টা করেও অভিযুক্ত আরেক এএসআই সবুজ মিয়ার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠানো হলেও সাড়া দেননি তিনি। রায়পুর থানার ওসি তোতা মিয়া বলেন, যেভাবে অভিযান হয়েছে সেভাবেই মামলা হয়েছে। এর বাইরে কিছু হয়নি। লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার ড. এএইচএম কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। ঘটনা সত্য হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শনিবার সকাল ৭টা ৮ মিনিটে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান তিনি। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ও পরে দলীয় সভাপতি হিসেবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানান তিনি।শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ভবনে প্রবেশ করেন এবং সেখানে বেশ কিছু সময় কাটান। এরপর ৭টা ৫৬ মিনিটে চলে যান তিনি। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানোর পর যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিশাল জনসমাবেশে দেওয়া ওই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতাযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে সেদিন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের উদ্দীপ্ত ঘোষণায় বাঙালি জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা। তার ওই ভাষণের ১৮ দিন পর পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি নিধনে নামলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। নয় মাসের সেই সশস্ত্র সংগ্রামের পর আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ঐতিহাসিক এ দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এদিকে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন ৭ মার্চ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। দিনটি উদযাপনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ভোর সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। দিবসটি উপলক্ষে আজ বেলা ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্য রাখবেন জাতীয় নেতা ও বরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা। সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যম দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। এ ছাড়া পত্রিকাগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র।
বিয়ে করে ফেরার সময় নৌকাডুবি, নিখোঁজ ২৫
রাজশাহী নগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় পদ্মা নদীতে ৩৫ জন যাত্রী নিয়ে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে ১০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে হাসপাতালে নেওয়ার পর এক শিশু মারা গেছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।ডুবে যাওয়া নৌকায় ছিল বরযাত্রী। নৌকাডুবির পর নিখোঁজ ২৫ জনকে উদ্ধারে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট এবং বিজিবি সদস্যরা। রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবদুর রউফ জানান, চরখিদিরপুর এলাকায় বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে কনে নিয়ে বর পবা উপজেলার ডাইংপাড়ায় যাচ্ছিল। দুটি নৌকায় ৩৫ জন যাত্রী ছিল। এর মধ্যে ১০ জনকে উদ্ধার করা হয়। সন্ধ্যায় শ্রীরামপুর এলাকায় দুই নৌকা ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়। আবদুর রউফ আরও জানান, নৌকাডুবির পর ১৭ জনকে জীবিত পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে শিশু মরিয়র (৮) মারা যায়। বিজিবি সদস্যরা স্পিডবোট নিয়ে ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে।
ভারত টালমাটাল
সাম্প্রদায়িক সমস্যা, অর্থনৈতিক মন্দা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য মহামারীর প্রকোপ- বর্তমানে এই ত্রিমুখী সমস্যায় জর্জরিত নরেন্দ্র মোদির ভারত। এমন মন্তব্য করেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। দ্য হিন্দু পত্রিকায় তিনি এক নিবন্ধে মোদিকে দেশ সামলানোর জন্য পরামর্শও দিয়েছেন। কংগ্রেস নেতা মনমোহন বলেছেন, ‘কেবল কথায় নয়, কাজের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গোটা জাতিকে বোঝানো উচিত, আমরা বর্তমানে যে বিপদের মুখোমুখি হয়েছি সে সম্পর্কে তিনি সচেতন।’ তিনি আরও লিখেছেন, পাশাপাশি সাধ্যমতো দেশকে সামলাতে প্রয়াসী হবেন, এ ব্যাপারেও দেশবাসীকে মোদির আশ্বস্ত করা উচিত। লেখায় ভারত এখন দেশ এই মুহূর্তে একটি ‘ভয়াবহ ও কঠিন’ পরিস্থিতি মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বলে বর্ণনা করেন মনমোহন সিং। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা দেশের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার ভাষায়, ‘অত্যন্ত ব্যথিত হৃদয়ের সঙ্গে আমি এটা লিখতে বাধ্য হচ্ছি। আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এই ভেবে যে, দেশের বর্তমান অশান্ত পরিস্থিতি কেবল ভারতের আত্মাকে ভেঙে ফেলতে পারে তা-ই নয়, বিশ্বের অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক স্তরে আমাদের অবস্থানকেও হ্রাস করতে পারে।’ ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে মোট দুটি মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং। গত সপ্তাহে যেভাবে দিল্লির কিছু অংশে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল, সেই কথা উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠীসহ আমাদের সমাজের কিছু মানুষের’ মাধ্যমে এই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তথা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার আগুন জ্বলে উঠেছে। মনমোহন বলেছেন, আইন ও শৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে, দেশের নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ প্রশাসন, এমনকি সংবাদমাধ্যমের ভূমিকাও ‘আমাদের হতাশ করেছে’। মনমোহন মনে করেন, ‘উদার গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল হিসেবে গড়ে ওঠা ভারত মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই বিশ্বের নিরিখে পিছিয়ে যাচ্ছে।’ মোদিকে মনমোহন পরামর্শ দিয়েছেন, ‘এই মুহূর্তে দেশের টালমাটাল পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করতে হাল ধরা উচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার সরকারের।’
স্যালুট অধিনায়ক
বেরসিক বৃষ্টি! ফাগুন মাস হলেও রোমান্টিসিজমের তেমন কোনো সুযোগ নেই ক্রিকেটে। লিটন দাস ও তামিম ইকবাল অমন রুদ্রমূর্তি ধারণ করবেন কে জানত। অনেক অর্জন এই দুই ওপেনার ঝুলিতে নিয়ে গেছেন। তবে ছোট একটি দীর্ঘশ্বাস হয়তো থাকবে লিটনের। ডাবল সেঞ্চুরির সুযোগ তো প্রতিদিন আসে না! প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সে রেকর্ডের কাছাকাছি অবশ্য গিয়েছিলেন; কিন্তু পারলেন না এ দফায়। রেকর্ডবুক অবশ্য ওলট-পালট করে দিয়েছেন তামিম-লিটন। ওয়ানডে ক্রিকেটে ওপেনিংয়ে ২৯২ রানের জুটি গড়েছেন। বৃষ্টির জন্য ৪৩ ওভারের ম্যাচে নেমে আসে জিম্বাবুয়ে-বাংলাদেশের ম্যাচটি। তামিম ও লিটনের সেঞ্চুরিতে ভর করে ৩ উইকেটে ৩২২ রান তুলে নেয়। ডার্ক ওয়ার্থ লুইস পদ্ধতি অনুসারে জিম্বাবুয়ের জন্য ৩৪৩ রান টার্গেট নির্ধারণ করা হয়। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জিম্বাবুয়ে জবাব দিতে নেমে ৩০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ১৭৩ রান। মাশরাফি জিম্বাবুয়ের ওপেনার কামুনহেকামুনয়েকে আউট করেন। অনেক অর্জনের দিনে বিষাদ লেগেছিল মেঘের ভেলায়। অধিনায়ক হিসেবে যে জাতির আবেগ মাশরাফি শেষবারের মতো মাঠে নেমেছিলেন। টস থেকে শুরু করে আবার ফিল্ডিংয়ে যতবার এসেছেন ততবার পুরো সিলেট স্টেডিয়াম গর্জন করে উঠেছে। অধিনায়ক ক্যারিয়ারের ৮৭ ম্যাচের ৪৩টিতে জিতেছেন মাশরাফি। গতকাল অবশ্য টসে হারলেন নড়াইল এক্সপ্রেস। সবাইকে চমকে দিয়ে ফিল্ডিং নিলেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক শন উইলিয়ামস। বাংলাদেশ দলে ৪টি পরিবর্তন ছিল। মুশফিক, আল-আমিন, শফিউল ও মোহাম্মদ মিথুন ছিলেন না। বাংলাদেশের ওয়ানডে দলে অভিষেক হয় আফিফ ও মোহাম্মদ নাইম শেখের। ১৩২ ও ১৩৪তম ওয়ানডে খেলোয়াড় হিসেবে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে দেন তারা। মাশরাফি বেশ আপ্লুত ছিলেন। দুজনকে নিয়ে ছবি তোলেন। তামিম ইকবাল আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ১৫৮ করেন। কালও আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে আসেন। দ্বিতীয় ম্যাচে লিটন রানআউট হয়ে হতাশ ছিলেন। পরের ম্যাচে একেবারে দুরন্ত শুরু করে বাংলাদেশ লিটন ও তামিমে। বাংলাদেশের ইনিংসে পুরো গল্পটাই এই দুই ওপেনারের। বিকাল ৪টা ৭ মিনিটে বৃষ্টি নেমে আসে সিলেটের লাক্কাতুড়া স্টেডিয়ামের বুকে। বাংলাদেশের ইনিংস তখন ৩৩.২ ওভারে ১৮২ রান। লিটন ১০২ ও তামিম ৭৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। লিটন ক্যারিয়ারে তৃতীয় ও সিরিজে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেন। বৃষ্টির পর হিসাব-নিকাশ বদলে যায়। ৭ ওভার কমে যায়। ৪৩ ওভারের খেলা হবে। ৯ ওভার ৪ বল হাতে ছিল (৫৮ বল) বাংলাদেশের হাতে। সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে আবার খেলা শুরু হয়। প্রকৃতির কোনো ঝড় নয়, এবার ব্যাটিং তা-ব দেখল সিলেটবাসী। তামিম ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরি তুলে নেন। লিটন আগে বাড়তে থাকেন। এত দিন বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান ছিল তামিমের (১৫৮)। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে নিজের ১৫৪ রানের রেকর্ডটি ভেঙে ১৫৮ করেন তিনি। এক ম্যাচও থাকল না রেকর্ড। লিটন সেই রেকর্ড ভেঙে ১৭৬ রানে আউট হলেন। পুরো গ্যালারি চুপ হয়ে যায়। ৪০.৫ ওভারে আউট হন লিটন। তখন ইনিংসে ১৩ বল বাকি। ১৪৩ বলে ১৬টি চার ও ৮টি ছক্কার সৌজন্যে বিশাল স্কোর তুলে নেন ডান হাতি ওপেনার লিটন। এর মাঝে বাংলাদেশের যে কোনো উইকেটে ২২৪ রানের জুটির রেকর্ডটিও ভেঙে ফেলেন তারা (২০১৭, কার্ডিফ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, প্রতিপক্ষ-নিউজিল্যান্ড)। শুধু তা-ই নয়, লিটন ওয়ানডেতে ১ হাজার রানের মাইলফলকও স্পর্শ করেন। এ ছাড়া ওয়ানডেতে লিটন ও তামিমের জুটি এখন তৃতীয় সর্বোচ্চ; রানের ক্ষেত্রে যেটা ষষ্ঠ সর্বোচ্চ। তামিম ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরি পেয়েছেন। টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি সিরিজে। ২০১০ সালে এক সিরিজে দুই ওপেনার ২ ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন (ডিভিলিয়ার্স-আমলা)। তামিম ও লিটন তিন ম্যাচের সিরিজে সেই কৃতিত্ব আবার দেখালেন। বাংলাদেশ ৪৩ ওভার মানে বৃষ্টির পরের ৫৮ বলে ১৪০ রান তোলে। ১২৮ রানে তামিম অপরাজিত ছিলেন। ১০৯ বলে ৭টি চার ও ৬টি ছক্কা হাঁকান তিনি। লিটনের আরও একটি কৃতিত্ব বলতেই হবে। ১৫০ বা তার চেয়ে বেশি স্কোর করা দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান তিনি। তামিমের পাশে থাকলেন। তামিমকে নিয়েই পুরো ইনিংসে রাজত্ব করেছেন তিনি। মাশরাফির বিদায়কে রঙিন করতেই যেন পণ করেছিলেন দুজন।
পেঁয়াজের দাম আবার বাড়ল
ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে এমন ঘোষণায় কমেছিল পেঁয়াজের দাম। কিন্তু এখন আমদানি না করায় আবার বৃদ্ধি পেয়েছে পণ্যটির দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ এলে দাম কমবে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ানবাজার, হাতিরপুল বাজার ঘুরে এ তথ্য জানা যায়। কারওয়ানবাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায় আর মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। আর খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেশি দামে। যেখানে গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকায় এবং মিয়ানমারের পেঁয়াজ ২৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও প্রায় ১০ থেকে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী সুলতান আহমেদ বলেন, গত ৩ তারিখে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসার কথায় দাম কমে গেলেও না আসায় আবার দাম বাড়ছে। তবে ১৫ তারিখের পর আবার পেঁয়াজ আসার কথা তখন আগের মতোই ২০ থেকে ৩০ টাকায় নেমে আসবে। এদিকে দেশি রসুন বাজারে ভরপুর থাকায় কমেছে চীন থেকে আমদানি করা রসুনের দাম। বাজারে প্রতি কেজি চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। পাশাপাশি কমেছে দেশীয় ও চীনা আদার দাম। প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। আর আমদানি করা চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। এদিকে আগের মতোই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল-ডাল, তেল-লবণ ও চিনি। নতুন করে এ সপ্তাহে আর বাড়েনি উচ্চ দামে বিক্রি হওয়া এ পণ্যগুলোর দাম। বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, লাউ, করলা, টমেটো, শশা, শিম, শালগম, মুলা, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুনের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া করলার দাম কমে ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিস। বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। গত সপ্তাহে ৩০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শসার দাম কমে ২০-৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পেঁপে গত সপ্তাহের মতো ৩০-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দেশি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০-৬০ টাকা। ভালো মানের শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০-৫০ টাকা। ফুলকপি পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৫-৪০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বাঁধাকপি। গাজর বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০-৪০ টাকা। শালগম বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০-৪০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে ৩০-৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মুলার দাম কমে ২০-২৫ টাকা হয়েছে। ৬০-৭০ টাকার বেগুন দাম কমে ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১২০ টাকা।
পেনশন সুবিধা সহজ হচ্ছে সরকারি চাকরিজীবীদের
অবসরে যাওয়ার পর সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের অর্থ পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। সেই ভোগান্তি পরিহারে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ উদ্যোগে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পেনশন পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। ছুটি নগদায়ন মঞ্জুরির আদেশ বিল দাখিলের তিন কর্মদিবসের মধ্যে পেনশনভোগীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে পেনশনের অর্থ। সূত্র জানিয়েছে, সরকারি চাকরিজীবীরা অবসরকালীন ছুটিতে যাওয়ার পর গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, অর্জিত ছুটির টাকা ও অবসরভাতা পান। গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও অর্জিত ছুটির অর্থ পান একসঙ্গে। অবসর ও চিকিৎসাভাতা পেনশনহোল্ডার আজীবন পেয়ে থাকেন। প্রত্যেক পেনশনহোল্ডার মূল বেতনের ৯০ শতাংশ পেনশন ভাতা পান। পেনশনহোল্ডার মারা গেলে তার স্ত্রী আজীবন এ সুবিধা পান। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আজিজুল আলম আমাদের সময়কে বলেন, সরকারি চাকরিজীবী অবসরে যাওয়ার পর তার মূল বেতনের ৯০ শতাংশ পেনশন পান। এর মধ্যে অর্ধেকের (৪৫ শতাংশের) ২৩০ গুণ এককালীন এবং বাকি ৪৫ শতাংশ মাসিক পেনশন পেয়ে থাকেন। তবে কেউ চাইলে পুরো অর্থ একসঙ্গে নেওয়ার সুযোগ আছে। সূত্র জানিয়েছে, অনেক সময় অবসরে যাওয়ার পর পেনশনের অর্থ পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। সেই ভোগান্তি পরিহারে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পেনশনে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভোগান্তি কমাতে ছুটি নগদায়ন মঞ্জুরির আদেশ বিল দাখিলের তিন কর্মদিবসের মধ্যে পেনশনভোগীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে পেনশনের অর্থ। সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়ে পেনশন সহজীকরণ আদেশ, ২০২০ জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। আদেশে বলা হয়, ছুটি নগদায়ন মঞ্জুরির আদেশ বিল দাখিলের তিন কর্মদিবসের মধ্যে পেনশনভোগীর ব্যাংক হিসেবে ওই অর্থ চলে যাবে। এ ছাড়া মাসিক সুবিধার অর্থ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। প্রত্যেক মন্ত্রণালয়, বিভাগ শুধু পেনশনের বিষয়টি দেখার জন্য একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেবে। সূত্র জানিয়েছে, অবসর গ্রহণের আগে ইএলপিসি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবীকে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। ওই আবেদনে প্রাপ্য ছুটি, ছুটি নগদায়ন, ভবিষ্যৎ তহবিলের স্থিতি উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। এ আবেদন পাওয়ার পাঁচ মাসের মধ্যে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করবে। পেনশন মঞ্জুরির কাগজপত্র পাওয়ার ১০ কর্মদিবসের মধ্যে পেনশন নির্ণয়সংক্রান্ত হিসাব যথাযথভাবে যাচাই করে সংশ্লিষ্ট হিসাবরক্ষণ অফিস পেনশন পরিশোধ আদেশ (পিপিও) জারি করা হবে। আনুতোষিকের টাকার চেক বা ইএফটি পিআরএল শেষ হওয়ার পর দিন চূড়ান্ত অবসরগ্রহণের দিন সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর কাছে বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। সূত্র জানিয়েছে, অডিট আপত্তি থাকিলে ৩ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। চূড়ান্ত অবসর গ্রহণের এক বছরের মধ্যে বিভাগীয় মামলা থাকলে নিষ্পত্তি করতে হবে। প্রতিমাসের পেনশন-পরবর্তী মাসের এক তারিখে পেনশনারের ইএফটির মাধ্যমে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠাতে হবে। স্বপ্ন দেখাচ্ছে বেসরকারি খাতেও : দেশে প্রচলিত নীতি অনুযায়ী শুধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই নিয়মিত পেনশন পাচ্ছেন। আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার ক্ষেত্রেও পেনশনের ব্যবস্থা আছে সীমিত পর্যায়ে। বেসরকারি খাতে পেনশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে বেসরকারি খাতের কর্মীরা বড় ধরনের কোনো আর্থিক সুবিধা ছাড়াই দীর্ঘ চাকরি জীবনের ইতি টানেন। অথচ দেশে সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীর চেয়ে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীর সংখ্যা অনেক বেশি। বেসরকারি পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত সব কর্মজীবী মানুষের জন্য একটি টেকসই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। সর্বজনীন পেনশন সুবিধা কার্যকর করতে খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত হয়েছে। বিশ্বের অন্য দেশে কীভাবে সর্বজনীন পেনশন সুবিধা বাস্তবায়ন করছে সে বিষয়টি অনুসরণ করেই নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে অর্থ বিভাগ।এ নীতিমালার আওতায় সব নাগরিকের জন্য পেনশন সুবিধা নিশ্চিত করতে সর্ব প্রথম ‘বাংলাদেশ সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ’ গঠনের সুপারিশ করেছে। ইতোমধ্যে খসড়া নীতিমালা পর্যালোচনার জন্য অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত করবে নীতিমালা। জানা গেছে, সর্বজনীন পেনশন সুবিধার আওতায় সমাজের পিছিয়ে পড়া ‘কর্মক্ষম নাগরিক’ যাদের বয়স ১৮-৫৫ বছরের মধ্যে তাদের পেনশন সুবিধা দেবে সরকার।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনে গরহাজির ওয়ার্ড নেতারা
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে জেতানোর বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে যুবলীগের সভা ডাকা হয়। নির্দিষ্ট সময়ে সভাস্থল ভর্তিও হয়ে যায়। কিন্তু দেখা গেল, নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের বেশিরভাগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সভায় আসেননি। কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিল ৪১টি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে হাত তুলতে বললে মাত্র ১৫ জন হাত তোলেন। তখন তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতি ওয়ার্ডের দুজন করে নেতা হলেও তো ৮২ জন হওয়ার কথা। এর বাইরে আছেন ১০১ জন। তারা কই? যারা আগামী সিটি নির্বাচনে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন, তাদের কোনো হদিস নেই। ক্ষুব্ধ নিখিল বলেন, চসিক নির্বাচনের পর চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে। এ সময় মঞ্চে ছিলেন চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী এবং বর্তমান মেয়র নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাক আ জ ম নাছির উদ্দীন। কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বিভাগীয় যুবলীগের এ সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভা পরিচালনা করেন মাঈনুল হোসেন খান নিখিল। বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা হলেও চসিক নির্বাচন সামনে রেখেই এ সভা ডাকা হয়েছে বলে নিখিল বারবার বলেন। নগরীর আসকার দীঘির পাড়ে অবস্থিত একটি কমিউনিটি সেন্টারে গতকাল সোমবার দুপুরে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সব নেতাই চসিক নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসিনি। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এখন এমন কিছু কাউন্সিলর প্রার্থী করা হয়েছে যাদের এ সমাজ ও দলে কোনো অবদান নেই। বিতর্কিত কিছু লোকজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তারা কীভাবে মনোনয়ন পেয়েছে তা আমি জানি না। তিনি বলেন, মেয়র পদে নেত্রীর সিদ্ধান্তই শিরোধার্য। আমি একজন কর্মী হিসেবে কাজ করব। রেজাউল করিম চৌধুরী সভায় ভোট ও সহযোগিতা কামনা করেন। যুবলীগের চেয়ারম্যান ফজলে শামস পরশ বলেন, যুবলীগের পেছনে অনেকের ত্যাগ রয়েছে। অথচ আমাদের শত্রু এখন বিরোধী সংগঠন নয়, নিজেরা নিজেদের শত্রু। যুবলীগের কর্মীদের প্রতি অনুরোধ-আপনারা আপনাদের ভাইকে শত্রু বানাবেন না, ভাইদের শত্রু ভাববেন না। আপনারা যুবলীগের মান রক্ষা করবেন। আপনাদের কারণে যেন শেখ ফজলুল হক মণির হাতে গড়া যুবলীগের মাথা হেঁট না হয়। এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে সম্মেলনের সামনের সারিতে চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে বরিশাল থেকে আসা শামীম কবির নামের সাবেক এক ছাত্রনেতাকে মারধর করেন চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুর সমর্থক শেখ আবু নাছের আজাদ। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। প্রায় আধাঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইলেন ভিপি নুর
দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর।সোমবার ঐতিহাসিক পতাকা উত্তোলন দিবস উপলক্ষে জেএসডি আয়োজিত সভায় তিনি এ দাবি করেন। ডাকসু ভিপি বলেন, ‘বিএনপি না করলেও, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ওপর শ্রদ্ধা রেখে আমিও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। কারণ বেগম খালেদা জিয়াকে যে মামলায় আটক রাখা হয়েছে, সেটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলা।’ পতাকা দিবসের আ স ম আব্দুর রবকে না ডাকা দুঃখজনক মন্তব্য করে ভিপি নুর বলেন, ‘দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি করার জন্য এখানে আসেনি। আ স ম রবের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে এসেছি।’ এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, কৃষক-শ্রমিক জনতা পার্টির সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যত অনর্থ
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নিয়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। আমানতকারীদের জমানো অর্থ নয়ছয় করেছেন চেয়ারম্যান, পরিচালক ও শীর্ষ নির্বাহী। এ অবস্থায় বেশিরভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। আস্থার সংকট তৈরি হওয়ায় নতুন করে আমানত রাখতে চাইছেন না কেউই। এমনকি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও নতুন করে আমানত না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মেয়াদ পার হওয়া আমানতগুলো ফেরত নেওয়ার চেষ্টা করছে অধিকাংশ ব্যাংক। কিন্তু ফেরত না দিয়ে তা পুনরায় নবায়নের জন্য বিভিন্ন মাধ্যম থেকে চাপ প্রয়োগ করাচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। শেয়ারের বাজারের মতো ধসনামা আর্থিক প্রতিষ্ঠাগুলোয়ও ব্যাংকগুলোকে অর্থ রাখতে বাধ্য করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি এক সভায় ব্যাংকের এমডিদের অনাপত্তি সত্ত্বেও সেখানে টাকা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদিকে নিজেদের অবস্থানের কথা জানিয়ে সরকারের কাছে সাহায্য চাইতে গতকাল অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডিদের প্রতিনিধিরা। আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠক করবেন। অনিয়ম-জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশের পর থেকেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় আমানতের পরিমাণ কমছে। গত মার্চে আমানতের পরিমাণ ছিল ৪৮ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তা ৪৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। দেশে ব্যাংকবহির্ভূত ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৬টির চেয়ারম্যান-এমডিদের দুর্নীতির কারণে একেবারে সর্বস্বান্ত। পিপলস লিজিংয়ের বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, বিআইএফসি, এফএএস ফাইন্যান্স, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও ফার্স্ট ফাইন্যান্স বন্ধের উপক্রম। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এমডি হিসেবে দায়িত্বপালন করে দুর্নীতির মাধ্যমে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রশান্ত কুমার হালদার। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক এগুলো বন্ধের কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এর বাইরে চরম সংকটে না পড়লেও তারল্য সংকটে পড়েছে আরও প্রায় ২০ থেকে ২৫ আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যেগুলো গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। মেয়াদ শেষে অর্থ ফেরত নিতে গেলে, না দিয়ে মেয়াদ বাড়াতে বাধ্য করা হচ্ছে। মেয়াদ বাড়াতে রাজি না হলেও টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। এতে বিপাকে পড়েছেন আমানতকারীরা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এ নাজুক পরিস্থিতির মধ্যেও সম্প্রতি আরেকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে ফেরত দিতে না পেরে খেলাপি হয়ে গেছে ৭ আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সোনালী, রূপালী, অগ্রণীসহ কয়েকটি ব্যাংক ১৫ বার পর্যন্ত অর্থ ফেরত চেয়ে না পেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করেছে। আগের অর্থ ফেরত না পেয়ে নতুন করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেশকিছু ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে আমানত না পেয়ে এবং আমানত ফেরত চাওয়ায় চাপে পড়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। বিষয়টি সমাধান চেয়ে তারা গভর্নর ফজলের কবিরের সঙ্গে বৈঠক করে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আবদারটি গত ব্যাংকার্স সভায় আলোচনায় আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই আলোচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফ থেকে উপস্থাপিত প্রতিবেদন নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট আমানতের প্রায় ২৯ শতাংশ সংগ্রহ করা হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে। এ ছাড়া আমানত, ঋণ ও কলমানি মার্কেটসহ মোট তহবিলের ৭০ শতাংশই ব্যাংকগুলোর প্রত্যক্ষ অবদান। কিন্তু আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান খারাপ অবস্থার সময় আমানত না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অধিকাংশ ব্যাংক। মেয়াদি আমানতগুলো নবায়ন না করে নগদায়ন করে নিচ্ছে। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংকট আরও বাড়ছে। তারল্য সংকটের কারণে যথাসময় অর্থ ফেরত পাচ্ছে না জনসাধারণ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আস্থাহীনতার সংকটে পড়বে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এ আস্থার সংকট ক্রমান্বয়ে ব্যাংকিং খাতেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। ওই সভায় সোনালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধান বলেন, মেয়াদ পূর্তির আগে কোনো অর্থ উত্তোলন করা হয়নি। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থ ফেরত দেওয়ার অক্ষমতা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। অনেক প্রতিষ্ঠান সুদ বাবদ পাওনাও ফেরত দিচ্ছে না। অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম বলেন, সুদ ফেরত পেলে আসল নবায়ন করতে কোনো অসুবিধা নেই। সুদ পরিশোধ না করা এবং তাদের ঋণ খারাপ হওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন করতে হচ্ছে। এতে দুই দিক থেকেই ক্ষতি হচ্ছে। মিডল্যান্ড ব্যাংকের এমডি আহসান-উজ-জামান বলেন, ভাবমূর্তির কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমানত পাচ্ছে না। এ খাতের প্রতি জনগণের আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ইসলামি ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান মুনাফা প্রদান না করে, তা হলে অপরিশোধিত মুনাফার ওপর মুনাফা চার্জের সুযোগ নেই। মুনাফা পরিশোধ করলে আসল পুনর্বিনিয়োগে তাদের কোনো অসুবিধা নেই। ব্যাংকের এমডিরা আরও জানিয়েছেন, পরিচালনা পর্ষদ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যেসব প্রতিষ্ঠান সুদ বাবদ অর্থ ফেরত দিচ্ছে না, তাদের কাছ থেকে আমানত ফেরত নিয়ে আসা এবং নতুন করে আমানত না রাখা। এ ক্ষেত্রে এমডিদের কিছুই করার নেই। ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ব্যক্তি গ্রাহকদের আমানতও ফেরত দিচ্ছে না তারা। ব্যাংক নিজেও চায়না সব অর্থ তুলে তাদের বিপাকে ফেলতে। কিন্তু কোনো অর্থ ফেরত দেবে না, এটি গ্রহণযোগ্য নয়। এ খাতে আস্থার সংকট একদিনে সৃষ্টি হয়নি। শৃঙ্খলা ফেরাতে মূলধন বাড়াতে হবে। আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেবে না, আবার ডিভিডেন্ড দিয়ে মালিকদের পকেটে টাকা তুলে দেবে-এটি হতে পারে না। টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিভিডেন্ট ঘোষণায় বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে। এদিকে সংকট উতরাতে সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা নিতে গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে বৈঠক করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এমডিদের সংগঠন বিএলএফসিএ। বৈঠকে তারা দুর্বল প্রতিষ্ঠান বন্ধ না করে পুনর্গঠন, তারল্য সংকট কাটাতে তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ সহায়তা, নীতি সহায়তা, রেমিট্যান্স সংগ্রহ বিতরণ এবং নতুন নতুন প্রডাক্ট চালু করার প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে করছাড় সুবিধা দাবি করেছে। আজ মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় ওই প্রতিনিধি দল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলের কবিরের সঙ্গে বৈঠক করবে। বৈঠকে বিএলএফসিএর নতুন নির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) চেয়ারম্যান ও আইপিডিসি ফাইন্যান্সের এমডি মোমিনুল ইসলাম বলেন, দু-একটি প্রতিষ্ঠানের আমানতের অর্থ ফেরত না দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ইমেজ সংকটে পড়েছে। এ সংকট কাটাতে আমরা চেষ্টা করছি। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। পাশাপাশি অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছি। আশা করছি আমরা খুব শিগগির ইমেজ সংকট কাটিয়ে উঠব।
এবার সৌদি আরবে করোনাভাইরাসের হানা
সৌদি আরবে প্রথমবারের মতো এক ব্যক্তি প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।সোমবার সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, সৌদির এক নাগরিকের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। আক্রান্ত ব্যক্তি সম্প্রতি ইরান থেকে বাহরাইন হয়ে দেশে ফিরেছেন। সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার জানায়, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ২৫টি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে কোয়ারেনটাইনের জন্য ২ হাজার ২০০ শয্যা প্রস্তুত রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমিত ব্যক্তির খোঁজ পাওয়ায় যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। পরে বাহরাইন, কুয়েত, লেবানন ও মালয়েশিয়াতেও করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। চীনে ২ হাজার ৯১২ জনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া এই ভাইরাস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৯ হাজারের বেশি। আর মারা গেছেন ৩ হাজারেরও অধিক মানুষ। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান থেকে উৎপত্তি হওয়া প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাস এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৫৮টি দেশে ছড়িয়েছে পড়েছে। নতুন করে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া দেশগুলো ইন্দোনেশিয়া, সেনেগাল, জর্ডান, আইসল্যান্ড, পর্তুগাল, আর্মেনিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র ও অ্যান্ডোরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভাইরাস বিস্তারের ঘটনায় বৈশ্বিক স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে মহামারির শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
লটারি কেটে রাতারাতি কোটিপতি দিনমজুর
পেশায় দিনমজুর। তারপরও বিত্তশালী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। এজন্য প্রায়ই লটারির টিকিট কিনতেন। ভাবতেন, এবার হয়তো বিপুল অঙ্কের টাকা আসবে তার হাতে। তবে আশাপূরণ না হলেও নিরাশ হয়ে টিকিট কাটার নেশা ছাড়তে পারেননি তিনি। এরই ফল পেলেন গতকাল রোববার রাতে। লটারি কেটেই রাতারাতি কোটিপতি হয়ে গেলেন তিনি। রাতারাতি কোটিপতি হওয়া ওই যুবকের নাম বিকাশ মাল। তিনি মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামের বাসিন্দা। ভারতের সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনের খবরে বলা হয়েছে, গত শনিবার বিয়ে বাড়ি উপলক্ষে মারগ্রামে শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন বিকাশ। রোববার সকালে সেখান থেকে ফেরার পথে একটি দোকান থেকে ৬০ টাকার লটারির টিকিট কেনেন তিনি। বিকেলে মোবাইলে রেজাল্ট মেলাতে গিয়েই তার চক্ষু চড়কগাছ। একে একে মিলে যায় টিকিটের সবকটি নম্বর। এরপর কাউকে কিছু না জানিয়ে সটান মারগ্রাম থানায় হাজির হন তিনি। পুলিশ কর্মকর্তাকে বিকাশ বলেন, ‘বড়বাবু আমাকে বাঁচান। আমি লটারিতে প্রথম পুরস্কার এক কোটি টাকা জিতেছি।’ গোটা বিষয়টি জানার পরই তাকে আইনি সাহায্যের আশ্বাস দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। কিন্তু দিন আনি দিন খাই সংসারে এত টাকা দিয়ে কি করবেন বিকাশ? তিনি জানান, লটারি পাওয়ায় এই টাকা দিয়ে মা-বাবার চিকিৎসা করাবেন। ছেলে-মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করবেন। এদিকে, পরিবারের লোকেরা এই অর্থলাভের খবর পেতেই আনন্দের জোয়ারে ভাসছেন। বিকাশের বাবা তমাল বাবু বলেন, অভাবের সংসারে এমন উপহার কোনোদিনও পাব ভাবিনি। এবার হয়তো কষ্ট লাঘব হবে, সেটাই আশা তার। সংসারের অভাব ঘুচবে ভেবেই মুখে হাসি ফুটেছে বিকাশের স্ত্রীরও।
নির্বাচন বাতিল চেয়ে তাবিথের মামলা
ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনে গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে উল্লেখ করে তার ফলাফল বাতিল এবং নতুন করে নির্বাচন চেয়ে মামলা করেছেন বিএনপির সমর্থনে নির্বাচন করে হেরে যাওয়া প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। আজ সোমবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ উৎপল ভট্টাচার্যের আদালতে তিনি হাজির হয়ে এ মামলা করেছেন। মামলায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব, যুগ্ম সচিব, আওয়ামী লীগের সমর্থনে নির্বাচন করে জয়ী প্রার্থী আতিকুল ইসলাম, নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী আহমেদ সাজেদুল হক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী আনিসুর রহমান দেওয়ান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টির শাহিন খান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মো. ফজলে বারী মাসুদকে বিবাদী করা হয়েছে। মামলার বাদীর আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘আমরা গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত অনিয়মের নির্বাচন এবং ফলাফল বাতিল চেয়েছি এবং নতুন নির্বাচন ও নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার আবেদন করেছিল। আদালত আমাদের মামলা গ্রহণ করেছেন এবং কয়েকদিনের মধ্যে শুনানির একটি দিন ধার্য করবেন।‘ প্রসঙ্গত, গত ১ ফেব্রয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। নৌকায় তার ৪ লাখ ৪৭ হাজার ২১১ ভোটের বিপরীতে তাবিথ আউয়াল ধানের শীষে পান ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৬১ ভোট। নির্বাচন কমিশন ৪ ফেব্রুয়ারি আতিকুল ইসলামকে উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে। সে অনুযায়ী সংক্ষুব্ধ প্রার্থীরা আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার সুযোগ পাবেন।
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এ বছরই : ভারতের পররাষ্ট্র সচিব
চলতি বছরের মধ্যেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হতে পারে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। এ সময় জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না বলেও জানান তিনি। আজ সোমবার সকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘বাংলাদেশ এবং ভারত : একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক সেমিনারে যোগ দিয়ে শ্রিংলা এসব কথা বলেন। ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিস) এই সেমিনারের আয়োজন করে। হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে দুই দেশেরই আগ্রহ রয়েছে। এটা নিয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ চলছে। এই বছরের মধ্যেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন- এনআরসি একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা প্রতিবেশী দেশে প্রভাব ফেলবে না। ভারতের আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ীই এনআরসি হচ্ছে।’ এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষে বাংলাদেশে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন বলেও জানান পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, নিজ স্বার্থেই বাংলাদেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা চায় ভারত।

ঢাকা ও নয়াদিল্লী অভিন্ন ৫৪ নদীর পানি বণ্টন ও ব্যবস্থাপনার কার্যকর সমাধান করতে চায় বলেও জানান শ্রিংলা। তিনি আরও বলেন, সীমান্তে অপরাধ কর্মকাণ্ড বন্ধে দুদেশের সীমান্তরক্ষীদেরই ভূমিকা রাখতে হবে। সীমান্ত হত্যা যতটা সম্ভব কমাতে চায় ভারত। এ সময় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্মত হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভারত সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলেও জানান দেশটির পররাষ্ট্র সচিব। সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন- ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ, বিসের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক কর্নেল শেখ মাসুদ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, বিস চেয়ারম্যান এম ফজলুল করিম প্রমুখ।

এর আগে সকালে মুজিববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর সূচি চূড়ান্ত করতে ঢাকায় আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শ্রিংলাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাসসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে এটিই শ্রিংলার প্রথম বাংলাদেশ সফর। দুদিনের এ সফরে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. একে আবদুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা রয়েছে। আগামী ১৭ মার্চ ঢাকায় মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির।
করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়াল
বর্তমান বিশ্বের এক আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। চীনে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হলেও ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশে। অ্যান্টার্কটিকা বাদে সব মহাদেশে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৯১২ জনই চীনা নাগরিক। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শুধু চীনেই ৪২ জন। অপরদিকে, চীনে সুস্থ হওয়ার হার বাড়লেও বিশ্বজুড়ে কমছে না প্রকোপ। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও ইরানে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাসে চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে ইরানে। দেশটিতে সোমবার সকাল পর্যন্ত আরও নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে এই ভাইরাসে মারা গেলেন ৫৪ জন। যেখানে দেশটির একজন এমপিও রয়েছেন। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সহস্রাধিক।এদিকে, ইরানের মতোই করোনাভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ইতালিতে। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৭০০ জনে পৌঁছেছে। নিহতের সংখ্যায় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও চীনের বাইরে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে সোমবার সকাল পর্যন্ত আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনাভাইরাসে সে দেশে ২২ জনের প্রাণহানি ঘটল। এ ছাড়া দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২১২ জনে।
টেকনাফে র্যাবের সঙ্গে গোলাগুলি, ৭ রোহিঙ্গা নিহত
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সঙ্গে রোহিঙ্গা ডাকাতদের গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত ডাকাত সদস্য নিহত হয়েছেন। উপজেলার জাদিমোড়া-মোছনির গভীর পাহাড়ে গতকাল রোববার গভীর রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত এ গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পরিচয় জানা না গেলেও তারা সবাই কুখ্যাত রোহিঙ্গা ডাকাত জকি গ্রুপের সদস্য বলে জানিয়েছে র্যাব। কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক (এএসপি) সুজয় সরকার বলেন, ‘রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত টেকনাফের জাদিমোড়া-মোছনির গভীর পাহাড়ে কুখ্যাত ডাকাত জকি গ্রুপের সাথে র্যাব -১৫ এর গোলাগুলি চলে। গুলিবিনিময়কালে সাত ডাকাত সদস্য নিহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। তল্লাশি চলছে।’
তাপসীর ‘থাপ্পড়’
ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে মুম্বাইয়ে আয়োজিত এক সম্মেলনে গিয়েছিলেন বলিউড অভিনেত্রী তাপসী পান্নু। এ কারণে তার নতুন ছবি ‘থাপ্পড়’কে বয়কট করার ডাক দিয়েছেন আইনটির সমর্থকরা। তবে তাদের ট্রলিংয়ের জবাবে তাপসী যা বললেন, সেটা ট্রলকারীদের মুখে সত্যিই ‘থাপ্পড়’! ‘# বয়কট থাপ্পড়’ ট্রলের জবাবে ‘পিঙ্ক’ তারকার ভাষ্য, ‘কিছু বেকার মানুষকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাজ দিতে পেরে আমরা খুশি। এ রকম তুচ্ছ বিষয়কে আমি খুব একটা গুরুত্ব দেই না।’ ‘মুল্ক’ ও ‘আর্টিক্যাল ১৫’-এর পর নির্মাতা অনুভব সিনহা হাজির হয়েছেন ‘থাপ্পড়’ নিয়ে। ধর্ম ও বর্ণবাদের মতো সামাজিক বিষয় নিয়ে আগের দুটি ছবি নির্মাণ করেন তিনি। এবারের ছবিতে এই নির্মাতা লিঙ্গ সংবেদনশীলতার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘থাপ্পড়’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। ছবিটির প্রারম্ভিক আয় তেমন ভালো না। প্রথম দিন বক্স অফিস থেকে এটি ৩ কোটি ৭ লাখ রুপি তুলে নেয়। তবে দ্বিতীয় দিন ছবির আয় বেড়েছে। ঘরে তুলেছে ৫ কোটি ৫ লাখ রুপি। দুদিনে ‘থাপ্পড়’-এর আয় দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ১২ লাখ রুপিতে। তাপসী পান্নু ছাড়া ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন পাভেল গুলাতি, কুমুদ মিশ্র, রতœা পাঠক শাহ, তানভি আজমি, রাম কাপুর, দিয়া মির্জা প্রমুখ।
টেকনাফে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রোহিঙ্গা মাদক ব্যবসায়ী নিহত
কক্সবাজারের টেকনাফে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নুর আলম (৩০) নামে এক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা ও একটি দেশীয় তৈরি এলজি বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে। আজ সোমবার ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে টেকনাফ উপজেলার জাদিমোরা নাফ নদী পয়েন্টে এ ঘটনা ঘটে। নিহত নুর আলম মিয়ানামার মংডু এলাকার জাফর আলমের ছেলে। টেকনাফ ২নং বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টেকনাফের নয়াপাড়া বিওপির বিশেষ একটি টহল দল মাদকের চালান আসার সংবাদ পেয়ে জাদিমোরা খাল সংলগ্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়। কিছুক্ষণ পর মাদকের একটি চালান নিয়ে নৌকাযোগে ২/৩ জন ব্যক্তি কিনারায় উঠে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিজিবি জওয়ানরা চ্যালেঞ্জ করলে মাদককারবারীরা বিজিবি জওয়ানদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করেন। আত্মরক্ষার্থে বিজিবিও পাল্টা গুলি করেন। এ সময় বিজিবির তিনজন জওয়ান আহত হয়। পরে ঘটনাস্থল তল্লাশি করে দেড় লাখ ইয়াবা, ১টি দেশীয় অস্ত্র ও ২ রাউন্ড তাজা কার্তুজসহ গুলিবিদ্ধ নুর আলমকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য টেকনাফ উপজেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। মৃতদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে টেকনাফ থানায় সংশ্লিষ্ট আইনে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান বিবিজির এই কর্মকর্তা।
অবৈধ মোবাইল সেটের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হচ্ছে
গত বছরের ১ অগাস্ট থেকে যেসব ক্লোন বা নকল আইএমইআই-সংবলিত এবং অবৈধভাবে আমদানি করা হ্যান্ডসেট মোবাইল নেটওয়ার্কে সংযুক্ত রয়েছে, সেগুলো নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। খুব শিগগিরই টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক এই সংস্থায় স্থাপিত হতে যাচ্ছে ‘ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর)’। এই প্রযুক্তির মাধ্যমেই অবৈধ হ্যান্ডসেটগুলো নেটওয়ার্কবিচ্ছিন্ন করা হবে বলে জানিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। মোবাইল সেট কেনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই বিটিআরসির এক বিজ্ঞপ্তিতে মোবাইল হ্যান্ডসেট কেনার আগে সেটটির বৈধতা আইএমইআইর মাধ্যমে যাচাই করে কেনা এবং বিক্রেতার কাছ থেকে ক্রয় রসিদ নিয়ে তা সংরক্ষণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। একই অনুরোধ পুনরায় জানিয়ে বিটিআরসি বলেছে, মোবাইল ফোনের কেনার সময় মেসেজ অপশনে গিয়ে কণউ<ংঢ়ধপব> ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর লিখে ১৬০০২ তে পাঠাতে হবে। মোবাইল ফোনের বক্সে বা প্যাকেটে প্রিন্টেড স্টিকার থেকে অথবা *#০৬# ডায়াল করার মাধ্যমে তাৎক্ষকিভাবে সংশ্লিষ্ট হ্যান্ডসেটের আইএমইআই জানা যায়। বৈধ মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট ক্রয়ে এ পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলেছে বিটিআরসি। অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট বন্ধ করতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) প্রযুক্তি সরবরাহ ও পরিচালনার জন্য দরপত্র আহ্বান করে বিটিআরসি। ২০১২ সালে বিটিআরসি এ উদ্যোগ নেওয়ার প্রায় ৮ বছর পর এ প্রযুক্তি বাস্তবায়নে দরপত্র আহ্বান করে। বিটিআরসি জানিয়েছে, এই প্রক্রিয়া শুরু হলে অবৈধ হ্যান্ডসেটে প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট একটি সিম ছাড়া অন্য কোনো সিম কাজ করবে না। নির্দিষ্ট সময় পর কোনো সিমই কাজ করবে না। ফলে গ্রাহকরা বাধ্য হয়েই নকল বা অবৈধ হ্যান্ডসেট ব্যবহার বন্ধ করবেন। সরকারি কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ব্যবসায়ীদের হিসাবে, দেশে বর্তমানে প্রায় তিন কোটি অবৈধ হ্যান্ডসেট মানুষের হাতে রয়েছে। নকল মোবাইল সেট বৈধের সুযোগ অবৈধ আমদানি, চুরি, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নকল হ্যান্ডসেট প্রতিরোধ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত ও রাজস্ব ক্ষতি ঠেকাতে এই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে বিটিআরসি। বিদেশ থেকে ক্রয় করা হ্যান্ডসেটের বিষয়ে কী ধরনের সিদ্ধান্ত হতে পারেÑ জানতে চাইলে বিটিআরসির জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) জাকির হোসেন খান বলেন, ‘বিদেশ থেকে যারা হ্যান্ডসেট নিয়ে এসেছেন বা আনবেন তারা প্রয়োজনীয় দলিলাদি (ক্রয় রসিদ বা অন্যান্য) দেখিয়ে তা বৈধ করতে পারবেন। এনইআইআর পরিচালনা পদ্ধতিতে এ সুযোগ থাকবে।’
জড়িয়ে ধরার ধরন বলে দেবে ভালোবাসা কতটা গভীর
প্রেমিক বা সঙ্গীর সঙ্গে ঝগড়াঝাটি হলে অনেকেই ভেবে নেন সম্পর্ক আর আগের মতো নেই। তবে ঝগড়াঝাটির মাঝে একবার আপনার সঙ্গী জড়িয়ে ধরলেই দেখবেন রাগ গলে গেছে। কিন্তু আপনার সম্পর্ক কি এই সহজ রসায়নের বাইরে? মানে সম্পর্কের মাঝে কি সন্দেহ বাসা বেঁধেছে? তাহলে আপনার প্রেমিকের মন বুঝতে সহজ পদ্ধতির সাহায্য নিন।প্রেমিক কীভাবে জড়িয়ে ধরছেন, সেদিকে খেয়াল রাখুন। সঙ্গীর জড়িয়ে ধরার ধরন দেখেই ভালোবাসার গভীরতার প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। আপনার প্রেমিক কি কাঁধের দিক থেকে জড়িয়ে ধরতে ভালোবাসেন? আর নিশ্চয়ই তা দেখে আপনার মনে মনে অভিমান জমতে জমতে পাহাড় হয়ে গেছে? আপনি বিশ্বাস করেই ফেলেছেন যে, প্রেমিক একেবারেই ভালোবাসেন না তাই তো? উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে এই ভাবনা বদলান। বরং সঙ্গীকে আরও কাছে টেনে নিন। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এভাবে যারা জড়িয়ে ধরতে ভালোবাসেন, তাদের সম্পর্ক একেবারেই বন্ধুর মতো। তাই দুজনের অযথা ভুল বোঝাবুঝি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বুকে টেনে ধরে জড়িয়ে ধরার অভ্যাস রয়েছে প্রেমিকের? প্রশ্ন শুনে লজ্জা পেয়ে গেলেন? লজ্জা পাওয়ার কিছুই নেই। বরং ভাবুন কত ভাগ্য করে প্রেমিক পেয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যারা এভাবে জড়িয়ে ধরেন তারা নিজের প্রেমিকার প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল হন। ধরুন কাজ করছেন। আচমকা পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরল। চোখ বন্ধ করে আপনি বলে দিতে পারবেন এ আপনার প্রেমিক ছাড়া কেউ হতেই পারে না। যদি আপনার প্রেমিকের সঙ্গে মিল পান তবে জেনে রাখুন প্রেমিক আপনাকে যেকোনো বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য তৈরি রয়েছেন। প্রেমিক কি খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আপনার চোখে চোখ রেখে প্রেমের কথা বলেন? তবে জানবেন ইনি আপনার আদর্শ মনের মানুষ। সঠিক জীবনসঙ্গী। ইনি আপনার ভালোর পাশাপাশি আপনার খারাপ গুণগুলোকেও চোখ বন্ধ করে ভালোবাসতে পারেন। প্রেমিক জড়িয়ে ধরবেন বুঝতে পারা মাত্রই কি আপনার আতঙ্ক তৈরি হয়? মনে হয় উফফ এসবের আবার কি প্রয়োজন? তবে আপনার সম্পর্ক নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। কারণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে যুগল একে-অপরকে অত্যন্ত জোরে জড়িয়ে ধরে, তারা প্রতিনিয়ত নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। মনে করেন এই বুঝি সম্পর্ক ভাঙল বলে। তাই সন্দেহ নিয়ে বোঝার মতো মনে করে সম্পর্ক বয়ে চলার চেয়ে একা বাঁচুন। দেখবেন অনেক ভালো আছেন।
যে কারণে চট্টগ্রামমুখী জঙ্গিরা
পুলিশের টানা অভিযানে গত চার বছরে নব্য জেএমবির বেশিরভাগ সদস্য হয় নিহত নয়তো কারাগারে বন্দি আছে। তবে কয়েকজন জঙ্গির অবস্থান এবং তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে পুলিশ এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে, পুলিশের অভিযানের শিথিলতার সুযোগ নিয়ে আত্মগোপনে থাকা জঙ্গিরা নতুন করে হামলা ও নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদেরই একজন রুবেল ওরফে সৌরভ। পুলিশের ধারণা, রুবেল ২০১৬ সালের এপ্রিলে বগুড়ায় বোমা বিস্ফোরণে নিহত জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সামরিক শাখার প্রধান ফারদিনের সমকক্ষ একজন কমান্ডার। এর বাইরে তসলিম নামের আরও এক জঙ্গি শুরু থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায়। গত শুক্রবার রাতে নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় নতুন করে জঙ্গিদের নাশকতার শঙ্কা সামনে চলে এসেছে। কাউন্টার টেররিজম চট্টগ্রাম মহানগর অঞ্চলের উপকমিশনার শওকত আলী আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমরা আজ মামলা তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছি। শুরুতেই জঙ্গির বিষয়টি আমরা সেভাবে দেখছি না। তবে তদন্ত যখন করবো, সব কিছুই তো মাথায় থাকছে।’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, রুবেলের বাড়ি মিরসরাই উপজেলার সোনাপাহাড় গ্রামে। চট্টগ্রামে জঙ্গি কার্যক্রম বিস্তারের শুরুতে ২০১৫ সালে সোনাহাড় গ্রামেই তারা আস্তানা গাড়ে। এর কারণও পরে পুলিশকে জানিয়েছিল ধরা পড়া অন্য জঙ্গিরা। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, মিরসরাই থেকে দ্রুত চট্টগ্রামে আসা যায়, আবার রামগড় হয়ে তিন পার্বত্য জেলায়ও যাওয়া যায়। পাহাড়ের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং সীমান্ত অঞ্চল থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে তারা ঢাকার আবদুল্লাহপুরে জঙ্গি জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধীর কাছে সরবরাহ করত। হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় হামলার পর রাজীব গান্ধী ধরা পড়ে। পরে রুবেলের সহায়তায়ই মূলত মিরসরাইয়ে জঙ্গিদের কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম শহরের বায়েজিদ এলাকার চন্দ্রনগর পাহাড়ে রুবেলই জঙ্গিদের অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়। ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা জঙ্গি তসলিমের বাড়িও চট্টগ্রাম অঞ্চলে। বর্তমানে বায়েজিদ এলাকায় ল্যাংটা ফকির খুনের ঘটনায় জঙ্গি সজিব ওরফে বাবু জেলে আছে। এ ছাড়া ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর নগরীর মাঝিরঘাটে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার জেলে আছে নব্য জেএমবির আরও দুই জঙ্গি মাহবুব ও তার ভাই রফিক। ওই ঘটনায় তাদের অপর ভাই রবিউল নিহত হয়। এর বাইরে জঙ্গি এরশাদ, ফুয়াদ, নোয়াখালীর নুরুন্নবী ওরফে রাজু, জাবেদ ইকবাল, শামীম হোসেন গালিব, মাসুম বিল্লাহ, মিনহাজুল ইসলাম সাজিল, ফয়সাল মাহমুদ ও নাইমুর রহমান নয়নও জেলে আছে। নব্য জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সামরিক শাখার প্রধান রাইসুল ইসলাম খান ওরফে ফারদিন ২০১৬ সালের এপ্রিলে বগুড়ায় বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়। ফারদিন ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের ছাত্র। ২০১৫ সালের ২৩ মার্চ আকবর শাহ থানা পুলিশের হাতে এক জঙ্গি গ্রেপ্তার হওয়ার পর বলেছিল, মূলত পার্বত্য জেলাগুলো হয়ে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে অস্ত্র সংগ্রহের জন্যই চট্টগ্রামকে ব্যবহার করা হতো। এ নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল ফারদিন। এরশাদ নিজেও একবার ফারদিনের সঙ্গে বান্দরবান গিয়ে অস্ত্র নিয়ে আসে। ২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর হাটহাজারীর আমানবাজার এলাকায় ফারদিনের বাসায় অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। উদ্ধার করা হয় স্নাইপার রাইফেল, গুলি, বিস্ফোরক ও সামরিক বাহিনীর পোশাক। কিন্তু তখন পালিয়ে যান ফারদিন। এর বাইরে সীতাকুণ্ডের জাহাজভাঙা শিল্পের কাঁচামালও বোমা বানানোর কাজে ব্যবহার করতে চট্টগ্রামে আস্তানা গাড়ে জঙ্গিরা। পরে সীতাকুণ্ডের একটি বাড়িতেই তারা বোমা তৈরির সরঞ্জাম মজুদ করে। ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ ওই আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে শিশুসহ ৫ জন নিহত হয়। উদ্ধার করা হয় ২০ জনকে। ব্যাপক বিস্ফোরণের পরও পাওয়া যায় ১৫টি বোমা। জঙ্গিরা নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নৌবাহিনী কলোনির দুটি মসজিদেও বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত শাখাওয়াত ওরফে মাহফুজ পালিয়ে যায়। আরেক জঙ্গি মোশাররফ হোসেন ওরফে সোহেল রানা জঙ্গিদের সংগঠিত করেছিল বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি রবার বাগানে শ্রমিক সেজে। পরবর্তীতে নোয়াখালী থেকে ধরা পড়া জঙ্গি ইলিয়াস পুলিশকে জানায়, সিলেটের আতিয়া মহলে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হয় মাহফুজ ও মোশাররফ।
বিস্ফোরণ মামলায় আসামি অজ্ঞাত, দায় স্বীকার আইএসের
নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেটে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। আর এ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। গত শনিবার রাতে সিএমপির ট্রাফিক উত্তর বিভাগের টিআই (পাঁচলাইশ) অনিল বিকাশ চাকমা বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জঙ্গি নজরদারি সংস্থা ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ’-এর করা এক টুইট বার্তায় আইএসের দায় স্বীকারের তথ্য জানা যায়। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, পুলিশ বক্সে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় অজ্ঞাত সন্ত্রাসী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জনগণের জানমালের ক্ষতিসাধন, সরকারি সম্পদ নষ্ট, সরকারি কাজে দায়িত্বরত ব্যক্তি ও সাধারণ জনতাকে গুরুতর জখম ও হত্যার চেষ্টা এবং জনমনে ভীতি সঞ্চারের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ। এদিকে আইএসের দায় স্বীকার বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কর্মকর্তারা মন্তব্য করতে রাজি হননি। গত শুক্রবার রাতে নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় ট্রাফিক বক্সে বিস্ফোরণে কমপক্ষে পাঁচজন আহত হন। আহতরা হলেন- ট্রাফিক সার্জেন্ট আরাফাত, পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আতাউদ্দিন, স্থানীয় দুই যুবক জাহিদ বিন জাহাঙ্গীর ও মো. সুমন এবং আনুমানিক ১০ বছর বয়সী এক শিশু। আহতরা সবাই আশঙ্কামুক্ত বলে জানা যায়। গতকাল বিকালে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জরুরি বৈঠকে বসেন। পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান সব এলাকায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা সচল করার নির্দেশ দেন। এর বাইরে ব্লক রেইড দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। থানাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
স্পিকারের ভারত সফর হঠাৎ স্থগিত
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী পূর্বনির্ধারিত ভারত সফর স্থগিত করেছেন। দেশটির লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার আমন্ত্রণে স্পিকারের নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলের ২ থেকে ৬ মার্চ দিল্লি থাকার কথা ছিল। সফরের একদিন আগে গতকাল রবিবার রাতে হঠাৎ সেটি স্থগিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে এ সফরসূচি পুনর্নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা। জানা যায়, ১৭ মার্চ থেকে মুজিব শতবর্ষের অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে। এতে স্পিকার বিশেষ দায়িত্বে থাকায় এখন ভারত সফরে যেতে পারছেন না। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বিদেশি অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো ও নিশ্চিত করা, ২৬ মার্চের অনুষ্ঠানেরও ব্যস্ততা রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে
মুজিববর্ষের মার্চের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর ভারত সফরের সূচি পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, স্পিকারের এ সফরে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে জাতীয় সংসদের অনুষ্ঠানমালায় ভারতের লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা ছাড়াও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিসহ শীর্ষ নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর কথা ছিল। এর আগে পররাষ্ট্র দপ্তরের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানাতে চেয়েছিলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় গত ডিসেম্বরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের ভারত সফর বাতিল করা হয়েছিল। পরে অবশ্য তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ চার দিনের সফরে ১৩ জানুয়ারি ভারত গিয়েছিলেন।
করোনাভাইরাসে মৃত্যুর আশঙ্কা কতটা?
বর্তমান বিশ্বের এক আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। চীনে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হলেও ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশে। গতকাল রোববার পর্যন্ত সব মিলিয়ে গোটা বিশ্বে করোনাভাইরাসের থাবায় মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৮৭ হাজার। এর মধ্যে চীনেই মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ৮০০-রও বেশি। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের কারণে রীতিমতো ধুঁকছে দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও ইতালি। দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৭৩৬ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে; মারা গেছেন ১৮ জন। ইতালিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ জনে, আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ১২৮ জন। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত গোটা বিশ্ব। আরও বেশি চিন্তার কারণ হলো- করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার উপায় এখনো মেলেনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়ছে, গবেষকরা মনে করছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রতি ১ হাজার জনের মধ্যে পাঁচ থেকে ৪০ জনের মৃত্যু হতে পারে। বিজ্ঞানীদের একটা বড় অংশের মতে, প্রতি ১ হাজারে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের মধ্যে নয়জনের মৃত্যু হতে পারে। অর্থাৎ এই হিসাব অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে রোগী মৃত্যুর হার ১ শতাংশেরও কম। যদিও বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই মৃত্যুর বিষয়টি আরও অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন- রোগীর বয়স, লিঙ্গ এবং স্বাস্থ্যের অবস্থা ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার নিশ্চিতভাবে বলাটা বেশ কঠিন। এমনকি কতজন রোগীর মৃত্যু হলো, তা-ও স্পষ্ট ভাবে বলা যাচ্ছে না এই মুহূর্তে। কারণ, বেশির ভাগ করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা হিসাবের বাইরেই থেকে যায়। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক উপসর্গগুলোকে উপেক্ষা করে অধিকাংশ রোগীই চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। আবার এই ভাইরাসের প্রাথমিক উপসর্গগুলোর ভিন্নতার কারণে পুরো বিশ্বেই এখনো যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে। ফলে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সঠিক সংখ্যাটা সামনে আসছে না। লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, সংক্রমণ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তের ক্ষেত্রে কিছু দেশ পারদর্শী হলেও বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এর তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে আক্রান্তের হিসাব রাখাটা বেশ কঠিন। তাই মোট আক্রান্তের সংখ্যা সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করা না গেলে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। চীনে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের শিকার ৪৪ হাজার মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রথম যে বিশদ বিশ্লেষণটি পাওয়া যায় সেটি হলো, মধ্য বয়সীদের তুলনায় বয়ো-বৃদ্ধদের মধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার প্রায় ১০ গুণ বেশি। ৩০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুহার সবচেয়ে কম, এ বয়সের ৪ হাজার ৫০০ জন আক্রান্তের মধ্যে মাত্র আট জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। তবে যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা শ্বাসকষ্ট রয়েছে, তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।
পদ্মায় ফুটে উঠছে দ্বিতল সেতু
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ পরিদর্শনে যাওয়ার আগে কথা হয় মাওয়া চৌরাস্তার চা-দোকানি হানিফের সঙ্গে। তিনি বললেনÑ পদ্মা সেতু আদৌ হবে কিনা এমন সংশয় প্রকাশ করেছিলেন কিছু লোক। এখন তারাই বলছিলেন আর কদিন পরই সেতুর কাজ শেষ হবে। দিন-রাত পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলা দেখে খুশি স্থানীয় জেলে, দোকানি। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের তো আনন্দের সীমা নেই। করোনা ভাইরাসের কারণে সেতুর কাজে অসুবিধা হচ্ছে কি? জানতে চেয়েছিলাম পদ্মা সেতুর ২৬ নম্বর পিলারের কাজে ব্যস্ত প্রকৌশলীদের। সেখানে তিনজন চীনা প্রকৌশলীসহ অন্তত ৫০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। রড টেনে জোরে জোরে হাঁক দিচ্ছেন। কাজ চলছে পিলারের ক্যাপ বসানোর। তারা বলেন, কিছু চীনা কর্মী ছুটিতে আছেন। তবে এর প্রভাব পড়েনি। আগের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ চলছে। তবে আগামী দুই মাস চলতে পারবে। এর পরও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সমস্যা হতে পারে।সেখানে কর্মরত আরিফ নামের এক কর্মী বলেন, কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চলছে। সেতুর ওপরের অংশ এবং নিচে রেল সেতুর কাজও চলছে। ভাইরাসের কারণে কাজের আপাতত সমস্যা হচ্ছে না। তবে এভাবে চলতে থাকলে সমস্যা হবে। পিছিয়ে যেতে পারে সেতুর নির্মাণকাজ। পদ্মার জাজিরা প্রান্তে কাজের অগ্রগতি বেশ ভালো। ওই পারে সেতুর দিকে তাকালে মনে হয়, পদ্মা সেতুর কাজ আর বাকি নেই। বাস্তবেও তা-ই। সরেজমিন দেখা গেল, সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে ৩৯তমটির কাজ শেষ। বাকি পিয়ার নম্বর ১০, ২৬ ও ২৭। পদ্মা সেতুর ওপর উঠে দেখা গেল, স্প্যানের ওপর সø্যাব বসানোর কাজ চলছে। নিচের অংশে মানে রেল সেতুর কাজও এগিয়ে চলছে। শ্রমিকরাও কাজ করছেন নিরলস। নিজের দেশে এত্ত বড় একটা সেতু হবে এমন আনন্দে তাদের চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক। জাজিরা প্রান্ত থেকে স্পিডবোটে করে মাওয়া প্রান্তে যাওয়ার পথে দেখা গেলÑ নদী পাড়ি দেওয়া বিভিন্ন যাত্রী খুশিমনে তাকিয়ে আছে পদ্মা সেতুর কর্মযজ্ঞের দিকে। তৃপ্তির ঢেঁকুর দিচ্ছেন ট্রলারে চড়া মানুষগুলো। পদ্মায় নিয়োজিত কিছু শ্রমিক পাওয়া গেল মাওয়া প্রান্তের স্টেশন ইয়ার্ডে। সেখানে সারিবদ্ধভাবে রাখা স্প্যানের পাশে কথা হয় কয়েক জন শ্রমিক ও একজন প্রকৌশলীর সঙ্গে। সেতুর কাজ এগিয়ে চলছে এই তথ্য দিয়ে তারা বললেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সেতুর নির্মাণকাজে প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্বব্যাপী অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেতুর কাজে অসুবিধা দেখা দিতে পারে। তবে সবাই মনে-প্রাণে চায়, এ রকম সমস্যা যেন না হয়। দীর্ঘ কাক্সিক্ষত সেতু নির্মাণে আর কোনো বাধা দেখতে চায় না দেশের মানুষ। ইতোমধ্যে মূল সেতুর ৩৬০০ মিটার স্প্যান দৃশ্যমান হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে সব পিলার স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হবে। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে সেতুটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে পুরোপুরি কাজ শেষ না হলেও ২০২২ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে, তা নিশ্চিত করেই বলছেন প্রকল্প কর্তারা। পদ্মা সেতুর ওপরে উঠে দেখা যায় সেখানে সø্যাব বসানোর কাজ চলছে। একেকটি সø্যাবের সঙ্গে আরেকটি সø্যাব বিশেষ আঠা দিয়ে জোড়া লাগানো হচ্ছে। রাস্তÍার মাঝখানে বসানো হচ্ছে ডিভাইডার। যদিও এগুলো প্রাথমিক ধাপ, তদুপরি ওপরের দিকে তাকালে মনে হয় সেতুর ওপরে আরেকটি মহাসড়ক। পদ্মা সেতুর পিলার থাকবে ৪২টি। এসব পিলারের জন্য ২৯৮টি পাইল নির্মাণ করতে হবে। এ পিলারগুলোর ওপর বসানো হবে ৪১টি স্প্যান। সেতুতে ৪১টি স্প্যান বসানো হলে ট্রেন চলাচলের জন্য তার ওপর বসবে ২৯৫৯টি সø্যাব। পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৮৭.৫ ভাগ। করোনা ভাইরাসের কারণে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা নেই। তবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে সমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক। সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের নভেম্বরে। পরে দুই দফা মেয়াদ বাড়িয়ে তা ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। তবে নকশা জটিলতায় সে মেয়াদ আরও দেড় বছর বাড়ানো হয়েছে। এ হিসাবে ২০২১ সালের জুনে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কথা বলা হচ্ছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা আরও জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পের মেয়াদের পাশাপাশি ব্যয় বৃদ্ধির সম্ভাবনাও রয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে সেতুটির ২২টি পিলারে পাইলের সংখ্যা বৃদ্ধি, পরামর্শক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, সেতুর নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড খাতে ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি কিছু খাতে ব্যয় বেড়েছে। নির্মাণশেষে প্রকল্পটির চূড়ান্ত ব্যয় নির্ধারণ করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামোর নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। চার বছরের মধ্যে তা শেষ করার কথা ছিল। সর্বশেষ হিসাবে ২০২১ সালের জুনে নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যদিও বাস্তবে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাজেট প্রাক্কলন করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের ৬৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পের বাকি অর্থ তিন বছরে (২০১৯-২০ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত) ব্যয় হবে। এ ক্ষেত্রে চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের বাজেটে পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দকৃত পুরো অর্থ ব্যয় হচ্ছে না। আর বাকি অর্থ ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যয় করা হবে। এ জন্য সম্ভাব্য প্রাক্কলনও চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ধূসর হচ্ছে ‘ব্যর্থ’ সোনালী
হলমার্কের জন্য ব্যাপকভাবে আলোচিত সোনালী ব্যাংকের নাম। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নামে-বেনামে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে হলমার্ক গ্রুপ। এ ছাড়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের পকেটে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে দিয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকটি। নাম সোনালী হলেও দুর্নীতি-জালিয়াতি, খেলাপি ঋণ এবং মূলধন ঘাটতির মতো নেতিবাচক অবস্থার কারণে ব্যাংকটির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অনেকটাই ধূসর। সোনালী ব্যাংক সূত্র জানায়, গত বছর শেষে ব্যাংকটির সংগৃহীত আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ১ লাখ ৪ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। আমানত সংগ্রহ বেড়েছে মাত্র ৭ শতাংশের কিছু বেশি। সংগৃহীত আমানতের মধ্যে মাত্র ৪৪ শতাংশ ঋণ হিসেবে বিতরণ করেছে। বাকি অর্থ দুর্বল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রেখেছে। সেই অর্থ ঠিকমতো আদায় করতে পারছে না। ফার্স্ট ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং, বিআইএফসি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্সের মতো বন্ধপ্রায় প্রতিষ্ঠানের কাছে অর্থ রেখে তা আদায় করতে পারছে না। ব্যাংকটির গত বছর শেষে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৪০ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ২১ দশমিক ৬৩ শতাংশ বা ১০ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় খেলাপি ঋণ কমেছে ব্যাংকটির। ২০১৮ সালে বিতরণ করা ঋণের ৩০ দশমিক ৩৫ শতাংশ বা ১২ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা খেলাপি ছিল। এই খেলাপি কমাতে সোনালী ব্যাংকের নিজস্ব কোনো তৎপরতা ছিল না। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গণছাড়ের আওতায় খেলাপিদের ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। গত বছর পুনঃতফসিল করা হয় ১ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা। অথচ নগদ আদায় হয়েছে মাত্র ৮২০ কোটি টাকা। আগের বছর যা ছিল ১ হাজার ৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপিদের কাছ থেকে নগদ আদায় কমে গেছে ব্যাংকটির। খাতাকলমে যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ দেখানো হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অনেক বেশি। অবলোপন করা ৭ হাজার ৪৯ কোটি ও পুনঃতফসিল করা ঋণ যোগ করলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। এর বাইরে মোট ১৮ হাজার ৯০০টি মামলায় ২৮ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা রয়েছে। সোনালী ব্যাংক জিম্মি হয়ে পড়েছে শীর্ষ খেলাপি ও ঋণগ্রহীতাদের কাছে। ব্যাংকটির ১০ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে ৩ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা রয়েছে শীর্ষ ২০ খেলাপির পকেটে। মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে ৩১ শতাংশ গেছে ২০ জনের পকেটে। নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েও শীর্ষদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে পারছে না। গত বছর শীর্ষ খেলাপিদের কাছ থেকে মাত্র ৩১ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে। আগের বছর আদায় করে ১২০ কোটি টাকা। শীর্ষদের কাছ থেকে আদায় চার ভাগে নেমে এসেছে।নিয়মনীতি না মেনে ঝুঁকিপূর্ণ খাতে ঋণ বিতরণ করায় এ ব্যাংকের মূলধন ও প্রভিশন ঘাটতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। গত বছর শেষে ৬১ হাজার ২৪৯ কোটি টাকার ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ব্যাংকটির ৬ হাজার ১২৫ কোটি টাকা মূলধন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু ব্যাংকটি তা করতে ব্যর্থ হওয়ায় মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। আগের বছর ৫৩ কোটি টাকা মূলধন উদ্বৃত্ত ছিল। খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ৭১৭ কোটি টাকা। মূলধন ও প্রভিশন ঘাটতি থাকার অর্থ ব্যাংকটির আর্থিক স্বাস্থ্য ও জনগণের আমানত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আগের বছর বড় একটি ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুনঃতফসিল হওয়ায় ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। গত বছর পরিচালন মুনাফা কমে হয়েছে ১ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। প্রভিশন ও করপরবর্তী প্রকৃত মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২৭১ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ২২৬ কোটি টাকা। ব্যাংকটির দুর্বল সূচকগুলোর ব্যাখ্যায় সম্প্রতি ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আতাউর রহমান প্রধান বলেন, সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি নিয়ে বিভিন্ন কথা হয়। মনে রাখতে হবেÑ এ দেশের শিল্পায়ন, কৃষির উন্নয়নে এ ব্যাংকগুলো মূল ভূমিকা রেখেছে। ’৮০-এর দশকে যারা সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শিল্প উদ্যোক্তা হয়েছিলেন, তারাই আজ বেসরকারি ব্যাংকের মালিক। এর মধ্যে অনেকে খেলাপি হয়ে ব্যাংকের বোঝা বাড়িয়েছে। এর পরও এ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মূল ভূমিকা সরকারি ব্যাংকগুলোর।
জঘন্য অপরাধে জড়িত পাপিয়া ও তার স্বামী
নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মো. মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী জঘন্য অপরাধে জড়িত বলে রিমান্ড ফেরত প্রতিবেদনে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। গতকাল রবিবার সিএমএম আদালতে প্রতিবেদনটি জমা দেন ডিবি পুলিশের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও প্রতিরোধ টিমের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. সাইফুল ইসলাম। এদিকে এ দম্পতির দুই সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবার ফের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। পুনরায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ দিদার হোসেন এ আদেশ দেন। বিমানবন্দর থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষ হওয়া পাপিয়া ও তার স্বামী সম্পর্কে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তারা দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে অবৈধ মাদক, অস্ত্র ব্যবসা, চোরা চালান, অর্থের বিনিময়ে জমি দখল, বেদখল ও অনৈতিক ব্যবসাসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে জানা যায়। এসব করে তারা বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিকও হয়েছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও স্বল্প শিক্ষিত নারীদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডেও জড়িত আসামিরা। এমনকি ওইসব নারীকে ব্যবহার করে তদবির বাণিজ্যের মাধ্যমেও তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে বলে তথ্য মিলেছে। তবে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। দেশত্যাগের সময় গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়াসহ আসামিদের গ্রেপ্তার করে র্যাব। বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পাপিয়া, তার স্বামী ও তাদের দুই সহযোগীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। একই দিন পাপিয়া ও তার স্বামীর অন্য দুই মামলায় পাঁচ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। তারা এখনো রিমান্ডে রয়েছেন।
সুরকার সেলিম আশরাফ আর নেই
প্রখ্যাত সুরকার সেলিম আশরাফ আর নেই (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। গতকাল রোববার দিবাগত রাত ৩টায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সেলিম আশরাফের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার স্ত্রী বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী আলম আরা মিনু। দেশাত্মবোধক গান ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তি সেনা’সহ অনেক জনপ্রিয় গানের সুর দিয়েছিলেন সেলিম আশারাফ। এ ছাড়া বেশ কিছু গান শ্রোতামহলে দারুণভাবে সাড়া ফেলে। জানা যায়, চার বছর ধরে অসুস্থ ছিলেন সেলিম আশরাফ। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শ্বাসকষ্ট, রক্ত ও কিডনি সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসা নিয়ে বেশ অর্থকষ্টে পড়েছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী তার পাশে দাঁড়ান এবং ১০ লাখ টাকার একটি সঞ্চয়পত্র দেন। সেলিম আশরাফের চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়ে আসেন সাবিনা ইয়াসমীন ও সৈয়দ আব্দুল হাদী। পাশে দাঁড়ান অসুস্থ এন্ড্রু কিশোরও; কিন্তু এবার আর তিনি অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে পারলেন না। চলেই গেলেন না ফেরার দেশে। এর আগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে চেন্নাইয়ে শ্রীরাম মেডিকেল সেন্টারে ১৩ দিন চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরেন এই সুরস্রষ্টা। তখন খানিক সুস্থতাবোধ করলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
স্ত্রী-ছেলের পর চলে গেলেন স্বামীও
রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের দিলু রোডে পাঁচতলা ভবনের গ্যারেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্ত্রী ও ছেলের পর মারা গেলেন স্বামী শহিদুল কিরমানী রনিও (৪৫)। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিউটের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান। ঢামেক হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শঙ্কর পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রনির শরীরের ৪৩ শতাংশ দগ্ধ ছিল। এ নিয়ে আগুনের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো পাঁচজনে। এর আগে গতকাল রোববার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রনির স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যু হয়। তার শরীরের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ ছিল। তবে ঘটনার দিনই রনি ও জান্নাতুল দম্পতির ছেলে এ কে এম রুশদী (৫) মারা যায়। তারা নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ইটনা গ্রামের বাসিন্দা। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ভোরে রাজধানীর ইস্কাটনের দিলু রোডের একটি আবাসিক ভবনের গ্যারেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এদিন রুশদীসহ তিনজন নিহত হয়। নিহত অপর দুজন হলেন- আবদুল কাদের (৪৫) ও আফরিন জান্নাত (১৭)।
মালয়েশিয়া থেকে ফিরে পর্যবেক্ষণে থাকা ভারতীয়র মৃত্যু
মালয়েশিয়া থেকে ভারতে ফিরে পর্যবেক্ষণে থাকা অবস্থায় এক যুবক মারা গেছেন। তবে প্রাথমিক পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েনি। আজ রোববার ভারতের সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি এমন খবর প্রকাশ করেছে। খবরে বলা হয়, জৈনেশ নামে ওই যুবক বৃহস্পতিবার রাতে কেরালা রাজ্যের কোচিন বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এরপরই তড়িঘড়ি করে তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। তিনি গত তিন বছর ধরে মালয়েশিয়ায় কর্মরত ছিলেন। একাধিক ব্যাধি নিয়ে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরেন জৈনেশ। মৃতের রক্ত পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব মেলেনি। তবে আরও নিশ্চিত হতে তার শরীরের কিছু নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় এখন পর্যন্ত ২৫ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। অন্যদিকে, ভারতে এ ভাইরাসে তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি চীন থেকে ভারত ফেরা বেশ কয়েকজনকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের বিষয়ে অবগত হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মহামারির আশঙ্কায় বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যেই চীনের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছে। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হওয়া এ ভাইরাস ঠেকাতে চীন-ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে বেশ কয়েকটি দেশ।
কাল সারা দেশে বিএনপির মানববন্ধন
বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আগামীকাল সোমবার ঢাকায় মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে বিএনপি। বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন পালন করবে দলটি। একই সঙ্গে সারা দেশের জেলা সদরেও মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে বিএনপি। দ্বিতীয় দফায় হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার জামিন খারিজ হওয়ার পর করণীয় সম্পর্কে কথা বলার সময় আজ রোববার সকালে সাংবাদিকদের সামনে এই মানববন্ধনের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানান মির্জা ফখরুল। মৎস্যজীবী দলের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই ভয়াবহ একটি ফ্যাসিস্ট সরকার যারা সমস্ত মানবিক মূল্যবোধগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে, তারা আজকে শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রেখেছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই তারা (সরকার) বেগম খালেদা জিয়াকে তার প্রাপ্য জামিন, সেই জামিনটা পর্যন্ত দিচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের কাছে যাচ্ছি এবং তাদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজ করছি। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই গণতন্ত্রের নেতা মুক্ত হবেন।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছি, করছি। আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মনে করি যে, তিনি শুধু বিএনপির নেতা নয়, তিনি সমগ্র দেশের মানুষের গণতন্ত্রের মুক্তির নেতা। সেই কারণেই তার অসুস্থতা আমাদের সকলকেই এখন অত্যন্ত উদ্বিগ্ন করেছে এবং আমরা চেষ্টা করছি।’ বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা তো জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। জনগণের দুঃখ-দুর্দশা এখন তাদের কাছে প্রশ্নই নয়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বহুবার বলেছি, এই দলটি এখন বেনক্রাফট হয়ে গেছে। যারা মানুষের মনের কষ্টটাও বুঝতে পারে না।’ বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আজকে যেটা উনি সামান্য (বিদ্যুতের দাম) বলছেন, সেটা যে একদম সাধারণ মানুষের জন্য কত অসামান্য এটা বুঝার শক্তিও তার নেই্। কারণ তারা এমন জায়গায় চলে গেছেন, যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা, শত শত কোটি টাকা তাদের লোকজনদের বাড়ির মধ্যে, গোডাউনের মধ্যে পাওয়া যায়। তারা তো বুঝবেন না মানুষের কষ্টটা কোথায়।’
লিটনের ঝোড়ো সেঞ্চুরিতে দুর্দান্ত বাংলাদেশ
তামিম ইকবালের সঙ্গে ওপেন করতে নেমে শুরু থেকেই ঝোড়ো খেলার আভাস দেন লিটন দাস। পুরোটা সময় ধরেই ঝোড়ো ব্যাটিং করে মাত্র ৯৫ বল খেলে তিন ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন। ৯৯ থেকে ১০০ রানের ঘর পার হন ডোনাল্ড টিরিপানোকে চার মেরে। তার ইনিংসটি সাজানো ছিলো ১০টি চার ও একটি ছয়ের মারে। লিটনের এটি দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, প্রথম সেঞ্চুরিটি ছিল এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩৫ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে ১৮৫ রান। ক্রিজে আছেন লিটন দাস ১০৪ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১ রান নিয়ে।
লিটনের সেঞ্চুরির পরেই সাজঘরে মুশফিক
ডোনাল্ড টিরিপানোকে ৩৪তম ওভারের প্রথম বলে চার মেরে সেঞ্চুরি করেন লিটন দাস। আর শেষ বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন মুশফিকুর রহিম। তার ব্যাট থেকে আসে ২৬ বলে ১৯ রান। ছিলো চার ও ছয়ের কোনো মার।
ফিরে গেলেন শান্ত, সেঞ্চুরির পথে লিটন
মাঠে এসেই দুর্দান্ত খেলছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৩৭ বলে ২৯ রানের ইনিংসে ছিলো দুটি দৃষ্টিনন্দন ছয়ের মার। কিন্তু আর এগোতে পারলেন না, এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন। অন্যদিকে ক্রিজে থাকা ওপেনার লিটন দাস এখন সেঞ্চুরির পথে।
সাজঘরে তামিম, লিটনের হাফসেঞ্চুরি
বড় রান করতে ব্যর্থ হলেন তামিম ইকবাল। ৪৩ বলে ২৪ রানের ইনিংস খেলে এলবিডব্লিউর শিকার সাজঘরে ফেরেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। আরেক ওপেনার লিটন দাস ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন।
লিটনের ব্যাটে দুর্দান্ত শুরু
ওপেনার লিটন দাসের ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ। শুরু থেকেই লিটন খেলছেন তার স্বভাবজাত আক্রমণাত্মক খেলা। অন্যদিকে, তামিম খেলছেন দেখে-শুনে ধীরগতিতে।
একাদশে তিন পেসার
মাশরাফি মোর্ত্তজা, তামিম ইকবাল, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তাইজুল ইসলাম, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদি মিরাজ ও মোস্তাফিজুর রহমান। মাশরাফির সঙ্গে পেস আক্রমণে আছেন মোস্তাফিজুর রহমান ও দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা সাইফউদ্দিন। স্পিনে থাকছেন মেহেদী মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। নাঈমের অভিষেক হওয়ার কথা থাকলেও শান্তর ওপরই ভরসা রেখেছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
আজ রোববার দুপুর ১টায় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হয়েছে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি মোর্ত্তজা। এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে প্রায় আট মাস পর লাল সবুজের জার্সি গায়ে খেলছেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি মোর্ত্তজা।
থামতে চান না মাশরাফি
মাশরাফি। পুরো ক্যারিয়ারটাই তার মহাকাব্যিক। ইনজুরির কালো থাবা ও হতাশা তার কাছে পরাজিত হয়েছে। প্রতিবার সেই অবিশ্বাস্য ‘হাঁটুর’ জোর ফিরিয়ে এনেছে ২২ গজের উইকেটে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অধিনায়ক মাশরাফির ইতি ঘটবে এমনটাই কথা ছিল। কাল লাক্কাতুড়া চা-বাগান সংলগ্ন মনোহরী সিলেটের আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে সেই অগ্নিশর্মা, অবিশ্বাস্য ও আত্মবিশ্বাসী মাশরাফিকে দেখা গেল। তিনি মচকাবেন, তবে ভাঙবেন না। আজ শুরু হচ্ছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। প্রথম ম্যাচের আগে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নানা কথা বলেছেন। প্রায় বিশ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে চলা এ সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি কখনো কথার বাউন্সারের জবাব দিয়েছেন ছক্কা হাঁকিয়ে, কখনো কেতাবি ঢঙ্গে ডিফেন্স করেছেন। কখনো আবেগতাড়িত হয়েছেন কখনোবা নিজের স্বভাবসিদ্ধ সীমাও অতিক্রম করেছেন। তবে এখনই অবসর নিতে চান না নড়াইল এক্সপ্রেস। গতকালের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন : বোর্ড সভাপতি বলেছেন এটাই অধিনায়ক হিসেবে আপনার শেষ সিরিজ, স্পষ্ট করবেন?
মাশরাফি : স্পষ্ট করার কী আছে, আমার তো মনে হয় সবই বোর্ড প্রেসিডেন্ট বলেছেন। আমার সঙ্গে যে কথা হয়েছে মনে হয় না এখানে শেয়ার করা প্রয়োজন। ক্রিকেট বোর্ড কী বলেছে আপনারা তো জানেনই। আমার মুখ থেকে আবার শুনতে হবে কেন?
প্রশ্ন : প্রায় আট মাস পর মাঠে ফিরছেন, লক্ষ্য কী?
মাশরাফি : অবশ্যই পারফরম করা। একটা খেলেয়াড়ের জন্য এটিই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে শেষ কয়েকটা ওয়ানডেতে জয় পাইনি। জেতাটাই গুরুত্বপূর্ণ। রাইট ট্র্যাকে আসাটা।
সবাই চায় পারফরমেন্স। আমার ক্ষেত্রেও এর বাইরে কিছুই নয়। আমি চেষ্টা করব একই সঙ্গে টিম ওয়ার্ক ও জেতাটা গুরুত্বপূর্ণ। দুইটা মিলিয়ে চেষ্টা করতে হবে।
প্রশ্ন : অধিনায়ক হিসেবে দীর্ঘদিন পর ফিরেছেন। একটা গ্যাপ ছিল, দলে কিছু পরিবর্তন হয়েছে, এখনকার পরিবেশ কেমন?
মাশরাফি : আমার কাছে মনে হয় সবাই খেলার মধ্যেই ছিল। ওয়ানডে তো ছিল না। কোনো কিছুর পরিবর্তন হয়নি। সবাই প্রফেশনাল। যার যার দায়িত্ব সবাই জানে। আমার সমস্যা হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। বেশিরভাগ খেলোয়াড়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন খেলেছি। মনে হয় না সমস্যা হবে।
প্রশ্ন : জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, এখনো শুরুটা ওমন হবে?
মাশরাফি : পাঁচ বছর আগে-পরের কথা নিশ্চয়ই এক নয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় এলে পজিটিভ বিষয়গুলো হয়তো কম হবে। তবে হেরে গেলে আলোচনা বেশি হবে। এমন না যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই শুরু করতে হবে। কয়েকদিন পর দল পাকিস্তানে যাবে। এ বছর আরও খেলা রয়েছে। প্রতিটি শুরুরই একটা প্রক্রিয়া আছে।
প্রশ্ন : নতুন করে প্রমাণ করবেন নিজেকে?
মাশরাফি : আমি গ্যারান্টি দিতে পারব না যে পারফরম করবই। তবে গ্যারান্টি দিতে পারব, আমি আমার শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করব। খেলোয়াড় হিসেবে এটাই মূল জায়গা। তবে টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে প্রশ্ন থাকতে পারে যে সে নিজের সেরাটা দিচ্ছে কি না। সেখানে প্রশ্ন থাকলে আমার মনে হয় ভালো করার প্রয়োজন আছে। পৃথিবীর কেউই গ্যারান্টি দিয়ে মাঠে নামতে পারে না যে সে পারফরম করবে। আগেও বলেছি এতদিন কাউকে প্রমাণ দিতে ক্রিকেট খেলিনি। নিজের চেষ্টায় খেলেছি।
প্রশ্ন : আপনাকে নিয়ে যে এত সমালোচনা হচ্ছে আত্মসম্মানবোধে আঘাত করছে কি না…
মাশরাফি : প্রথমত, আত্মসম্মান বা লজ্জা, আমি কি চুরি করি মাঠে? আমি কি চোর। খেলার সঙ্গে লজ্জা, আত্মসম্মান আমি মেলাতে পারি না। এত জায়গায় এত চুরি হচ্ছে তাদের লজ্জা নাই। আমি মাঠে এসে উইকেট না পেলে আমার লজ্জা লাগে। মানে উইকেট আমি নাই পেতে পারি আমার সমালোচনা করবেন, সমর্থকরা করবে। লজ্জা পেতে হবে কেন। আমি কি বাংলাদেশের হয়ে খেলছি না, অন্য কোনো দেশের হয়ে খেলছি যে আমার লজ্জা পেতে হবে। আমি পারিনি আমাকে বাদ দিয়ে দেবে, জিনিসটা তো সহজ।
প্রশ্ন : আপনার অবসরের বিষয়ে বেশি জলঘোলা হচ্ছে কি?
মাশরাফি : আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে সবকিছু মিলিয়ে হয়তো পারফর্ম করিনি। জিনিসটা একটু জটিল জায়গায় আছে। এটা নিয়ে ভেবে তো আমি এখান থেকে বের হতে পারব না। আমি গ্যারান্টি দিয়েও বলতে পারব না আমি কালকে ৫ উইকেট পেয়ে সবকিছু শেষ করে দিলাম। একটা খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে একটা বয়স, একটা সময় আসে, প্রত্যেকটা দিনই তার জন্য চ্যালেঞ্জিং। আমি আসলে ওই সময়টায়ই আছি। আজ থেকে চার বছর পর তামিম, মুশফিক, রিয়াদ যারা আছে তাদেরও এ সময় আসবে। এটা কিন্তু একটা প্রক্রিয়াই, এটা নিয়ে এত কিছু ভাবনার আমি দেখি না।
প্রশ্ন : আসলে আপনি কবে অবসর নিতে চান, এমন কিছু ভেবেছেন?
মাশরাফি : থামলে তো জানবেন। বারবার একই প্রশ্ন করার কোনো মানে নেই (রেগে গিয়ে)। আপনারা কি কোনো জায়গায় আন ক্লিয়ার আছেন? একই প্রশ্ন বারবার করার কিছু নেই। বোর্ড থেকে যদি কিছু বলে বা আপনাদের যদি কিছু জানার থাকে… বোর্ডের সিদ্ধান্ত তো অবশ্যই আপনারা বোর্ড থেকে জানবেন। বোর্ড বোর্ডের সিদ্ধান্ত জানাবে। আমার সঙ্গে যে আলোচনা হবে সেটা অবশ্যই পাপন ভাই বা বোর্ড সম্পৃক্ত যারা আছেন তাদের সঙ্গে হবে। এটা আপনাদের কাছে এসে বলার কিছু নেই। একই প্রশ্ন করছেন আপনি। আমার চাওয়া তো আপনাকে আমি আর বলব না। আমি ক্রিকেট বোর্ডকে জানাব, ক্রিকেট বোর্ড যদি চায় আপনাকে জানিয়ে দেবে।
প্রশ্ন : জিম্বাবুয়ে দলকে কেমন দেখছেন?
মাশরাফি : ছোট ফরম্যাটে জিম্বাবুয়ে বেশ শক্তিশালী। এ ফরম্যাটে তারা অনেক অভিজ্ঞ। অবশ্যই আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ এগোতে চাই। কাল শুরু করছি। এর পর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ম্যাচে খেলব। এটা বলা মুশকিল আমরা তিন ম্যাচেই জয় পাব। তবে জয় দিয়েই শুরু করাটাই গুরুত্বপূর্ণ।
মিথিলা-সৃজিতের রিসেপশনে চাঁদের হাট
বাংলাদেশি অভিনেত্রী, সমাজকর্মী রাফিয়াত রশিদ মিথিলার সঙ্গে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় গাটছড়া বেঁধেছেন গত ৬ ডিসেম্বর। গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এই দম্পতির বিবাহোত্তর সংবর্ধনা (রিসেপশন)। এদিন কলকাতার রাজকুটিরে বসেছিল চাঁদের হাট। রিসেপশনে মিথিলা পরেছিলেন লাল রঙের শাড়ি। আর তার সঙ্গে মানানসই করে সৃজিত পরেছিলেন আচকান আর ধুতি। জামায় ঘন সুতোর কাজ। সৃজিত-মিথিলার পোশাকের দায়িত্বভার পড়েছিল ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্তের ওপর।

এর আগে বিয়েতে লাল জহরকোট এবং কালো পাঞ্জাবিতে সেজেছিলেন সৃজিত। আর মিথিলার পরনে ছিল লাল রঙের জামদানি শাড়ি। কপালে ছোট্ট টিপ। কানে-গলায় মানানসই গয়না।

জি নিউজ, আনন্দবাজারসহ ভারতের একাধিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সৃজিত-মিথিলার রিসেপশনের অনুষ্ঠানে রীতিমতো চাঁদের হাট বসেছিল। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সৌরসেনী মৈত্র, গার্গী রায় চৌধুরী, অর্জুন চক্রবর্তী থেকে মাধবী মুখোপাধ্যায়কে ছিল না সেই অনুষ্ঠানে।

মিথিলা বাংলাদেশের মেয়ে। তার বাবার বাড়ির তরফ থেকেও হাজির ছিলেন লোকজন। অতিথিদের তালিকায় ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও।

এদিন রাহুল-সন্দীপ্তাকে একসঙ্গে পার্টিতে আসতে দেখা যায়। অন্যদিকে, প্রিয়াঙ্কা পার্টিতে আসেন তথাগতের সঙ্গে। উপস্থিত ছিলেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তীও।

এ ছাড়া রিসেপশন পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা আরিয়ান ভৌমিক, সঙ্গীতশিল্পী জয় সরকার ও সোমলতা আচার্য। আরও ছিলেন তৃণমূলের সাংসদ, অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী।

রিসেপশনের পার্টি বলে কথা, তাই মেন্যুতেও ছিল এলাহি ছাপ। কী কী ছিল সেই মেন্যুতে?
পোলাও, ডাল মাখানি, পনির মাখানি, চিংড়ি মালাইকারি, ঠাকুরবাড়ির কষা মাংসসহ আরও অনেক কিছু। সঙ্গে মিষ্টি দই, নলেন গুড়ের কাঁচাগোল্লা।

উল্লেখ্য, মিথিলা-সৃজিতের আলাপ বেশ কয়েক বছরের। তারপর বন্ধুত্ব দিয়ে শুরু। ধীরে ধীরে গাঢ় হয়েছে প্রেম। বেশ কিছু মাস ধরেই তাদের বিয়ে নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। পরে গত ৬ ডিসেম্বর বিয়ে করেন সৃজিত-মিথিলা। বিয়ের পরদিনই এ দম্পতি মধুচন্দ্রিমার উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন সুদূর সুইজারল্যান্ড।
দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখলে যে সমস্যা হয়
গুরুত্বপূর্ণ বোর্ড মিটিং-এ আপনি ব্যস্ত থাকুন বা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে সফর করুন-সেখানে দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আপনাকে চেপে রাখতেই হবে। এমন পরিস্থিতি প্রায় আমাদের সকলের জীবনেই কখনো না কখনো এসেছে। কিন্তু নিয়মিতভাবে প্রস্রাব চেপে রাখলে তা কিন্তু গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে। আমাদের ব্লাডারের ৪০০ থেকে ৫০০ মিলিমিটার পর্যন্ত প্রস্রাব ধরে রাখার ক্ষমতা আছে। ব্ল্যাডারে বেশি প্রস্রাব জমা হলে তা ক্রমাগত ফুলে যেতে থাকে। প্রথম প্রথম সমস্যা বুঝতে না পারলেও এই অভ্যাসের ফলে এক সময় আপনি গুরুতর শারীরিক সমস্যা টের পাবেন। দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব ধরে রাখার বেশ কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এই সময়। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক এসব সমস্যা সম্পর্কে-
১
বেশিক্ষণ প্রস্রাব চেপে থাকতে থাকতে ব্লাডারের মাসল দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলে একটা সময় আপনার অজান্তেই প্রস্রাব বেরিয়ে আসবে।
২
নিয়মিতভাবে দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে থাকলে ইউটিআই বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনে আক্রান্ত হবেন আপনি। কারণ, প্রস্রাব ধরে রাখার ফলে ব্লাডারে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম নেবে। এর আগে যদি আপনার কখনো ইউটিআই হয়ে থাকে, তাহলে সহজেই এই অসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারেন আপনি।
৩
নিয়মিতভাবে অনেকক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখলে ব্লাডার বড় হয়ে যেতে পারে। ফলে প্রস্রাব আর একটু সময় ধরে রাখতে পারবেন না আপনি। প্রস্রাব করতেও সমস্যা হবে।
৪
বেশিক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখলে প্রস্রাব করার সময় আপনার ব্লাডার পুরোপুরি খালি হবে না। কিছুটা প্রস্রাব ব্লাডারে থেকে যাবে।
৫
একজন মানুষ কতবার টয়লেটে যাবেন, তা ব্যক্তিবিশেষে নির্ভর করে। তবে একজন সুস্থ সবল মানুষের দিনে ছয় থেকে আটবার টয়লেট যাওয়া উচিত।
ন্যানসি এবার আরজে
নাজমুন মুনিরা ন্যানসিকে সবাই গানের শিল্পী হিসেবেই চেনেন। এবার তাকে পাওয়া যাবে আরজে হিসেবে। গতকাল বাংলাদেশের রেডিও ক্যাপিটাল এফএম ৯৪.৮’র সঙ্গে দুই বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন গানের এই শিল্পী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ক্যাপিটাল এফএম’র সেলস হেড শুভেন্দু সাহা, নাফিজ রেদওয়ান শান্ত, আরজে জাহান অরণ্য প্রমুখ। ন্যানসি বলেন, ‘আমি গানের মানুষ। খুব একটা কথা বলা হয় না। কিন্তু এবার কথা বলার কাজই করতে হচ্ছে। রেডিও ক্যাপিটাল আমাকে যখন এই অনুষ্ঠানটি করার প্রস্তাব দেয়, আমি প্রথমে কিছুটা চিন্তায় পড়ে যাই। প্রথমে অনেকটা দ্বিধার মধ্যে ছিলাম, আমি কি পারবো? পরবর্তীতে অনুষ্ঠান সম্পর্কে জেনে, বেশ ভালো লাগলো এবং তাদের হ্যাঁ বলে দিলাম। আশা করি, অনুষ্ঠানটি শ্রোতাদের ভালো লাগবে।’ ন্যানসির অংশগ্রহণে ক্যাপিটাল এফএম’র অনুষ্ঠানটির নাম ‘লাইভ উইথ ন্যানসি’। এটি প্রচার হবে প্রতি শনিবার রাত ৯টায়।
করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মৃত্যু
যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার দেশটির ওয়াশিংটন রাজ্যে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয় বলে খবর প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। ওয়াশিংটন রাজ্যের গভর্নর জে ইনস্লি এক বিবৃতিতে বলেন,‘করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঘটনা খুবই দুঃখজনক। নাগরিকদের সুস্থ ও নিরাপদ রাখতে আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে।’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এটি প্রথম মৃত্যু হলেও এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি চীনের উহান শহরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল। এ ছাড়া দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৬৭ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। মহামারির আশঙ্কায় বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যেই চীনের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছে। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হওয়া এ ভাইরাস ঠেকাতে চীন-ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে বেশ কয়েকটি দেশ।
ছেলের পর চলে গেলেন মা
রাজধানীর ইস্কাটনের দিলু রোডের একটি আবাসিক ভবনের গ্যারেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জান্নাতুল ফেরদৌসী নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চারজন। আজ রোববার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ঢামেক হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শঙ্কর পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ঘটনার দিন জান্নাতুল ফেরদৌসীর ছেলে এ কে এম রুশদী (৫) মারা যায়। এদিকে, শরীরে ৪৩ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে এখনো হাসপাতালে রয়েছেন জান্নাতের স্বামী শহিদুল কিরমানী রনি (৪৫)। তারা নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ইটনা গ্রামের বাসিন্দা। নিহত আরও দুজন হলেন-আবদুল কাদের (৪৫) ও আফরিন জান্নাত (১৭)। ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন বলেন, জান্নাতুল ফেরদৌসীর শরীরের ৯৫ শতাংশ আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। দেহের ৪৩ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে এখনো হাসপাতালে রয়েছেন তার স্বামী শহিদুল। গত বৃহস্পতিবার ভোরে রাজধানীর ইস্কাটনের দিলু রোডের একটি আবাসিক ভবনের গ্যারেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এদিন এক শিশুসহ তিনজন নিহত হয়।
‘যৈবতী কন্যার মন’র জন্য টনির শুভ কামনা (ভিডিও)
টেলিভিশন নাটকের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা টনি ডায়েস। দীর্ঘ দিন ধরেই অভিনয় থেকে দূরে আছেন তিনি। বসবাস করছেন আমেরিকায়। বড় পর্দায় এই অভিনেতাকে সর্বশেষ দেখা যায় ২০১৬ সালে ‘পৌষ মাসের পিরিত’ ছবিতে। নার্গিস আক্তারের পরিচালনায় এতে তার সহশিল্পী হিসেবে ছিলেন চিত্রনায়িকা পপি। এবার এই নির্মাতার ‘যৈবতী কন্যার মন’ ছবির জন্য শুভ কামনা জানিয়ে একটি ভিডিওবার্তা প্রকাশ করেছেন টনি। সেলিম আল দীনের মঞ্চনাটক ‘যৈবতী কন্যার মন’ অবলম্বনে ছবিটি নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে। আর আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ছবিটি মুক্তি পাবে বলে জানান এর নির্মাতা নার্গিস আক্তার। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে প্রচার-প্রচারণাও। তারই অংশ হিসেবে সুদূর আমেরিকা থেকে শুভ কামনা জানালেন এই অভিনেতা। নির্মাতা নার্গিস আক্তার বলেন, ‘মুক্তির তারিখ এখনো চূড়ান্ত করিনি। তবে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই ছবিটি মুক্তি দেওয়া হবে। এরই মধ্যে আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।’ এদিকে, ‘যৈবতী কন্যার মন’ ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন কলকাতার সায়ন্তনী দত্ত ও নবাগত গাজী আবদুর নূর। এতে আরও আছেন গাজী রাকায়েত, গোলাম ফরিদা ছন্দা প্রমুখ।
মিথিলা-সৃজিতের রিসেপশনের মেন্যুতে কী ছিল?
বাংলাদেশি অভিনেত্রী, সমাজকর্মী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা ও পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় দম্পতির বিবাহোত্তর সংবর্ধনা (রিসেপশন) গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিন কলকাতার রাজকুটিরে বসেছিল চাঁদের হাট। রিসেপশনের পার্টি বলে কথা, তাই মেন্যুতেও ছিল এলাহি ছাপ। কী কী ছিল সেই মেন্যুতে? ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, শনিবার লিপ ইয়ারে মিথিলা-সৃজিতের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিন তারকাদের মিলনমেলার পাশাপাশি খাবারের তালিকায় ছিল অনেক আয়োজন। তালিকায় ছিল-পোলাও, ডাল মাখানি, পনির মাখানি, চিংড়ি মালাইকারি, ঠাকুরবাড়ির কষা মাংসসহ আরও অনেক কিছু। সঙ্গে মিষ্টি দই, নলেন গুড়ের কাঁচাগোল্লা। রিসেপশনে মিথিলা পরেছিলেন লাল রঙের শাড়ি। আর তার সঙ্গে মানানসই করে সৃজিত পরেছিলেন আচকান আর ধুতি। জামায় ঘন সুতোর কাজ। সৃজিত-মিথিলার পোশাকের দায়িত্বভার পড়েছিল ফ্যাশন ডিজাইনার শর্বরী দত্তের ওপর। এর আগে বিয়েতে লাল জহরকোট এবং কালো পাঞ্জাবিতে সেজেছিলেন সৃজিত। আর মিথিলার পরনে ছিল লাল রঙের জামদানি শাড়ি। কপালে ছোট্ট টিপ। কানে-গলায় মানানসই গয়না। সৃজিত-মিথিলার রিসেপশনের অনুষ্ঠানে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সৌরসেনী মৈত্র, গার্গী রায় চৌধুরী, অর্জুন চক্রবর্তী থেকে মাধবী মুখোপাধ্যায়কে ছিল না সেই অনুষ্ঠানে। অতিথিদের তালিকায় ছিলেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। এ ছাড়া রিসেপশন পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা আরিয়ান ভৌমিক, সঙ্গীতশিল্পী জয় সরকার ও সোমলতা আচার্য। আরও ছিলেন তৃণমূলের সাংসদ, অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। উল্লেখ্য, পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ে গত ৬ ডিসেম্বর বিয়ে করেন সৃজিত-মিথিলা। বিয়ের পরদিনই এ দম্পতি মধুচন্দ্রিমার উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন সুদূর সুইজারল্যান্ড।
আতঙ্কে ৩ দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের
মরণঘাতী করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে একজনের মৃত্যুর ঘটনায় তিন দেশের ওপর অতিরিক্ত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন প্রশাসন। এই তিন দেশ হচ্ছে ইরান, ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়া। গতকাল শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া এক বিবৃতির বরাত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে কাতারের সংবাদমাধ্যম ‘আল জাজিরা’।মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেন, ইরানের ওপর আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়ানো হয়েছে। বিগত ১৪ দিনে যেসব বিদেশি নাগরিক ইরানে প্রবেশ করেছিল তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এছাড়াও ইতালি এবং উত্তর কোরিয়ার যেসব অঞ্চলে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রয়েছে সেসব অঞ্চলে মার্কিন নাগরিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে দেশটির স্বাস্থ্য সেক্রেটারি অ্যালেক্স আজার বলেন, ‘করোনাভাইরাস আক্রান্ত অঞ্চলে মার্কিন নাগরিকদের ভ্রমণ এবং ওই সকল অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ ঠেকাতে এই নিয়ন্ত্রণ কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে।’ প্রসঙ্গত, গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। মহামারীর আশঙ্কায় বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যেই চীনের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছে। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হওয়া এ ভাইরাস ঠেকাতে চীন-ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে বেশ কয়েকটি দেশ। এই ভাইরাসে সারা বিশ্বে প্রায় ৮৫ হাজারেও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।
বীমার টাকা গ্রাহক যেন ঠিকভাবে পান, নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
বীমার টাকা গ্রাহক যেন ঠিকভাবে পান সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রোববার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে বীমা দিবসের উদ্বোধন করে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বীমার দাবিকৃত অর্থ পেতে গ্রাহকরা যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’ বীমা খাতে সরকার উৎসাহ বাড়াতে কাজ করছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বীমা নিয়ে গ্রাহকদের আস্থা ও বিশ্বাসের সংকট দূর করার পাশাপাশি, বীমা সেবা সহজীকরণ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে দেশের সকল বীমা কোম্পানিকে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি সম্বলিত অটোমেশন পদ্ধতির আওতায় আনা হবে।’ এ সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে বীমা খাতে দক্ষ পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিতে হবে বলেও জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। এবারের বীমা দিবসে পাঁচজন বিশিষ্ট বীমা ব্যক্তিত্বকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা হলেন- সাধারণ বীমা করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান খোদা বক্স, গোলাম মাওলা, বিজিআইসি প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম এ সামাদ, জীবন বীমা করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল আলম এবং ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাফায়েত আহমেদ। যারা পদক পেয়েছেন তারা সবাই মরহুম। তাদের পক্ষে স্বজনরা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক গ্রহণ করেন। ‘বীমা দিবসে শপথ করি, উন্নত দেশ গড়ি’ এ প্রতিপাদ্যে রোববার দেশে প্রথমবারের মতো পালিত হচ্ছে জাতীয় বীমা দিবস। বীমা শিল্পের উন্নয়ন ও বীমা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
চার ধরনের ভিসায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলো সৌদি
বিভিন্ন পেশায় কর্মরত প্রবাসীদের ওয়ার্ক ভিজিট ভিসা, ব্যবসায়িক ভিসা ও ফ্যামিলি ভিজিট ভিসায় যাত্রীদের সৌদি আরবে প্রবেশে এখন থেকে আর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ জানায়, গত বৃহস্পতিবার সরকারের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থেকে কর্মসংস্থান ভিসা, ওয়ার্ক ভিজিট ভিসা, ব্যবসায়িক ভিসা এবং পরিবার ভিজিট ভিসাবহনকারী যাত্রীদের দেশে প্রবেশে ছাড় দেওয়া হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান সৌদি এয়ারলাইনস এক বিবৃতিতে বলেছে, এ বিষয়ে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নির্দেশনা পেয়েছে। সমস্ত ভিসাধারীদের পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি না দেওয়া পর্যন্ত সৌদি আরবে প্রবেশের কোনো বাঁধা নেই। এ ছাড়া সৌদি আরবের ডিরেক্টর জেনারেল অফ পাসপোর্ট (জাজাওয়াত) এক ঘোষণায় জানান, মাল্টিপল ভিসাধারীরা যদি তাদের সৌদি আরবে প্রবেশের আগে ২ সপ্তাহের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো দেশ ভ্রমণ না করে থাকেন, তবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই তারা সৌদি আরবে প্রবেশ করতে পারবেন। সৌদি আরবে এখনো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ না ঘটলেও ইরানে ইতিমধ্যে ১৯ জনের মৃত্যু ঘটেছে এবং মধ্যপ্রাচের বেশ কিছু দেশে গত কয়েক দিনে আক্রান্ত রোগীর খোঁজ মিলেছে। সৌদি সরকার চীন, তাইপেই, হংকং, ইরান, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, ম্যাকাও, জাপান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, ভারত, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন, আজারবাইজান, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, সোমালিয়া এবং ভিয়েতনামের মতো দেশ থেকে আসা সমস্ত যাত্রী এবং বিমান সংস্থাগুলোর জন্য ভ্রমণ ভিসা ও স্থগিত করা হয়েছে।
জনতার মাথা নুয়ে পড়ছে
সম্প্রতি অ্যাননটেক্স গ্রুপ ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের দুর্নীতির জন্য সবচেয়ে বেশি আলোচিত সরকারি খাতের জনতা ব্যাংক। বর্তমানে সব ধরনের নেতিবাচক সূচকে সবার শীর্ষে জনতা ব্যাংক। প্রথমবারের মতো গত বছর বড় অঙ্কের লোকসান দিয়েছে ব্যাংকটি। বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করলেও সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে ব্যাংকটির। কয়েক বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো প্রভিশন ঘাটতি ও মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকটি একসময় ভালো ছিল; কিন্তু এখন ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। এর জন্য পরিচালনা পর্ষদ এবং শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দায়ী। তারা নিয়ম মেনে যে ঋণ দেয়নি, সেগুলো এখন খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে সংক্রামক ব্যাধির মতো অন্য সংকট তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, শুরুতেই দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল; কিন্তু সেটি করা হয়নি। এখন ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অনিয়মের সঙ্গে যেসব কর্মকর্তা জাড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত না করলে ব্যাংকটির অবস্থা আরও খারাপ হবে। এ বিষয়ে কথা বলতে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদ ও এমডি আব্দুছ ছালাম আজাদকে ফোন দিয়ে পরিচয় দিলে তারা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে এসএমএস এবং কল দিলেও তারা সাড়া দেননি। বিদায়ী ২০১৯ সালের হিসাব-নিকাশ এখনো চূড়ান্ত হয়নি; কিন্তু বিভিন্ন সূত্র থেকে আর্থিক সূচকগুলোর তথ্য জানা গেছে। ২০১৯ সাল শেষে ব্যাংকটির মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। ঋণের পরিমাণ ৪৯ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। এই ঋণের মধ্যে খেলাপি ১৪ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা; যা দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আগের বছর খেলাপি ঋণ ছিল ১৭ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ কমানোর কারণ খেলাপিদের গণছাড়ের আওতায় পুনঃতফসিল সুবিধা দেওয়া। গতবছর খেলাপি ঋণ কমেছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা; অথচ পুনঃতফসিল করা হয়েছে ৫ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। ছাড় দেওয়ার সমপরিমাণ খেলাপি ঋণ কমাতে পারেনি ব্যাংকটি। ২০১৮ সালে দেড় হাজার কোটি টাকা পুনঃতফসিল করে ব্যাংকটি। ব্যাপকহারে পুনঃতফসিল করায় ব্যাংকটির সুদ-আয় বেড়ে মুনাফা বাড়ার কথা; কিন্তু দুর্নীতিগ্রস্ত অনেক ঋণ নতুন করে খেলাপি হয়ে গেছে। ফলে মুনাফার ধারা থেকে বেরিয়ে লোকসানে পড়েছে ব্যাংকটি। গত বছর পরিচালন মুনাফা কমে হয়েছে ৭০৮ কোটি টাকা; আগের বছর যা ছিল ৯৭৮ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন ও কর পরিশোধের পর ব্যাংকটির নিট লোকসান হয়েছে ২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। আগের বছর ব্যাংকটির নিট মুনাফা ছিল ২৫ কোটি টাকা। এর আগের তিন বছর মুনাফা করেছে ব্যাংকটি। খেলাপি ঋণ বেশি থাকায় ব্যাংকটির প্রভিশনের প্রয়োজনীয়তা বাড়ে; কিন্তু আয় কমে যাওয়ায় প্রয়োজনমাফিক প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি ব্যাংকটি। ২০১৯ সাল শেষে প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৬১ কোটি টাকা। গত চার বছরে সবসময় প্রভিশন উদ্বৃত্ত ছিল। প্রভিশন ঘাটতি থাকার অর্থ হচ্ছেÑ জনগণের জমানো অর্থ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। নিয়ম মেনে ঋণ বিতরণ না করায় ঋণ শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে জনতা ব্যাংকের। ফলে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বাড়ছে। ব্যাংকের আর্থিকভাবে শক্তিশালী করতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। সেটিও করতে ব্যর্থ হয়েছে জনতা ব্যাংক। গত ৫ বছরে ২০১৯ সালের আগে ব্যাংকটির মূলধন উদ্বৃত্ত ছিল; কিন্তু গত বছর শেষে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে ৫০ কোটি, ২০১৭ সালে ১৫ কোটি, ২০১৬ সালে ২৭৮ কোটি ও ২০১৫ সালে ব্যাংকটির মূলধন উদ্বৃত্ত ছিল ৫৬ কোটি টাকা। ব্যাংক সূত্র জানায়, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে বছর দুয়েক আগেও আর্থিক সূচকে ভালো অবস্থানে ছিল জনতা ব্যাংক; কিন্তু ব্যাংকটির শীর্ষ পদস্থরা নিয়ম ভেঙে উদারহাতে অ্যাননটেক্স গ্রুপ ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দিয়েছে। অ্যাননটেক্স গ্রুপের কর্ণধার ইউনুস বাদল ২২টি প্রতিষ্ঠানের নামে ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে ৭টি প্রতিষ্ঠানের ঋণকে বিশেষ সুবিধাও দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ক্রিসেন্ট গ্রুপের দুই ভাই এমএ কাদের ও জাজ মাল্টিমিডিয়ার আবদুল আজিজ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে হাতিয়ে নিয়েছেন ৫ হাজার কোটি টাকা। এসব ঋণের টাকা আদায় হচ্ছে না। এর আগে বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারির মূল অকুস্থল ছিল জনতা ব্যাংক। এসব কেলেঙ্কারির সঙ্গে জনতা ব্যাংকের বর্তমান এমডি আব্দুস ছালাম আজাদ সরাসরি জড়িত বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে; কিন্তু অদৃশ্য কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আব্দুছ ছালাম আজাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে গড়িমসি করছে। ২০১৭ সালে তিনি ব্যাংকটির এমডি হিসেবে নিয়োগ পান। এর আগে এই ব্যাংকের ডিএমডি ছিলেন আব্দুছ ছালাম আজাদ। দুর্নীতির জন্য শাখা ব্যবস্থাপক পর্যায় থেকেই আলোচিত এই কর্মকর্তা। ব্যাংকটির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৮ সালে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়। ২০১৭ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ২ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা, পরের বছর যা হয় ১৭ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা। এছাড়া ২০১৫ সালে ৪ হাজার ৩১৮ কোটি ও ২০১৬ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা।
শ্যামলীতে র্যাবের তল্লাশি চৌকিতে ‘গোলাগুলি’, নিহত ১
রাজধানীর শ্যামলীতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) তল্লাশি চৌকিতে দুর্বৃত্তদের সঙ্গে গোলাগুলিতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে শ্যামলীর কিডনি হাসপাতালের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের মানিব্যাগে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্রের সূত্র ধরে জানা যায়, নিহত ব্যক্তির নাম হানিফ মিয়া ওরফে শাহীন বিশ্বাস (৪৮)। তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানায়। র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং-এর সহকারী পরিচালক এএসপি সুজয় সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শনিবার দিবাগত রাত ১২টায় র্যাবের তল্লাশি চৌকিতে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশির সময় দুর্বৃত্তদের সঙ্গে গোলাগুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। এ সময় একটি বিদেশি পিস্তল, ৬ রাউন্ড গুলি ও একটি সিএনজি উদ্ধার করা হয়েছে। র্যাব-২ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত ১১টা থেকে শ্যামলী কিডনি হাসপাতালের সামনে নিয়মিত ডিউটির অংশ হিসেবে র্যাব’র টহল টিম তল্লাশি চৌকি স্থাপন করেছিল। সেখানে সন্দেহভাজন গাড়ি, সিএনজি ও মোটরসাইকেল যাত্রীদের তল্লাশি করা হচ্ছিল। রাত ১২টার দিকে একটি সিএনজিকে থামানোর সংকেত দিলে চেকপোস্টে এসে সিএনজিটি থামে। এরপর সিএনজিতে থাকা চালকসহ চার যাত্রীকে গাড়ি থেকে নামতে বলা হয়। কিন্তু চালকসহ তিনজন ব্যক্তি নেমে আসলেও পেছনের সিটে থাকা অন্যজন নামতে চাইছিলেন না। তাকেও নামার জন্য বলা হয়। তখন সিএনজি থেকে আগেই নামা তিনজন ফাঁকা গুলি ছুড়ে দৌড়ে জাতীয় মানসিক হাসপাতালের সীমানা গ্রিল টপকে পালিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় সিএনজিতে থাকা ব্যক্তি র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে উভয় পক্ষের গোলাগুলিতে এক দুর্বৃত্ত গুরুতর আহত হয়। র্যাব জানায়, পরবর্তী সময়ে ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৬ রাউন্ড গুলি ও একটি সিএনজি উদ্ধার করা হয়। আর গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাবা হতে চলেছেন বরিস জনসন, জানালেন প্রেমিকা
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বাবা হতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার প্রেমিকা ক্যারি সাইমন্ডস। গতকাল শনিবার বরিস জনসনের সঙ্গে একটি রোমান্টিক ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে এ ঘোষণা দেন তিনি। ওই পোস্টে ৫৫ বছর বয়সী বরিসের সঙ্গে তার এনগেজমেন্ট হয়েছে বলেও জানান ৩১ বছর বয়সী সাইমন্ডস। কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক প্রেস প্রধান সাইমন্ডস ওই ইনস্টাগ্রাম পোস্টে বলেন, ‘আমি সাধারণত এই ধরনের জিনিস পোস্ট করি না। তবে আমি চেয়েছিলাম আমার বন্ধুরা আমার কাছ থেকেই এটি জানুক…আপনারা অনেকেই ইতিমধ্যে জানেন। কিন্তু আমার যেসব বন্ধুরা এখনো জানেন না তাদের উদ্দেশ্যে, গত বছরের শেষের দিকে আমাদের এনগেজমেন্ট হয়েছে…এবং গরমের শুরুর দিকে আমাদের বাচ্চা আসতে চলেছে। খুবই ভালো লাগছে।’যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মেট্রো নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত জুলাইয়ে বরিস জনসন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে ডাউনিং স্ট্রিটের বাড়িতে ওঠেন। এর মধ্য দিয়ে ডাউনিং স্ট্রিটে লিভ টুগেদার করা প্রথম দম্পতি হিসেবে ইতিহাস গড়েন তারা। কনজারভেটিভ পার্টির নেতা বরিস জনসন তার ব্যক্তিগত জীবনযাপনের জন্য বহুবার সমালোচনার শিকার হয়েছেন। সাইমন্ডসের সঙ্গে এটি প্রথম সন্তানের খবর হলেও এর আগে বরিস জনসন পাঁচ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বরিস জনসন ১৯৮৭ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালেগ্রা মোস্তিন-ওউনকে বিয়ে করেছিলেন। ১৯৯৩ সালে মেরিনা হুইলারের সঙ্গে পরকীয়া করায় তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। পরে ওই বছরই তিনি মেরিনা হুইলারকে বিয়ে করেন। তারা চার সন্তানের জন্ম দেন। ২০১৯ সালে সাইমন্ডসের সঙ্গে সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসলে মেরিনার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা দেন বরিস। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে ওই বিবাহবিচ্ছেদের আইনি নিষ্পত্তি ঘটে। যার মধ্য দিয়ে তালাকপ্রাপ্ত প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও উঠে এসেছে তার নাম।
লিটনের ব্যাটে দুর্দান্ত শুরু
ওপেনার লিটন দাসের ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ। শুরু থেকেই লিটন খেলছেন তার স্বভাবজাত আক্রমণাত্মক খেলা। অন্যদিকে, তামিম খেলছেন দেখে-শুনে ধীরগতিতে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ ৭ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৩২ রান। ক্রিজে আছেন লিটন দাস ২২ ও তামিম ইকবাল ৮ রান নিয়ে।
একাদশে তিন পেসার
মাশরাফি মোর্ত্তজা, তামিম ইকবাল, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তাইজুল ইসলাম, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদি মিরাজ ও মোস্তাফিজুর রহমান। মাশরাফির সঙ্গে পেস আক্রমণে আছেন মোস্তাফিজুর রহমান ও দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা সাইফউদ্দিন। স্পিনে থাকছেন মেহেদী মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। নাঈমের অভিষেক হওয়ার কথা থাকলেও শান্তর ওপরই ভরসা রেখেছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
আজ রোববার দুপুর ১টায় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হয়েছে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি মোর্ত্তজা। এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে প্রায় আট মাস পর লাল সবুজের জার্সি গায়ে খেলছেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি মোর্ত্তজা।
দিল্লির দাঙ্গায় ৮০ মুসলিমকে বাঁচিয়েছেন এই শিখ
ভারতের দিল্লিতে চলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শত শত মুসলিম ঘরবাড়ি, লুটপাট হয়েছে দোকান, হত্যা ছাড়াও দাঙ্গাকারীদের লাথি খেয়ে জন্মেছে ‘মিরাকল শিশু’। ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি যখন মুসলিমদের জন্য আতঙ্কের কারণ তখন হিন্দুদেরই কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। তাদেরই একজন উত্তর-পূর্ব দিল্লির গোকুলপুরীর বাসিন্দা মাহিন্দর সিং। ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘শিখ নিউজ এক্সপ্রেস’ এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উগ্র হিন্দুত্ববাদী হাত থেকে গত ৬০-৮০ জন মুসলিমকে প্রাণে বাঁচিয়ে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিয়েছেন মাহিন্দর এবং তার ছেলে ইন্দ্রজিৎ সিং। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হিন্দু অধ্যুষিত গোলকপুরী এলাকায় বসবাসকারী মুসলিমদের বাড়িতে অজ্ঞাত পরিচয়ের দাঙ্গাকারীরা হামলা চালাচ্ছে বলে খবর পান মাহিন্দর। সঙ্গে সঙ্গে ছেলে ইন্দ্রজিৎকে ডেকে নিয়ে স্থানীয় মুসলিমদের বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে যান। তারপর ছেলের বুলেট মোটরসাইকেল ও নিজের স্কুটিতে করে ৬০ থেকে ৮০ জন মুসলিম প্রতিবেশীকে গোকুলপুরী থেকে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা করদমপুরে নিরাপদ আশ্রয়ে নামিয়ে দিয়ে আসেন। মাহিন্দর বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি দেখে ১৯৮৪ সালে দিল্লিতে হওয়া শিখ নিধন যজ্ঞের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল আমার। তাই হিন্দু বা মুসলিম কিছু দেখিনি। আমার চোখে শুধু মানুষ ভাসছিল। শুধু ছোট ছোট শিশুর মুখ চোখে পড়ছিল। এসব দেখে আমার মনে হয়, এরা সবাই আমার সন্তান। এদের কোনো ক্ষতি হতে দেব না আমি। মানবিকতার তাগিদেই প্রয়োজনের সময় তাদের সাহায্য করেছি আমরা। এছাড়া আর কী বা বলতে পারি?’ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনকে (এনআরসি) কেন্দ্র করে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে গত কয়েকদিন ধরে চলা সাম্প্রদায়িক অশান্তির জেরে এখনও পর্যন্ত ৪৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০০ শতাধিক।
ঢাকা বারে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ পদে বিএনপি জোটের জয়
ঢাকা বার আইনজীবী সমিতির ২০২০-২০২১ কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠনের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের নীল প্যানেল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১০টি পদে জয়লাভ করেছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল ছয়টি সম্পাদকীয় পদসহ ১৩টি পদে জয়লাভ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। দুদিনব্যাপী এ নির্বাচনে ভোট গণনা শেষে আজ শনিবার বেলা ১১টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিনিয়র অ্যাডভোকেট মুন্সি ফখরুল ইসলাম এ ফলাফল ঘোষণা করেন। ফলাফলে নীল প্যানেলের ডভোকেট মো. ইকবাল হোসেন সভাপতি পদে ৪ হাজার ৯৫২ ভোট পেয়ে সাদা প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. মোশারফ হোসেনকে ৭৩৭ ভোটে পরাজিত করেছেন। অন্যদিকে, নীল প্যানেলের অ্যাডভোকেট মো. হোসেন আলী খান হাসান সাধারণ সম্পাদক পদে ৪ হাজার ৭২৫ ভোট পেয়ে সাদা প্যানেলের অ্যাডভোকেট মো. আহসান তারিরকে ৩০২ ভোটে পরাজিত করেছেন। নীল প্যানেলের অন্যান্য পদে বিজয়ীরা হলেন, কোষাধ্যক্ষ পদে অ্যাডভোকেট আব্দুল আল মামুন ও অফিস সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট এইচএম মাসুম, সদস্য পদে অ্যাডভোকেট ইয়াছিন মিয়া, কাজী আফরোজা সুলতানা (ইভা), মো. আব্দুল বাসেত রাখী, আজহার উদ্দিন রিপন, মো. তানভীর হাসান সোহেল ও সাদেকুল ইসলাম ভূইয়া (জাদু)। সাদা প্যানেলের বিজয়ীরা হলেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মো. আবদুল কাদের, সহ-সভাপতি পদে মো. ইমাম হোসেন মঞ্জু, সিনিয়র সহ- সাধারণ সম্পাদক পদে একেএম হাবিবুর রহমান চুন্নু, সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে সিকদার মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান হিমেল, লাইব্রেরি সম্পাদক পদে মো. আতাউর রহমান খান (রুকু), সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে তাসলিমা আক্তার রীতা, ক্রীড়া সম্পাদক পদে সাইফুল ইসলাম সুমন ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে মোহাম্মাদ খালেদুর রহমান, সদস্য পদে এএইচএম শফিকুল ইসলাম সোহাগ, মো. সাব্বির হোসেন, সাইফুল ইসলাম, মো. মেহেদী হাসান মেরিন এবং মো. রমজান আলী সরদার রানা। এর আগে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার এ নির্বাচনে ১৮ হাজার ১৫০ জন ভোটারের মধ্যে ৯ হাজার ২৯৯ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ভোটের ২৮ ঘণ্টা পর শুক্রবার রাত ৯টা থেকে ভোট গণনা শুরু হয়। নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলে মোট ৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে সিনিয়র অ্যাডভোকেট মুন্সি ফখরুল ইসলাম প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। যার অধীনে ১০ জন কমিশনার এবং ১০০ জন সদস্য রয়েছেন। উল্লেখ্য, ২০১৯-২০২০ কার্যবর্ষের নির্বাচনে ২৫টি পদের মধ্যে সাদা প্যানেল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৮টি পদে এবং নীল প্যানেল তিনটি সম্পাদকীয় পদসহ ৯টি পদে জয়লাভ করে।
‘সালাম’ দিয়ে থামায়, চাকু দেখিয়ে কেড়ে নেয় সর্বস্ব
রাজধানীতে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. আবদুল বাতেন। তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা ছিনতাইকারী ও সালাম পার্টি দলের সক্রিয় সদস্য। গ্রেপ্তারের সময় তাদের হেফাজত থেকে ৭৪টি বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল ফোন, একটি ট্যাব ও একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত ১৩টি ছুরি ও দুটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়। ডিবির এই কর্মকর্তা জানান, এই চক্রের সদস্যরা রাজধানীর সাতরাস্তা, নাবিস্কো, মহাখালী বাস টার্মিনাল, মহাখালী রেলক্রসিং, বনানী, গুলশান-১, গুলশান লিংক রোড, রামপুরা ব্রীজ, ধানমন্ডি, বংশাল, চকবাজার, কলাবাগান, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় গলিপথগুলোতে যাতায়াতকারী রিকশা বা পায়ে হাঁটা যাত্রীদের ছুরি দেখিয়ে সর্বস্ব ছিনতাই করে। এ জন্য তারা তাদের সুবিধামত কোনো স্থানে রিকশার যাত্রী অথবা পথচারীদের ‘সালাম’ দেয়। এমনভাবে সালাম দেয় যেন তারা পরস্পর পরস্পরের পূর্ব পরিচিত। সালাম পেয়ে ওই পথচারী থামলে তারা কাছে গিয়ে চাকু দেখিয়ে ও ভয় দেখিয়ে সর্বস্ব কেড়ে নেয়। আব্দুল বাতেন জানান, ছিনতাইকৃত মোবাইলগুলো তারা মোবাইল পার্টসের দোকানে বিক্রি করেন। ধরা পড়া ঠেকাতে দোকানদাররা এসব চোরাই মোবাইল কিনে ঠিকই, কিন্তু মোবাইল বিক্রি করে না। তারা চোরাই মোবাইলের ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ বিক্রি করে। এমনকি দোকানিরা মোবাইলের মাদারবোর্ড ও আইএমইআই নম্বর পাওয়া যাবে এমন পার্টসও বিক্রি করে না। বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনার তদন্তে নেমে এ চক্রগুলোর সন্ধান পায় ডিবি। এর সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
ওয়াসার পানির দাম বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ নগরবাসী
ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির দাম ছয় মাসের ব্যবধানে আরও ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাগরিকরা। বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে পানির বিল বাড়িয়ে দেওয়ায় বাড়িওয়ালারাও এখন ভাড়া বাড়িয়ে দেবেন বলে আশঙ্কা করছেন তারা। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পানির দাম বাড়িয়ে একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়। সেখানে বলা হয়, আবাসিকে ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম ১১ টাকা ৫৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা করা হয়েছে। আর বাণিজ্যিক সংযোগে প্রতি হাজার লিটার পানির দাম ৩৭ টাকা ৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়েছে। একইভাবে আবাসিক সংযোগে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রতি হাজার লিটার পানির দাম ৯ টাকা ৯২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৪০ পয়সা এবং বাণিজ্যিকে ২৭ টাকা ৫৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা ৩০ পয়সা করা হয়েছে। অর্থাৎ আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ঢাকায় পানির দাম ২৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং চট্টগ্রামে ২৫ শতাংশ বাড়ছে। আর বাণিজ্যিক সংযোগে ঢাকায় ৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং চট্টগ্রামে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ দাম বেড়েছে পানির। এর আগে গত বছর ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ানো হয়। সে সময় ঢাকায় আবাসিক সংযোগে পানির দাম বাড়ে ১০ শতাংশের মতো। ছয় মাসের ব্যবধানে পানির দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোড এলাকার মীর মোকাব্বির হোসেন গতকাল বলেন, ‘সরকার চুরি বন্ধ করতে পারে না, এর দায় চাপায় সাধারণ মানুষের ওপর।’ মোকাব্বির জানান, আগে তার ছয়তলা বাড়ির জন্য পানির বিল আসত মাসে ১০ হাজার টাকার মতো। এখন তাকে আরও অন্তত আড়াই হাজার টাকা বেশি দিতে হবে। ‘এই টাকা আমি দেব কোত্থেকে? আসলে আমাদের চতুর্দিক থেকে শুষে নেওয়া হচ্ছে। তারা যেটা করবে সেটাই মেনে নিতে হবে।’ জাতীয় ভাড়াটিয়া পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, বিদ্যুৎ, গ্যাস বা পানিÑ এই তিন সেবার যে কোনো একটার দাম বাড়লেই বাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দেন মালিকরা। আর এখন বিদ্যুৎ-পানি একসঙ্গে বেড়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বৃহস্পতিবার পাইকারি, খুচরা ও সঞ্চালনÑ তিন ক্ষেত্রেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। তাতে সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে (খুচরা) প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, যা মার্চ থেকে তাদের দিতে হবে। ইয়াসিন বলেন, ‘দেখা গেছে পানির বিল বেড়েছে দুই-তিনশ টাকা। বাড়িওয়ালা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকা। এভাবেই দিনের পর দিন চলে আসছে। যতদিন পর্যন্ত সরকারের চার্ট আকারে ভাড়া না আসে ততদিন এভাবেই চলবে। এজন্য ইউটিলিটি বিল ভাড়াটেরা আলাদা দেব এমন আইন করতে হবে।’ নাগরিকদের এই ক্ষোভের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, বৃহত্তর সুবিধার জন্য জনগণকে ‘কিছুটা চাপ’ নিতেই হবে। তিনি বলেন, ‘বিকল্প কিছু আমাদের ছিল না। দাম না বাড়ালে প্রতিষ্ঠানগুলো টিকতে পারবে না। দিন দিন এভাবে চললে প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর হয়ে যাবে। অন্য কোনো জায়গা থেকে ঋণ করতে হবে। আর সামান্য প্রেসার নিলে মানুষ বৃহত্তর অর্থে উপকৃতই হবে। এসব বিষয় চিন্তা করে বাস্তবতার ভিত্তিতেই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ বাংলাদেশে পানির দাম এখনো পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে কম দাবি করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের উৎপাদন খরচ কিন্তু অন্য দেশের মতোই। দাম আরও বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব ছিল, কিন্তু বেশি দাম বাড়ালে মানুষের মধ্যে একটা নেতিবাচক বার্তা যাবে। হিসাব করে দেখেছি পরিবারপ্রতি ৫০-৬০ টাকা করে পানির দাম বাড়বে। এই দাম বৃদ্ধির ফলে যদি সে নিরাপদ পানি পায় তাহলে তো সমস্যার কিছু নেই।
চট্টগ্রামে পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণ, পুলিশসহ আহত ৫
চট্টগ্রাম নগরের দুই নম্বর গেট মোড় পুলিশ বক্সে বোমা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। কে বা কারা এই হামলা চালিয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি পুলিশ। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই হামলার ইতিপূর্বে ঢাকায় পুলিশ বক্সে নব্য জেএমবির বোমা হামলার যোগসূত্র রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হামলায় আহতরা হলেন, সার্জেন্ট আরাফাতুর রহমান, সহকারী পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) মো. আতিক, পথচারী জাহিদ বিন জাহাঙ্গীর, মো. সুমন ও দশ বছরের এক শিশু। তাঁরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ট্রাফিক কনস্টেবল নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বাজার করে তিনি এগুলো ট্রাফিক পুলিশ বক্সের পাশে রাখেন। দায়িত্ব পালনের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জামও নেন। তখন বাক্সে ভেতর কিছু দেখেননি। রাত সাড়ে আটটার দিকে ২ নম্বর গেটে মোড়ে দায়িত্ব পালনকালে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। তবে আশপাশে কাউকে দেখেননি।’ ঘটনাস্থলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রথমে আমরা মনে করেছিলাম বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এই ঘটনা ঘটেছে। পরে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে মনে হচ্ছে বিস্ফোরণ। এটি পুলিশ বক্সের ভেতর কে বা কারা রেখে গিয়েছিল ধারণা করা হচ্ছে। ছুড়ে মারা হয়নি। ঢাকায় পুলিশ বক্সে হামলার ঘটনার সঙ্গে এটির মিল রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
ভারতের মন্ত্রীর টুইটে এক লাফে কেজিতে কমল ২০ টাকা
মৌসুম শুরু হওয়ায় বাজারে দেশি নতুন পেঁয়াজ ও রসুনের সরবরাহ বেড়েছে। অন্যদিকে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের খবরে সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমতে শুরু করেছে। এর মধ্যে সব ধরনের পেঁয়াজ কেজিতে ২০ টাকা এবং রসুনের দাম কমেছে ৪০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। গতকাল শুক্রবার কারওয়ানবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগরসহ রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ ঠিক থাকলে দুই সপ্তাহে আরও দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। খুচরা বাজারে মানভেদে গতকাল দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে, গত সপ্তাহেও যা ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা। এ ছাড়া গেল সপ্তাহে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া মিয়ানমারের পেঁয়াজ এখন ৯০ থেকে ১০০ টাকা। এদিকে ভারতের খাদ্যমন্ত্রী রাম বিলাস পাসওয়ান গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এক টুইট বার্তায় জানান, বাজার স্থিতিশীল থাকায় এবং প্রচুর উৎপাদন হওয়ায় ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই ব্যবসায়ীরা বাজারে পেঁয়াজ ছেড়ে দিচ্ছেন। এতে হঠাৎ সরবরাহ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি দেশি নতুন হালি পেঁয়াজের সরবরাহও বাড়তে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে আগামী সপ্তাহের মধ্যে দাম আরও কমে যাবেÑ বলছিলেন পেঁয়াজের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান লাকসাম বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী মো. হাবিবুর রহমান। কারওয়ানবাজারের পেঁয়াজের পাইকারি দোকান বিক্রমপুর বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ফয়েজ জানান, বৃহস্পতিবার থেকে দুধাপে দাম কমে শুক্রবার পাইকারিতে দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। এ ছাড়া মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাজারে সরবরাহ বাড়ায় দামও কমছে। চলতি সপ্তাহে আবারও দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে চীনের করোনা ভাইরাসের প্রভাবে কদিন আগে রসুনের বাজার অস্থির হয়ে উঠলেও কিছুটা স্বস্তি এনেছে দেশি নতুন রসুন। খুচরা বাজারে দেশি রসুনের কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকা। কোথাও কোথাও আরও কমেও বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে অবশ্য ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। অন্যদিকে আমদানিকৃত চায়না রসুনের বর্তমান দাম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, দুদিন আগে যা ছিল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। আর আগের সপ্তাহে ২০০ থেকে ২১০ টাকায় কিনতে হয়েছে। শ্যামবাজারের রসুনের পাইকারি প্রতিষ্ঠান মিতালী বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী কানাই সাহা জানান, চীন থেকে নতুন করে আমদানি হচ্ছে না। তবে দেশি নতুন রসুন উঠতে শুরু করায় দাম কমেছে। পাইকারি বাজারে দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে, গত সপ্তাহে যা ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। অন্যদিকে পাইকারিতে চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি। দুদিন আগেও তা বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকায়। এদিকে চিনি ও ভোজ্যতেলের দামও বেড়েছে। কারওয়ানবাজারের কিচেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে চিনির দাম বেড়েছে। কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়ে বর্তমানে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, গত সপ্তাহেও যা ছিল ৬০ থেকে ৬২ টাকা। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে হঠাৎ চিনির বস্তাতেই (৫০ কেজি) দাম বেড়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। বর্তমানে ৩ হাজার ১৪০ থেকে ৩ হাজার ১৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে, যা গত সপ্তাহেও বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৫০ থেকে ৩ হাজার ৬০ টাকায়।
বিয়েতে কনেপক্ষের হামলায় বরসহ আহত ২০
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পদ্মা গ্রামে বিয়ে বাড়িতে বউ সাজানোকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে সংঘর্ষের সৃষ্টি হলে বর পক্ষের ২০ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বরসহ গুরুতর আহত তিনজনকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের পদ্মা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মেয়ের বাবা মোফাজ্জল হাওলাদারকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন। তিনি জানান, বর পক্ষের লোকজন বিয়ে বাড়িতে খাবার শেষ করে দ্রুত বউ সাজিয়ে দিতে কনে পক্ষের লোকজনের কাছে অনুরোধ জানান। এর এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটি হয়। পরে মেয়ে পক্ষের লোকজন বর পক্ষের লোকজনের ওপর উত্তেজিত হয়ে হামলা চালায়। এ বিষয়ে বরের ভাই আবুল কালাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মোংলা সদর উপজেলা থেকে পাথরঘাটায় ভাইয়ের বিয়ের উদ্দেশ্যে আসি। বিয়ে বাড়িতে দুপুরের খাবার সেরে আমরা কনেকে নিয়ে মোংলায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আগে থেকেই তাদেরকে জানাই। যেহেতু পাথরঘাটা থেকে মোংলা যেতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা সময় লাগে। তাই কনেকে সন্ধ্যা হওয়ার আগে সাজিয়ে দিতে বললে মেয়ে পক্ষের লোকজন উত্তেজিত হয় আমাদের ওপর হামলা চালায়।’ আবুল কালাম আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় আমার ভাই বর বেলাল হোসেন (২৬), বোন জামাই আখতার হোসেন (৪৫), খালাত বোন সুখিসহ (১৬) প্রায় ২০ জন আহত হয়েছে।’
ঢাকা বারের ভোটের ফল আজ
ঢাকা আইনজীবী সমিতির (বার) নির্বাচনের ফল জানা যাবে আজ শনিবার। ভোটগ্রহণের ২৮ ঘণ্টা পর গতকাল রাতে শুরু হয় ভোট গণনা। ২০২০-২১ সালের জন্য কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠনে দুই দিনব্যাপী এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয় গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায়। নির্বাচনে ১৮ হাজার ১৫০ জন ভোটারের মধ্যে ৯ হাজার ২৯৯ জন ভোট দিয়েছেন। নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলে ৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সিনিয়র অ্যাডভোকেট মুন্সি ফখরুল ইসলাম প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। তার সঙ্গে ১০ জন কমিশনার এবং ১০০ জন সদস্য রয়েছেন। নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হোসেন আলী খান হাসান। সাদা প্যানেলের সভাপতি পদে মোশারফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক পদে আহসান তারিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ইতালিতে ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে করোনা, আক্রান্ত ৩ ফুটবলার
চীনের প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভাইরাসে আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে মৃত্যুর সংখ্যাও। চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে ইরানের পর এবার ইতালিতে ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে করোনাভাইরাস। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ইতালির তিন ফুটবলার। তারা সবাই দেশটির তুসকান অঞ্চলের ইউএস পিয়ানিস ক্লাবের খেলোয়াড়। ওই তিন খেলোয়াড় ছাড়াও ক্লাবটির এক স্টাফ আক্রান্ত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার এমন খবর প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্ট।খবরে বলা হয়েছে, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতালিতে ২১ জন মারা গেছে। যা চীন ও ইরানের পর সবচেয়ে বড় প্রাণহানির সংখ্যা। এ ছাড়া দেশটিতে অন্তত ৮২০ জনের শরীরে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক দেওয়া এক পোস্টে ক্লাবটি জানিয়েছে, গত ২২ ফেব্রুয়ারি একজন খেলোয়াড় মাথা ব্যথা ও জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরবর্তী সময়ে আরও তিনজনের উপসর্গ দেখা দিলে দুই ফুটবলারকে তাদের বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। আর স্টাফকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তী সময়ে ক্লাবের প্রত্যেক খেলোয়াড়, টেকনিক্যাল স্টাফ ও ম্যানেজারকে তাদের বাড়িতে ১৫ দিনের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। এমনকি ক্লাবটির মালিকও স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে যান। প্রসঙ্গত, গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ধরা পড়ে। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হওয়া এ ভাইরাস এখন পর্যন্ত বিশ্বের অন্তত ৫০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রস্রাবের রঙ দেখে রোগ চেনা যায়
প্রতিদিন শরীর হতে এক থেকে দুই লিটার পানি প্রস্রাব আকারে বেরিয়ে যায়। শরীর থেকে বিষাক্ত ও অপ্রয়োজনীয় পদার্থ বের করে দেওয়ার কাজটি করে কিডনি। সাধারণত প্রস্রাবের রঙ পানির মতো কিংবা হালকা বাদামি হতে পারে। এ রঙ নির্ভর করে পানি পানের পরিমাণ, খাদ্য কিংবা কোনো রোগ বা ওষুধের ওপর। তবে বিভিন্ন কারণে তা ঘোলাটে, লাল, গাঢ় হলুদ, কমলা, নীল কিংবা সবুজ রঙের হতে পারে। কাজেই শুধু প্রস্রাবের রঙ দেখেই শরীরের অবস্থা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া সম্ভব। প্রস্রাবের রঙ অস্বাভাবিক মানেই রোগ নয়। যেমন- পানি কম খেলে প্রস্রাব হলুদ হতে পারে। গাজর বা ভিটামিন-বি ও ভিটামিন-সি বেশি খেলে প্রস্রাব কমলা রঙের হতে পারে। এমনকি যক্ষ্মার ওষুধ রিফামপিসিন কিংবা ফেনোপাইরাজিনের কারণে প্রস্রাবের রঙ কমলা হতে পারে। তবে হেপাটাইটিস হলে প্রস্রাব গাঢ় হলুদ বর্ণ ধারণ করে। বেশি খেলে বা দুধ পানে ঘোলাটে প্রস্রাব হতে পারে। তবে প্রচুর পানি পানে তা দূর করা যায়। না কমলে এবং প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া থাকলে ধরে নেওয়া যায় ইনফেকশনের জন্য এমন হচ্ছে। বেশি পানি পানে প্রস্রাব বর্ণহীন হয়। উচ্চ মাত্রার ক্যালসিয়াম থাকলে প্রস্রাব হালকা নীল হয়। বিট, ব্ল্যাকবেরি জাতীয় খাবারে প্রস্রাব লাল হতে পারে। তবে প্রস্রাবের রঙ লাল হওয়ার অন্যতম কারণ রক্ত বা রক্তের উপাদান। কাজেই রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার আগে শরীরে অন্য কোনো উপসর্গ আছে কিনা, দেখতে হবে। খাবার, পানি বা কোনো ওষুধ গ্রহণ ছাড়া প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন হলে এবং ওপরের লক্ষণগুলো দেখা গেলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
লেখক : কনসালট্যান্ট, ইউরোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ
০১৭১১০৬৩০৯৩, ০১৯১১৭৬৫১৫০
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল বাংলাদেশ
অস্ট্রেলিয়ায় চলমান নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে টানা তিন ম্যাচে হেরে ছিটকে গেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ভারত, দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ও আজ শনিবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে গ্রুপপর্বেই বিদায় ঘণ্টা বেজে যায় সালমা খাতুনদের। বাংলাদেশ সময় আজ ভোরে মেলবোর্নের জংশন ওভালে শুরু হওয়া এই ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং নেয় নিউজিল্যান্ড। ঋতু মণির অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে ১০০ রানের মধ্যেই কিউই নারীদের বেঁধে রাখে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। ১৮ ওভার ২ বল খেলে সব কটি উইকেট হারিয়ে মাত্র ৯১ রান করে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের হয়ে ঋতু মণি সর্বোচ্চ চার উইকেট নেন। এ ছাড়া সালমা খাতুন তিনটি ও রুমানা আহমেদ নেন দুটি উইকেট। ৯২ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ৪০ রান না করতেই চার উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ৭৫ রানে সব কটি উইকেট হারিয়ে ১৭ রানের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় সালমা খাতুনদের। সর্বোচ্চ ২১ রান করেন নিগার সুলতানা। মুরশিদা ও ঋতু মণির ব্যাট থেকে আসে ১১ রান। এ ছাড়া আর কোনো ব্যাটারই দুই অঙ্কের মুখ দেখেননি। এখন পর্যন্ত খেলা গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে এটাই সবচেয়ে কম ব্যবধানে হার। প্রথম বিপক্ষে ভারতের বিপক্ষে ১৮ রানে লড়াই করে হারেন রুমানারা। দ্বিতীয় ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারতে হয় ৮৬ রানের বড় ব্যবধানে। চতুর্থ ও সর্বশেষ ম্যাচটি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে নামবে মার্চের দুই তারিখ ভোর ৬টায়। এই ম্যাচে জিতে বিশ্বকাপে টিকে রইল নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে শেষ ম্যাচ জিতলেই সেমিফাইনালে খেলার আশা টিকে থাকবে তাদের। তিন ম্যাচ খেলে সর্বোচ্চ ছয় পয়েন্ট ভারতের, সমান ম্যাচে চার পয়েন্ট অস্ট্রেলিয়ায় ও দুই পয়েন্ট নিউজিল্যান্ডের। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার পয়েন্ট শূন্য। বাংলাদেশ তিনটি ম্যাচ খেললেও শ্রীলঙ্কা খেলেছে দুটি।
অস্থির বিএনপিতে সৎ সাহসী নতুন নেতৃত্বের তাগিদ
হাইকোর্টে গত বৃহস্পতিবার কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আবারও জামিন না হওয়ায় বিএনপিতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় বর্তমান নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে দল থেকে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে যে ধরনের আন্দোলন তৃণমূল থেকে প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তা বর্তমান নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এ অবস্থায় যৌথ নেতৃত্বের পরিবর্তে নতুন নেতৃত্বে দল পরিচালনার তাগিদ উঠছে। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর থেকে যৌথ নেতৃত্বে বিএনপি পরিচালিত হচ্ছে। এ নেতৃত্বে আছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এই যৌথ নেতৃত্ব এ পর্যন্ত যেসব কর্মসূচি নিয়েছে তা সরকারকে কোনো অবস্থায় চাপে ফেলতে পারেনি। সরকার কোনো দাবি না মানলেও তাদের (সরকার) সঙ্গে নির্বাচনী সংলাপে অংশ নেওয়া, সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ, নির্বাচিতদের শপথ, উপনির্বাচন ও সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। যৌথ নেতৃত্বে এসব সিদ্ধান্ত নিলেও তৃণমূল ও মধ্যম সারির নেতারা ছাড়া স্থায়ী কমিটির অনেক নেতা এসব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছিল। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, যৌথ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের কারণেই বারবার সরকার উপকৃত হয়েছে। বরং খালেদা জিয়া যেসবের বিরুদ্ধে ছিলেন বিএনপির বর্তমান যৌথ নেতৃত্ব সেসব বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কারণেই আমাদের সিনিয়র নেতাদের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সরকারের লোক হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইছেন। বর্তমানে বিএনপির নেতৃত্বে যারা আছেন, তাদের নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছেÑ এমন বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, এটা আমিও জানি। নতুন নেতৃত্বের বিষয়ে চিন্তা করবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, সময় এলে সব জানতে পারবেন। এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজউদ্দিন আহমেদ ঘোষণা করেছেনÑ ‘বিএনপির নেতারা যদি হুকুম না-ও দেন, তার পরও যারা এই সরকারের পতনের জন্য নামবে, আমি তাদের সঙ্গে থাকব।’ আন্দোলনের জন্য সৎ নেতৃত্ব প্রয়োজন উল্লেখ করে হাফিজউদ্দিন বলেন, যাদের প্রচুর টাকা, ধন-দৌলতের অভাব নেই, তারা কীভাবে আন্দোলন করবে? আন্দোলন করার জন্য শক্ত ও সৎ ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন। আজ যদি নেতারা ব্যর্থ হন, আমরা ব্যর্থ হই, আপনারা নামেন রাস্তায়। আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যক্তিরা আছি আপনাদের সঙ্গে। বিএনপি যদি আন্দোলন না করে, অন্য কোনো দল যদি আন্দোলন করে, আমরা আছি শেখ হাসিনাকে সরাবার জন্য। আজ দেশবাসী আশা করে বিএনপি এ সংগ্রামের নেতৃত্ব দেবে, দেশবাসী আশা করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য বিএনপির প্রতিটি কর্মী রাজপথে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবেন। এ সরকারের জনপ্রিয়তা তলানিতে চলে গেছে, আমাদের রাস্তায় নামতে হবে। খালেদা জিয়ার মতো নেত্রীর সাহসই আমাদের সাহস। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তি। আমাদেরও একটু সাহস প্রদর্শন করতে হবে। তিনি বলেন, রাজপথে নেমেছি, আগামী দিনেও নামব। হাফিজের এই ঘোষণা নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, তার এ বক্তব্যে দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মীর মনে হয়েছে বিএনপি মানে স্থায়ী কমিটি নয়, বিএনপি মানে হচ্ছে খালেদা জিয়াÑ এটা স্থায়ী কমিটির অনেক নেতাই ভুলে গেছেন। জিয়াউর রহমানকে বাদ দিয়ে যেমন বিএনপি হবে না, তেমনি খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়েও বিএনপি হবে না। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি যদি আইনি প্রক্রিয়ায় সম্ভবপর না হয়, তা হলে আন্দোলন ছাড়া আমাদের অন্য কোনো বিকল্প নেই। এই আন্দোলন শুধু মুখে বললে চলবে নাÑ এটা কার্যকর করতে হবে। এমন কর্মসূচি দিতে হবে যে, কর্মসূচি আমরা দৃঢ়ভাবে পালন করতে পারব। যুবদল-ছাত্রদলসহ অঙ্গ সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করা ছাড়া কার্যকর আন্দোলন সম্ভব নয় বলে মনে করেন দলের একাধিক স্থায়ী কমিটি ও ভাইস চেয়ারম্যান পর্যায়ের নেতা। তারা বলেন, খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর গত দেড় বছর ধরে বিএনপির নানা পর্যায় ও তার অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের কমিটি পুনর্গঠনে কাজ করে আসছে। এ কাজে মূল নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসম্পাদকরা। এ ছাড়া ছাত্রদল ও যুবদল একাধিক টিম করে নানা জেলায় কাজ করছে। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তৃণমূল পর্যায়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অবস্থা খুবই করুণ। কেন্দ্রীয় কমিটি বারবার পুনর্গঠন হলেও তৃণমূল পর্যায়ের কমিটিগুলো ঠুঁটো জগন্নাথ অবস্থা। বিএনপির জেলা ও মহানগরের কমিটিগুলো প্রভাবশালী নেতা-সাবেক এমপির লোক ছাড়া কেউই নেতৃত্বে আসতে পারেনি। ঢাকা মহনগরের থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কার্যকর কোনো সংগঠনও নেই। সদ্য অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তার প্রমাণও হাতে হাতে পেয়েছে বিএনপি। ফলে পুনর্গঠনে কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছতে পারেননি তারেক রহমানও। সম্প্রতি, স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ পুনর্গঠন নিয়ে কথা উঠেছে। সেখানে তারেক রহমানকে বলা হয়েছেÑ যে প্রক্রিয়ায় পুনর্গঠন হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে তা কোনো দিনই শেষ হবে না। এতে দলের চেইন অব কমান্ড বলতে কিছুই থাকবে না। কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, এজন্য আমাদের তরুণ সমাজ, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল; যারা সংগঠনে আছে তাদের যদি সংগঠিত করতে না পারি, তারা যদি আন্দোলন করতে না পারে, তা হলে আন্দোলন হবে না। আন্দোলন করতে হলে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলকে আরও শক্তিশালী করতে হবে, সংগঠিত করতে হবে এবং তাদের ময়দানে নামতে হবে। মওদুদ আহমদ আরও বলেন, আমাদের নিরাশ হলে চলবে না। আমরা অনেক দেখেছি পৃথিবীতে অনেক দেশে কর্তৃত্ববাদ, স্বৈরাচার সরকারের আবির্ভাব ঘটেছে; কিন্তু তারা টেকেনি। এই সরকারও টিকবে না। যেতে হবেÑ এটা সময়ের ব্যাপার।
ইরানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১০, তথ্য গোপনের অভিযোগ
ইরানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ২১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে এমন খবর প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। যদিও এদিন সকালে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩৪ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছিল। তবে মৃতের সংখ্যা কর্তৃপক্ষ দেওয়ার তথ্যের চেয়ে ছয় গুণ বেশি বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিয়ানুশ জাহানপুর জোর দিয়ে বলেছেন, তাদের দেওয়া তথ্য স্বচ্ছ এবং বিবিসির বিরুদ্ধে মিথ্যা ছড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন তিনি। এর আগে সর্বপ্রথম ইরানের এক সাংসদ করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা লুকোনোর অভিযোগ তোলেন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। পরে বিষয়টি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও উদ্বেগ প্রকাশ করে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে বিসিবি ফার্স জানিয়েছে, নিহতদের বেশির ভাগই দেশটির রাজধানী তেহরান এবং কোম শহরের। এই শহর দুটিতেই সবচেয়ে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। চীনের পর করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি মৃতের সংখ্যা ইরানেই। ইতিমধ্যে দেশটির এক সাবেক রাষ্ট্রদূত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দেশটির উপ-রাষ্ট্রপতিও আক্রান্ত হয়েছেন করোনাভাইরাসে। এ ছাড়া দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩৮৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
করোনাভাইরাসে মুকেশ আম্বানির ক্ষতি ৫৯০ কোটি ডলার!
বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া মরণব্যাধী করোনাভাইরাস। যে কারণে ক্ষতি হয়েছে বিভিন্ন দেশের বড় বড় বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীদের। তাদের মধ্যে একজন মুকেশ আম্বানি। করোনাভাইরাসের কারণে ৫৯০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে এই শিল্পপতির। বিশ্ব শেয়ারবাজার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এ খবর। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, চলতি বছরে এখনো পর্যন্ত ৫৯০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে আম্বানির। যে কারণে তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ নেমে এসেছে প্রায় ৫৩ হাজার কোটি ডলারে। তার পরিচালিত রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারেও ১১% পতন দেখা গেছে। শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাভাইরাসের আতঙ্কের জেরেই এই ক্ষতির মুখে পড়েছেন আম্বানি। শুধু আম্বানিই নন, করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন উইপ্রো’র প্রতিষ্ঠাতা আজিম প্রেমজিরও। তার ৮৬ কোটি ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব শেয়ারবাজার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আজিম প্রেমজির ছাড়া কোটাক মাহিন্দ্রা কোম্পানির ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি ডলার। আদিত্য বিড়লা গ্রুপের চেয়ারম্যান কুমার মঙ্গলম বিড়লার প্রায় ৮৯ কোটি ডলার এবং শিল্পপতি গৌতম আদানির প্রায় ৫০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে। বিশ্বজুড়ে চলছে করোনাভাইরাস আতঙ্কে ক্ষতির মুখে পড়েছে মুম্বাইয়ের স্টক এক্সচেঞ্জ। তা ছাড়া চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার শেয়ার মার্কেটের করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই ক্ষতির মুখে। আজ শুক্রবার মুম্বাই শেয়ার বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় এক হাজার ২০০ পয়েন্টের বেশি পড়ে সেনসক্স। নেমে যায় নিফটিও। কারণ, বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন, করোনাভাইরাস মহামারীর আকার নিতে পারে; তাই বড় ধাক্কাটাই পড়েছে শেয়ার বাজারে।
পাকিস্তানে পঙ্গপাল দমনে হাঁস পাঠাচ্ছে চীন
পাকিস্তানে শস্যখাদক পঙ্গপালের আক্রমণ ঠেকাতে এক লাখ হাঁস মোতায়েন করবে চীন। বিগত দুই দশকের মধ্যে পাকিস্তানে এবারই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পঙ্গপাল আক্রমণ করেছে। চলতি সপ্তাহে চীন সরকারের দেওয়া এক বিবৃতির বরাতে সংবাদ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি। পঙ্গপালের আক্রমণ ঠেকাতে চীন-পাকিস্তানের এই প্রকল্প নিয়ে কাজ করা এক কৃষি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘একটি হাঁস প্রতিদিন ২০০ পঙ্গপাল খেতে পারে। তাই এটি পূর্বের তুলনায় বেশি কার্যকর হবে।’ এই পদক্ষেপকে ‘জৈবিক অস্ত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ঝিজিয়াং একাডেমি অব অ্যাগ্রিকালচারাল সায়েন্সেসের সিনিয়র গবেষক লু লিঝি। তিনি বলেন, ‘একটি মুরগি একদিনে প্রায় ৭০টি পঙ্গপাল খেতে পারে। তবে একটি হাঁস সেই সংখ্যার চেয়ে তিনগুণ বেশি খেতে পারে।’ পঙ্গপালের আক্রমণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আফ্রিকার দেশ কেনিয়া ও ইথিওপিয়া। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর প্রায় ২০ শতাংশ ভূমি পঙ্গপালের আক্রমণের শিকার হয়। বিশ্বের দরিদ্র্যতম ৬৫টিরও বেশি দেশে এর প্রকোপ দেখা যায় এবং বিশ্বের জনসংখ্যার ১০ ভাগের এক ভাগের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রেমের টানে ইতালি থেকে রায়পুরে
আবারও প্রমাণিত হলো- প্রেম মানে না কোনো ধর্ম, বর্ণ বা দেশ। বাংলাদেশি তরুণের প্রেমের টানে নিজ দেশ ইতালি ছেড়ে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে চলে এসেছেন এক তরুণী (২৩)। বেঁধেছেন সংসার। বাংলাদেশি এই তরুণ হলেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার মো. ইকবাল হোসেন (২৭)। ইতালি থেকে গত বুধবার বাংলাদেশে আসেন ওই তরুণী। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ইকবালের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। রায়পুর পৌরসভার নতুন বাজারসংলগ্ন এলাকায় ইকবালের নানার বাড়িতে মুসলিম রীতিতে হয় এই বিয়ে। তরুণীর নাম পাল্টে রাখা হয় খাদিজা আক্তার। ইকবাল উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাপুর গ্রামের ওসমান আলী পাটওয়ারী বাড়ির আক্তার হোসেনের ছেলে। ইকবালের পরিবারের সদস্যরা জানান, মাধ্যমিক পাস ইকবাল প্রায় ছয় বছর আগে ইতালিতে যান। সেখানে তিনি এই তরুণীর পরিবারের মালিকানাধীন একটি কোম্পানিতে কাজ করতেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় দুই